মিরপুরের সমর্থন চট্টগ্রামে পাচ্ছে না পাকিস্তান
টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম বাংলাদেশিদের সমর্থনের কথা জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর ফকর জামান জানান, তিনি বুঝতেই পারছেন না বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তানে হচ্ছে। মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি সমর্থকের পরিমাণ দেখে চমকে গিয়েছিলেন তারা।
চমকে যাওয়ার কারণও ছিল। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশি সমর্থকের পাশাপাশি মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দেখা মেলে পাকিস্তানি সমর্থকদেরও। পাকিস্তানের হয়ে গলা ফাটান অনেক বাংলাদেশি। কেউ কেউ গ্যালারিতে হাজির হন পাকিস্তানের পতাকা নিয়েও।
চট্টগ্রামে এসে পাল্টে গেছে চিত্র। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দেখা যায়নি কোনো পাকিস্তানি সমর্থককে। সফরকারী দলটির পক্ষে গলা ফাটাননি কেই, ওড়েনি তাদের পতাকাও। জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে স্লোগান হয়েছে, তবে সেটা পাকিস্তান বিরোধী।
করোনাভাইরাসের দীর্ঘ বিরতি শেষে সাগর পাড়ের এই স্টেডিয়ামে ফিরেছে দর্শক। দীর্ঘ ২৬ মাস পর জহুর আহমেদে বসে খেলার দেখার সুযোগ পেয়েছেন দর্শকরা। টেস্ট চলাকালীন প্রতিদিন ৫ হাজার দর্শক মাঠে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন। সুযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন মাঠে হাজির হন দর্শকরা। শুরুতে ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব গ্যালারি কানায় কানায় ভরে ওঠে।
বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি এই গ্যালারি থেকে পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম এমইএস কলেজ থেকে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী স্লোগানে স্লোগানে বলেন, 'তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা। পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তান ফিরে যা।'
পারভেজ আহমেদ নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চট্টগ্রামে কম ইতিহাস নেই। এখান থেকে অনেক আন্দোলনের শুরু। ব্রিটিশ বিরোধী, পাক হানাদার বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের ভূমিকা ছিল অন্যরকম। এখানে কোনো বাঙালি যদি পাকিস্তানের জার্সি পরে বা তাদের পতাকা ওড়ায়, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা তা রুখে দিবো।'
মিরপুরে পাকিস্তান দলকে বাংলাদেশিদের সমর্থন দিতে দেখে অনেকেই ক্ষুব্ধ। চট্টগ্রামেও যেন সেটা না হয়, কেবল সেটা রুখতেই কেউ কেউ টিকেট কেটে জহুর আহমেদের গ্যালারিতে প্রবেশ করেন। তাদের একজন মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, 'মিরপুরে যা দেখেছি, সেটা মানতে কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশি হয়ে তারা কীভাবে পাকিস্তানকে এভাবে সমর্থন দিতে পারে? এখানেও যেন অমন কিছু না হয়, সেটার প্রতিবাদ করতে মাঠে এসেছি। মিরপুরের মতো এখানে হতে দেব না।'
কেবল গ্যালারিতেই নয়, স্টেডিয়ামের বাইরেও অনেক দর্শক দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, 'পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য।' পাকিস্তানকে সমর্থন দিতে এসে এসব তরুণদের রোষাণলে পড়েন একজন। তাকে তাড়া দিয়ে একটি ড্রেনে নামিয়ে ফেলা হয়, তার গা থেকে খুলে নেওয়া হয় পাকিস্তানের জার্সি। মাফ চাইয়ে তাকে ছাড়া হয়, তবে তাকে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।'
চট্টগ্রামের ক্রিকেটভক্তদের মাঠে এসে গলা ফাটানোর আরও কারণ আছে। এখানকার মানুষরা সব সময়ই ঘরের ছেলে তামিম ইকবাল, বিভাগের ছেলে মুমিনুল হককে সমর্থন দেন। তামিম চোটের কারণে দলে নেই। মুমিনুল টেস্ট দলের নেতৃত্বে। তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন নামটি ইয়াসির আলী রাব্বি। চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। তাকে সমর্থন দিতেও অনেকে মাঠে এসেছিলেন।
নাজমুল নামের ১৮ বছর বয়সী এক ক্রিকেটার গ্যালারিতে এসেছিলেন। তার কাছে তামিম, মুমিনুল, রাব্বিরা অনেক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, 'ছোট বেলা থেকে তামিম ভাই, মুমিনুল ভাইদের খেলা দেখছি। রাব্বি ভাইও জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন। উনারা আমাদের মতো তরুণ ক্রিকেটারের কাছে বড় অনুপ্রেরণা। চট্টগ্রামে খেলা হলে বাংলাদেশ ও উনাদের সমর্থন দিতে সব সময়ই মাঠে আসি।'