সালাহউদ্দিনের বিশেষ ক্লাসে তামিম-মুমিনুল
তাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। আড্ডায় তারা প্রায় সবকিছু নিয়েই আলোচনা করেন, মজা করেন। যদিও তারা গুরু-শিষ্য। মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও তার প্রিয় দুই ছাত্র তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের কথা বলা হচ্ছে। সাকিব আল হাসানের মতো এই দুই ক্রিকেটারেরও শেষ আশ্রয়স্থল স্থানীয় এই কোচ।
কোনো কিছু যখন ঠিক মতো হচ্ছে না, সালাহউদ্দিনকে মনে পড়ে তাদের। বিপদে পড়লেই তামিম-মুমিনুলরা ছুটে যান তার কাছে। এই গুরুর কাছ থেকে নিয়ে আসেন সঠিক পথে হাঁটার রসদ। এটা কেবল ক্রিকেটেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা নিয়েও প্রিয় গুরুর সঙ্গে আলোচনা করেন তারা।
খারাপ সময়ের মধ্যে থাকায় আরও একবার কোচ সালাহউদ্দিনের দ্বারস্থ হয়েছেন তামিম ও মুমিনুল। সমস্যা কাটিয়ে নিজেদের ফিরে পেতে সালাহউদ্দিনকে তাদের অনুশীলনে আসার অনুরোধ করেছিলেন বাংলাদেশের এই দুই ক্রিকেটার। সব সময়ের মতো প্রিয় শিষ্যদের ডাকে সাড়া দিয়ে মিরপুরে এসেছিলেন সালাহউদ্দিন।
শারীরিক অসুস্থতা থাকার পরও তামিম, মুমিনুলের ব্যাটিং নিয়ে শনিবার দীর্ঘক্ষণ কাজ করেছেন স্থানীয় এই তারকা কোচ। এদিন মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল মাঠে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম সেরা দুই কান্ডারিকে নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা কাজ করেছেন তিনি।
জিম্বাবুয়ে সিরিজকে সামনে রেখে বাংলাদেশের টেস্ট দল ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুশীলন শুরু করবে। এর আগে অনুশীলনের বাধ্যবাধকতা নেই ক্রিকেটারদের। এই সময়টাই কাজে লাগাচ্ছেন ব্যাট হাতে নিজেদের ছায়া হয়ে ওঠা তামিম-মুমিনুলরা। যেখানে কোচ সালাহউদ্দিনের উপস্থিতি মনে-প্রাণে চেয়েছেন এ দুজন।
শনিবার সকাল সকাল মাঠে চলে আসেন তামিম, মুমিনুলসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার। সালাহউদ্দিনের পাশাপাশি মাঠে উপস্থিত হন জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও নবনিযুক্ত বোলিং কোচ ওটিস গিবসনও। জাতীয় দলের দুই কোচের সঙ্গে মিলে শিষ্যদের সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করেন সালাহউদ্দিন। চালিয়ে যান বেলা আড়াইটা পর্যন্ত।
দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, জাতীয় দলের বাইরের কোনো কোচের সঙ্গে কাজ করছেন ক্রিকেটাররা। একটু পরপরই ডমিঙ্গোর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন সালাহউদ্দিন। দেখাচ্ছিলেন তামিম, মুমিনুলের ব্যাটিংয়ের ঠিক কোন জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে। ডমিঙ্গো অবশ্য দেড়টার দিকে মাঠ ছাড়েন। কিন্তু সালাহউদ্দিন থেকেছেন শিষ্যদের শেষ বল খেলা পর্যন্ত।
তামিম যখন নেটে ব্যাটিং করছিলেন, সালাহউদ্দিন তখন ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। একবার উইকেটের পেছনে যাচ্ছিলেন, আবার জায়গা পরিবর্তন করে অন্যদিক থেকে দেখছিলেন। কোনো শটে ভুল ব্যাট চালালেই ছুটে যাচ্ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ওপেনারকে থামিয়ে বলে দিচ্ছিলেন ঠিক কোন পজিশনে থেকে বলটি খেলতে, কীভাবে ব্যাট চালাতে হবে।
তামিম শেষ করার পর মুমিনুলকে নিয়ে আরও কিছুটা সময় কাজ করেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) কোচ হিসেবে দুটি শিরোপা জেতা সালাহউদ্দিন। অনুশীলন শেষেও ব্যাটিং নিয়ে মুমিনুলের সঙ্গে আলাপ শেষ হচ্ছিল না তার। ড্রেসিং রুমের দিকটায় ফিরে আরও একবার মনে করিয়ে বলছিলেন, ‘ঠিক এইভাবেই খেলবি।’ মাথা নেড়ে, শ্যাডো করে সায় দিচ্ছিলেন মুমিনুল।
১৮ ফেব্রুয়ারি অনুশীলনের আগে প্রিয় কোচের সঙ্গে আরও কয়েকদিন কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ও দীর্ঘ বিরতির পর পাকিস্তান সফর দিয়ে জাতীয় দলে ফেরা তামিম ইকবাল। ১৬ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাটিং নিয়ে সালাউদ্দিনের সঙ্গেই কাজ করবেন তামিম-মুমিনুল।
তিন কোচের বিশেষ এই ক্লাসে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আরও দুজন ক্রিকেটারের। পেসার আল আমিন হোসেনকে নিয়ে কাজ করেছেন ওটিস গিবসন। এ ছাড়া মোহাম্মদ মিঠুনের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সালাহউদ্দিন। ডমিঙ্গোর পাওয়া নির্দেশনার পাশাপাশি সালাহউদ্দিনের পরামর্শ মতো অনুশীলন করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানও।
অতীতেও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সালাহউদ্দিনের দ্বারস্থ হয়েছেন সাকিব, তামিম, মুমিনুলরা। যখন কোনো দিকই আর খোলা পান না, এই তিন ক্রিকেটার সোজা চলে যান তার কাছে। সাকিব তো সর্বশেষ আইপিএলে অনুশীলন চালিয়ে নিতে সালাউদ্দিনকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সে সময় ফিটনেসসহ ব্যাটিং-বোলিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রিয় কোচের সঙ্গে কাজ করেছেন বর্তমানে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় থাকা বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। যে অনুশীলনের ফল দেখা গেছে বিশ্বকাপে। দল না পারলেও বিশ্বকে শাসন করে এসেছেন তিনি।