কোয়ারেন্টিন শেষ, সাদমান-মৃত্যুঞ্জয়ের মুক্তির স্বস্তি

অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্রোপচার করে দেশে ফিরেই ঘরবন্দী। টানা ১৪দিন কেটেছে একটা ঘরেই। পরিবারের সদস্যরাও কেউ কাছে ভেড়েননি। ইনজুরি কাটিয়ে ওঠার লড়াই তো আছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ঘরবন্দী হয়ে থাকার বিরক্তি। সেই বিরক্তির সময় শেষ হয়েছে জাতীয় দলের ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক ও বিশ্বজয়ী যুব দলের সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর।
করোনাভাইরাস সতর্কতায় কোয়ারেন্টিন শেষে রুম থেকে বেরিয়েছেন এই দুই ক্রিকেটার। এখন তাই কিছুটা মুক্ত মনে হচ্ছে সাদমান-মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, বাসার সবখানেই চলাফেরা করতে পারছেন তারা। বন্দী হয়ে থাকা ১৪ দিন কেমন ছিল, কীভাবে কেটেছে সময়, ইনজুরিসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন সাদমান ও মৃত্যুঞ্জয়।
সাদমান ইসলাম অনিক
কোয়ারেন্টিনে থাকা ১৪ দিন
১৪ দিন তো ঘরেই ছিলাম। একটা রুমেই ছিলাম। এই সময়ে মুভি দেখেছি, বই পড়েছি, গেম খেলেছি। আমার এক হাত তো এমনি ব্যবহার হয় না। আরেক হাতে যতটুকু করা যায়, করেছি। ল্যাপটপে বসে বসে মুভি দেখেছি। পরিবারের সবাই দূরে দূরে ছিল। এসে খাবার দিয়ে যেত। আমি আমার রুমেই থাকতাম, বের হতাম না।
কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার অনুভূতি
এভাবে ১৪ দিন পার করার পর এখন মনে হচ্ছে কিছুটা মুক্ত হলাম। বাইরে যাইনি কোথাও। ঘরেই থাকছি কিন্তু এখন বাসার মধ্যেই সবগুলো রুমে ঘোরাফেরা করতে পারছি। আমার ছোট ভাইয়েরা এসেছিল, ওদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। সব মিলিয়ে একটু মুক্ত মুক্ত মনে হচ্ছে।
ইনজুরি আপডেট
অস্ত্রোপচারের জায়গা ভালোই আছে। প্রথম সপ্তাহেই ড্রেসিং করার কথা ছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ড্রেসিং করাতে পারছি না। কোথাও ভয়েই যাচ্ছি না। ইচ্ছা আছে দুই-একদিনের মধ্যে ড্রেসিং করাব।
করোনায় বর্তমান অবস্থা ও ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে শঙ্কা
এখন পুরো বিশ্বেই যে অবস্থা, ক্রিকেট ফিরতে ফিরতে আরও অন্তত দুই মাস লাগবে হয়তো। যা শুনছি জুনের আগে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হবে না। আমি মে মাসে ভালোভাবে ফিরতে পারব। এদিক থেকে আমি ভালোই সময় পেয়েছি রিকভার করার জন্য। একটা বিরতিও পেলাম আবার ইনজুরি থেকে ভালোভাবে ফিরতে পারব। একটু খারাপ লাগছিল যে, প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ চলছে কিন্তু আমি খেলতে পারছি না। একটু পরপর ক্রিকইনফোতে ঢুকেছি। একটু হলেও আফসোস হয়েছে যে সবাই খেলছে, আমি পারছি না। এমন সময় তো কখনও পার করিনি। তবে এখন খেলার চেয়ে মানুষের জন্য বেশি মায়া হচ্ছে।
দুস্থ মানুষদের সাহায্য করার প্রসঙ্গে
পুরো বিশ্বেই এটা দেখা যাচ্ছে। শুধু স্পোর্টসম্যান না, সবাই কিছু না কিছু আর্থিক সহায়তা করছে। আমাদের ক্রিকেটাররা যেমন টাকা তুলে সবাই দিচ্ছে। তো আমি মনেকরি এটা মানুষের মধ্যে এটা দারুণ দিক। যারা দিন এনে দিন খায়, তাদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে যাচ্ছে এ সময়টায়। তো এমন অবস্থায় সবাই এগিয়ে গেলে দেশের জন্যই ভালো। সব সময়ই এভাবে সাহায্য করলে সেটা আরও ভালো।
মুত্যুঞ্জয় চৌধুরী
কোয়ারেন্টিনে পার করা ১৪ দিন
১৪ দিনের ওই ব্যাপারটা শেষ। সব সময় রুমেই ছিলাম আর আমার হাতেও সমস্যা ছিল। বাইরে বের হওয়া হয়নি, সেই সুযোগও তো ছিল না। ওই সময়ই আমি সাতক্ষীরায় চলে এসেছিলাম। এখানে দেখলাম নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে। বাইরে যাওয়া পুরোপুরি নিষেধ।
কিছু তো করার ছিল না। বেশ কিছু মুভি দেখেছি। বই পড়েছি অনেকগুলো। এভাবেই গেছে। আমার অভ্যাস আছে এভাবে থাকাটা। কারণ ক্যাম্প করি, বাইরে বাইরে থাকতে হয়। তবে একটু বিরক্ত লেগেছে। কারণ ক্রিকেটার তো, ক্রিকেট না খেলতে পারলে শান্তি হয় না। একটু যদি বল-ব্যাট হাতে নিতে না পারি, খুব খারাপ লাগে।
কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার অনুভূতি
বন্ধুরা কেউ জানতো না যে আমি বাসায় ছিলাম। তো কাল আমি কয়েকজন বন্ধুকে ফোন দিয়েছি। কয়েকজন এলো, তারপর গল্প করলাম। কথাবার্তা, একটু আড্ডা দিলাম। এভাবেই যাচ্ছে, বাইরে বের হওয়া হচ্ছে না। তবে সত্যি বলতে এখন কিছুটা মুক্ত মুক্ত লাগছে। এখন তো আর একটা রুমে বন্দী হয়ে থাকতে হচ্চে না। বাসার সবখানেই যেতে পারছি।
ইনজুরি আপডেট
২১ দিন হয়ে গেল অস্ত্রোপচারের। আর ৯ দিন পর সিলিংটা খুলে ফেলব আমি। এরপর দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারব। হাল্কা জগিং করতে পারব। দুই সপ্তাহ পর পুনর্বাসন শুরু হবে। আমার প্রধান পুনর্বাসন শুরু হবে তিন মাস থেকে। তিন মাস থেকে আমি বল নিয়ে পুনর্বাসন শুরু করতে পারব।
করোনায় সৃষ্ট বর্তমান অবস্থা ও মাঠে ক্রিকেট ফেরা নিয়ে শঙ্কা
আমার জন্য এখন খেলা নিয়ে হতাশা নেই। আমার জন্য মূল চিন্তা ইনজুরি থেকে ফিরে আসাটা। কবে ফিরব, কবে খেলায় ফিরব, এসব নিয়ে ভাবনা কাজ করে। যে সময়টা যাচ্ছে, এটা আমার জন্য খারাপ না। কারণ আমার পরিকল্পনাই ছিল এভাবে এভাবে যাওয়া। বরং এখন আরও নিরাপদ থাকতে পারছি। কারণ এখন কোয়ারেন্টিনে না থেকে যদি বাইরে চলাফেরা করতাম খারাপ কিছু হয়ে কাঁধে আবার বড় কিছু হয়ে যেতে পারত। তাহলে সেটা আমার জন্য খারাপ ছিল।
সতীর্থদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ফিটনেস প্রসঙ্গ
আমাদের সব ক্রিকেটারের সাথে কথা হয়। ভালো জিনিস হচ্ছে আমাদের বোর্ডের একটা পেজ আছে, ওখানে সবাই মনিটরিং করছে। বাসার কাজ দিয়ে দিচ্ছে। আবার আমাদের ট্রেনার রিচার্ড স্টয়নার আছেন, সে ইংল্যান্ডের বিকালের সময়ে আমাদের এক ঘণ্টা ব্যায়াম করান। এসব ফিটনেসের ক্ষেত্রে খুব কাজে দিচ্ছে। তবে একটা কথা সত্যি, সবাই খুব বিরক্ত। এটাই খারাপ জিনিস আর কি।