সব ধরনের ক্রিকেট থেকে শরিফের অবসর

২০০১ সালে জাতীয় দলে অভিষেক। স্বপ্নের যাত্রাটা চলেছে সাত বছর, ২০০৭ পর্যন্ত। কিন্তু মাঝে বারবার ছন্দপতন হয়েছে। মোহাম্মদ শরিফের স্বপ্নের পথচলাও তাই লম্বা হয়নি। ২০০৭ সালেই জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। কিন্তু খেই হারানোর পাত্র নন তিনি। ইনজুরির ছোবলে ছিটকে গেলেও বারবার ফিরে এসেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে গেছেন দারুণ প্রতাপে।
অবশেষে থামবেন বলে মনকে স্থির করেছেন বাংলাদেশের ডানহাতি এই অভিজ্ঞ পেসার। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে ১০টি টেস্ট ও ৯টি ওয়ানডে খেলা শরিফ। ২০ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারের ইতি টানার বিষয়টি শনিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন তিনি।
অবসরের ঘোষণা দিলেও আরও একটি ম্যাচ খেলতে চান শরিফ। তিনি বলেন, 'সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। অনেক বছর ক্রিকেট খেলায় সবাই বলছে মাঠ থেকেই বিদায় নিতে। প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচ খেলে যেন বিদায় নিই, অনেকেই এমন চান। পরিস্থিতি ভালো হলে প্রিমিয়ার লিগে একটা ম্যাচ খেলে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে নিব। তবে অবসর নিয়ে নিয়েছি আমি ক্রিকেট থেকে।'
কোনো পরিকল্পনা করে অবসর নেননি শরিফ। মজা করে বলতে বলতেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন তিনি। শরিফ বলেন, 'এটা আসলে হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা। কোনো কিছু চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিইনি। এ বছর মনে হয় না লিগ আর হবে। সে ক্ষেত্রে খেলারও আর সুযোগ নেই। এ ছাড়া কাঁধেও একটি ইনজুরি আছে। এ বছর আর ম্যাচ নাও খেলা হতে পারে। সব মিলিয়েই আর কি অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া।'
মাঠের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেও ক্রিকেটেই থাকতে চান শরিফ। তার ইচ্ছা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কোচিং বা নির্বাচক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। শরিফ বলেন, 'সামনে বিসিবি যদি কোনো দলের সঙ্গে বা বয়সভিত্তিক কোনো দলে কোচিং বা নির্বাচক প্যানেলে রাখতে চায়, তাহলে আগেই আমার দিকে থেকে সেটা জানিয়ে রাখা ভালো। যদি নাই খেলি, সেটা আগেই বলা ভালো।'
এ সময়ে না বলে সামনেও ঘোষণা দিতে পারতেন জানিয়ে ৩৪ বছর বয়সী শরিফ আরও বলেন, 'হয়তো এই সময়ে না বললেও পারতাম। পরিস্থিতি ভালো হলে হয়তো সেসময় ঘোষণা দিতে পারতাম। মাঠে গিয়ে বলতে পারলেই ভালো হতো। আসলে মজা করে বলতে বলতেই কথার ছলে বলে ফেলেছি।'
২০০১ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় মোহাম্মদ শরিফের। ওই বছরের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তিনি। ওই সফরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই টেস্ট অভিষেক হয় তার। বাংলাদেশের হয়ে ১০ টেস্টে ১৪ উইকেট এবং ৯ ওয়ানডেতে ১০টি উইকেটের মালিক ডানহাতি এই পেসার।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বড় না করতে পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে ২২ গজে দাপট দেখিয়েছেন শরিফ। ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৩২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছেন তিনি। যা বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিয়েছেন ৩৯৩ উইকেট। ৪০০ উইকেট পূর্ণ করতে ৭ উইকেট বাকি থাকায় আক্ষেপই ঝরলো তার কণ্ঠে। বললেন, 'অনেক কিছুই পেয়েছি ক্যারিয়ারে। এই ৭ উইকেট নিতে পারলে ভালো লাগতো। এটা নিয়ে আক্ষেপ থাকবে।'
বোলিংয়ের পাশাপাশি শেষের দিকে ব্যাট হাতেও দলের জন্য অবদান রাখতেন তিনি। প্রথম শ্রেণিতে একটি সেঞ্চুরি ও ১০টি হাফ সেঞ্চুরিতে ৩ হাজার ২২২ রান করেছেন শরিফ। ১৫ বছর ১২৮ দিনে টেস্ট অভিষেক হওয়া শরিফ ১১৯টি লিস্ট 'এ' ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তার উইকেট ১৮৫টি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া শরিফ শেষ ম্যাচটিও খেলেন এই দলের বিপক্ষে। সেটাও অভিষেকের ভেন্যু হারারেতেই। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের হয়ে শেষ ওয়ানডে খেলেন তিনি। এরপর চেষ্টা করেও জাতীয় দলে ফেরা হয়নি তার। একই বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেন মোহাম্মদ শরিফ।