কোচিং স্টাফ নিয়ে চিন্তায় বিসিবি, নতুন দায়িত্বে খালেদ মাহমুদ
হারে শুরু, হারে শেষ। মাঝে রাশিরাশি হতাশার গল্প, সমালোচনা, বিতর্ক আর জবাব পাল্টা জবাবের অনিয়ন্ত্রিত খেলা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার লিগে দলের ভরাডুবির পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এখন টালমাটাল। ক্রিকেটারদের মতো দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বিসিবিরও। অভিভাবক সংস্থা হওয়ায় আলোর সন্ধানে এখন বিসিবি।
নানা উদ্যোগের চিন্তায় সময় পার হচ্ছে বিসিবি কর্তাদের। কোন পথে দিশা মিলবে, সেটা খুঁজতে গিয়ে ইতোমধ্যে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তারা। যে রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে কদিন আগেই চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে, তাকে নিয়েই ভাবা হচ্ছে ভিন্নভাবে। বাকি কোচিং স্টাফদের নিয়েও স্বস্তির জায়গা নেই।
ফিল্ডিং কোচের তত্বাবধানে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে আছে যথেষ্ট সংশয়। ক্যাচ মিস থেকে শুরু করে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের হতশ্রী অবস্থা দেখার পর তাকে কাঠগড়ায় দ্বার করনোর ব্যাপারটা নিশ্চয়ই যুক্তিযুক্ত। পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনকে নিয়েও আছে আলোচনা। সব মিলিয়ে কোচ স্টাফ নিয়ে নতুন ভাবনায় এখন বিসিবি।
এর মাঝেও একটি সিদ্ধান্ত দ্রুতই নিয়ে নিয়েছে বিসিবি। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বানানো হয়েছে। নতুন দায়িত্বে কোচ, অধিনায়কের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন সুজন। মতামত দিতে পারবেন দল নির্বাচন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্তে।
খালেদ মাহমুদকে একটি দায়িত্বে বসানো একটি অংশ মাত্র। দেশের ক্রিকেটের এই খারাপ সময়ে আরও অনেক বিষয় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, বিসিবি সভাতি নাজমুল হাসান পাপনের। তার চিন্তাই সবচেয়ে বেশি। কেবল সাংগঠনিক ব্যাপারই নয়, মাঠের ক্রিকেট নিয়েও তার বিশ্লেষণে প্রকাশ পাওয়া হতাশা, ক্ষোভ, উদ্বেগ, সমালোচনা সেটাই প্রমাণ করে।
তাই বিসিবি সভাপতির ছোটাছুটি অন্য যে কারও চেয়েই বেশি। ক্রিকেটে স্বস্তি ফেরাতে, ঠিক পথ খুঁজে বের করতে গত কয়েকটি দিনে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন নাজমুল হাসান। বিসিবি পরিচালক, নির্বাচকদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে বের করতে চেয়েছেন বিপদ উদ্ধারের উপায়। সেটায় সন্তুষ্টি না মেলায় সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও বর্তমান অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন নাজমুল হাসান।
করণীয় বা সঙ্কট উত্তরণ নিয়ে যখন এতো আলোচনা, দৌড়ঝাঁপ, তখন প্রধান জায়গাতেই সবচেয়ে বড় সমস্যার সম্মুখীন বিসিবি। বিশ্বকাপের সুপার লিগে টানা পাঁচ ম্যাচে হারের পর চরম ব্যর্থতার দায় বর্তায় প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ওপরও। এমন বিশ্বকাপ যাত্রা শেষে প্রোটিয়া এই কোচকে রাখার তেমন ইচ্ছা আর নেই বিসিবির। কিন্তু চাইলেও তাকে ছেড়েও দেওয়া যাচ্ছে না।
ডমিঙ্গোর দাবি মেনে চুক্তিতে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। দুই বছরের চুক্তির প্রথম এক বছরে বিসিবি তাকে বরখাস্ত করতে চাইলে কিংবা তিনি চাকরি ছাড়তে চাইলে, গুনতে হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। যে পক্ষই সম্পর্ক ছিন্ন করুক, সেই সময় থেকে এক বছর হওয়া পর্যন্ত যত মাস বাকি থাকবে, সেই মাসের বেতনের অঙ্ক বুঝিয়ে দিতে হবে।
তাকে বরখাস্ত করলে কোটি ২৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হবে বিসিবিকে। এরপরও কোচ পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, ফেরানোর চেষ্টা চলছে বাংলাদেশের সাবেক কোচ চান্দিকা হাথরুসিংহেকে। কিন্তু তিনি আগামী আগস্টের আগে দায়িত্ব নিতে পারবেন না। এ কারণে আগামী আগস্ট পর্যন্ত ডমিঙ্গোকেই রাখা হতে পারে। কিংবা আগেই বাদ দিয়ে অন্য কাউকে করা হতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ।
টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্বেও পরিবর্তন আনার চিন্তায় বিসিবি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে আর অধিনায়ক রাখতে চায় না বিসিবি। প্রথমে তামিম ইকবালকে টি-টোয়েন্টি নিয়মিত হওয়ার প্রস্তাব দেন বিসিবি সভাপতি। পরে তাকে অদিনায়কত্বের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
কোচ, ক্রিকেটার ও দলের বাজে পারফরম্যান্সসহ আরও অনেক বিষয় নিয়েই দুশ্চিন্তায় বিসিবির কর্তারা। তাই তো 'সার্কেলের বাইরের' মাশরাফিকে ডেকেও করণীয় জানতে দ্বিধায় নেই কেউ। পাকিস্তান সিরিজের আগে খুব বেশি সময়ও নেই। সব মিলিয়ে কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কঠিন সময়ই পার করতে হচ্ছে বিসিবি কর্তাদের।