টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন মাহমুদউল্লাহ
১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। একে দলের দুঃসময়, এর সঙ্গে নিজের ফেরার পর্ব; কিন্তু চাপের বোঝা মাথায় নিয়েও ১৫০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। সবখানে যখন তার বীরোচিত ফেরার গল্প লেখা হচ্ছিল, তখন টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন মাহমুদউল্লাহ। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়ে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
একদিন আগে টিম মিটিংয়ে টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার কথা জানান তিনি। এরপর দলের পক্ষ থেকে বোঝানো হলেও নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাননি মাহমুদউল্লাহ। হারারের টেস্টের পঞ্চম দিনে (রোববার) মাঠে প্রবেশের সময় তাকে গার্ড অব অনার দেন দলের বাকি ক্রিকেটাররা। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ যে ৪৬৮ রানের সংগ্রহ পেয়েছে, এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মাহমুদউল্লাহর। টেস্টে ফেরার পর্বে ১৫০ রানের ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন তিনি। এই সেঞ্চুরিটা তার কাছে সবচেয়ে স্পেশাল নয়, তবে বিশেষ কিছু অবশ্যই। তাই তো তিন অঙ্কে পৌঁছে সেদিন দুই হাত প্রসারিত করে চিৎকার ছেড়ে বরফ হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তাসকিন আহমেদকে নিয়ে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া মাহমুদউল্লাহ সেদিন ডিপ পয়েন্ট অঞ্চলে বল পাঠিয়ে রান পূর্ণ করেননি। চার নিশ্চিত বুঝে উইকেটের মাঝেই দাঁড়িয়ে যান। সেঞ্চুরির করার উদযাপনটা ছিল একবারে ভিন্ন। উচ্ছ্বাস নেই, ছিল চাপা ক্ষোভ। চিৎকার করে মাহমুদউল্লাহ যেন বলতে চাইছিলেন, 'আমিও টেস্ট খেলতে জানি'। প্রমাণ করলেন আর এখানেই বিদায় বলে দিলেন। যেন এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি!
এই টেস্টের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭টি সেঞ্চুরির (৪টি টেস্ট ও ৩টি ওয়ানডে) মালিক ছিলেন তিনি। এর মধ্যে কিছু সেঞ্চুরি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যাটসম্যানের কাছে সব সেঞ্চুরি সমান হলেও মাহমুদউল্লাহর কাছে বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেঞ্চুরির মতো এটা নিশ্চয়ই স্পেশাল সেঞ্চুরি নয়। তবু এবার বিশেষ উদযাপন। যে উদযাপনে ছিলো আগ্রাসনও।
চার মেরে ১০০ ছুঁয়ে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের দিকে ফিরে ইংরেজি শব্দ 'ইয়া' বলে কিছুক্ষণের জন্য থেমে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। যেন টেস্ট থেকে অবহেলিত হওয়ার জবাবটা ১০০ পূর্ণ হওয়ার পর গলা ফাটিয়ে দিতে চেয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
অথচ টেস্ট থেকে বাদ দিয়ে মাহমুদউল্লাহকে সাদা বলের ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ মাস তাকে সাদা পোশাকে নূন্যতম বিবেচনার কাতারেও রাখা হয়নি। নিয়তি কতোটাই বিবেচক যে, হঠাৎ দলে নেওয়া সেই মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেই সওয়ার হতে হয় বাংলাদেশকে। জবাবে মোক্ষম সুযোগ পেয়ে মাহমুদউল্লাহ খেললেন তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আর এই বাঁকেই ভেবে ফেললেন টেস্টকে বিদায় বলে দেবেন।
টেস্টে মাহমুদউল্লাহর যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০০৭ সালে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও টেস্ট দলে জায়গা পেতে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয় তাকে। ১২ বছরে দেশের হয়ে ৪৯টি টেস্ট (চলমান টেস্ট বাদে) খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪টি সেঞ্চুরি ও ১৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩১.৭৭ গড়ে তার রান ২ হাজার ৭৬৪। বল হাতেও অবদান আছে মাহমুদউল্লাহর। সাদা পোশাকে ৪৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। টেস্টে তার সেরা বোলিং ৪৩ রানে ৫ উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।