মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসর নিয়ে বিসিবি সভাপতির দুই রকম বক্তব্য
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কি টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন? আপাতত এই প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই। বিষয়টি নিয়ে মাহমুদউল্লাহ নিজেই নিশ্চুপ। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। বিসিবিও জানায়নি কোনো বক্তব্য। এর আগে টেস্ট অবসর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাহমুদউল্লাহ জানান, শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ নিজ মুখে টেস্ট অবসর নিয়ে কিছু না বললেও তার অবসরের ব্যাপারটি 'নিশ্চিত' ধরে নেওয়া হয়েছে। জিম্বাবুয়ের সফরে একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পর সতীর্থদের তিনি জানান, আর টেস্ট খেলবেন না। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছিলেন দলে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার।
পরের দিন মাঠে মাহমুদউল্লাহকে গার্ড অব অনার দেন সতীর্থরা। ধারাভাষ্যকাররা বলতে থাকেন, এটাই তার শেষ টেস্ট। পরে জাতীয় দলের অনেক সতীর্থই মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে তাকে টেস্ট থেকে বিদায় জানান, শুভ কামনা জানান। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক না হলেও টেস্টে মাহমুদউল্লাহকে 'সাবেক' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে গত কিছুদিন ধরে।
বিষয়টি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহ সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি কথা না বলা পর্যন্ত ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। এর মধ্যে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দেওয়া বক্তব্য আরও ধোঁয়াশার তৈরি করছে। মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসর নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন নাজমুল হাসান। বুধবার বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসরের বিষয়টি এখনও 'পেন্ডিং' আছে। যদিও একই সংবাদ সম্মেলনে আরেক প্রশ্নে তিনি জানান, ঘোষণা দেওয়ায় টেস্টের চুক্তিতে তাকে রাখা হবে না।
মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসর নিয়ে জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না তিনি। যদিও একই উত্তরে ভিন্ন কথা বলেন তিনি, 'জানি না (মাহমুদউল্লাহর অবসর)। একটার পর একটা সিরিজ চলছে। বায়ো বাবল থাকে, বসতে হবে। সবার সামনে হয় না। এটা এখনও পেন্ডিং আছে।'
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে মাহমুদউল্লাহ টেস্টে থাকবেন কিনা জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি যেন 'পেন্ডিংয়ের ব্যাপারটি ভুলে যান। জানিয়ে দেন, অবসরের ঘোষণা দেওয়ায় তাকে টেস্টের চুক্তিতে নেওয়া হবে না। তার এ কথাই প্রমাণ করে, মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসরের বিষয়টি মেনে নিয়েছে বিসিবি। 'পেন্ডিং' এর কোনো ব্যাপার নেই এখানে।
নাজমুল হাসান বলেন, 'চুক্তিটা মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে অনেকে আছে, অনেকে নেই। তামিম যেহেতু বলেছে টি–টোয়েন্টিতে নাই সে। আবার ওডিআই, টেস্ট আছে। রিয়াদ যেহেতু ওখানে ঘোষণা দিয়েছে, এখনও সামনাসামনি কিছু বলেনি। সে টেস্টে (কেন্দ্রীয় চুক্তি) নেই। যেহেতু তামিম বিশ্বকাপ খেলবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সামনে কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নেই। ফলে তাকে টি-টোয়েন্টির চুক্তিতে রাখা হচ্ছে না।'
মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অবসর প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এর আগে কয়েকবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিসিবি সভাপতি। আরও একবার মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্তকে অপেশাদার বলেছেন তিনি। নাজমুল হাসান বলেন, 'মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিন্তু টেস্ট দলে ছিল না। ওকে আমার বাসায় নিয়ে বসেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছি বারবার, টেস্টে সে আগ্রহ কিনা। জানা মতে সে সবচেয়ে উপযুক্ত টেস্টে, তিন সংস্করণের মধ্যে। সে আমাকে প্রতিবার বলেছে খুব আগ্রহী টেস্ট খেলতে।'
'আমরা বলেছিলাম কে কোন সংস্করণ খেলবে দাও, সফরে যাওয়ার আগে সে লিখে দিয়েছে টেস্ট খেলবে, যদি দলে নেওয়া হয়। এতো কিছুর পর তাকে যখন পাঠানো হলো (জিম্বাবুয়ে সফরে), তাকে কিন্তু পরে নেওয়া হয়। তার সাথে কথা বলেই নিয়েছি। ওখানে গিয়ে সে যখন ঘোষণাটা দিল, এটা আমার কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল। তামিমের সঙ্গে এটা মেলাতে পারছি না। তামিমেরটা আমাদের জানা ছিল, আ। রিয়াদেরটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল। এমন হওয়া উচিত নয়। সিরিজ চলাকালীন কারও সাথে আলোচনা করে কোনো পেশাদার ক্রিকেটার কোনোভাবেই এমন ঘোষণা দিতে পারে না।'
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরের পর টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন মাহমুদউল্লাহ। তাকে সাদা বলে ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে বলা হয় টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। মার্চে ঘোষণা করা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে টেস্টে ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। তাকে টেস্টে বিবেচনাও করা হচ্ছিল না দীর্ঘ সময় ধরে। জিম্বাবুয়ে সফরের আগে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের চোট থাকায় মাহমুদউল্লাহকে দলে নেওয়া হয়। ফিরেই ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, এরপরই জানিয়ে দেন টেস্ট না খেলতে চাওয়ার বিষয়টি।