প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের তিনে তিন

বাংলাদেশের যত ভালো, সবখানেই যেন জিম্বাবুয়ের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক! প্রথম টেস্ট জয়, প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়, প্রথম টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ জয়; এ সব কিছুই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিলেছে। বুধবার মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জয়ে আরও একটি প্রথমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে গেল বাংলাদেশের। যা বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো মাইলফলক।
এই মাইলফলক ছুঁতে বাংলাদেশকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে আরেকটি হোয়াইওয়াশ করার তৃপ্তির পাশাপাশি সেই অপেক্ষার অবসানও হলো। প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এক দফায় তিন ফরম্যাটেই সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। কোনো সিরিজের সবগুলো ম্যাচ জয়ের কীর্তিও এবারই প্রথম গড়লো বাংলাদেশ।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দীর্ঘ ২০ বছরে কখনও কোনো প্রতিপক্ষকে এক সিরিজের তিন ফরম্যাটেই (টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি) হারানোর নজির ছিল না বাংলাদেশের। সুযোগ এসেছিল দুই বছর আগে। ২০১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ওয়ানডে সিরিজও জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
ব্যতিক্রমী নজির ছিল ২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে। সেবার তিন ফরম্যাটেই লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ। এরআগে আটটি সিরিজ ছিল, যেখানে কোনো না ফরম্যাটে সিরিজ জিতেছে বা সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে খেলার হিসেবে বাংলাদেশের ১৯তম সিরিজ।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ৭ উইকেটে ১১৯ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। অপরাজিত ৫৯ রান করা ব্রেন্ডন টেলর একাই যা রান করেছেন।
জবাবে দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখের দারুণ শুরু এবং সৌম্য সরকারের নিরুদ্যম ব্যাটিংয়ে ১৫.৫ ওভারে এক উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
১২০ লক্ষ্য, বাংলাদেশের জন্য পথটা কঠিন ছিল না। তবু টি-টোয়েন্টি মেজাজেই শুরু করেন লিটন দাস ও তামিম ইকবালের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া নাঈম হাসান। যদিও তিন ওভার পর রান তোলার সেই গতি থাকেনি। পাওয়ার প্লের ছয় ওভার থেকে ৪৪ রান স্কোরকার্ডে যোগ করেন লিটন-নাঈম।
দলীয় ৭৭ রানে গিয়ে থামেন নাঈম। ফেরার আগে ৩৪ বলে ৫টি চারে ৩৩ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে বাকিটা পথ অনায়াসেই পার করেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা লিটন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতা ডানহাতি এই ওপেনার ৪৫ বলে ৮টি চারে ৬০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ৫০তম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা সৌম্য ১৬ বলে ২টি ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের যাওয়া একমাত্র উইকেটটি নেন ক্রিস এমপফু।
এরআগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না জিম্বাবুয়ের। দলীয় ১২ রানেই ওপেনার তিনাশে কামুনহুকামুইকে ফিরিয়ে দেন শফিউল ইসলামের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া আল আমিন হোসেন। অবশ্য শুরুতেই উইকেট হারানোর চাপ বুঝতে হয়নি জিম্বাবুয়েকে। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন ব্রেন্ডন টেলর ও ক্রেইগ আরভিন।

২৯ রান করা আরভিনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আফিফ হোসেন। নিজের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলেই আরভিনকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। শন উইলিয়ামসও টিকতে পারেননি। আরেক ডানহাতি অফ স্পিনার মাহেদী হাসানের বলে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
এর মাঝেও একপাশ আগলে রাখেন ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা ব্রেন্ডন টেলর। উইলিয়ামসের বিদায়ে পর সিকান্দার রাজাকে সাবলীল মনে হচ্ছিল। কিন্তু ১২ রান করেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শিকারে পরিণত হতে হয় জিম্বাবুয়ের ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে।
শুরু থেকে শেষপর্যন্ত টেলরই যা লড়াই করেছেন। জিম্বাবুয়ের ডানহাতি অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ৪৮ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। মুস্তাফিজুর রহমান ও আল আমিন হোসেন ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সাইফউদ্দিন, মাহেদী ও আফিফ। অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১২০/৭ (টেলর ৫৯* আরভিন ২৯, সিকান্দার রাজা ১২; মুস্তাফিজ ২/২৫, আল আমিন ২/২২)।
বাংলাদেশ: ১৫.৫ ওভারে ১২০/১ (লিটন ৬০, নাঈম ৩৩, সৌম্য ২০*; এমপফু ১/২৭)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা: লিটন দাস।