অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে সিঙ্গাপুরের টিম ডেভিড

আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করবে অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠের এই বিশ্বকাপের মাস দেড়েক বাকি থাকলেও এরই মধ্যে দল ঘোষণা করে দিয়েছে অজিরা। এই দলে চমক রেখেছে আয়োজক দেশটি। সিঙ্গাপুরের হয়ে ১২টি টি-টোয়েন্টি খেলা টিম ডেভিডকে দলে নিয়েছে সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ডেভিড সরাসরি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ায় এটাকে চমক হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও ২৬ বছর বয়সী ডানহাতি মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যানের অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পাওয়াকে চমক বলাটা কঠিন। কারণ তার অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা হয়ে আসছিল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে অস্ট্রেলিয়া যে দলটি দিয়েছে, সেই দলে ডেভিডের অন্তর্ভুক্তিই একমাত্র পরিবর্তন। ডেভিডকে জায়গা দিতে বাদ দেওয়া হয়েছে লেগ স্পিনার মিচেল সোয়েপসনকে। এ ছাড়া গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলা দলের সবাই আছেন ১৫ সদস্যের এই স্কোয়াডে।
সিঙ্গাপুরের হয়ে খেললেও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টিতে পরিচিত মুখ ডেভিড। আইপিএলের গত আসরের মেগা নিলামে তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। ৮ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে ডেভিডকে দলে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। বর্তমানে দ্য হান্ড্রেড খেলায় ব্যস্ত ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার সুঠামদেহীর এই ব্যাটসম্যান খেলেছেন পিসিএল, সিপিএল, টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট ও বিগ ব্যাশে।
ডেভিডের বাবা-মা অস্ট্রেলিয়ান। বাবা রড ডেভিড পেশায় ছিলেন প্রকৌশলী, খেলতেন ক্রিকেটও। পেশাগত কাজে নব্বইয়ের দশকে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান তিনি। ১৯৯৬ সালে সেখানেই জন্ম ডেভিডের।
রড ডেভিড শখের বসে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সুযোগ পেয়ে যান সিঙ্গাপুর জাতীয় দলে। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে সিঙ্গাপুরের হয়ে খেলেন তিনি। কিন্তু পরে সিঙ্গাপুরে আর থিতু হননি তিনি, ফিরে যান অস্ট্রেলিয়ায়। এরপর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠেন টিম ডেভিড। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে খেলেছেন তিনি।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে একটি আসরে দারুণ পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন ডেভিড। যা তাকে জায়গা করে দেয় বিগ ব্যাশে। যদিও শুরুতে তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি। তবে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন ডেভিড। একটা পর্যায়ে জন্ম পরিচয়ের সূত্রে ডাক আসে সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের হয়ে খেলার, সুযোগটা লুফে নেন তিনি।
কাতারের বিপক্ষে ২০১৯ সালে ডেভিডের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। অভিষেকেই নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করেন তিনি, খেলেন ২৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। এর কয়েকদিন পর নেপালের বিপক্ষে ব্যাট হাতে রীতিমতো শাসন করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে ৪৩ বলে ৭৭ রান করা ডেভিড পরের ম্যাচেই খেলেন ৪৪ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। সিঙ্গাপুরের হয়ে ১২ টি-টোয়েন্টিতে ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৫৮.৫২ স্ট্রাইক রেট ও ৪৬.৫০ গড়ে ৫৫৮ রান করেছেন ডেভিড।
সিঙ্গাপুরের হয়ে আলো ঝরিয়ে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পেতে থাকেন ডেভিড। একে একে প্রায় সব লিগে খেলা হয়ে গেছে তার। এখন পর্যন্ত ১২২ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ডেভিড। ১১টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৬৪.১৭ স্ট্রাইক রেট ও ৩২.১৯ রান করেছেন ২ হাজার ৬৪০। এতে অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচকদের নজরে পড়েন তিনি। শুরু হয় তাকে অস্ট্রেলিয়া দলে নেওয়ার আলোচনা। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো তার।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দল: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, টিম ডেভিড, জশ ইংলিশ, অ্যাস্টন অ্যাগার, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, অ্যাডাম জ্যাম্পা, জশ হ্যাজলউড ও কেন রিচার্ডসন।