আনন্দে নাওয়া-খাওয়ার কথা ভুলে গেছেন জ্যোতি-রুমানারা
পথচলাটা খুব বেশি লম্বা নয়। তবে এর মধ্যেই সুযোগ হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়ে ছিল দূর আকাশের তারা। বাছাই পর্ব খেললেও বিশ্বকাপের টিকেট কখনও কাটতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, সেটাও বাছাই পর্বের সব ম্যাচ না খেলেই। এমন খবরে আনন্দে আত্মহারা বাংলাদেশের মেয়েরা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ার খবরে কাঁদতে শুরু করেন সবাই। আনন্দে নাওয়া-খাওয়ার কথাও ভুলে যান তারা।
জিম্বাবুয়েতে নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব বাতিল করেছে আইসিসি। কোভিড পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত র্যাঙ্কিয়ের সেরা আটে থাকা দলগুলো আগামী বছর নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে অংশ নেবে। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে আইসিসি।
সব প্রথমই রোমাঞ্চকর। কিন্তু ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ার খবরটি মেয়েদের কাছে যেকোনো প্রাপ্তির চেয়ে বিশেষ কিছু। বাছাই পর্ব খেলতে জিম্বাবুয়েতে থাকা বাংলাদেশ দলের সবার কথাতেই সেটা স্পষ্ট। পরম আনন্দে কথা বলতে গিয়ে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জ্যোতি বলেন, 'বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়ার খবরটি যখন আমরা পাই, কেমন অবস্থা হয়েছিল তা বোঝানো কঠিন। আমরা কান্নাকাটি শুরু করে দিই। এমন আনন্দের খবরে আমরা খাওয়া-দাওয়ার কথাই ভুলে যাই। অনেক কষ্টে করেছি আমরা এটার জন্য। কষ্ট করাতেই র্যাঙ্কিংয়ের পাঁচ নম্বরে উঠেছি আমরা। কষ্টের ফল পেয়েছি। আনন্দ প্রকাশের ভাষা পাচ্ছি না।'
জিম্বাবুয়েতে নারী ক্রিকেটাররা কীভাবে উদযাপান করছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছিল জ্যোতির সঙ্গে কথা বলার সময়ই। চারপাশে হই-হুল্লোড়ে ঠিক মতো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। জ্যোতি বলেন, 'আমরা সবাই খুব খুশি। যে স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিলাম, সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এতোদিনের কষ্টের ফল পেয়েছি, উদযপান তো একটু বেশিই হবে। আজ আমরা শুধু আনন্দই করে যাব।'
বিসিবিতেও উৎসব নেমে এসেছে। ফোন করে মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, উইমেন উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। জ্যোতি বলেন, 'পাপন স্যার, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুজন স্যার ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান স্যার (শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল) কয়েকবার ফোন দিয়েছেন। স্যার তো কান্নাই করে দিয়েছেন।'
নারী দলের সাবেক অধিনায়ক রুমানা আহমেদও স্থির থেকে কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, 'খুশিতে আমরা দুপুরের খাবার খাওয়ার কথাই ভুলে গেছি। এমন একটি খবরের আশাতেই আমরা পরিশ্রম করে আসছিলাম। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমাদের। তাই সবাই মিলে উদযাপন করছি, আনন্দ করছি। এটা আমাদের জীবনের সেরা মুহূর্ত। কীভাবে উদযাপন করতে পারি, সেটাও বুঝতে পারছি না। তাই চিল্লা-পাল্লা করে যাচ্ছি।'
ফেসুবকে আনন্দ উদযাপনের একটি ভিডিও পোস্ট করে আরেক সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম লিখেছেন, 'খুব খুশির সঙ্গে বলছি যে আমরা নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।'
জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের খেলা চলছিল। বাংলাদেশ দলও এখন সেখানে, তিনটি ম্যাচ খেলেছে তারা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার 'ওমিক্রন' বি.১.১.৫২৯ নামের ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে আফ্রিকার সাত দেশে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সাতটি দেশ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো, এস্বাতিনী ও মোজাম্বিক। মূলত এ কারণেই বাছাই পর্ব বাতিল করেছে আইসিসি।
দুটি গ্রুপে পাঁচটি করে মোট ১০ দল অংশ নিয়েছিল বাছাই পর্বে। তিনটি করে মোট ছয়টি দল নিয়ে সুপার সিক্স রাউন্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে সেরা তিন দল উঠার কথা ছিলো মূলপর্বে। মেয়েদের আগামী বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরাসরি খেলবে। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ডে আগামী বছরের ৩ মার্চ শুরু হবে আসরটি, ৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।