ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যা বললেন মেসি
কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোর টিকেট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ এ জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আর্জেন্টাইন দলে বইছে খুশির জোয়ার। একই সাথে ম্যাচশেষে দলের এ খুশির সাথে লিওনেল মেসির পালকে যুক্ত হয়েছে অনন্য আরও একটি রেকর্ড। পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলার ফলে লিওনেল মেসি এখন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার প্রতিনিধিত্ব করা খেলোয়াড়।
লিওনেল মেসির আগে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার প্রতিনিধিত্ব করার রেকর্ডটি ছিল আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার দখলে। ১৯৮২ থেকে শুরু করে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত হওয়া চারটি বিশ্বকাপে মোট ২১ টি ম্যাচ খেলে এ রেকর্ডটি করেছিলেন ম্যারাডোনা। অন্যদিকে লিওনেল মেসি ২০০৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত টানা পাঁচটি বিশ্বকাপে সর্বশেষ মোট ২২ টি ম্যাচ খেলে দীর্ঘ ২৮ বছর পর এ রেকর্ডটি নিজের দখলে নেয়।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ রেকর্ড নিয়ে মেসিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "আমি কিছুক্ষণ আগেই আমার নতুন এ রেকর্ডটি সম্পর্কে জানলাম। দেশের হয়ে এ ধরণের রেকর্ড অর্জন আমার জন্য খুবই আনন্দের ব্যাপার। আমি মনে করি ম্যারাডোনা বেঁচে থাকলে আজ প্রচণ্ড খুশি হতেন। কেননা তিনি সবসময় আমার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা দেখিয়েছেন। আমি যখনই ভালো কিছু অর্জন করেছি তিনি খুশি হয়েছেন।"
পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটির প্রথমার্ধে নিজের ক্যারিয়ারের ৩৯ তম বারের মত পেনাল্টিতে গোল করার সুযোগ মিস করলেও ম্যাচশেষে মেসি সর্বোপরি ম্যাচটি নিয়ে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। পেনাল্টি মিস সম্পর্কে মেসি বলেন, "পেনাল্টিতে গোল করার সুযোগটি মিস করে আমি খুব হতাশ বোধ করছিলাম। কেননা আমি জানতাম এ গোলটি পুরো ম্যাচটিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, পেনাল্টি মিস করার পর আমাদের দল ম্যাচে আরও শক্তিশালীভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে।"
পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য ছিল টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াই। ম্যাচটি সম্পর্কে মেসি বলেন, "সৌদি আরবের সাথে প্রথম ম্যাচ হারার পরে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যেকোনো উপায়ে গ্রুপ পর্ব পাড়ি দেওয়া। আমরা পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করেছি। আজকের ম্যাচে প্রথম গোলটি হওয়ার পর সবকিছু আমাদের পক্ষে কাজ করেছে। বিশ্বকাপের প্রথম থেকেই আমরা ঠিক এই খেলাটি খেলার চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু আজ আমরা নিজেদের খেলাটা খেলতে পেরেছি; সুতরাং এটি আমাদের ভবিষ্যতে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে।"
শেষ ষোলোতে গ্রুপ সি চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা গ্রুপ ডি এর রানার্সআপ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে। দলের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে মেসি বলেন, "গ্রুপ পর্বের পর থেকে এখন সবকিছুই অনেক বেশি কঠিন হবে।। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন, লড়াইটা অনেক জটিল হবে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি যে, যেকোনো দল ভালো খেলে ম্যাচ জিতে যেতে পারে।"
বয়স থেকে শুরু করে সবকিছু বিবেচনায় ধারণা করা হচ্ছে যে, কাতার বিশ্বকাপই মেসির সর্বশেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে মেসির ক্যারিয়ার খুবই সমৃদ্ধ হলেও বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ এখনো অধরাই রয়ে গেছে। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের হারের আক্ষেপ মেসি বয়ে বেড়াচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। আর তাই দেশের হয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল গ্রেট ম্যারাডোনার মতো সর্বোচ্চ ট্রফি বিশ্বকাপ জয়ের শেষ সুযোগ হিসেবে মেসিকে সামনে কঠিন কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আরও চারটি ম্যাচ টানা জিততে হবে।
সূত্র: বুয়েনোস আইরিস টাইমস