অবশেষে স্থগিত হচ্ছে টোকিও অলিম্পিক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ সালে অলিম্পিক বাতিল হয়ে গিয়েছিল। সেবারও আয়োজক ভেন্যু ছিল টোকিও। ভেন্যু পরিবর্তন করলেও বিশ্ব ক্রীড়ার সবচেয়ে বড় এই আসরটি আর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
একই কারণে ১৯৪৪ অলিম্পিকও বাতিল হয়ে যায়। তারও আগে ১৯১৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক বাতিল হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে। ৮০ বছর পর স্থগিত বা বাতিল হওয়ার শঙ্কায় অলিম্পিক, এবারের কারণ করোনাভাইরাস। কাকতালীয়ভাবে এবারও আয়োজক ভেন্যু সেই টোকিও।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও টোকিও অলিম্পিক স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। নতুন সূচি বা আদৌ এ বছর অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে কিনা, এ বিষয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর অবস্থা নেই।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট বেড়ে যেতে থাকলেও পূর্ব নির্ধারিত সময়েই অলিম্পিক আয়োজনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল আয়োজক দেশে জাপান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলে আসছিলেন, ২৪ জুলাই-ই শুরু হবে অলিম্পিক। সময় সূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এবং টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটিও পূর্ব নির্ধারিত সময়েই অলিম্পিক আয়োজনের কথা বলে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ মার্চ গ্রিস থেকে জাপানে নিয়ে আসা হয় অলিম্পিক শিখা। দেশজুড়ে মশাল দৌড়ের সব প্রস্তুতিও নেওয়া শেষ। কিন্তু এসবের আর কিছুই হয়তো হচ্ছে না।
চারদিক থেকে তেড়ে আসা চাপের মুখে অবশেষে হার মানতে হচ্ছে জাপানকে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সোমবার পার্লামেন্টে বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অবস্থার কারণে নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
করোনাভাইরাসের কারণে টোকিও অলিম্পিকের ভাগ্য আগে থেকেই জুলে আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য চার সপ্তাহ সময় নিয়েছিল আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। কিন্তু চার সপ্তাহের দরকার হলো না। করোনাভাইরাসের প্রকোপ এতটাই বেশি যে, আগে থেকেই অলিম্পিক স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছে জাপান।
প্রথম দল হিসেবে সোমবার টোকিও অলিম্পিক থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় কানাডা। অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। অন্যান্য দেশের অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকেও বিশ্ব আসরটি স্থগিত করার আবেদন আসছে বলে জানিয়েছেন টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান ইয়াসুহিরো ইয়ামাশিতা।
ক্রমাগত এই চাপের প্রেক্ষিতে টোকিও অলিম্পিক স্থগিত করার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন ইয়ামাশিতা। তিনি বলেছেন, 'আসরে অংশ নিতে যাওয়া খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাব, যেখান থেকে অলিম্পিক স্থগিত করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।'
কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে টোকিও অলিম্পিক থেকে। এর সঙ্গে অন্যান্য দেশের অলিম্পিক কমিটিরও আবেদন আছে আসরটি স্থগিত করার। ব্রিটেনের ক্রীড়াবিদরাও অলিম্পিক স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছেন। সঙ্গে করোনাভাইরাসের দাপট বৃদ্ধির ব্যাপারটি তো আছেই। সব মিলিয়ে টোকিও অলিম্পিক স্থগিতের ঘোষণা আসাটা সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবিরতা নেমে এসেছে পুরো বিশ্বে। প্রায় ২০০টি দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ। অফিস-আলাদত চলছে সীমিত পরিসরে। বিশ্বের প্রায় সব খেলাই স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে স্প্যানিশ লা লিগা।
এরআগে স্থগিত হয়ে গেছে বিশ্বের শীর্ষ চারটি ফুটবল লিগ। স্থগিত করা হয়েছে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে জমজমাট আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগও। ক্রিকেটেও একই অবস্থা। বিশ্বের সব ক্রিকেট টুর্নামেন্টই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।