নেইমারদের শাসনে শুরু কোপা আমেরিকা
পুরো ম্যাচে কেবল ব্রাজিলই খেলল। একক আধিপত্য ধরে রেখে মুহুর্মুহু আক্রমণ করে যেতে থাকল স্বাগতিকরা। করোনার ছোবলে জেরবার ভেনেজুয়েলা নেইমার-হেসুসদের সব আক্রমণ ফেরাতে পারল না। দারুণ এক জয়ে কোপা আমেরিকার মিশন শুরু করল ব্রাজিল।
বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোরে ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার উদ্বোধনী ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। আসরটির বর্তমান চ্যাম্পিয়দের পক্ষে গোল করেন মার্কিনিয়োস, নেইমার ও গ্যাব্রিয়েল বারবোসা। পুরো ম্যাচে দারুণ খেলা নেইমার একটি গোল করার পাশাপাশি শেষ গোলটি বারবোসাকে দিয়ে করান।
ম্যাচে ৬২ শতাংশ সময় বল ব্রাজিলের দখলে ছিল। কিছুক্ষণ পরপরই ভেনেজুয়েলার রক্ষণভাগে হানা দেওয়া ব্রাজিল শট নিয়েছে ১৮টি, এর মধ্যে ৭টি ছিল লক্ষে। ব্রাজিলের আক্রমণ ফেরাতেই ব্যস্ত থাকা ভেনেজুয়েলার নেওয়া ৩টি শটের একটি ছিল লক্ষ্যে। বারবার আক্রমণ করে ব্রাজিল কর্নার আদায় করে ৯টি, ভেনেজুয়েলা ৪টি।
প্রথম কয়েক মিনিট গোছালো ফুটবল খেলতে পারেনি কোনো দলই। বল মাঝ মাঠেই ঘুরপাক খেয়েছে। প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিলেও কোনো দল পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। দশম মিনিটে গিয়ে প্রথম সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল।
দারুণ দক্ষতায় বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রিচার্ডসনের উদ্দেশ্যে বাড়ান নেইমার। কিন্তু ভালোভাবে শট নিতে পারেননি রিচার্ডসন। তবু তার আলতো ছোয়ায় বল গোলমুখে এগিয়ে যাচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষক জোয়েল গ্রাতেরল।
পরের মিনিটেই ব্রাজিলের আরেকটি আক্রমণ। লেলান রদির ক্রসে দারুণ এক হেড নেন এদের মিলিতাও। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা এই ডিফেন্ডারের হেড সামান্যর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পোস্ট ঘেষে বেরিয়ে যায় বল।
ছন্দ খুঁজে পাওয়া ব্রাজিল গোলের জন্য হন্যে হয়ে ওঠে। একের পর এক আক্রমণ সাজাতে থাকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এর মাঝে ১৭তম মিনিটে প্রথম কর্নার পায় ভেনেজুয়েলা। যদিও এখান থেকে কোনো সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি তারা।
২০তম মিনিটে কর্নায় পায় ব্রাজিল। নেইমারের নেওয়া কর্নার ফিরিয়ে দিয়েও বিপদমুক্ত হতে পারেনি ভেনেজুয়েলা। ফিরে আসা বলে দূর থেকেই জোরে শট নেন দানিলো। তবে তার শটের সহজেই ফেরান গ্রাতেরল।
ব্রাজিলের আক্রমণ ফেরাতেই ব্যস্ত ভেনেজুয়েলা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। সুযোগ বুঝে পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা চালায় তারা। যদিও আক্রমণে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি তারা।
অবিরত আক্রমণের ফল ২৩তম মিনিটে পায় ব্রাজিল। নেইমারের কর্নার কিক থেকে বল পান মার্কিনিয়োস। কিন্তু বাধার কারণে ভালো মতো শট নেওয়ার সুযোগ ছিল না পিএসজি ডিফেন্ডারের। বেকায়দা অবস্থা থেকেই আলতো শটে বল জালে জড়ান তিনি।
২৬ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় পেলের দেশ। নেইমারের বাড়ানো বলে পা ছুঁইয়ে বল জালেও জড়ান রিচার্ডসন। কিন্তু অফ সাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ৩০তম মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। ছোট ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গোল করতে পারেননি পিএসজি ফরোয়ার্ড। তার শট পোস্ট ঘেষে বেরিয়ে যায়।
ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণে হাঁপিয়ে ওঠে ভেনেজুয়েলা। দলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে একের পর এক কর্নার দিতে থাকে তারা। প্রথমার্ধের বাকিটা সময়েও ব্রাজিলের আক্রমণ ফেরাতে ব্যস্ত থাকতে হয় ভেনেজুয়েলাকে। তবে এই অর্ধে আর গোল হজম করেনি দলটি।
৫৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পায় ব্রাজিল। ডান প্রান্ত থেকে দারুণ এক ক্রস বাড়ান গ্যাব্রিয়েল হেসুস। পা ছোঁয়ালেই জালের ঠিকানা মিলতে পারতো। কিন্তু দৌড়ে গিয়ে বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি নেইমার।
দ্বিতীয় গোলের দেখা পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের। ৬২তম মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে দানিলো ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন তারকা ফরোয়ার্ড নেইমার। ৮৩ মিনিটে দেখা যায় নেইমার ঝলক। বল পেয়ে ভেনেজুয়েলার কয়েকজনকে ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। কিন্তু নেইমারের নেওয়া শট পোস্ট ঘেষে বেরিয়ে যায়।
৮৯তম মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। মাঝ মাঠ থেকে বাড়ানো বল নিয়ে ডি-বক্সে পৌঁছে যান নেইমার। ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষক গ্রাতেরল এগিয়ে এলে তাকে ফাঁকি দিয়ে গোলমুখে আরও এগোন নেইমার। একটু তুলে বারবোসার উদ্দেশ্যে বল বাড়ান তিনি। বল পেয়ে দলের পক্ষে তৃতীয় গোল আদায় করে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি বারবোসার।