বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা, মুশফিক বনাম হাথুরুসিংহে

২০১৮ এশিয়া কাপ, শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের। এই ম্যাচের আগে পাঁজরে চিড় ছিল মুশফিকুর রহিমের। নেটে ঠিকভাবে ব্যাটিং করতে পারছিলেন না তিনি। শট খেলতে পারছিলেন না, শুধু ডিফেন্স করছিলেন তিনি। এমন অবস্থায় ফিজিওর সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন মুশফিক। খেলতেই হবে, এমন ম্যাচের আগে চোট! কিছুতেই যেন মানতে পারছিলেন না জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লড়াইটি এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচ ছিল। চোট নিয়েও ম্যাচটিতে মুশফিকুর রহিম কেন খেলতে চেয়েছিলেন? সেই উত্তর দিয়েছেন তামিম ইকবাল। বাঁহাতি এই ওপেনার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে থাকলেও মুশফিকের লড়াই ছিল চান্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে।
শনিবার রাতে তামিম ইকবালের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম লাইভে ঘণ্টা খানেক আড্ডা দেন মুশফিক। এই আড্ডাতে সেই ম্যাচের স্মৃতি রোমন্থন করেন দুই বন্ধু তামিম-মুশফিক।
বাংলাদেশের সাবেক কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে মুশফিকের বৈরী সম্পর্ক নিয়ে বেশ আলোচনা চলতো। বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকাকালীন মুশফিকের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক মজবুত করে নিতে পারেননি হাথরুসিংহে। বিভিন্ন বিষয়ে দুজনের মধ্যে নিরব লড়াই চলত।
এশিয়া কাপে হাতুরুসিংহে শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে আসায় ম্যাচটি নিয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন মুশফিক। এই ব্যাপারটি বোঝাতে চেয়েছেন তামিম। আলোচনার ফাঁকে তামিম বলছিলেন, 'সেদিন তোর এত ভালো খেলার রহস্য কী ছিল? সেদিন বাংলাদেশ খেলছিল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, আর মুশফিক খেলছিল হাথুরুসিংহের সঙ্গে!'
মুশফিক অবশ্য বিষয়টির সঙ্গে একমত হননি। তামিমকে থামিয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান বলে ওঠেন, 'না না, ওরকম কিছু না।' মুশফিক স্বীকার না করলেও হাথুরুসিংহের কারণে আসলেই তেমন পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তামিম পুরো অবস্থার বর্ণনা দিয়ে সবাইকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন।
বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, 'আসলে আমরা সবাই ভালো করতে চেয়েছিলাম সেদিন। সবার মধ্যেই একটা কিছু কাজ করছিল। সেটা খারাপ কিছু নয়। আমরা সবাই চাচ্ছিলাম জিততে। এটা শুধু তুই না, আমাদের সবারই একটা জেদ ছিল। খারাপভাবে নেওয়ার কিছু নেই।'
'যেভাবে ও চলে গেছে, বা যেভাবে আমরা চাচ্ছিলাম তাকে হারাতে, এমন না যে রাগের মাথায় বলছি, হাথুরুসিংহে আছে হারাতে হবে। খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবেই বলছি, ও আমাদের ভেতর-বাহির সব জানত। সেদিক থেকে ওকে যদি আমরা হারাতে পারতাম, তা আমাদের অনেক তৃপ্তি দিত। সেদিক থেকে সবাই চাচ্ছিলাম যেন শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারি। কোনো সন্দেহ নেই, তিনি খুবই ভালো কোচ ছিলেন।'
এরআগে মুশফিক ম্যাচের আগেরদিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, 'আগের দিন অনুশীলনও ঠিক মতো করতে পারিনি। নেটে ৫-১০টা বল খেলেছি। দেখলাম আমি বড় শট খেলতে পারছি না। শুধু ডিফেন্স করতে পারছি। এটা তো টেস্ট না যে, আমি ডিফেন্স করে খেলে যাব। খুবই হতাশ ছিলাম। যখন ফিজিও'র সঙ্গে এক্সরে করতে গেলাম, চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। ফিজিও বুঝতে পেরেছিল, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড যেহেতু করতে পারছি না, নিশ্চয়ই পাঁজরে চিড় আছে। রাতে এক্সরে রিপোর্টে দেখি যে, চিড় ধরা পড়েছে।'ৃ