যে ‘ড্রাগ’ সেবন করে নিষিদ্ধ কাজী অনিক
২০১৮ সালের কথা। কক্সবাজারে জাতীয় ক্রিকেট লিগ চলাকালীন ডোপ পরীক্ষা উতরাতে ব্যর্থ হন কাজী অনিক ইসলাম। তার শরীরে মেথামফেটামিন নামক ড্রাগের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে বিসিবির মাদক বিরোধী আইনের ৮.৩ ধারা ভঙ্গ হওয়ায় তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবেন তরুণ বাঁহাতি এই পেসার।
অবশ্য বয়সের কারণে কিছুটা ছাড়ই পেয়েছেন ২০১৮ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার। এমফেটামিন শরীরে প্রয়োগ করলে এটার নূন্যতম শাস্তি হয় চার বছর। কিন্তু কাজী আনিকের বয়স বিবেচনা করে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিসিবির একটি সূত্র।
যে মেথামফেটামিন সেবন করে কাজী অনিকের ক্যারিয়ার প্রশ্নের মুখে, সেটা আসলে কী? বিসিবির সূত্রই এই বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে পরিষ্কার করলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কথা বলায় বারণ থাকায় নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি জানান, এটাকে এমফেটামিন বলে। সাধারণত এটা স্টিমুলেন্ট (শরীর চাঙ্গা করে এমন উদ্দীপক ওষুধ) গ্রুপে পড়ে।
তিনি বলেন, 'এক সময় মানুষ এমফেটামিন খেতো জেগে থাকার জন্য। এটা ক্লান্তি কমিয়ে দেয়। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল, জার্মানিরা ব্যবহার করেছিল। এটা ওদের সৈন্যদের খেতে দিতো। ফলে ওরা ঘুমাতো না, সারাদিন যুদ্ধ করতো। এটার কিছু উপকারিতা স্পোর্টসে থাকতে পারে। কারণ একজন মানুষ এটা খেলে ক্লান্তি অনুভব করবে না।'
কাজী অনিক একই কারণে এমফেটামিন খেয়েছে বলে তিনি মনে করেন না, 'আমাদের খেলোয়াড় এটার জন্য খায়নি। সে এটাও জানে না মনেহয়। সে খেয়েছে বিনোদোনমূলক ড্রাগ হিসেবে। এটা বিশ্বের পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত বিনোদোনমূলক ড্রাগের মধ্যে অন্যতম। অন্যান্য জায়গায় এটাকে আইস বলে। এটাকে পার্টি ড্রাগ বলে। এটা খেয়ে সারা রাত পার্টি করে। তবে কাজী অনিক পার্টি করার জন্য এটা খায়নি। সে নিজেও জানে না এ সম্পর্কে। বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় খেয়ে ধরা পড়ে গেছে।'
ক্রিকেটে এসব ড্রাগ কখনই ব্যবহৃত হয় না। অনেকক্ষণ ধরে খেলতে হয়, এমন খেলায় এসব ব্যবহৃত হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'মূলত এটার জন্য শাস্তি চার বছর। কিন্তু তাকে শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ তার বয়সটা চিন্তা করা হয়েছে। এটা তার দ্বারা প্রথম, এটা চিন্তা করা হয়েছে। এসব চিন্তা করেই চার বছরের বদলে তাকে দুই বছরের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।'
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ঘোষণা এতো পরে কেন? এমন প্রশ্নে বিসিবির সূত্র বলেন, 'এই পুরো প্রক্রিয়ায় ছয় মাস-এক বছর সময় লাগে। সেই হিসেবে হয়তো আমাদের আরও ছয় মাস আগে ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। কয়েকটা কারণে পারিনি। প্রথমত গত চার মাসে কোভিড-১৯ এর জন্য কিছুই হয়নি। এ ছাড়া এখানে ওর স্বাক্ষরের ব্যাপার আছে, স্বাক্ষর দিতে আসতে হবে।'
'দ্বিতীয়ত, এটাতে ভুল নেই। কারণ এটাই আমাদের প্রথম ঘটনা। বাংলাদেশে এমন আর কখনও হয়নি। এটার সঙ্গে বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যান্টি ডোপিং অর্গানাইজেশন (ন্যাডো) জড়িত, সাউথ এশিয়ান অ্যান্টি ডোপিং অর্গানাইজেশন জড়িত। এর বাইরে ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এবং আইসিসি: এই মোট চারটি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, লিগ্যাল কাগজ তৈরি করতে সময় লাগে।'
বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় দেরি হয়েছে বলেন জানান তিনি, 'এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য নিতে হয়েছে। এখন আমরা বুঝেছি ব্যাপারটা কীভাবে করতে হয়। বাংলাদেশের যে ন্যাডো, তারা খুব একটা সঙ্গ দেয়নি। একটা কমিটি আছে, কিন্তু তারা বুঝতেই পারছে না। সব মিলিয়ে দেরি হয়েছে।'
ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার পর যেসব ম্যাচ খেলেছেন কাজী অনিক, সেসব রেকর্ডে থাকবে না। সব মুছে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি, 'সে নমুনা দিয়েছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। তখন থেকে ওর খেলার যতো প্রাইস, ডকুমেন্ট সব মুছে দেওয়া হবে। সে যখন নমুনা জমা দিয়েছে, তখন থেকেই নিষিদ্ধ। ওর সব রেকর্ড মুছে দেওয়া হবে। ওকে খেলতে দেওয়া হবে ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে। কিন্তু এর দুই মাস আগে থেকে সে অনুশীলন করতে পারবে। দুই মাস আগে থেকে সে বিসিবির অনুশীলনের সুবিধা নিতে পারবে। তবে এখন থেকেই নিজের মতো করে অনুশীলন করতে তার কোনো বাধা নেই।'
এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, 'প্রেস রিলিজে বিস্তারিত বলা আছে। ৫ পাতার যে রায়টা, সেই রায়ের মধ্যে আরও বিস্তারিত বলা আছে। যে কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যক্তিগতভাবে এটা নিয়ে কোনো কথা বলব না। কারণ এটা লিগ্যাল ইস্যু। এটা নিয়ে কেউ কথা বললে সেটা বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলবেন।'