নতুনে নতুন শুরুর আশা
একটির পর আরেকটি আঘাত, হারের ক্ষত এখনও তাই দগদগে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের এককেটি ম্যাচ, একেকটি দুঃস্বপ্ন। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার বলে দুঃখবিলাসী হওয়ার সুযোগ নেই। ব্যর্থতাকে কোনোমতে ভুলে হলেও সামনে পা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ দলকে সেটাই করতে হচ্ছে। সব দিক দিয়েই অনেক পিছিয়ে থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নতুন শুরুর আশায় থাকা বাংলাদেশ আজ ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হচ্ছে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা ২টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে জয় পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ চেনা না থাকলেও বাংলাদেশের লক্ষ্য লড়াকু পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া।
নতুন এই যাত্রায় নতুনদের ওপর ভরসা করছে বাংলাদেশ। টোয়েন্টি দলে আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ছয়জন নেই এবারের দলে। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না। বাদ পড়েছেন মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেন। আর তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে আগে থেকেই দলে নেই।
ছয় জনের জায়গায় নেওয়া হয়েছে ছয়জনকে। এর মধ্যে চার জনই নতুন মুখ। তারা হলেন সাইফ হাসান, ইয়াসির আলী রাব্বি, শহিদুল ইসলাম ও আকবর আলী। দলে ফেরানো হয়েছে নাজমুল হাসান শান্ত ও আমিন ইসলাম বিপ্লবকে। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ চার ক্রিকেটারের মধ্য থেকে এই সিরিজে আছেন শুধু অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এরপর তুলনামূলকভাবে অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। বাকিদের কেউ একেবারেই নতুন, কারও অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হতে শুরু করেছে মাত্র। সব মিলিয়ে নতুন শুরুতে নতুনদের ওপরই আস্থা রাখছে বাংলাদেশ। আর এই দল নিয়ে ভালো কিছু করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদউল্লাহ।
চ্যালেঞ্জ দেখলেও ভালো কিছুর আশায় বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেছেন, 'তরুণ দল এটা, কিছুটা চ্যালেঞ্জের তো হবেই। তবে চাপের কিছু নেই এতে। এটা চ্যালেঞ্জিং একটা সিরিজ হবে। আমি নির্দিষ্টভাবে বিশ্বাস করি, টি-টোয়েন্টি এমন একটা খেলা, যদি আপনার সেরা একাদশ থাকে ও উইকেট ভালো থাকে তাহলে ভালো কিছু আশা করতে পারেন আপনি।'
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ছিল দুর্বার। সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারার আগে সুপার টুয়েলভে টানা পাঁচ ম্যাচ জেতে তারা। এরপরও আশাবাদী মাহমুদউল্লাহ, 'দলের ওপর আমার পুরোপুরি ভরসা আছে। তারা সবাই সামর্থ্যবান, এ কারণেই তারা জায়গা পেয়েছে। আগেই বলেছি, এই সিরিজটা চ্যালেঞ্জিং হবে। ব্যাটে, বলে এবং ফিল্ডিংয়ে আমাদের খুবই ভালো করতে হবে। সব কিছুই আমাদের ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।'
অন্যদিকে বিশ্বকাপের ছন্দ রেখেই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে চায় পাকিস্তান। ভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দলটির অধিনায়ক বাবর আজম বলেছেন, 'বিশ্বকাপ এখন অতীত। সেই মোমেন্টাম ও আত্মবিশ্বাস আমরা ধরে রাখতে চাইব। তবে ভবিষ্যতে মনোযোগ দিতে চাই। নতুন জায়গা, নতুন সিরিজ। ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে হবে।'
'পুরো দলের আত্মবিশ্বাস অটুট আছে। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আছে। চেষ্টা করছি যেন বিশ্বকাপের মোমেন্টাম ধরে রাখা যায়। দল যখন হারে, তখনই পাশে থাকা জরুরি। ক্রিকেটে এসব হয়-ই। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস আছে।' যোগ করেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
বাস্তবতার নিরিখে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সব সময়ই পিছিয়ে থাকা দল বাংলাদেশ। ১২ মোকাবিলায় পাকিস্তানের জয় ১০টি, বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ২টি ম্যাচে।
অবশ্য আজকের ভেন্যুর হিসেব করলে বাংলাদেশই এগিয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া বাংলাদেশের দুটি জয়ই এই মিরপুরে। এই মাঠে খেলা সর্বশেষ দুই ম্যাচেই হেরেছে পাকিস্তান। ২০১৫ সালে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানের অভিষেক হয়। পরের বছর এশিয়া কাপেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতে বাংলাদেশ।
যদিও এসব কেবলই সুখস্মৃতি। এই পাকিস্তান দল যে ছন্দে আছে, তাদেরকে ফেরানো যেকোনো দলের পক্ষেই কঠিন কাজ। তবু ভালো ক্রিকেট খেলে লড়াইয়ের আশায় বাংলাদেশ।