মিচেল-নিশামে স্বপ্নের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড
বিশ্ব মঞ্চে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড মানেই যেন নিউজিল্যান্ডের জন্য বিষাদের গল্প। সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপে ইংলিশ শাসনে চোখ তুলে তাকাতে পারেনি কিউইরা। এবারও সেই বিষাদী সুর বেজে উঠেছিল। কিন্তু সেই সুর নিজেদের শিবিরে পৌঁছাতে দিলেন না ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশামরা। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে নিউজিল্যান্ডকে ঐতিহাসিক এক জয় এনে দিলেন তারা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ ছড়ানো প্রথম সেমি-ফাইনালে বুধবার আবু ধাবিতে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠল কিউইরা। ইতিহাস গড়া জয়ে হাতে উঠল ফাইনালের টিকেট, সঙ্গে প্রতিশোধটাও নেওয়া হয়ে গেল। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের পর ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল কিউইদের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ইংল্যান্ড। দাভিদ মালান ও মঈন আলীর ব্যাটে ৪ উইকেটে ১৬৬ রান তোলে ইংলিশরা। জবাবে দুঃস্বপ্নের শুরুর পরও ঠিক পথে থাকে নিউজিল্যান্ড। ডেভন কনওয়ে, মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ড্যারিল মিচেল ও জিমি নিশামের ব্যাটে ৫ উইকেটে এক ওভার হাতে রেখেই জিতে যায় কিউইরা।
মাঝারি লক্ষ্য, সাবধানী শুরুতে চিন্তার তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু শুরুটা কেমন করবে, সেটা ভাবার সুযোগই মিলল না। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই মার্টিন গাপটিলকে সাজঘর দেখিয়ে দেন ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকস। শুরুতেই হোঁচট, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন সেটা কাটিয়ে উঠ চাইলেন। কিন্তু আবারও ওকসের আঘাত।
উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে কিউইদের দিক ভুলিয়ে দেন ইংলিশ এই পেসার। ১৩ রানের মধ্যেই দুই উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড যখন ধুঁকছে, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হন ড্যারিল মিচেল ও ডেভন কনওয়ে। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন এই দুজন।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৮২ রানের জুটি গড়েন মিচেল-কনওয়ে। দলীয় ৯৫ রানের মাথায় থামেন কনওয়ে। এরআগে ৩৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৬ রান করেন তিনি। কিন্তু মিচেল এক পাশ আগলে খেলে যেতে থাকেন। তার সঙ্গে যোগ দেন জিমি নিশাম। উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
নিশাম ঝড়ে কিউই শিবির তখন উৎফুল্ল, তখন যেন জয় খুব কাছেই দেখতে পাচ্ছিল তারা। কিন্তু নিশাম ঝড় চললো কিছুক্ষণ। ১১ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ রান করে থামেন তিনি। ক্রিস জর্ডানের করা ১৭তম ওভারতে থেকে ২৩ রান তোলেন তিনি। এই ওভারেই জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে যায় কিউইরা।
এরপরও শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ২০ রান। যা তুলতে ৬ বলের বেশি খরচা করলেন না নিউজিল্যান্ডের জয়ের নায়ক মিচেল ও স্যান্টনার। এর মধ্যে স্যান্টনার শুধু একটি সিঙ্গেল নেন, ৫ বলে ১৯ রান তোলেন মিচেল। দলকে পরম আরাধ্যের জয় উপহার দেওয়ার ম্যাচে কিউই এই ওপেনার ৪৭ বলে ৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ডের লিয়াম লিভিংস্টোন ও ক্রিস ওকস ২টি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৭ রান রান যোগ করেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জস বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো। তবে দুজনের কেউ-ই টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেননি। ৫.১ ওভারে স্কেরকার্ডে ৩৭ রান যোগ করেন তারা। বেয়ারস্টো ১৭ বলে ১৩ রান করে আউট হন।
৮ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৩ রান। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে জস বাটলারকে ফেরান কিউই লেগ স্পিনার ইশ সোধি। ফেরার আগে ২৪ বলে চারটি চারে ২৯ রান করেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। এরপর ইংল্যান্ডকে পথ দেখিয়েছেন দাভিদ মালান ও মঈন আলী।
এই দুই ব্যাটসম্যানই মূলত ইংল্যান্ডকে লড়াকু পূঁজি এনে দেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৬৩ রান যোগ করেন তারা। মালানের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ৩০ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪১ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
মঈন আলী এদিন কাণ্ডারির ভূমিকায় ছিলেন। দলের রানের গতি বাড়িয়ে দারুণ ব্যাটিং করেন তিনি। বাঁহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ৩৭ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। ১০ বলে ১৭ রান করেন লিয়াম লিভিংস্টোন। অধিনায়ক ইয়ন মরগান ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি, অ্যাডাম মিলনে, ইশ সোধি ও জিমি নিশাম একটি করে উইকেট নেন।