রাবাদাকে অনুসরণ করা মুশফিকের অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের পেসাররা
প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে মুশফিক হাসানের অভিষেক হয় গত বছর। এরপর থেকে নিয়মিত খেলে এলেও অভিজ্ঞতার বিচারে তিনি এখনও নবীন। আবার বয়সও চলে মাত্র ২০ বছর। এ ছাড়া জাতীয় দলের বিবেচনাতেও তরুণ এই পেসারের নাম সেভাবে শোনা যায়নি। এমন একজনের টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পাওয়া বড় চমকই। অন্যদের কাছে চমক মনে হলেও মুশফিক অবশ্য নিজেকে যোগ্যই মনে করেন।
গত এক বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করার পুরস্কার হিসেবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দলে জায়গা হয়েছে বলে মনে করেন ডানহাতি এই পেসার। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নকে সঙ্গী করে কঠোর পরিশ্রম করে আসা মুশফিক অনুসরণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদাকে। তবে তার অনুপ্রেরণার ভান্ডার বাংলাদেশের পেস বিভাগ। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানদের পারফরম্যান্স থেকে সাহস যুগিয়ে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন মুশফিক।
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় নিজেকে যোগ্য মনে করতেই পারেন মুশফিক। মাত্রই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পেরিয়ে আসা এই পেসার ঘরোয়া ক্রিকেটে এবার বল হাতে দুর্বার ছিলেন। জাতীয় লিগে রংপুর বিভগের হয়ে ৬ ম্যাচে ২৫ উইকেট নেন তিনি। এই পারফরম্যান্স তাকে ভারত 'এ' দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ 'এ' দলে জায়গা করে দেয়। চার দিনের ম্যাচটিতে ৩ উইকেট নেন মুশফিক।
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগেও (বিসিএল) বল হাতে শাসন করেন তিনি। ৪ ম্যাচে ১৬ উইকেট নেন মুশফিক। দারুণ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে আসায় সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'এ' দলের বিপক্ষে তার ওপর ভরসা রাখেন বিসিবির নির্বাচকরা। কেবল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ধরন বুঝতে শুরু করা তরুণ এই পেসার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুটি আনঅফিসিয়াল টেস্টে ৫ উইকেট নেন। প্রতিনিয়তই নিজেকে প্রমাণ করে আসায় দ্রুতই জাতীয় দলে ডাক মিলে গেল তার।
আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রস্তুতির জন্য কদিন আগে ক্যাম্প শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। তবে মুশফিক আজ ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। প্রথমদিনের অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, 'সর্বপ্রথম শুকরিয়া যে আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমি মনে করি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমি ভালো খেলেছি, এ জন্য হয়তো আমাকে নেওয়া হয়েছে। অনেক ভালো লাগছে। আজকেই প্রথম আমি ক্যাম্পে যোগ দিলাম।'
প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া মুশফিক প্রথমদিন সাকিব আল হাসানের অভিনন্দন পেয়েছেন। অগ্রজকে নিয়ে তিনি বলেন, 'সাকিব ভাই বললেন, অভিনন্দন মুশফিক। চালিয়ে যাও। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে সেভাবে কথা হয়নি৷ তবে উনাকে দেখে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যখন মাঠে খেলছিলাম, উনি আমাকে বলে বলে দিচ্ছিলেন যে, এটা করো, ওটা করো। আমি প্রশ্ন করছিলাম, উনিও ভালোভাবে উত্তর দিচ্ছিলেন '
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শুভ কামনা ও পরামর্শ নিশ্চিতই সাহস যোগাবে মুশফিককে। তবে তার অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগ, সঙ্গে অনুসরণ করেন কাগিসো রাবাদাকে। তাসকিন-মুস্তাফিজদের থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া মুশফিক বলেন, 'এখন আমি অনুপ্রেরণা পাই বাংলাদেশের পেস বোলারদের দেখে। আর আমি অনুসরণ করি রাবাদাকে।'
লাইন-লেংথ ও অ্যাকুরেসি মেনে বোলিং করেন মুশফিক, গতি ও আগ্রাসন তার সহজাত। নিজের শক্তির জায়গা জানাতে গিয়ে বাংলাদেশের এই পেসার বলেন, 'আমি লাইন-লেংথ, অ্যাকুরেসি; এগুলো প্রথমে এডজাস্ট করি। তারপর জোর; সব মিলিয়ে এখান থেকে মনে হয় আমি ভালো অনুভব করি। (গতি ও আগ্রাসন) এটা তো আমার সহজাত। আমি সব সময় এটা ধরে রাখার চেষ্টা করি। বড় ভাইরা, স্যাররাও বলেন, "তোমার যেটা সহজাত, সেটা ধরে রাখবে; তাহলে ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবে।'
গত বছর হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে তালহা জুবায়ের, চম্পকা রামানায়েকের সান্নিধ্যে অনেক কিছু শিখেছেন মুশফিক; যা মাঠে কাজে দিচ্ছে তাকে। তরুণ এই পেসার একই মানসিকতা নিয়ে ঘরোয়া ও 'এ' দলের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়েও একইভাবে খেলার পরিকল্পনা তার।
মুশফিক বলেন, 'গত বছর আমি এইচপিতে ছিলাম। অনেক পরিশ্রম করেছি ফিটনেস নিয়ে, বোলিং নিয়ে। তালহা ভাই ছিলেন, চম্পকা ছিলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ভালো হয়েছে৷ (ঘরোয়া ও এ দলের পার্থক্য) পার্থক্য বলতে আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এনসিএল ও বিসিএল যেভাবে খেলেছি, ঠিক ওভাবেই 'এ' দলে খেলেছি। যদি আমি জাতীয় দলে সুযোগ পাই তাহলে ওভাবেই খেলব।'