ব্যাটিং ব্যর্থতায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হারল বাংলাদেশ

শুরুতে দারুণ বোলিংয়ের তৃপ্তি মিলিয়ে যায় রায়ান বার্লের তাণ্ডবে। নাসুম আহমেদকে দুঃস্বপ্ন উপহার দেওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ঝড়ো ব্যাটে মাঝারি সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে। যে লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে সেই পুরনো গল্পই লিখলো বাংলাদেশ, আবারও দেখা গেল ব্যাটিং ব্যর্থতা। শেষ ওভার পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়ালেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দলকে।
মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো জিম্বাবুয়ে। প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলো বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে জিম্বাবুয়ে। শুরুটা ভালো না করতে পারলেও শেষ দিকে রায়ান বার্লের দানবীয় ইনিংস ও লুক জংওয়ের ব্যাটে ৮ উইকেটে ১৫৬ রান তোলে স্বাগতিকরা। জবাবে আফিফ হোসেন ধ্রুব ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট চালিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে পারেননি। সফরকারীদের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে।
এই সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ছিল বাংলাদেশের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার। সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিয়ে তারুণ্য নির্ভর দল গড়া হয়েছিল। তারুণ্যে কতোটা সফলতা মেলে, সেটা পরখ করাই প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে, মেলেনি প্রত্যাশিত ফল। উল্টো প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খোয়াতে হলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
লক্ষ্য তারা করতে নেমে বরাবরের মতো শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানে ফিরে যান ওপেনার লিটন কুমার দাস। যদিও শুরুটা দারুণ ছিল তার। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৬ বলে ২টি চারে ১৩ রান করেন। এরপর পারভেজ হোসেন ইমনও পারেননি রান করতে। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তরুণ এই ওপেনার ৬ বলে ২ রান করে বিদায় নেন।
২৪ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের বিপদ বাড়ে এনামুল হক বিজয়ের বিদায়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এই সফরেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৩ বলে ২টি চারে ১৪ রান করে আউট হন। নাজমুল হোসেন শান্তও হাঁটেন একই পথে, ২০ বলে ১৬ রান করেন তিনি। ৬০ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দিশা পায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাটে।
দ্রুতই উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে যেতে থাকেন তারা। পঞ্চম উইকেটে ৩৯ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ-আফিফ। ২৭ বলে ২৭ রান করে মাহমুদউল্লাহ আউট হতেই এলোমেলো হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস, বাড়তে থাকে বলের সঙ্গে রান তোলার ব্যবধান।
এই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত প্রথম বলেই আউট হন। এরপরও আশা টিকে থাকে আফিফ ও শেখ মেহেদির ব্যাটে। দুজনই দ্রুততার সাথে রান তুলতে থাকেন। মেহেদি ১৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২২ রান করে আউট হলে একা হয়ে পড়েন আফিফ।
শেষ ২ ওভারে ২৬ রান দরকার থাকলেও ১৫ রানের বেশি তুলতে পারেননি তিনি। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৭ বলে ৩টি চারে অপরাজিত ৩৯ রান করেন। জিম্বাবুয়ের ভিক্টর নিয়াউচি ৩টি ও ব্র্যাড ইভান্স ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান ওয়েসলে মাধেভেরে, শন উইলিয়ামস ও লুক জংওয়ে।
এর আগে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ে ৬৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। এখান থেকে দলের হাল ধরেন বার্ল ও জংওয়ে। সপ্তম উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। এ সময় বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দেন তারা। নাসুমের করা ইনিংসের ১৫তম ওভারে ৫ ছক্কা ও এক চারে ৩৪ রান তোলে বার্ল। জংওয়েও খেলেন মারকুটে স্টাইলে।
মাত্র ২৮ বলে ২টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন বার্ল। জংওয়ে ২০ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন। এ ছাড়া রেজিস চাকাভা ১৭ ও অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ২৪ রান করেন। বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ ও শেখ মেহেদি হাসান ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, নাসুম আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহ।