আফগান শাসনে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

প্রথমে বল হাতে শাসন, পরে ব্যাট হাতে আরও নির্দয় হয়ে উঠলেন আফগানরা। অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে লক্ষ্য নাগালে রেখে আফগানিস্তান এমন ব্যাটিং করলো যেন, লক্ষ্য তাদের পাহাড় সমান। দেশটির দুই ওপেনারের টর্নেডো স্টাইলের ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা স্রেফ উড়ে গেল। পুরো ম্যাচজুড়ে অনেক চেষ্টা করেও দিশা খুঁজে পেল না লঙ্কানরা।
শনিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। উইকেটের হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে এটা তাদের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ জয়। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটাই আফগানদের প্রথম জয়। অবশ্য এর আগে লঙ্কানদের বিপক্ষে তারা খেলেছেই মাত্র একটি ম্যাচ। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে ৬ উইকেটে হেরেছিল আফগানিস্তান। দ্বিতীয় সাক্ষাতেই হিসাবটা চুকিয়ে নিলো তারা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার বাকি ব্যাটসম্যানরা ফজল হক ফারুকী, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে সুবিধা করতে পারেননি। ভানুকা রাজাপাকশে ও চামিকা করুনারত্নের মাঝারি ইনিংস বাদে লঙ্কানদের মাত্র একজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। বাকি সাত জনের কেউ ৫ রানের বেশিও করতে পারেননি। ১৯.৪ ওভারে ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায় দাশুন শানাকার দল।
জবাবে উড়ন্ত সূচনা করা আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও হজরতউল্লাহ জাজাই-ই দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের একেবারে কাছে পৌঁছে দেন মাত্র ৬.১ ওভারে ৮৩ রানের জুটি গড়া এই দুই ব্যাটসম্যান। এরপর জয় তুলে নিতে আর ৫ ওভার লাগে আফগানদের। ১০ ওভারেই, ৫৯ বল হাতে রেখেই বিশাল জয় তুলে নেয় মোহাম্মদ নবীর দল।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন হজরতউল্লাহ ও রহমানউল্লাহ। হজরতউল্লাহ ধীর-স্থির মেজাজে থাকলেও ঝড় বইয়ে দেন রহমানউল্লাহ। ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন লঙ্কান বোলারা। পাওয়ার প্লে ৬ ওভার থেকেই ৮৩ রান পায় আফগানিস্তান।
রহমানউল্লাহর বিদায়ে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ফেরার আগে মাত্র ১৮ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪০ রানের খুনে ইনিংস খেলেন তিনি। জয় থেকে ৩ রান দূরে থাকতে রান আউট হন ১৩ বলে ১৫ রান করা ইব্রাহিম জাদরান। হজরতউল্লাহ ২৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। নাজিবুল্লাহ জাদরান ২ রান তুলতেই দলের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার দিলশান মাদুশাঙ্কা ও মাহেশ থিকসানা একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কার প্রথম ওভারেই জোরালো আঘাত হানেন আফগান পেসার ফজল হক ফারুকী। এই ওভারের শেষ দুই বলে কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা বাঁহাতি এই পেসার। পরের ওভারে তোপ তাগেন নাভিন-উল-হকও। তার শিকার পাথুম নিশাঙ্কা।
৫ রানেই নেই ৩ উইকেট, দিক হারা দলের হাল ধরেন দানুশকা গুনাথিলাকা ও ভানুকা রাজাপাকশে। এই জুটি থেকে ৪৪ রান পায় শ্রীলঙ্কা। মনে হচ্ছিল চাপ সামলে গুছিয়ে নিয়েছে তারা। কিন্তু ১৭ রান গুনাথিলাকা বিদায় নিতেই আবারও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে লঙ্কানদের ইনিংস। দ্রুতই ফিরে যান ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দাসুন শানাকা।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়েন রাজাপাকশে। ফেরার আগে ২৯ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৩৮ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর কেবল চামিকা করুনারত্নে রান করতে পেরেছেন। ৩৮ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রান করেন তিনি। ফারুকী ৩.৪ ওভারে মাত্র ১১ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। মুজিব-উর-রহমান ৪ ওভারে ২৪ রানে নেন ২ উইকেট। অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৪ ওভারে দেন মাত্র ১৪ রান, নেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে রশিদের খরচা আরও কম, ১২ রান। তারকা এই লেগ স্পিনার অবশ্য কোনো উইকেট পাননি।