মেসিদের হারিয়ে এগিয়ে গেল রিয়াল
রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা মানেই ঝাঁঝালো এক ফুটবলের লড়াই। ঐতিহাসিক এল ক্ল্যাসিকো লড়াই জিততে মরিয়া থাকে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। শনিবার রাতের এল ক্ল্যাসিকোর মাহাত্ম্য ছিল আরও বেশি। লা লিগা শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে যেতে এই ম্যাচটি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। এমন ম্যাচে বার্সেলোনাকে হারিয়ে এগিয়ে গেল জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।
শনিবার রাতে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো স্টেডিয়ামে বার্সেলোনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের শুরুতেই করিম বেনজেমার গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। ১৫ মিনিটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠান টনি ক্রুস। বার্সেলোনার পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন অস্কার মিনগেসা। এই জয়ে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে রিয়াল।
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের একাদশে দলে ছিলেন না রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র সার্জিও রামোস। কার্ভাহালও ইনজুরিতে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে রাফায়েল ভারানে। এরপরও সেভাবে রিয়ালের পরীক্ষা নিতে পারেনি বার্সেলোনা। প্রথমার্ধে ২ গোল হজম করা কাতালানরা দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাকে ঘুরে দাঁড়ালেও একটির বেশি গোল আদায় করতে পারেনি।
এবারের লা লিগায় দুটি এল ক্ল্যাসিকোতেই রিয়ালের বিপক্ষে হারলো বার্সা। গত অক্টোবরে ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পেই ৩-১ গোলে হেরেছিল লিওনেল মেসির দল। দলের ব্যর্থতার মতো মেসিও এল ক্ল্যাসিকোতে আরও একবার অনুজ্জ্বল থেকে গেলেন। এ নিয়ে টানা সাতটি এল ক্ল্যাসিকোতে গোল করতে ব্যর্থ হলেন আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড।
অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ এল ক্ল্যাসিকো জিতেই চলেছে। এ নিয়ে টানা তিনটি ম্যাচে বার্সেলোনার বিপক্ষে জয় তুলে নিলো তারা। ৪৩ বছর পর এসে টানা তিনটি এল ক্ল্যাসিকো জিতলো স্প্যানিশ জায়ান্টরা। সর্বশেষ ১৯৭৮ সালে লা লিগায় টানা তিন ম্যাচে বার্সেলোনাকে হারিয়েছিল রিয়াল।
এক হারে যেন সবই গেল মেসি-গ্রিজম্যানদের! রিয়ালের কাছে হার কাতালানদের জন্য সব সময়ই একটু বেশি তেঁতো। এর ওপর থেমে গেলো লা লিগায় টানা ১৯ ম্যাচে তাদের অপরাজিত থাকার দৌড়। দীর্ঘ সময় পর লা লিগায় হারের স্বাদ নিতে হলো রোনাল্ড কোম্যানের শিষ্যদের। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে কার্দিসের বিপক্ষে লা লিগায় ম্যাচ হেরেছিল কাতালানরা।
শনিবার রাতে রিয়ালের বিপক্ষে তরুণ দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল বার্সা। তাদের দলের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল অনূর্ধ্ব-২৬। এতো তরুণ দল নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে দীর্ঘদিন খেলেনি বার্সা। ২০০৫ সালের পর এমন তরুণ দল নিয়ে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল কাতালানরা।
শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলতে থাকা রিয়াল ১৩তম মিনিটেই এগিয়ে যায়। লুকাস ভাসকেসের পাস থেকে বার্সেলোনার ডি-বক্সে বল পান বেমজেমা। অসাধারণ সাইড-ফুট ফ্লিকে বল জালে জড়িয়ে দেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। ২৮তম মিনিটে টনি ক্রুসের নেওয়া ফ্রি কিক বার্সেলোনার দুজন ফুটবলারের শরীরে লেগে জালে জড়ায়।
৩৪তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতো রিয়াল মাদ্রিদ। পাল্টা আক্রমণে ভিনিসিউস বল বাড়ান ভালভার্দের দিকে। উরুগুইয়ান এই মিড ফিল্ডার দারুণ শট নিলেও গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরে আসা বলে বুলেট গতির শট নেন ভাসকেস। দারুণ দক্ষতায় বল ফিরিয়ে দলকে বাঁচান বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগান।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান কমাতে পারতো বার্সেলোনা। এ সময় অসাধারণ এক কর্নার শটে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেন মেসি। বার্সা অধিনায়কের নেওয়া বাঁ পায়ের বাঁকানো শট রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া ফেরাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। লাফিয়ে বলের নাগাল পাননি তিনি। কিন্তু মেসির শটটি দ্বিতীয় গোল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটে কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন মেসি। এবার বল ফিরিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন কর্তোয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে নতুন বার্সার দেখা মেলে। বৈরী আবহাওয়ার মাঝেই দারুণ ফুটবল খেলতে থাকে তারা। প্রথমার্ধে শুরু হওয়া বৃষ্টি দ্বিতীয়ার্ধে আরও বাড়ে, সঙ্গে বাতাসও বইতে শুরু করে। কিন্তু কঠিন এই আবহাওয়ার মাঝেও বারবার রিয়ালের রক্ষণভাগে হানা দিতে থাকে তারা। ৬০তম মিনিটে গিয়ে মেলে গোলের দেখা। জর্দি আলবার ক্রস থেকে গোল করেন প্রথম এল ক্ল্যাসিকো খেলতে নামা তরুণ ডিফেন্ডার মিনগেসা।
বাকিটা সময় ব্যবধান কমাতে প্রাণপণে লড়ে গেছে বার্সেলোনা। গোলের সম্ভাবনাও তৈরি করেছে মেসির দল। কিন্তু জালের ঠিকানা মেলেনি। ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় কাতালানদের। ৩০ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল। এক ম্যাচ কম খেলা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ সমান পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে। ৩০ ম্যাচে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে বার্সেলোনা।