ভুলে ভরা ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে টিকে রইল বাংলাদেশ
ওমানের বিপক্ষেও ছন্নছাড়া ব্যাটিং। নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ ছাড়া রানের দেখা পেলেন না কেউই। তাতে ১৫৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ মিললেও ভুলে ভরা ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার যোগাড়। মাঝে মাঝে উইকেট নিয়ে নিজের কাজটি চালিয়ে এলেন মুস্তাফিজ। পরে শেখ মেহেদী হাসানের দারুণ বোলিয়ের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণি। কোণঠাসা হয়ে পড়া ওমানকে দিক ভুলিয়ে দেওয়ার সর্বশেষ কাজটিও করলেন মুস্তাফিজ। রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ওমানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে রইলো বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাসকাটের আল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওমানকে ২৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং করে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ১৩ ওভার পর্যন্ত চোখ রাঙানো ওমানের ইনিংস থামে ১২৭ রানে।
এই ম্যাচে তিনটি নাম বড় করে; সাকিব আল হাসান, নাঈম শেখ ও শেখ মেহেদী হাসান। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচসেরা পুরস্কার জেতা সাকিব ৪২ রানের ইনিংস খেলার পর ২৮ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। নাঈমের ৬৪ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দেয় লড়াইয়ের পূঁজি। আর প্রবল চাপেও ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ১ উইকেট নেওয়া মেহেদীই মূলত বাংলাদেশকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখে।
যে ম্যাচ হারলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে যেত, সেই ম্যাচেই দেখঅ গেছে বাংলাদেশের ভুলের ছড়াছড়ি। প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে নাঈম শেখ যে সর্বোচ্চ ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছেন, সেখানে দুবার জীবন পেয়েছেন তিনি। তার তোলা ক্যাচ দুবার ছেড়েছে ওমানের ফিল্ডাররা। লিটন দাসও একবার জীবন পান, যদিও তার ব্যাট থেকে রান আসেনি।
আগের ম্যাচের মতো ওমানের বিপক্ষেও শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ২১ রানেই নেই দুই উইকেট। এখান থেকে দলের হাল ধরেন নাঈম ও সাকিব। ওমানের দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে শুরুতে রান তুলতে ধুঁকছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যানও। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে মাত্র ২৯ রান পায় বাংলাদেশ।
যদিও দলকে হতাশ করেননি তারা। উইকেটে থিতু হওয়ার সুবিধা পরে কাজে লাগিয়েছেন নাঈম-সাকিব। এই জুটিতে ১০১ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৯ ওভারে ৮০ রানের জুটি গড়েন তারা। নাঈম-সাকিবের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছোট ইনিংসে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান তোলে বাংলাদেশ।
নিজের ছায়া হয়ে থাকা লিটন ৬ রান করে থামেন। সাকিবের জায়গা তিনে নেমে হতাশ করেন মেহেদী। ৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। এরপর নাঈম ও সাকিবের লড়াই। দীর্ঘদিন পর ব্যাট হাতে ছন্দ পাওয়া সাকিব রান আউট হন। থ্রো আসছে দেখেও সেভাবে চেষ্টা করেননি তিনি, অনেকটা আলসেমিতে রান আইট হন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
সাকিব ফিরলেও নাঈম তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। বাঁহাতি এই ওপেনার ৫০ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬৪ রান করেন। এরপর দ্রুত ফেরেন নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। সোহান ৩ ও আফিফ ১ রান করেন।
ব্যাটিং অর্ডার বদলে এদিন ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম সাত নম্বরে। মুশফিক ৬ রান করে থামেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন থামেন কোনো রান না করেই। শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহই যা রান করেন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ১০ বলে ১৭ রান করেন। দারুণ বোলিং করা বিলাল খান ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া ফায়াজ বাট ৩টি ও কলিমুল্লাহ ২টি উইকেট নেন। একটি উইকেট নেন অধিনায়ক জিশান মাকসুদ।
বল হাতেও শুরুটা চরম অগোছালো হয় বাংলাদেশের। মুস্তাফিজ একটি উইকেট নিলেও প্রথম দুই ওভার থেকে ২৪ রান তোলে ওমান। অন্য প্রান্তে উইকেট গেলেও সাবলীল খেলতে থাকেন যতিন্দর সিং। তার ব্যাটিংয়ের সুবাদেই ১২.৫ ওভারে ৯০ রানে পৌঁছায় ওমান। তখনও ম্যাচে ভালোভাবেই ছিল তারা। কিন্তু এই ওভারের শেষে বলে ৪০ রান যতিন্দরকে আউট করে দলবে ম্যাচে ফেরান সাকিব।
ওমানের হয়ে কাশইয়াপ প্রজাপতি ২১, অধিনায়ক জিশান মাকসুদ ১২ ও মোহাম্মদ নাদিম ১৪ রান করেন। ৩৬ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। সাকিব ৩টি এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মেহেদী একটি করে উইকেট নেন।
আরেকটি উইকেট পতন, আরেকটু স্বস্তি
শুরু থেকেই ঠিক পথে থাকা ওমানকে শেষ পর্যন্ত চেপে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ। সন্দীপ গৌদকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ১৬ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ওমানের সংগ্রহ ১০৪ রান। জয়ের জন্য ২৪ বলে ওমানের দরকার ৫০ রান।
যতিন্দরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন সাকিব
শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করে আসছিলেন যতিন্দর সিং। তার ব্যাটেই জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল ওমান। অবশেষে তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। ৪০ রান করা যতিন্দরই এই ম্যাচে সাকিবের প্রথম শিকার। ১৪ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ওমানের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৯৬ রান। জয়ের জন্য ৩৬ বলে ৫৮ রান দরকার ওমানের।
দারুণ ক্যাচে কিছুটা স্বস্তি ফেরালেন মুস্তাফিজ
শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে ফিল্ডিংয়ের সময় মুস্তাফিজুর রহমান ক্যাচ ছেড়েছিলেন। সেই মুস্তাফিজই দারুণ ক্যাচে ওমানের অধিনায়ককে ফেরালেন। ডানহাতি অফ স্পিনার মাহেদীর বলে তুলে মারতে গিয়ে মুস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন ওমান অধিনায়ক জিশান মাকসুদ। ১৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ১২ ওভার শেষে ওমানের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৮২ রান। হুমকি হয়ে ওঠা যতিন্দর সিং ৩৪ ও আয়ান খান শূন্য রানে ব্যাটিং করছেন।
১০ ওভারে ওমানের ৭০, এখনও চাপে বাংলাদেশ
একের পর এক ক্যাচ ছাড়া, রান আউট মিস করে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচকে কঠিন করে তুলেছে বাংলাদেশ। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে যেন খেই হারিয়ে বসেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। মুস্তাফিজ-তাসকিনদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং, মুস্তাফিজ-মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ মিসের সুবিধা কাজে লাগিয়ে রান বাড়িয়ে নিয়েছে ওমান। ১০ ওভার শেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৭০ রান। যতিন্দর সিং ৩০ ও জিশান মাকসুদ ৪ রানে ব্যাটিং করছেন।
অনেক ভুলের পর আরেকটি উইকেট এনে দিলেন মুস্তাফিজ
দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট। এরপর ভুলের পর ভুল। ক্যাচ মিসের মহড়ায় মেতে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। যেটাকে কাজে লাগিয়ে মারকুটে স্টাইলে রান বাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওমানের ব্যাটসম্যানরা। অবশেষে থেমেছে ভুলের মহড়া। ষষ্ঠ ওভারে আকিব ইলিয়াসকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। ৬ ওভার শেষে ওমানের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৭ রান। ২টি ক্যাচ না ছাড়লে ওমান এতোক্ষণে কোণঠাসা অবস্থায় থাকতে পারতো।
দ্বিতীয় ওভারেই মুস্তাফিজের আঘাত
প্রথম ওভারটা ভালো গেল না। তাসকিন আহমেদ খরচা করেন ১০ (বাই সহ ১৩ রান)। যেন শুরুতেই চাপে বাংলাদেশ। কিন্তু দলকে বেশি সময় চাপে থাকতে দিলেন না মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ওমানের ওপেনার আকিব ইলিয়াসকে ফিরিয়ে বাঁহাতি এই পেসার।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে যতিন্দর সিংয়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কাশইয়াপ প্রজাপতি। প্রথম বলে উইকেট নিলেও এই ওভারটা ভালো যায়নি মুস্তাফিজেরও। ৫টি ওয়াইডসহ ১২ রান দিয়েছেন তিনি। তার বলে দারুণ একটি ছক্কা মেরেছেন প্রজাপতি। ১৫৪ রানের লক্ষ্যে ২ ওভার শেষেই ওমানের সংগ্রহ এক উইকেটে ২৪ রান।