অনেক রেকর্ড গড়ার ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা

একটি ইনিংসে কতগুলো রেকর্ড হতে পারে? চলমান বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ইনিংস দেখা যে কারও উত্তর হবে, অনেক রেকর্ড হতে পারে। চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজিয়ে প্রোটিয়াদের তিনজন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি তুলে নেন, এর মধ্যে একটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম।
তিন সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকা পায় বিশ্বকাপ ইতিহাসের রেকর্ড সংগ্রহ। যা পাড়ি দিতে শ্রীলঙ্কাকেও গড়তে হতো রেকর্ড। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেনি। কয়েকজন ব্যাটসম্যান দাপুটে ব্যাটিং করলেও হার এড়াতে পারেনি লঙ্কানরা। শনিবার দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে রেকর্ডের মালা গেঁথে শ্রীলঙ্কাকে ১০২ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সেঞ্চুরি করেন কুইন্টন ডি কক, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও এইডেন মার্করাম। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচের এক ইনিংসে এই প্রথম তিন সেঞ্চুরি হলো। এর মধ্যে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন মার্করাম। শেষ দিকে ক্লাসেন, মিলারের ঝড়ে রান পাহাড় আরও বড় হয়, ৫ উইকেটে ৪২৮ রান তোলে প্রোটিয়ারা। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিল অস্ট্রেলিয়ার করা ৪১৭ রান।
জিততে হলে বিশ্বকাপ ও নিজেদের ইতিহাস বদলাতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো দল ৪০০ বা এরচেয়ে বেশি রান টপকে জয় পায়নি। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে শ্রীলঙ্কাও কখনও ৪০০'র বেশি রান তাড়া করে জেতেনি, তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া ২৩১। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩২২ রান তাড়া কড়ে জেতে লঙ্কানরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া লক্ষ্য পাড়ি দেওয়া পাহাড় টপকানোর মতো জেনেও শ্রীলঙ্কা অবশ্য চেষ্টা করে। প্রয়োজনীয় রান রেটের কথা মাথায় রেখে দাপুটে ব্যাটিং-ই করেন কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালাঙ্কা, দাসুন শানাকারা। কিন্তু এ তিন জনের লড়াই যথেষ্ট ছিল না। বাকিরা তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়েও সফল হতে পারেননি। ৪৪.৫ ওভারে ৩২৬ রানে অলআউট হয়ে যায় ১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলীয় ১ রানেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে হারানো শ্রীলঙ্কা কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ঝড়ে গতিতে এগোতে থাকে। কুশল পেরেরাকে এক পাশে রেখে খুনে ব্যাটিং করতে থাকেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। কুশল ফিরে গেলেও মেন্ডিস থামাননি তার ঝড়। দলকে ১০০ পেরিয়ে আউট হওয়ার আগে ৪২ বলে ৪টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৭৬ রান করেন তিনি। বাউন্ডারি থেকেই ৬৪ রান তোলেন লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান।
সাদিরা সামারাবিক্রমা ভালো শুরু করেও টিকতে পারেননি। ১৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হন তিনি। এরপর দাপুটে ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে পথ দেখান আসালাঙ্কা। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৬৫ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৭৯ রান করেন। লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা ৬২ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন। ইনিংসের সবচেয়ে বড় ৮২ রানের জুটি আসে আসালাঙ্কা ও শানাকার ব্যাট থেকে।
শেষ দিকে প্রোটিয়াদের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন কাসুন রাজিথা। ৩১ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রানে করেন তিনি। তার এই ইনিংসটি স্রেফ লঙ্কানদের হারের ব্যবধান কমিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জেরাল্ট কোয়েটজি ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা ও কেশব মহারাজ। একটি উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিডি।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা দলীয় ১০ রানেই অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে হারায়। যদিও তাকে হারানোর চাপ একটুও বুঝতে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে ঝড় বইয়ে দেন ডি কক ও ডার ডুসেন। ১৭৪ বলে ২০৪ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। এর মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৮তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ডি কক। ৮৪ বলে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০০ রান করে আউট হন তিনি।
কিছুক্ষণ পর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডার ডুসেনও। নিজের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানও সেঞ্চুরির পর আর টিকতে পারেনি। ১১০ বলে ১৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৮ রান করে আউট হন তিনি। আউট হওয়ার আগে মার্করামের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়েন ডার ডুসেন। জুটিতে অবশ্য তার অবদান কমই ছিল, খুনে ব্যাটিংয়ে রান বাড়াতে থাকেন মার্করাম।
এরপর ক্লাসেনের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি গড়েন মার্করাম। এই জুটিতেও কাণ্ডারী মার্করাম, ক্লাসেনকে একপাশে রেখে ঝড় বইয়ে দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে মাত্র ৪৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি, যা বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও'ব্রায়েনের করা ৫০ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙেন মার্করাম।
তার ঝড় থামে ৪৮তম ওভারে। ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মার্করাম ৫৪ বলে ১৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০৬ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেন। এরপর ক্লাসেন ২০ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩২ রান করেন। মিলারও উইকেটে গিয়ে তাণ্ডব চালান। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২১ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
শ্রীলঙ্কার চারজন বোলার ৮০ রানের ওপরে খরচা করেন, তবে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন তরুণ পেসার মাথিশা পাথিরানা। ১০ ওভারে দেন ৯৫ রান দেন তিনি। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে শ্রীলঙ্কার হয়ে তার চেয়ে বেশি রান খরচা করেছেন কেবল একজন। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৯৭ রান দেন আশান্থা ডি মেল।