আলোর মুখ দেখছে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা, যেভাবে হবে কাঠামো
দেশের ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের কথা বহু দিন ধরে বলে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বেশ কয়েকবার এই সংস্থা গঠনের কথা বললেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৮ সালে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ঘোষণা দিয়ছিলেন, এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করা হবে, কিন্তু তা হয়নি। দেরিতে হলেও অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা।
মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) গঠনতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি আঞ্চলিক ক্রিকেট। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। আগামী বোর্ড সভার আগেই আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের প্রণালী চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। এজিএমে শেষে এটা এমনই জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রীক। ঢাকা বসেই সারা দেশের ক্রিকেট পরিচালনা করা হয়। যদিও ক্রিকেট দুনিয়ার আর কোথাও এমন নেই। প্রতিবেশি দেশ ভারতের আঞ্চলিক ক্রিকেট ব্যবস্থা বিশ্বমানের। মোট ৩১টি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা আছে দেশটির। বিসিসিআই কেন্দ্রবিন্দু হলেও আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাই নিজ নিজ অঞ্চলের ক্রিকেট উন্নয়ন নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে থাকে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও একই রীতি। কিন্তু বাংলাদেশে এটা এতোদিন আলোচনার টেবিলেই থেকে গেছে।
আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গড়ার আলোচনা বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর আমল থেকেই। যে আলোচনার শুরু ৯০ দশকের শেষভাগে। মাঝে লম্বা সময় এ নিয়ে কারও মধ্যে তেমন মাথাব্যথা না দেখা গেলেও বিসিবির আরেক সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বিষয়টি আলোতে নিয়ে আসেন। যদিও তিনি বিশেষ কিছু করে যেতে পারেননি।
এরপর নাজমুল হাসান পাপন ও তার নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের কার্যকাল (২০১৩) শুরুর প্রথম থেকেই আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের কথা বলে আসছিল। অবশেষে তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এজিএমে অনুমোদন পাওয়ায় আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনে আর বাধা নেই।
এজিএম শেষে এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, 'কন্সটিটিউশনাল অ্যামেন্ডমেন্ট (গঠনতন্ত্র সংশোধন) ছিল সেগুলো আমরা পেশ করেছিলাম, সবগুলোই সর্বসম্মতিক্রমে আমাদের এজিএমে পাশ হয়েছে। কন্সটিটিউশনাল অ্যামেন্ডমেন্টের মধ্যে একটা ছিল আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা, সেটা আজ হয়ে গেল। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা করতে এখন আর বাধা রইলো না।'
'এত দিন আমরা ঢাকা থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করে এসেছি। এখন ঢাকা থেকে বিভাগে যাচ্ছি। জেলায় তো আমাদের আরও কম নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন এর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল, এসব ক্ষেত্রে আমরা আরও ভালো করতে পারব। আশা করছি আমাদের পরবর্তী বোর্ড সভার আগেই কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।' যোগ করেন নাজমুল হাসান।
বিসিবি সভাপতি জানান, সাতটি বিভাগে সাতটি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠন করা হবে। ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের কাউন্সিলর-পরিচালকদের দিয়ে তৈরি হবে সাতটি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। ময়মনসিংহ বিভাগ ঢাকার আওতায় থাকবে। বড় বিভাগের জন্য ১৭ জন সদস্য ও ছোট বিভাগের জন্য ১১ জন সদস্য দায়িত্বে থাকবেন।
আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের মূল উদ্দেশ্য প্রতিটি বিভাগকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া। যদিও সংস্থাগুলো তা পারবে কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, সংস্থার কাঠামো তৈরির দায়িত্ব বিসিবির ওপর। এজিএমে কাউন্সিলররাই বিসিবিকে প্রাথমিকভাবে কাঠামো গঠনের কাজটা করতে বলেছেন।
বিসিবি সভাপতি বলেন, 'আপাতত প্রাথমিক দিকনির্দেশনাটা বিসিবিই তৈরি করবে। এই দায়িত্বটা বিসিবিকে দেওয়া হয়েছে।' সংস্থার দায়িত্বে থাকবে বিসিবির ঠিক করে দেয়া ব্যক্তি এবং নির্বাচিত কয়েকজন। নিজ নিজ বিভাগের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মাথার ওপর বিসিবির কোনো কর্মকর্তা থাকলে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হবে কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।