উসাইন বোল্টকে হারিয়ে দিলেন ভারতীয় শ্রমিক
তরুণের নাম শ্রীনিবাস গৌড়া। কর্ণাটকের বাসিন্দা। কর্নাটকের প্রত্যন্ত গ্রাম মুদাবিদরির ঠিকাশ্রমিক তিনি। ইনি বাড়ি নির্মাণের কাজ করেন। আর এই শ্রমিকই কি না দৌড়ে হারিয়ে দিলেন বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টকে?
হ্যাঁ, সুঠাম চেহারা নিয়ে ২৮ বছরের তরুণ শ্রীনিবাসের দৌড়ানোর ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে সোশাল মিডিয়ায়। এই দৌড়ের গতিতে ওই তরুণ নাকি টেক্কা দিয়েছেন বিশ্বের দ্রুততম মানুষ, উসাইন বোল্টকে! তাও আবার মসৃণ ট্র্যাকে নপ্য, বরং খানাখন্দে ভরা কর্দমাক্ত মাঠে, জোড়া মোষের সঙ্গে।
মহিষ দৌড় প্রতিযোগিতা ভারতের কর্ণাটকের প্রাচীন খেলা। কর্ণাটকে ভীষণ জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী এ দৌড়কে স্থানীয় তুলু ভাষায় বলা হয়—কাম্বালা।
নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে জোয়াল পরানো এক জোড়া মোষ নিয়ে কৃষকের দৌড় প্রতিযোগিতা। সাধারণত ১৩২ মিটার থেকে ১৪২ মিটার দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে কাম্বালা। ধানের কাদামাখা জমিতে মোষের সঙ্গে খালি পায়ে দৌড়ে থাকেন কৃষক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এবার কাম্বালা দৌড়েই ১৪২ মিটার দূরত্ব ১৩.৪২ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী শ্রীনিবাস। কাম্বালার ইতিহাসে এটি দ্রুততম দৌড়ের রেকর্ড। গত ৩০ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি।
জানা যাচ্ছে, উসেইন বোল্ট মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় সম্পূর্ণ করেছিলেন। এটাই এখনও পর্যন্ত ১০০ মিটারে বিশ্বরেকর্ড। এখনও কেউ এই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। কিন্তু, ১০০ মিটার যেতে শ্রীনিবাস সময় নিয়েছে ৯.৫৫ মিনিট। অর্থাৎ বোল্টের থেকে ০.০৩ সেকেন্ড সময় কম।
ভারতের সংসদ সদস্য শশী থারুর এ নিয়ে টুইট করেছেন শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। টুইটে তিনি বলেন, ‘উসাইন বোল্টের চেয়েও দ্রুতগামী? কর্ণাটকের লোকটি মোষ নিয়ে ১০০ মিটার ৯.৫৫ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়েছে। ভারতের অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনকে বলছি তাকে নিজেদের অধীনে নিয়ে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন বানাতে। জানি না এমন আরও কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে!’
স্থানীয় কাম্বালা একাডেমিতে এ দৌড়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শ্রীনিবাস। তিনি নিজে অবশ্য বোল্টের সঙ্গে তুলনায় নারাজ। শুধু এটুকু বলেছেন, ‘কাম্বালা ভালোবাসি। আমার এ সাফল্যের পেছনে দুটি মোষেরও কৃতিত্ব রয়েছে। তারা খুব দ্রুত দৌড়েছে। আমি অনুসরণ ও পরিচালনা করেছি।’
ভারতের খ্যাতনামা ব্যবসায়িক গ্রুপ ‘মহেন্দ্র’-এর চেয়ারম্যান আনন্দ মহেন্দ্র শ্রীনিবাসকে নিয়ে টুইট করেন, ‘তার শরীর দেখলেই বোঝা যায় অসাধারণ এক অ্যাথলেট। কিরণ রিজিজু হয় তাকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টার বানাবে নতুবা কাম্বালা দৌড়টা আমরা অলিম্পিকে দেখতে চাই। শ্রীনিবাসের জন্য আমরা সোনার পদক চাই!’ আনন্দ মহেন্দ্রর টুইট রি-টুইট করে ভারতের মন্ত্রী কিরণ রিজিজু জানান, ‘কর্ণাটকের শ্রীনিবাসকে গৌড়াকে কোচদের মাধ্যমের ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হবে।’
২০১৩ সাল থেকে কাম্বালায় অংশ নিচ্ছেন শ্রীনিবাস। এ পর্যন্ত ২৮টি পদক জিতেছেন। পশুদের ওপর অত্যাচারের জন্য এ দৌড় একবার বন্ধ করার আবেদন উঠেছিল আদালতে। কিন্তু ২০১৬ সালে এ দৌড়ের ছাড়পত্র দেয় ভারতের আদালত।