সাকিব নিজেই যখন নিজের কোচ
এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন, একটি টুর্নামেন্টেও খেলে ফেলেছেন। কিন্তু যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করা হয়নি সাকিব আল হাসানের। অন্যভাবেও বলা যায়, মাঠে ভিন্ন এক সাকিবকে দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ থাকা বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার বল হাতেও থেকে গেছেন সাদামাটা।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে জেমকন খুলনার হয়ে ৯টি ম্যাচ খেলেন সাকিব। ৯ ম্যাচের একটিতেও হাসেনি তার ব্যাট। নেই কোনো হাফ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২৮। ৯ ম্যাচে মাত্র ১২.২২ গড়ে ১১০ রান করেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। বল হাতেও ছিলেন অনুজ্জ্বল। কম খরুচে থাকলেও সাকিবের শিকার ছিল মাত্র ৬ উইকেট।
যদিও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের পারফরম্যান্স সাকিবের কাছে অনেকটা গুরুত্বহীনই। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ওই টুর্নামেন্টের কথা মনেই নেই তার। ওই টুর্নামেন্টে ভালো-খারাপ খেলায় কিছুই আসত-যেত না। মাঠে নেমে খেলার অভ্যাস তৈরি করাটাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের পারফরম্যান্সের গুরুত্ব না দিলেও এই টুর্নামেন্টটি খেলে সাকিব বুঝতে পেরেছেন, কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বুঝতে পেরেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পুরনো ছন্দে ফিরতে ঠিক কোন কোন জায়গায় কাজ করতে হবে। আর সে মোতাবেক কাজ শুরু করেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় দলের অনুশীলন। দলের সঙ্গে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রাণভোমরা। নেটে ব্যাটিং-বোলিংয়ের অনেক সময় ব্যয় করছেন তিনি। জাতীয় দলের ভারতীয় কম্পিউটার বিশ্লেষক শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে নেমেছেন সাকিব।
বাংলাদেশের স্পিন বোলিং পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেটোরি নিউজিল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতির কারণে আসতে পারেননি। স্পিন বোলিং কোচ ছাড়াই চলছে অনুশীলন। এ সময়ে স্পিন বোলিং কোচের 'প্রক্সি' দিচ্ছেন সোহেল ইসলাম। স্থানীয় এই কোচের সঙ্গে কথা বলে শ্রীনিবাসনকে নিয়ে বোলিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন সাকিব।
সোমবার অনুশীলনে একবার ব্যাটিং-বোলিং করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। কিন্তু নিজেকে চেনা ছন্দে দেখতে কিছুক্ষণ পর আবারও বল হাতে নেটে নেমে পড়েন গত বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করা সাকিব। এবার তার সঙ্গে নেটের বাইরে ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে যান শ্রীনিবাসন। সাকিব বোলিং করছিলেন, সেটা ভিডিও করছিলেন শ্রীনিবাসন।
কয়েকটি বল করার পর শ্রীনিবাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় সাকিবের। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ডেলিভারি পয়েন্ট থেকে শুরু করে ব্যাটসম্যানের কোন জোনে বোলিং করতে হবে, এসব নিয়ে আলোচনা করছিলেন সাকিব-শ্রীনিবাসন। এভাবে বেশ অনেকটা সময় কাটান সাকিব। বোলিংয়ের শেষের দিকে একেকটি ডেলিভারির পর সাকিবকে বিভিন্ন বিষয়ে বোঝাচ্ছিলেন শ্রীনিবাসন।
দীর্ঘ বিরতির পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরাটা ভালো হয়নি সাকিবের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কাজটি যে সহজ হবে না, সেটা জানা হয়ে গেছে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের। গত ৩ জানুয়ারি সাকিব বলেছিলেন, 'চেষ্টা করব যেন আগের জায়গাতে ফিরতে পারি। তবে সবই বোঝা যাবে খেলা শুরু হলে। ব্যাপারটা অবশ্যই সহজ হবে না আমার জন্য। তবে আমি নিজের জায়গা থেকে অবশ্যই চেষ্টা করব।' সেই চেষ্টায় রাত-দিন এক করে ফেলছেন বাংলাদেশ প্রাণভোমরা।