দম বন্ধ করা ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালো ভারত
ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই উত্তেজনায় ঠাসা এক ম্যাচ। এই ম্যাচের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকে রোমাঞ্চ। কখনও ছড়ায় বারুদের গন্ধও। তেমনই এক ম্যাচ দেখা গেল রোববার। এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বোলিং তোপে বড় সংগ্রহ গড়া হলো না পাকিস্তানের। মাঝারি এই রান করতে নেমেও পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হলো ভারতকেও। তবে রবীন্দ্র জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটে শেষ হাসিটা তাদের মুখেই উঠলো।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটা ভারতের নবম জয়। একইসঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাতের প্রতিশোধটাও নিয়ে নিলো রোহিত শর্মার দল। এই মাঠেই গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে বিধ্বস্ত করে ১০ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিয়েছিল বাবর আজমের দল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করে নেমে ১৯.৫ ওভারে ১৪৭ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ইনিংস সেরা ৪৩ রান করা মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়া এদিন কেউ-ই দলের হয়ে সেভাবে ব্যাট চালাতে পারেননি। অন্যদের কেউ ৩০ রানও পেরোতে পারেননি। দারুণ বোলিংয়ে লক্ষ্য ছোট রাখতে কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেন ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া, আর্শদীপ সিংরা।
জবাবে শুরুতেই উইকেট হারালেও রোহিত-কোহলি জুটিতে ঠিক পথেই থাকে ভারত। মাঝে জুটি গড়ে দলকে আরেকটু পথ এগিয়ে দেন জাদেজা ও সূর্যকুমার। এরপর হার্কিদের সঙ্গে জুটি গড়েন শেষ ওভারে গিয়ে আউট হওয়া জাদেজা। তার বিদায়ে চরম হতাশা প্রকাশ করলেও নিজের কাজটি ঠিকমতোই সারেন ম্যাচসেরা হার্দিক। তার শাসন করা ব্যাটিংয়ে ২ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ভারত।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ভারত। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ডানহাতি পেসার নাসিম শাহ ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ভেঙে দেন লোকেশ রাহুলের স্টাম্প। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে আরও চেডে ধরেন দারুণ বোলিং করতে থাকা নাসিম ও শাহনওয়াজ দাহানি, হারিস রউফরা।
তাদের সামনে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। রান তুলতে রোহিতকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছিলেন কোহলি। শুরুর দিকে ব্যাটে-বলে সংযোগ করাতে হিমশিম খাওয়া তারকা এই ব্যাটসম্যান তার ইনিংসের পরের দিকে দারুণ কিছু শট খেলেন।
এই জুটি থেকে ৪৯ রান পায় ভারত। জুটির শেষ দিকে রোহিতও হাত খুলে খেলতে থাকেন। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে আবারও তার দুর্বলতা ফুটে ওঠে। মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন ১৮ বলে একটি ছক্কায় ১২ রান করা রোহিত। এর কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন কোহলিও। তাকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন নওয়াজ। রোহিতের মতো তুলে মারতে গিয়ে লং অফেই ধরা পড়েন ৩৪ বলে ৩টি চার একটি ছক্কায় ৩৫ রান করা কোহলি।
হঠাৎ দিক হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন রবীন্দ্র জাদেজা ও সূর্যকুমার যাদব। দাপুটে ব্যাটিং করতে না পারলেও দলকে ঠিক পথেই রাখেন চতুর্থ উইকেটে ৩৬ রান যোগ করা এই দুই ব্যাটসম্যান। সূর্যকুমারের স্টাম্প উপড়ে এই জুটি ভাঙেন নাসিম। এর আগে ১৮ বলে একটি চারে ১৮ রান করেন ভারতের মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এরপর জাদেজার সঙ্গে জুটি বাধেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু এই দুই ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিং করতে না পারায় রান রেট বাড়তে থাকে। শেষ দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন দাঁড়ায় ২১ রান। হারিস রউফের করা ১৯তম ওভারে হার্দিক ৩টি চার মারেন, এ ওভার থেকে আসে ১৪ রান। শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হন দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৫ রান করা জাদেজা।
দিনেশ কার্তিক উইকেটে গিয়ে এক রান নিয়ে হার্দিককে স্ট্রাইক দেন। পরের বল থেকে কোনো রান নিতে পারেননি হার্দিক। কিন্তু ইশারায় তিনি কার্তিককে ঠান্ডা থাকতে বলছিলেন। কেন বলেছিলেন, পরের বলেই মেলে প্রমাণ। মোহাম্মদ নওয়াজের বলে দারুণ এক ছক্কা মেরে খেলা শেষ করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ১৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন হার্দিক।
অভিষেকেই আলো ছড়ানো নাসিম শাহ অবিশ্বাস্য বোলিং করেন। ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন তিনি। তার বোলিং ফিগার আরও ভালো হতে পারতো, কিন্তু চোটের কারণে শেষ দিকে খঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বোলিং করায় সেটা সম্ভব হয়নি। ভারতের যাওয়া বাকি ৩ উইকেটই নেন নওয়াজ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তান এদিন শুরুটা ভালো করতে পারেনি। প্রথম ওভারেই ভারতের বোলিংয়ের তেজ বুঝতে পারে পাকিস্তান। দ্বিতীয় বলেই ভুবনেশ্বরের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন রিজওয়ান, আম্পায়ার তাকে আউটও ঘোষণা করেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
জীবন ফিরে পাওয়া রিজওয়ানকে নিয়ে সব সময়ের মতো সাবলীল ব্যাটিং শুরু করেন অধিনায়ক বাবর। কিন্তু এদিন তার পথচলা দীর্ঘ হতে দেননি ভুবনেশ্বর। ডানহাতি এই পেসারের এক শর্ট ডেলিভারিরে ব্যাট চালিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন বাবর। ফেরার আগে ৯ বলে ২টি চারে ১০ রান করেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।
রিজওয়ানের সঙ্গে উইকেট যোগ দেওয়া ফকর জামানও দারুণ ছন্দে ব্যাটিং শুরু করেন। কিন্তু তার ইনিংস বড় হয়নি। আভেশ খানের শর্ট ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৬ বলে ২টি চারে ১০ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৪২ রানে দুই উইকেট হারানো পাকিস্তানকে পথ দেখাতে শুরু রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ।
তৃতীয় উইকেটে ৪৫ রান যোগ করেন এ দুজন। পাকিস্তানের ইনিংসে এটাই সবচেয়ে বড় জুটি। ইফতিখারের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। সাজঘরে ফেরার আগে ২২ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৮ রান করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ৪২ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৩ রান করা রিজওয়ান আউট হলে মুখ থুবড়ে পড়ে পাকিস্তানের ইনিংস।
নিয়মিত ধারায় উইকেট হারাতে থাকে তারা। শেষ দিকে গিয়ে হারিস রউফ ও শাহনাওয়াজ দাহানির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রান বাড়িয়ে নেয় পাকিস্তান। রউফ ৭ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। দাহানি ৬ বলে ২টি ছক্কায় ১৬ রান করেন। এ ছাড়া শাদাব খান ১০, আসিফ আলী ৯, খুশদিল শাহ ২ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ ১ রান করেন।
পাকিস্তানের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানা ভুবনেশ্বর শেষ দিকেও বেশ ভোগান। নিজের শেষ ওভারে টানা দুই উইকেট তুলে নেন অভিজ্ঞ ডানহাতি এই পেসার। ৪ ওভারে ২৬ রানে ৪টি উইকেট নেন তিনি। দারুণ বোলিং করেন হার্দিকও। ৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় তার শিকার ৩ উইকেট। এ ছাড়া আর্শদীপ ২টি ও আবেশ খান একটি উইকেট নেন।