বিশ্বকাপ জয়ে আনন্দ মিছিল হবে, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখব: রামচাঁদ গোয়ালা
শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহে নিজ বাসায় মারা গেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে।
১৯৯৩ সালে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তকমা নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি। আবাহনীতেই খেলেছেন ১৪-১৫ বছর। এরপর ময়মনসিংহে থাকতেন। বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি চোখের অস্ত্রোপচারও করিয়েছিলেন। গত বছর বিসিবি তাকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিল। সেই অর্থ দিয়ে চলেছে তার দৈনন্দিন জীবন ও চিকিৎসাখরচ।
রফিক-সাকিবদের এই পথপ্রদর্শকের সঙ্গে তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপল্লির বাসায় ব্যক্তিগত জীবন ও দেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রতিনিধির।
দাদা, কেমন আছেন?
রামচাঁদ গোয়ালা: এই তো, বেঁচে আছি! উপর থেকে ভালোই দেখা যায়, তবে ভিতরে ফাঁকা; কিছুই নেই। ভগবানের কৃপায় চলছে আরকি। শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না।
খেলা ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলব আপনার সঙ্গে।
রামচাঁদ গোয়ালা: আমার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই। সারাটা জীবন শুধু খেলা নিয়েই পার করেছি। খেলাই আমার জীবন।
ক্রিকেটার হওয়ার শুরুর ঘটনাটা একটু জানতে চাই।
রামচাঁদ গোয়ালা: ময়মনসিংহেই আমার হাতেখড়ি। আগ্রহ ছিল ফাস্ট বল করার। শুরুতে তা-ই করতাম। পরে দেখলাম, স্পিনটা ভালো করছি। তাই ফাস্ট বোলার হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করে হয়ে উঠলাম বাঁহাতি স্পিনার। তখন আমার বাঁহাতি স্পিন বল ব্যাটসম্যানরা কম খেলতে পারতেন। এটিই আমাকে এক সময় পরিচিতি এনে দেয়।
এখানকার ক্রিকেট কেমন লাগছে? আমাদের খেলোয়াড়রা তো ভালো করছে।
রামচাঁদ গোয়ালা: আমি খুব খুশি হয়েছি অনূর্ধ্ব-১৯ টিমের বিশ্বকাপ জয় দেখে। ছেলেরা ভালো খেলেছে। তা না হলে জয় পেল কীভাবে? জয় পাওয়া এত সোজা ব্যাপার না। ট্রফিটা যখন জয় করল, আমার নিজেকে মনে হয়েছে, আমি তাদের বয়সী। খুব আনন্দ পেয়েছি। এখনকার ছেলেরা ভালো করছে। সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। জাতীয় দল ভালো করছে। তবে ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।
ধারাবাহিতা রক্ষায় ক্রিকেট বোর্ডের কী করা উচিত?
রামচাঁদ গোয়ালা: দেখেন, খেলোয়াড়দের একটি বড় অংশ তাদের যোগ্যতা প্রমাণের ঠিকমতো সুযোগ পাচ্ছে না। গ্রামে-গঞ্জে অনেক প্রতিভা আছে; কিন্তু তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে না। ঢাকায় লীগ খেলা হচ্ছে; সেখান থেকেই বেস্ট প্লেয়ার বের হবে জাতীয় দলের জন্য- এটা ভুল ধারণা। তৃণমূল পর্যায়ে যদি নিয়মিত রুটিন করে টুর্নামেন্ট করা যেত, তাহলে ভালো ভালো প্লেয়ার উঠে আসত। এই দিকে নজর দিতে হবে বিসিবিকে। স্টেডিয়ামের বাইরে, গ্রামের মাঠে-ময়দানে যে ভালো প্লেয়ার থাকা সম্ভব, তা তাদের বুঝতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে ও তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে হবে। ক্রিকেটার তৈরির পাইপলাইন তৈরি করতে হবে।
ময়মনসিংহের ক্রিকেট নিয়ে আপনার ভাবনা কী? ইতোমধ্যে তো বেশ কয়েকজন জাতীয় দলে খেলেছে।
রামচাঁদ গোয়ালা: ময়মনসিংহের খেলাধুলা অনেক নিম্নমানের হয়ে গেছে। কোনো ভালো কোচ নেই। সহযোগিতায় আমাকে কেউ ডাকেওনি কখনো। কোচের স্বল্পতা সারা দেশেই আছে। ভালো ভালো কোচ মফস্বলে আছে; তবে তাদের খোঁজ রাখে না কেউ। এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
দাদা, বিয়ে করেননি কেন? একটি কথা প্রচলিত আছে, খেলাকে ভালোবেসে সংসার করেননি আপনি। এর সত্যতা কতটুকু?
রামচাঁদ গোয়ালা: হাহাহাহা...। আসলে বিয়ে নিয়ে আমি খুব কম বয়সেই ভেবেছিলাম। বাবা তার ছেলের বউ দেখে যেতে চেয়েছিলেন। যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের দিন বাবা অসুস্থ হয়ে, পরে মারা যান। বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু বাবা ছেলের বউ দেখে যেতে পারেননি, তাই আর বিয়ে করিনি। খেলা নিয়েই ছিলাম।
এখন ক্রিকেট নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
রামচাঁদ গোয়ালা: স্বপ্ন দেখি, অনুজদের মতো সিনিয়ররাও বিশ্বকাপ আনবে। আনন্দ মিছিল হবে। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখব।