বাংলাদেশ দলে বাজে প্রতিযোগিতার শঙ্কায় মাশরাফি
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়েছেন, প্রথম দুই ম্যাচে কিপিং করবেন নুরুল হাসান সোহান, পরের দুই ম্যাচে মুশফিকুর রহিম। দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে শেষ ম্যাচের কিপার।
দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দেওয়া ও সেটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারটিকে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা বলছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়কের মতে, ১৬ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে আসা মুশফিককে এভাবে পরীক্ষা নেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। একইভাবে সোহানের জন্যও এটা ভালো বার্তা নয়।
কেবল মাশরাফিই নন, রাসেল ডমিঙ্গোর মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বেশিরভাগ ক্রিকেটভক্তই এই প্রতিযোগিতাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ এবং পরীক্ষিত ক্রিকেটারকে এভাবে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি অনেকের চোখেই রীতিমতো 'তামাশা'।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসুবকে দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন মাশরাফি। ওয়ানডের সাবেক অধিনায়কের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
'১৬ বছর যে মানুষটা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দিচ্ছে, তাকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে আপনি যত বড় ক্ষমতাধর মানুষ হোন না কেন, একটু জায়গা বুঝে বলা উচিত। মুশফিক কীভাবে জাতীয় দলে এসেছে, তা সবাই জানে। সিম্পিলি তার ব্যাটিং দক্ষতা।
একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু কিপার হিসাবেই খেলা যেত, উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু গিলক্রিস্ট আসার পর সব হিসাব পাল্টে যায়, যার সুত্র ধরে ইন্ডিয়া টিমে দেখেছি রাহুল দ্রাবিড় কেও কিপিং করতে, যাতে দল সুবিধা মতো এক্সট্রা একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলাতে পারে। অবশ্যই সেটা লিমিটেড (ওভার ক্রিকেটে)।
বিশ্ব ক্রিকেটের দুজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটারকে, সেটা আবার নিজ দলের খেলোয়ারকে, আপনি যুদ্ধ করে বাঁচতে বলবেন, সেটা ড্রেসিং রুম পর্যন্ত থাকাই ভালো। অবশ্যই দলের স্বার্থ, সবার আগে দলের আগে কোনো খেলোয়ার হতে পারে না। কিন্তু যে ক্রিকেটারগুলো দেশের হয়ে খেলতে নামে, তারা কোনো সহানুভূতি নিয়ে নয়, বরং তার শরীরের সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দলে জায়গা পায়। মুশফিকের গল্প আমরা সবাই জানি, তার নিবেদন কী পর্যায়ে। বাংলাদেশের হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারদের আইডল সে।
টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত তারা তাদের মতো করে নেবে, এটাই তো স্বাভাবিক এবং অবশ্যই ভালোর জন্য নেবে। সফল হলে তালি, না হলে গালি, যা সারা বিশ্বেই হচ্ছে। কে খেলবে, কোন পজিশনে খেলবে, কার রোল কি, এগুলো তো দলের একান্ত পরিকল্পনা, যা ড্রেসিং রুমে শুরু, আবার ড্রেসিং রুমেই শেষ হয়। বাহিরে বলতে গেলে তো খেলোয়ারের পর চাপ সৃষ্টি হয় যা, তার স্বাভাবিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সোহান সম্ভবত দলের সেরা কিপার। সাথে লিটন, এক সিরিজ গ্যাপে যোগ হলো মুশফিক। এক দলে এত কিপার, এ তো আনন্দের। তা না হয়ে, বের হয় বিষাদ। এতটুকু সামাল দিতে না পারলে তো সমস্যা, যা এক পর্যায়ে দলের ভিতর অদৃশ্য এক বাজে প্রতিযোগিতা চলে আসবে।
আমি শুধু ভাবছি এতে কি সোহানের জন্যও খুব ভালো হলো, যে দুই ম্যাচে সব দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে, তাহলে বিগত দুই সিরিজ সে যা করল, তার কি হবে! লিটন কি বলবে? এখন ও তো কিপিং ভুলেই যাবে।
মুশফিক কে পারফর্ম করতে হবে ১৬ বছর খেলার পর, এটা বলে দেওয়ার কিছু নাই। সে খুব ভালো করেই জানে। বরং বাহিরে এভাবে বললে তার নিবেদনকে অসম্মানিত করা হয়, যা তার প্রাপ্য নয়। সে সেরা ব্যাটসম্যান বলেই ১৬ বছর দেশকে সার্ভিস দিয়েছে। আবার দলের প্রয়োজনে তাকেই কিপিং করতে হতে পারে। তখন যদি সে 'না' বলে, সেটা কি ভালো শোনাবে?
দলে প্রতিযোগিতা সব সময় দলের সেরাটা বের করে আনে, তবে সেটা সুস্থ হতে হবে। কাউকে আঘাত করে নয়। দলে প্রতিযোগিতা সব সময় দলের সেরাটা বের করে আনে, তবে সেটা সুস্থ হতে হবে। কাউকে আঘাত করে নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন আউটসাইডার হিসাবেই কথাগুলো লিখলাম, কেউ পার্সোনালি না নিলে খুশি হবো। গুড লাক বাংলাদেশ, ইনশাল্লাহ জয় আমাদেরই হবে।'