যে কারণে শুরু থেকে প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন না মাশরাফি
৩১ মে থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। সব দল ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে। পিএসএল বাদ দিয়ে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। মুশফিকুর রহিম আবাহনী লিমিটেডে, তামিম ইকবাল খেলবেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসরটি।
এতো ক্রিকেটারের ভিড়ে নেই একটি নাম, মাশরাফি বিন মুর্তজা। গত বছর করোনার প্রকোপে প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত হয়ে যাওয়ার আগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেন জাতীয় দলের সাবেক এই ওয়ানডে অধিনায়ক।
এবার দল পুরোদমে অনুশীলন চালিয়ে গেলেও মাশরাফির দেখা নেই। মাশরাফির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেলো, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব ও ফিটনেসে ঘাটতি থাকায় প্রিমিয়ার লিগের শুরু থেকে খেলবেন না তিনি। টুর্নামেন্টের শেষের দিকে গিয়ে খেলার কথা জানিয়েছেন দেশের সফলতম এই পেসার।
করোনায় বদলে গেছে অনেক কিছুই। আগে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ কমে এসেছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আয়োজেনের বিষয়টি অনেক আগে ঘোষণা দিতে পারেনি বিসিবি। সুযোগ বুঝে অনেকটা হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিসিবিকে। এ কারণে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাননি মাশরাফি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'আগে নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকতাম। বিরতিতে থাকলেও লিগ শুরুর অনেক আগে জানতে পারতাম, তখন প্রস্তুতি নিতাম। এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। বলা যায় অনেকটা হঠাৎ করেই জানতে পেরেছি, খেলা শুরু হচ্ছে। যা সময় পেয়েছি, প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। ব্যস্ততাও ছিল। প্রস্তুতি ছাড়া খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।'
মাশরাফির দায়িত্ব বেড়েছে। কেবল ক্রিকেট নিয়েই নিয়েই, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে অনেক বিষয় নিয়েই কাজ করতে হয় তাকে। সব মিলিয়ে ২০-২২ দিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার মতো মানসিক অবস্থায় নেই তিনি। আবার পারফরম্যান্স করলেই যে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ হবে, সেই বিশ্বাসও নেই মাশরাফির।
অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বলেন, 'জৈব সুরক্ষা বলয়ও একটি কারণ। ২০-২২ দিন হোটেলে সুরক্ষা বলয়ে থাকার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই। তাড়নাও কমেছে। লিগে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ থাকবে বা বিবেচনায় আসতে পারি, এমন হলেও চ্যালেঞ্জটা নেওয়া যেত। পারফর্ম করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেওয়ার পরও জায়গা পাইনি। প্রিমিয়ার লিগে খুব ভালো করলেও ওইভাবে কিছু হবে না, লাভ নেই।'
টুর্নামেন্টের শেষের দিকে খেলার পরিকল্পনা আছে মাশরাফির। মাঝের এই সময়ে অনুশীলন করে নিজেকে প্রস্তুত করতে চান তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে না খেলার পেছনে প্রস্তুতির ঘাটতিই মূল কারণ। তবে দীর্ঘ সময় জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার ব্যাপারটিও ভাবিয়েছে তাকে। মাশরাফির ভাষায়, 'দীর্ঘ সময় জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে চাই না। প্রস্তুতি নিতে পারলে টুর্নামেন্টের পরের দিকে খেলতে পারি। শেষের দিকে ৮-১০ দিন হতে পারে সেটা।'
জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছেন মাশরাফি। গত বছর মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন তিনি। অবশ্য করোনার প্রকোপ থাকায় মাঠে ফেরার সুযোগও ছিল না। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি দিয়ে মাঠে ফেরেন মাশরাফি। বল হাতে ভালোও করেন, চার ম্যাচে নেন ৬ উইকেট। এর মধ্যে এক ম্যাচে ৩৫ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট, যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা।
এরপরও দলে জায়গা পাননি তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে মাশরাফিকে ছাড়াই দল ঘোষণা করা হয়। এরপর নিউজিল্যান্ড সফর, ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সফরে তাকে বিবেচনা করা হয়নি। ৩৭-এ পা রাখা মাশরাফি অবশ্য এসব নিয়ে ভাবছেন না। আগের মতো করেই জানালেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও কিছুদিন খেলে যেতে চান তিনি।
প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিকে খেলার পরিকল্পনা তো আছেই, পরবর্তী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) খেলতে চান জাতীয় দলের হয়ে ২১৮ ওয়ানডেতে ২৬৯ উইকেটের (সাকিবের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ) মালিক মাশরাফি, 'আরও কিছুদিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাব। প্রিমিয়ার লিগের শেষের দিকে খেলার ইচ্ছা আছে। পরবর্তী বিপিএলেও খেলতে চাই।'
করোনার প্রকোপে গত বছর প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত হয়ে যায়। লম্বা বিরতির পর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আসরটি। প্রিমিয়ার লিগের ২০১৯-২০ মৌসুমে হিসেবে আসরটিকে ধরা হলেও এবার ভিন্ন ফরম্যাটে খেলা হবে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ।