আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফের নিষিদ্ধ-ঘোষিত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার শঙ্কায় পাকিস্তান
প্রায় ১০ বছর ধরে দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার পর হুট করে আবারও নিষিদ্ধ-ঘোষিত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ ভক্ত থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেটের কর্তাব্যক্তিদের মাঝে ক্ষোভের কমতি নেই।
গত শুক্রবার সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে সফর বাতিল করে নিউজিল্যান্ড। ১৮ বছর পর পাকিস্তানে পা রাখা কিউইরা দেশ ত্যাগ করেছে এক বলও না খেলে।
নিউজিল্যান্ডের এই অকস্মাৎ সফর বাতিল করা নার্ভাস করে দিয়েছে ইংল্যান্ডকেও। আগামী মাসে দীর্ঘ ১৬ বছর পর পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে আসার কথা রয়েছে থ্রি লায়ন্সদের। কিন্তু এই সিরিজের ভবিষ্যতও এখন অনেকটাই ধোঁয়াটে।
দেশে সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনায় যেই গ্রীষ্মে ধুন্ধুমার উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাকিস্তান, সেই গ্রীষ্মই হুট করে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।
ক্রিকেট-পাগল জাতিটির জন্য এটা এক বড়সড় ধাক্কা। পাকিস্তানকে ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে এবং শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলতে গত কয়েক বছরে যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি)।
পিসিবির প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান রোববার গভীর রাতে একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচুর কাজ করেছি। কিন্তু আমাদের পায়ের নিচ থেকে গালিচাটি কত দ্রুতই না সরিয়ে নেওয়া হলো।"
'খুব বাজেভাবে আঘাত করেছে আমাদের': পিসিবি প্রধান
ওয়াসিম খান বলেন, নিউজিল্যান্ড দল আকস্মিকভাবে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় খুব বাজেভাবে আঘাত পেয়েছে পাকিস্তান। তিনি আরও জানান, অক্টোবরে পাকিস্তান সফর বাতিল না করার জন্য ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) অনুরোধ করেছেন তিনি। ১৩ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে পাকিস্তান সফরের কথা রয়েছে ইংল্যান্ডের পুরুষ ও মহিলা দলের।
"আমরা অবশ্যই আশা করি যে ইংল্যান্ড সফর করবে এবং আজকেই এর ঘোষণা আসবে," যোগ করেন খান।
নিউজিল্যান্ডের সমালোচনা করে খান বলেন, "পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে কোনো কারণ ছাড়া, কোনো সংলাপ ছাড়া, এবং কোনো আলোচনা ছাড়াই বের হয়ে যাওয়াটা সহজ। এটা বন্ধ করতে হবে। ক্রিকেট বিশ্বে বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।"
এদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং আগামী বছরের শুরুতে নির্ধারিত পাকিস্তান সফরের আগে তারা "আরও তথ্য পাওয়া সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে।"
এ বছরের শেষদিকে পাকিস্তান সফরের কথা রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কিছু না জানালেও পরিস্থিতি পাকিস্তানের জন্য আশাব্যঞ্জকই।
প্রতিবেশী আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসার কারণে এখন অন্যান্য দেশকে সফরে আনানোর জন্য আগের চেয়েও বেশি চেষ্টা করতে হবে পাকিস্তানকে।
২০০৯ সালে লাহোরে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের উপর হওয়া প্রাণঘাতী হামলার পর অনেকদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ভক্তদের সমর্থন ছাড়াই নিজেদের "হোম" ম্যাচগুলো খেলেছে পাকিস্তান। রাজস্বের দিক দিয়ে এসব সিরিজ থেকে খুব সামান্যই উপার্জন করতে পেরেছে পিসিবি।
খান জানিয়েছেন, আবারও দেশের বাইরে গিয়ে 'হোম' সিরিজ খেলার কোনো পরিকল্পনা নেই পাকিস্তানের।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার সফরের মাধ্যমেই আবারও টেস্ট ক্রিকেট ফিরেছে পাকিস্তানে। কিন্তু পিসিবি কর্মকর্তারা ভালোভাবেই জানেন, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলো সফর করলেই কেবল সর্বজনীনভাবে নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে পাকিস্তান।
'খুবই ভয়ঙ্কর নজির'
সাম্প্রতিক সময়ে সফরকারী দলগুলোকে রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য বরাদ্দকৃত নিরাপত্তা প্রটোকল প্রদান করেছে পাকিস্তান। এরচেয়ে বেশি আর কী করতে পারত, সেটা ভেবেই এখন হাহাকার করছে পাকিস্তানের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ।
কিউইদের সিরিজ বানচালের সঙ্গে সঙ্গেই সাবেক পাকিস্তানী পেসার শোয়েব আখতার টুইট করেছিলেন, 'নিউজিল্যান্ড যেন পাকিস্তান ক্রিকেটকেই মেরে ফেললো'।
ক্ষুব্ধ ভক্তরা তো সামনের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে বয়কট করার জন্যই আওয়াজ তুলেছিল। তবে সেই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে পিসিবি।
কিন্তু যে নিরাপত্তা ঝুঁকির জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তারা, সেটির বিবরণ না দেওয়ায় এখনো নিউজিল্যান্ডের উপর যথেষ্টই ক্ষেপে আছে পিসিবি।
পিসিবিপ্রধান বলেন, "কোনো দেশ একতরফাভাবে সফর স্থগিত করে চলে যাওয়ার খুবই ভয়ঙ্কর এক নজির স্থাপন করেছে এটি। তারপর এটি (দ্বিপাক্ষিক) সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে। খেলাধুলা হিসেবে এটি আমাদেরকে কোথায় রেখে যাচ্ছে?"
"বৈষম্য" বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) একটি বিস্তৃত বক্তব্য রাখার ঘোষণাও দিয়েছে ওয়াসিম খান।
ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ও ইংলিশ কাউন্টি লেস্টারের সাবেক এই প্রধান নির্বাহী জোর দিয়ে বলেন, "বৈষম্য আছেই। এবং এ নিয়ে মানুষ কী বলে আমি তার পরোয়া করি না।"
- সূত্র: আল জাজিরা