বেলজিয়াম বনাম মরক্কো: ‘মরক্কো হলো মা, আর বেলজিয়াম স্ত্রী। দুটোর একটাকে বাছাই করা দায়।’
কাতার বিশ্বকাপে আল থুমামা স্টেডিয়ামে 'এফ' গ্রুপের ম্যাচে শক্তিশালী বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়েছে মরক্কো। অন্যান্য ম্যাচের মতোই এ খেলায়ও স্বভাবতই যে যার পছন্দের দলকে সমর্থন করছেন। কিন্তু মরক্কো বংশোদ্ভূত বেলজিয়ামের অধিবাসীরা ছিলেন দোটানায়। খবর আল-জাজিরার।
শেকড়ের টানে কেউ সমর্থন করছেন মরক্ককে, কেউবা আবার একটাকে বাছাই করতে না পেরে সমর্থন করছেন উভয় দলকে! এই যেমন বেলজিয়ামের স্যানিটেশন কর্মী আহমেদ আবদেলৌহাদ।
দল দুটোই বড় আপন আবদেলৌহাদের কাছে। কারণ মরক্কোর রাজধানী রাবাতে বেড়ে উঠলেও ২০০৫ সালে চলে আসেন বেলজিয়ামে।
তবে কোন দলকে বেশি অগ্রাধিকার দেন, তা নিয়ে একেবারেই দ্ব্যর্থহীন আবদেলৌহাদ। 'মরক্কো আমার জন্মস্থান। তাই অবশ্যই এ দলটিকেই আমি সমর্থন করব। কিন্তু তারা নকআউট পর্বে স্থান না পেলে বেলজিয়ামকে সমর্থন করব,' বলেন তিনি।
ম্যানচেস্টার সিটির সুপারস্টার কেভিন দ্য ব্রুইনের নাম উল্লেখ করে জানান দল দুটো নিয়ে তার অভিমত। তার মতে দুটো দেশই ভালো খেলে, উভয় দলে দারুণ ফুটবলার আছেন।
তার রেড ডেভিলদের সমর্থন করা স্বাভাবিক বটে। হাতে 'বেলজিয়াম' লেখা কবজীবন্ধনী পরে তিনি বলেন, 'এই দেশটা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে; আমি এখানে খুশি।' কথাগুলো বলার সময় তার মুখে খুশির ছটা ছিল স্পষ্ট।
বেলজিয়ামের বিশ শতাংশ জনসংখ্যা (১১.৫ মিলিয়ন) অন্য দেশ থেকে আসা; এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ আছেন মরোক্কান বংশোদ্ভূত যারা কিনা দেশটির ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) বহির্ভূত সবচেয়ে বড় সম্প্রদায়।
দুটো দেশের প্রতি সমান টান থাকায় একটি দলকে বেছে নেওয়া সহজ নয় মরক্কো বংশোদ্ভুত বেলজিয়ানদের। ঠিক একটিকে বেছে নেওয়াও ভুল হবে; কারণ তারা সবাই উভয় দলকেই সমর্থন করেন। প্রশ্ন হলো, কোন দলকে প্রথমস্থানে রাখবেন।
আরেক মরক্কো বংশোদ্ভুত বেলজিয়ামের অধিবাসী নাসিম কুইরফা; ২৮ বছ্র বয়সী এ তরুণ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জন্ম তার, বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্রপূর্ণ শহর মোলেনবিকে। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিপক্ষে হেরে মরক্কোর গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে পড়ার বেদনা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি!
জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা রেড ডেভিলদের দেশে হলেও ফুটবলে মরক্কোই যেন বেশি অগ্রাধিকার পায় তার কাছে। কারণ তার মা-বাবার দেশ এটি, মরক্কোর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথেই বেশি আত্মার সম্পর্ক রয়েছে তার। তবে আবদেলৌহাদের মতো মরক্কোর পরে স্থান দেন বেলজিয়ামকে।
এই দুজনের মতোই ২৩ বছর বয়সী সুমাইয়া রাইনের কাছে বেলজিয়াম-মরক্কো ম্যাচটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং তিনিও তার শেকড় মরক্কোই বেশি সমর্থন করেন। তবে তার সতীর্থদের অনুযোগ, খেলোয়াড়দের চেহারা দেখেই তিনি প্রিয়দল বেছে নেন।
ফাতিমা জাইবোর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং বসবাস বেলজিয়ামে। ৪১ বছর বয়সী সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফাতিমা মরোক্কা বংশোদ্ভূত বেলজিয়ামবাসীদের বোঝাতে 'বেলজো-মরোক্কান' এ শব্দটি ব্যবহার করেন।
তার মতে, পাসপোর্টে কোন দেশের নাম আছে তার সাথে কোন দলকে সমর্থন করা হবে, তার খুব একটা সম্পর্ক নেই। এটি একান্তই অন্তরের অন্তস্থলের মত ব্যাপার। এমনকি একই প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা ব্যক্তিদের মাঝেও সমর্থনের দল ভিন্ন হয়।
১৯ বছর বয়সী আয়া হামি হাতখরচ চালাতে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। কোন দলকে সমর্থন করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। বললেন, 'একটা দলকে বাছাই করা কষ্ট।' তবে মরক্কোর লাইনআপকে তুলনামূলকভাবে বেশি সম্ভাবনাময় মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে ৩৬ বছর বয়সী মরক্কো বংশোদ্ভূত আরেক বেলজিয়ামবাসী মোহাম্মদ আক্কৌ সমর্থন করবেন যে দন ভালো খেলবে তাকে। আগে থেকে কোনো দলকে অগ্রাধিকার না দিয়ে ম্যাচটা যেমন, সেভাবেই উপভোগ করবেন বলে জানান তিনি।
গাড়িচালক বেন আলি আব্দুলমালিক বেলজিয়ামে এসেছিলেন ১৯৯১ সালে। তার কাছে উভই দেশ পরম ভালোবাসার। তার ভাষায়, 'মরক্কো হলো মা, আর বেলজিয়াম স্ত্রী। দুটোর একটাকে বাছাই করা দায়।'