হতাশায় ছোট বেলার গুরুর দ্বারস্থ সৌম্য
করোনার প্রকোপে ঘরোয়া ক্রিকেট বন্ধ হয়ে গেছে, শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশের টেস্ট দলেও জায়গা হয়নি তার। তবু মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন সৌম্য সরকার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান নিজেকে খুঁজে ফিরছেন। রান না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়লেও খেই হারাচ্ছেন না তিনি। আগের চেয়েও বেশি বেগে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সৌম্য।
নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে ছোট বেলার কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের দ্বারস্থ হয়েছেন জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান। দুদিন ধরে মিজানুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন সৌম্য। কাজ করতে গিয়ে প্রিয় শিষ্যের মনের অবস্থা টের পেয়েছেন কোচ। মঙ্গলবার মিজানুর রহমান জানালেন, অনেক দিন ধরে রান করতে না পারায় সৌম্য কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ দলে পা রাখা সৌম্য সাত বছরে বেশ কয়েকবার খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন। টানা সুযোগ পেয়েও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। একটা সময়ে এসে দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে তাকে। আবারও চেষ্টা করেছেন, ফিরেছেন জাতীয় দলে। কিন্তু দলে এখনও জায়গাটা পোক্ত করতে পারেননি এক সময়ের প্রতিভাবান এই ক্রিকেটার।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় খেলার পর ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে দলে ফেরেন সৌম্য। ব্যাটিং অর্ডার পেছনে থাকায় নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি তিনি। দলের অনেকের আশা ছিল, নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে চেনা ছন্দে দেখা যাবে তাকে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডেও ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি ছিলেন তিনি। কিউইদের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে করেন ৩৩ রান। তিন টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। দুই ফরম্যাটের ৬ ম্যাচে সৌম্যর সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৫১ রানের।
এমনিতেই দলে ব্যাটিং অর্ডারের ঠিক নেই, তার ওপর এমন পারফরম্যান্স; সৌম্য বুঝতে পারছেন আগামীর সময়টা আরও কঠিন হবে। তাই তো করোনাকালেও নিজের ব্যাটিং উন্নতিতে মাঠে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। কাজ করছেন ব্যাটিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে।
সৌম্যকে নিয়ে মিজানুর রহমান বাবুল বলেন, 'কাল আমি এখান থেকে যাচ্ছিলাম, সৌম্যর সাথে দেখা। বলল যে স্যার 'আমার সাথে একটু কাজ করেন।' সৌম্যদের যে ব্যাচটা অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে খেলে আসছে, আমি ওদের কোচ ছিলাম। দিনশেষে ওরা মনে করে যে 'পুরোনো স্যারদের কাছে ফিরে যাই। স্যাররা তো শুরু থেকে আমাদের দেখেছে, এখন কী অবস্থায় আছি দেখি।'
'সেই আস্থা থেকে হয়তো বলেছে 'স্যার একটু দেখেন।' গতকাল কিছুক্ষণ ছিলাম, আজ আবার এলাম। সৌম্য অনেকদিন রান করতে পারছে না, কিছুটা তো হতাশই। যেহেতু আমাদের কাছে হাতেখড়ি, কিছু দায়িত্ব থাকে তাদের উপর। আমরা যদি কিছুটা হলেও তাদের ফর্মে ফিরিয়ে আনতে পারি, সেটা আমাদের জন্যও ভালো লাগবে, ওদের জন্যও।' যোগ করেন স্থানীয় এই কোচ।
দুদিন কাজ করে সৌম্যর সমস্যা ধরতে পেরেছেন মিজানুর রহমান। তার কাছে মনে হচ্ছে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে রান পাচ্ছেন না সৌম্য। ব্যাটিংয়ের সময় ভারসাম্য না থাকায় ধুঁকছেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। তিনি বলেন, 'আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, অল্প কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা তো হয়েছেই, না হলে তো রান করতে পারতো। সৌম্য বুঝতে পেরেছে যে ওর ভারসাম্যে কিছুটা সমস্যা ছিল। ওটা নিয়েই কাজ করা হচ্ছে, অন্য সব ঠিকঠাক আছে।'
অবশ্য কেবল সৌম্যই নন, অতীতে দীক্ষা দেওয়া সব ছাত্রের দিকেই নজর থাকে বলে জানালেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, 'যারা আমাদের হাত দিয়ে উঠে এসেছে, তাদের আমরা ফলো করার চেষ্টা করি। যাদের গড়ে ওঠার পেছনে আমাদের সামান্যতম অবদানও আছে, এখন জাতীয় দলে খেলে, আমরা তাদের ফলো করি যে কী রকম খেলছে। ভালো খেললে ভালো লাগে, অফ ফর্মে থাকলে কিছুটা তো খারাপ লাগেই।'