নক-আউট পর্বে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হতে পারে যারা
হেক্সা জয়ের মিশনে কাতারে এসেছে ব্রাজিল। 'জি' গ্রুপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে নক-আউট পর্ব নিশ্চিতও করে ফেলেছে সেলেকাওরা। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়া ২-০ গোলের ব্যবধানে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে তিতের দল।
নক-আউট পর্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। ক্যামেরুনের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে ব্রাজিল। তবে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ব্রাজিলের হার এবং সার্বিয়ার বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড বড় জয় পেলে গ্রুপ রানার্স-আপ হিসেবে নক-আউট পর্বে উঠবে ব্রাজিল।
তা নক-আউট পর্ব নিশ্চিত হওয়ার পরেও কেন এত হিসাব-নিকাশ? কারণ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া না হওয়ার উপরেই ব্রাজিলের নক-আউট পর্বের রাস্তা কেমন হবে সেটি নির্ভর করছে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স-আপ, দুটো সম্ভাবনা মাথায় রেখেই হেক্সা জয়ে ব্রাজিলের পথ কেমন হতে পারে দেখে নেওয়া যাক।
ব্রাজিল যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়-
শেষ ১৬
শেষ ষোলোয় ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হবে 'এইচ' গ্রুপের রানার্স-আপ দল। এই গ্রুপে পর্তুগালের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। রানার্স-আপ হবার সম্ভাবনা আছে এখনো তিনটি দলের। উরুগুয়ে, ঘানা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার যেকোনো একটি দলের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠার লড়াই হবে ব্রাজিলের।
বিশ্বকাপে এই তিন দলের বিপক্ষে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলঃ
ব্রাজিল- উরুগুয়ে
মুখোমুখি ২ বার, একবার করে জয় পেয়েছে উভয় দল
ব্রাজিল-ঘানা
একবারই মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল জিতেছিল ৩-০ গোলের ব্যবধানে।
ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে কখনো মুখোমুখি হয়নি।
কোয়ার্টার-ফাইনাল
শেষ ষোলোর বাধা পার হয়ে আসতে পারলে কোয়ার্টার-ফাইনালে ব্রাজিলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ স্পেন। লুইস এনরিকে শিষ্যরা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। কোয়ার্টার-ফাইনালেই মঞ্চায়ন হয়ে যেতে পারে ফাইনালের সমান উত্তেজনাকর একটি ম্যাচ। সেক্ষেত্রে ব্রাজিলের সাম্বার টেক্কা দিতে হবে স্পেনের তিকি-তাকাকে।
বিশ্বকাপে স্পেনের বিপক্ষে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলঃ
৫ বার মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল, ব্রাজিলের ৩ জয়ের বিপরীতে স্পেনের জয় একটিতে। ড্র হয়েছে অপর ম্যাচটি।
সেমি-ফাইনাল
স্পেনকে হারাতে পারলে সেমি-ফাইনালে মহারণ দেখার সুযোগ পাবে বিশ্ব। মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার। মেসি বনাম নেইমারের দ্বৈরথ দেখা যাবে বিশ্বকাপের মঞ্চে।
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলঃ
৪ বারের লড়াইয়ে ২ বার জয়ের হাসি হেসেছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার জয় একটি, অপর ম্যাচটি ড্র হয়েছে।
ফাইনাল
চির প্রতিদ্বন্দীদের হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটতে সক্ষম হলে হেক্সা জেতার পথে ব্রাজিলের পথের কাটা হতে পারে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। এছাড়াও সম্ভাবনা থাকছে ইংল্যান্ডেরও। যাদের মুখোমুখিই হওয়া লাগুক না কেন, সেটি যে সহজ হবে তা অনুমেয়।
বিশ্বকাপে এই দুই দলের বিপক্ষে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলঃ
ব্রাজিল-ফ্রান্স
৪ বারের লড়াইয়ে ২ বার জয়ের দেখা পেয়েছে ফ্রান্স, ব্রাজিলের জয় একটি, অপর ম্যাচটি ড্র হয়েছে।
ব্রাজিল-ইংল্যান্ড
৪ বারের দেখায় ৩ বারই জিতেছে ব্রাজিল, একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ইংল্যান্ড জিতেনি একটিও।
ব্রাজিল যদি গ্রুপ রানার্স-আপ হয়-
শেষ ১৬
গ্রুপ রানার্স-আপ হলে ব্রাজিলকে শেষ ষোলোতেই মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের। সেক্ষেত্রে এখান থেকেই রোনালদো অথবা ব্রাজিলকে বিদায় নিতে হবে কাতার থেকে।
বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিপক্ষে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলঃ
২ ম্যাচের একটি জিতেছে পর্তুগাল, অপরটি ড্র হয়। ব্রাজিলের জয় নেই কোনো।
কোয়ার্টার-ফাইনাল
রোনালদোর দলকে বিদায় করতে পারলে শেষ আটে ব্রাজিলকে টপকাতে হতে পারে জার্মানি বাধা। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিতে পারলে সেমি-ফাইনালের টিকেট কাটবে ব্রাজিল।
বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলঃ
২ বারের দেখায় একটি করে জয় পেয়েছে উভয় দল।
সেমি-ফাইনাল
শেষ চারে ব্রাজিলের সামনে পড়তে পারে ফ্রান্স অথবা ইংল্যান্ড। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফাইনালে উঠলে এই দুই দলের যে কারোর সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই, গ্রুপ রানার্স-আপ হলে দেখা হয়ে যেতে পারে সেমি-ফাইনালেই।
ফাইনাল
হেক্সা জয়ের মিশন সম্পূর্ণ করতে ব্রাজিলের পথে বাধা হতে পারে আর্জেন্টিনা অথবা স্পেন। চির প্রতিদ্বন্দী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে হেক্সা জিতলে এর আনন্দ যে বহুগুণে বেশি হবে সেটি না বললেও চলে।
স্পেনের তিকি-তাকা বনাম ব্রাজিলের সাম্বার লড়াইটাও হতে পারে দেখার মতো।
*ব্রাজিলের নক-আউট পর্বের প্রতিপক্ষের এসব সমীকরণ চূড়ান্ত নয়, এটা কেবলই সম্ভাবনা। বাকি দলগুলোর ফলের ওপর নির্ভর করবে কাদের বিপক্ষে ম্যাচ পড়বে নেইমার-রিচার্লিসনদের। ব্রাজিলকে ফাইনাল পর্যন্ত ধরে সমীকরণ করা, তারা এর আগে বাদ পড়ে গেলে এই সমীকরণের ভিত্তি থাকবে না।