অলিম্পিক পেছানোর চাপ বাড়ছে

১২৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো নানা দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অলিম্পিক গেমস আয়োজন পেছানোর চাপ বাড়ছে।
গত সোমবার এসব দেশের তালিকায় যোগ দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্যারালিম্পিক কমিটি তাদের অ্যাথলেটদের মধ্যে এদিন এক জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ক্রীড়া প্রতিযোগীরা বর্তমান বিশ্ব মহামারির সংকটের সময়ে অলিম্পিক আয়োজন না করার পক্ষে মত দেন।
এরপরেই দেওয়া এক বিবৃতিতে অলিম্পিক অনুষ্ঠান নিয়ে নিজেদের অবস্থান বদল করে সংস্থাটি। 'বর্তমান পরিস্থিতিতে অলিম্পিক আয়োজন বাতিল করাটাই হবে সবচেয়ে সঠিক পদক্ষেপ' বলে জানানো হয় সেখানে।
মার্কিন প্যারালিম্পিক কমিটি জানায়, মোট এক হাজার ৭৮০ জন ক্রীড়াবিদের ওপর জরিপ চালানোর পর তাদের সিংহভাগ এই সময়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসটির বিস্তার রোধকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মতামত দিয়েছেন।
অলিম্পিক বাতিল হলে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে আয়োজক দেশ জাপানের। খবর সিএনবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত দূরপ্রাচ্যের দেশটি ইতোমধ্যেই টোকিও অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে ১২শ' কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর পাশাপাশি আয়োজনের স্পন্সর, সম্প্রচারকারী গণমাধ্যম এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লগ্নি করা অর্থ তো আছেই।
নির্ধারিত তারিখ পেছানোর ফলেও আয়োজকদের জন্য নানা প্রকার ব্যবস্থা নেওয়ার জটিলতা বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র একাই যে চাপ সৃষ্টি করছে তা নয়, সবার আগে এই আহ্বান জানায় কানাডা। গত রোববার কানাডা টোকিও অলিম্পিক থেকে তাদের ক্রীড়াবিদদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে কানাডা এই ঘোষণা দেয়।
এনিয়ে কানাডার অলিম্পিক কমিটি তাদের আনুষ্ঠানিক টুইটার পেজে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এরপরেই সোমবার যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কত্থা জানালো।
অলিম্পিকের মূল পরিচালক সংস্থা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) নানা দেশের তরফ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্য নিয়ে গত রোববার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে সময় দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায়।
এর আগে মাত্র তিনবার অলিম্পিক আয়োজন বাতিল হয়েছিল। প্রথমবার হয় ১৯১৬ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দ্বিতীয়বার ১৯৪০ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৪৪ সালে অলিম্পিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়নি।
এই প্রেক্ষিতে গত রোববার আইওসি চেয়ারম্যান থমাস বাক; অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে অলিম্পিক আয়োজনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আয়োজন বাতিল করা হলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না, এটা কাউকেই সাহায্য করবে না। একারণে বাতিলের বিষয়টি আমাদের এজেন্ডায় নেই।
অবশ্য আইওসি চেয়ারম্যানের শক্ত অবস্থানের পরেও জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অনেক দাতা গোষ্ঠী গোপনে চাপ প্রয়োগ করছে বলে নিজস্ব সূত্রের বরাতে নিশ্চিত করে মার্কিন দৈনিক ইউএস টুডে।