খালেদের ২০ বলের চ্যালেঞ্জ ও এবাদতের অস্বস্তি

ওয়ানডে সিরিজে মধুর সময় কেটেছে, লড়াই এবার লাল বলের। ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার এই ফরম্যাটেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শাসন করতে দুদিন আগেই প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাঝে একদিন বিরতি দিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন মুশফিক-মুস্তাফিজরা। এদিন পেসার-স্পিনারদের নিয়ে ব্যাটিং অনুশীলনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন কোচরা।
জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের নেটে ব্যাটিং করছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। তাদেরকে বোলিং করছিলেন এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদরা। সেখানে শুধু বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের দেখা মিলল। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকদের খুঁজতে যেতে পূর্ব হলো পাশের নেটে।
এই নেটেও চলছিল অনুশীলন। সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলাম অনিককে নিয়ে কাজ করছিলেন ডমিঙ্গো ও কুক। দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে কাজ শেষে টেল এন্ডারদের ব্যাটিংয়ে নজর দেন তারা। শুরুটা হয় ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদকে দিয়ে। ব্যাট হাতে নেটে প্রবেশ করতেই তাকে লক্ষ্য দিয়ে দেন ডমিঙ্গো। শট না খেললেও চলবে, কিন্তু টিকে থাকতে হবে ২০ বল।
২০ বলে আউট না হওয়ার চ্যালেঞ্চ নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন খালেদ। থ্রোয়ারে বল ছুড়ছিলেন ডমিঙ্গো ও কুক। শর্ট বলে ভুগছিলেন তিনি। এমন সময়ে কুক এগিয়ে গিয়ে বলতে থাকেন, 'তুমি যখন শর্ট বল সামনে পাবে, পরিকল্পনা রাখতে হবে। শট খেলার বল পেলে শট খেলবে। সবকিছু পরিকল্পনা করে খেলতে হবে, তাহলে তুমি সফল হবে।'
খালেদ মনোযোগী ছাত্র হয়ে কথা গেলার চেষ্টা করলেন। পরে মোকাবিলা করলেন আরও কয়েকটি বল। ৫ বল বাকি থাকতে ডমিঙ্গো বলে উঠলেন, 'আর মাত্র ৫ বল পুত্র, তুমি টিকতে পারবে?' খালেদ মাথা নেড়ে সায় দিলেন, পরের বলেই মারলেন চার। টেল এন্ডার শিষ্যের শট দেখে উচ্ছ্বসিত ডমিঙ্গো চিৎকার করে বলে ওঠেন, 'নাইস শট'।
২০ বল খেলে টিকে যান খালেদ। চ্যালেঞ্জ দিলেও এটাই তো চাওয়া ছিল কোচের। শিষ্যকে নিজের দেওয়া লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেখে ডমিঙ্গো বলতে থাকেন, 'সুন্দর ব্যাটিং খালেদ, তুমি পেরোছো। এটাই চেয়েছিলাম।'

ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে পাশেই তখন অপেক্ষা করছিলেন মুস্তাফিজ। খালেদ ২০ বলে খেলেও আউট না হওয়ায় বাঁহাতি এই পেসার বলতে থাকেন, 'আপনি পেরেছেন স্যার, সুন্দর ব্যাটিং। দেখ সবাই খুশি।' যেন খালেদকে খুশি করে দ্রুতই নেটে জায়গা নিতে চাইলেন মুস্তাফিজ। ব্যাটিংয়ের সময় তাড়া দিয়ে মুস্তাফিজ বলছিলেন, 'কীরে তোর শেষ হবে না?.
বোলারদের নিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন ডমিঙ্গো, কুকরা। খালেদের পর এই অনুশীলনে যোগ দেন এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজরা। নেটে গিয়ে দুই বল পরই মুস্তাফিজ শট খেলে বলছিলেন 'এটা চার'। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্লেষক শ্রিনিবাসন চন্দ্রশেখর বলেন 'এটা ২'। বিশ্লেষকের ওপর ভরসা পাননি মুস্তাফিজ, বাঁহাতি এই পেসার বলে ওঠেন, 'না, এটা কী! এটা চার তো।' এ সময় ফিল্ডিং কোচ কুককে উদ্দেশ্য করে ফিজ বলছিলেন, 'তুমি আমাকে সমর্থন করো।'
মুস্তাফিজের ব্যাটিং শেষে দ্বিতীয় পত্তনে ব্যাট হাতে নেটে যান খালেদ। এ সময় আরও বেশি ধের্যশীল মনে হলো তাকে। তবে শট খেলতেও পিছপা হননি ডানহাতি এই পেসার। খালেদের একটা শট দেখে ডমিঙ্গো বলে ওঠেন, 'খালেদ ইউ বিউটি। বেস্ট এভার ব্যাটিং।' কুকেরও মনে ধরে শটটা। দক্ষিণ আফ্রিকান এই ফিল্ডিং কোচ বাংলায় বলে ওঠেন 'বেশি ভালো, বেশি ভালো।'
খালেদ কোচদের মন জয় করে নিলেও এবাদত নেটে কঠিন সময় পার করছিলেন। বল মিস করছিলেন, বল ফেরানোর চেষ্টা করেও আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় কুক এবাদতকে ব্যাটিয়ের বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। ব্যাটিংয়ের জন্য অপেক্ষারত লিটন কুমার দাসও তখন কোচের ভূমিকায়। এবাদতকে ব্যান্ড পজিশন, পায়ের অবস্থান বারবার ঠিক করে দিচ্ছিলেন লিটন। সোহান পাশ থেকে বলছিলেন, 'মনে কর মিঠুন ভাই বোলিং করে, এটা মনে করে খেলে ফেল।'
পরে নেটের ব্যাটিংয়ে যোগ দেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও। টেল এন্ডারদের নিয়ে নেটে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান ডমিঙ্গো-কুক। ব্যাটিং সেশনে পুরোপুরি ব্যাটিং কোচের ভূমিকায় দেখা গেছে ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে। ডমিঙ্গো থাকলেও টেল এন্ডারদের ব্যাটিংয়ের কৌশল নিয়ে কথা বলে গেছেন তিনিই। বেশ কিছুক্ষণ পর এই পাসের নেটে আসেন ব্যাটিং কোচ জন লুইস। কিন্তু তখনও মুমিনুলকে নিয়ে নেট ব্যস্ত কুক।