সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে ও তার চমকপ্রদ ৮ তথ্য
ফ্রান্সের ফুটবল তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে কাতার বিশ্বকাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। নিজ দল বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করে তিনি জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট পুরস্কার। গত বিশ্বকাপেও ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে তিনি দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে শুধু ফ্রান্স দলেই নয়, বরং ক্লাব পর্যায়েও নিয়মিত ভালো পারফরম্যান্স করছেন পিএসজি এ তারকা।
বর্তমানে এমবাপ্পের ফর্ম বিবেচনায় অনেক ভক্ত মনে করেন, মেসি-রোনালদো যুগের পর ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করবেন এমবাপ্পে। তবে এমবাপ্পের বিশ্বসেরা ফুটবলার হওয়ার যাত্রাটা খুব মসৃণ ছিল না। বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্বসেরা ফুটবলার হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক অজানা গল্প। চলুন দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
১. পুরো পরিবারই যুক্ত খেলাধুলায়
বিশ্বকে ফুটবল জাদুতে বুঁদ করা এমবাপ্পের জন্ম ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ফ্রান্সে জন্ম নিলেও এমবাপ্পের বাবা উইলফ্রেডের দেশ ছিল ক্যামেরুন এবং মা ফাইজা লামারির দেশ ছিল আলজেরিয়া। অবাক করার বিষয় হলো, এমবাপ্পের পরিবারের সবাই-ই জড়িত খেলাধুলার সাথে।
এমবাপ্পের বাবা উইলফ্রেড একজন ফুটবল কোচ। অন্যদিকে তার মা ফাইজা ছিলেন হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। শুধু মা-বাবাই না, এমবাপ্পের ভাইবোনেরাও সরাসরি খেলাধুলার সাথে যুক্ত। এ ফুটবল তারকার ভাই ইথান এমবাপ্পে একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। ২০১৮ সালে ইথান পিএসজির অনূর্ধ্ব ১২ দলে খেলেছেন। অন্যদিকে এমবাপ্পের বোন ডায়নে এমবাপ্পে একজন পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়।
২. পিতা-মাতার দারিদ্র্য সত্ত্বেও সহযোগিতা
এমবাপ্পের জন্ম খুব গরিব পরিবারে। অর্থনৈতিক শত বাধা ও প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এমবাপ্পেকে তার বাবা-মা সঠিকভাবে পরিচর্যা করে বড় করেছেন। বাবার অনুপস্থিতিতে শৈশবে মায়ের দিকনির্দেশনায় ফুটবলের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছেন পিএসজি তারকা। এছাড়াও এমবাপ্পে নিজেকে বিশ্বসেরা ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে সবসময় নিজের ফুটবল কোচ বাবার সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
৩. পরিবারে একাধিক ধর্ম
এমবাপ্পে নিজে কোন ধর্মের অনুসারী, তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। কেননা একদিকে তার বাবা উইলফ্রেড খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী। অন্যদিকে মা ফাইজা মুসলমান।
২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে এমবাপ্পে নিজেকে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে একইসাথে রমজানসহ মুসলমান ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে দেখা যায়।
৪. বিশ্বকাপ থেকে অর্জিত অর্থ দান
২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তরুণ তারকা হিসেবে নিজের নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন এমবাপ্পে। ফ্রান্সের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি গোল করে দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। আর তারই পুরস্কারস্বরূপ বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ হিসেবে প্রায় অর্ধমিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন এমবাপ্পে।
কিন্তু শৈশব থেকেই অভাব দেখে বড় হওয়া এমবাপ্পে বিশ্বকাপ থেকে অর্জিত পুরো অর্থই দান করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও ফ্রান্সের এ তারকা বহু অসহায় মানুষকে ঘরও বানিয়ে দিয়েছেন।
৫. মাত্র ১১ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলে পদার্পণ
এমবাপ্পে এএস বন্ডি নামের প্যারিসের এক ক্লাবে খেলার মধ্য দিয়ে নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। ক্লাবটির কোচ ছিলেন এমবাপ্পের বাবা উইলফ্রেড। পরবর্তীতে কিশোর বয়সে ফ্রান্স ন্যাশনাল ফুটবল সেন্টারে এমবাপ্পে খেলতে থাকলে ফুটবল বিশ্বের নামীদামি সব ক্লাবের নজরে আসেন তিনি।
মাত্র ১১ বছর বয়সে এ ফুটবলারকে অনূর্ধ্ব ১২ দলের হয়ে খেলতে আমন্ত্রণ জানায় বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। এছাড়াও ১৪ বছর বয়সে চেলসির যুব দলের হয়ে খেলতে লন্ডন গিয়েছিল এমবাপ্পে।
রিয়াল মাদ্রিদসহ বড় বড় ক্লাব তাকে চাইলেও এমবাপ্পে লীগ ওয়ানের দল মোনাকোকে বেছে নেন। এর কিছুদিন পর মোনাকো থেকে প্রথমে লোনে এবং পরবর্তীতে ১৮০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ২০১৭ সালে ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন তিনি।
৬. ইতিহাসের অন্যতম দ্রুততম খেলোয়াড়
অসাধারণ ফিনিশিং ও ড্রিবলের জন্য দর্শকদের কাছে আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছেন এমবাপ্পে। তবে ড্রিবল ও ফিনিশিং ছাড়াও প্রচণ্ড গতি এমবাপ্পেকে অন্য খেলোয়াড়দের থেকে আলাদা করে তোলে। ফ্রান্সের এ তারকা ফুটবলারকে ফুটবল বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০১৯ সালে মোনাকোর বিপক্ষে এক ম্যাচে এমবাপ্পের গতি ঘণ্টায় ৩৮ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট ২০০৯ অলিম্পিকে ঘণ্টায় ৩৭.৫৮ কিলোমিটার বেগে দৌড়ে বিশ্বরেকর্ড করেছিল। অর্থাৎ একজন ফুটবলার হয়েও এমবাপ্পের গতি ক্ষেত্রবিশেষে উসাইন বোল্টের চেয়েও বেশি।
৭. বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার
পিএসজি তারকা এমবাপ্পেকে নিজ দলে নিতে রিয়াল মাদ্রিদ প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ট্রান্সফার ফির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পিএসজির পক্ষ থেকে এমবাপ্পেকে অধিক বেতনসহ নানা সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যার ফলে বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার হিসেবে ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজিতেই রয়ে গেছেন তিনি।
সম্প্রতি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সৌদি ক্লাব আল নাসেরের চুক্তির আগপর্যন্ত এমবাপ্পেই ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত খেলোয়াড়।
৮. অর্জন করেছেন বহু পুরস্কার ও প্রশংসা
মাত্র ২৪ বছর বয়সে এমবাপ্পে অর্জন করেছেন বহু পুরস্কার ও প্রশংসা। ইতিমধ্যেই মোট চার বছর চ্যাম্পিয়নস লীগের স্কোয়াডে নিজের নাম লিখিয়েছেন মাত্র ২৪ বছর বয়সী এ ফুটবল তারকা। পিএসজির হয়ে মোট চার মৌসুমে লীগ ওয়ানের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন।
এছাড়াও অল্প বয়সেই লীগ ওয়ান প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার, গ্লোব সকার বেস্ট প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ড অর্জনসহ উয়েফার বর্ষসেরা দলে নাম লিখিয়েছেন।
সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপে দলের প্রয়োজনে নিজেকে প্রমাণ করে গোল্ডেন বুট জিতেছেন। পাশাপাশি ফ্রান্সের হয়ে একটি বিশ্বকাপ ও একটি রানার্স আপ ট্রফিতে নিজের অবদানের জন্য ফুটবল বিশ্বের প্রশংসায় ভাসছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
- সূত্র: ফেস-টু-ফেস আফ্রিকা