ইংলিশ শাসনে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বড় হার
বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে উড়ে যাওয়া ইংলিশরা নিজেদের ভয়ংকর রূপ দেখালো বাংলাদেশের বিপক্ষে।
রানের ব্যবধানে এটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় বড় হার। ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে শেষ হলো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ধর্মশালা পর্ব।
ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩৬৫ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই খেই হারানো বাংলাদেশের ইনিংসে কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন কেবল লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিম। বাকি ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বড় হার এড়ানো সম্ভব হয়নি সাকিবের দলের। শেষ পর্যন্ত ৪৮.২ ওভার খেলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের বোলিং লাইনআপের সামনে ৩৬৫ রান তাড়া করা হিমালয় জয়ের সমানই হতো। লড়াই করার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায় ছয় ওভারের মধ্যেই। পরপর দুই বলে ফিরে যান ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং নাজমুল হাসান শান্ত। এর মধ্যে শান্ত নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বোল্ড হন। ২৬ রানের মাথায় অধিনায়ক সাকিবও ফিরে যান মাত্র এক রান করে। তিনটি উইকেটই শিকার করেন ইংল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার রিস টপলে।
দলীয় ৪৯ রানে ফিরে যান ফর্মে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজও, তিনি হন ওকসের শিকার। এরপরই ভেঙে পড়া বাংলাদেশের ইনিংসে কিছুটা বাধার দেয়াল তৈরি করেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। লিটন সাবলীল খেলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এই দুই ডানহাতি যোগ করেন ৯৫ রান।
ওকসের স্লোয়ার বলে খোঁচা দিয়ে জস বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় লিটনের ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। সাতটি চার ও দুটি ছয়ে মেরেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। আউট হওয়ার আগে মুশফিক করেন ৬৪ বলে ৫১ রান, তার ইনিংসে ছিলো চারটি চারের মার।
তাওহিদ হৃদয়ের ৬১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমিয়েছে শুধু। মাহেদি হাসানের ৩২ বলে ১৪, তাসকিনের ২৫ বলে ১৫, শরিফুলের ১৪ বলে ১২ রানের ইনিংস ইংল্যান্ডের জয়কে কিছুটা বিলম্বিত করেছে মাত্র।
ইংল্যান্ডের পেসারদের তোপেই মূলত দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটিং। রিস টপলে ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে নেন চার উইকেট, ওকস ও স্যাম কারেন নেন দুটি করে উইকেট, মার্ক উড, আদিল রশিদ, লিয়াম লিভিংস্টোন নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু করে ইংলিশরা। জনি বেয়ারস্টো হাফ সেঞ্চুরি করে থামলেও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা ডেভিড মালান পাড়ি দেন আরও অনেকটা পথ। এরপর জো রুটের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে শেষ দিকের কয়েকটি ছোট ইনিংস। ব্যাটিং করা প্রায় সব ব্যাটসম্যানের রান পাওয়ার ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশাল সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান তোলে। বিশ্বকাপে এটা ইংল্যান্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ, ধর্মশালার এই মাঠের সর্বোচ্চ।
দারুণ শুরুর পর উদ্বোধনী জুটিতে ১১৫ রান যোগ করেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু এরপর আবারও ইংলিশদের শাসন। সেঞ্চুরিয়ান মালান ও জো রুটের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথে এগোতে থাকে তারা। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৭ বলে ১৫১ রান যোগ করেন মালান-রুট।
অসাধারণ ইনিংস খেলা মালানকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদি হাসান। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ ও বিশ্বকাপের নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মালান ১০৭ বলে ১৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৪০ রান করেন। এই ফরম্যাটে এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন রুটও, কিন্তু হঠাৎ জ্বলে ওঠা শরিফুল ইসলামের বাধায় তিন অঙ্কে পৌঁছানো হয়নি তার।
বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসারের বলে আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৮২ রান করেন এই ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়া রুট। ১৯ ইনিংসে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৫৭.৩১ গড়ে ৯১৭ রান করেছেন ইংলিশ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এই ইনিংস দিয়ে তিনি পেছনে ফেলেছেন গ্রাহাম গুচকে। ২১ ইনিংসে ৮৯৭ রান করা গুচ এতোদিন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের মালিক ছিলেন।
রুটকে ফেরানোর ওভারের শেষ বলে ২০ রান করা লিয়াম লিভিংস্টোনকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন শরিফুল। এর আগে ১০ বলে ঝড়ো গতিতে ২০ রান করা ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে আউট করেন তিনি। মাত্র ৯ রানের মধ্যে ইংলিশদের ৩টি উইকেট তুলে নেন শরিফুল। এ কারণেই মূলত শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের রানচাকার গতি কমানো যায়। শেষ ১০ ওভারে ৬৬ রানে ৬ উইকেট নেয় বাংলাদেশ। এ সময় উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন শেখ মেহেদিও।
শেষ দিকে স্যাম কারান ১১, ক্রিস ওকস ১৪ ও আদিল রশিদ ১১ রান করেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গায় সুযোগ পাওয়া শেখ মেহেদি ৮ ওভারে ৭১ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। ইংলিশদের রানচাকায় লাগাম টানা শরিফুল ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৩টি উইকেট পান। একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও তাসকিন আহমেদ।