আবারো ‘বিতর্কিত’ ডেমু কেনার উদ্যোগ

২০১৫ সালে চীন থেকে কেনাকাটা শেষ করার দুই বছরের মাথায় রেলপথ মন্ত্রনালয়ের গলার কাটায় পরিণত হয় ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ)। অতিরিক্ত গরম, দুর্গন্ধ, স্টেশনে টয়লেট না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ডিইএমইউ ট্রেনের উপযোগীতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভারতীয় ঋণে ১০ সেট ডেমু কেনার প্রস্তাব বাতিল করে রেলপথ মন্ত্রনালয়।
এবার ঢাকা থেকে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কের কর্মীদের আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে সেই ডেমু ব্যবহার করে শাটল ট্রেন চালু করছে রেলপথ মন্ত্রনালয়।
আর এ লক্ষ্যে ৪৫১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় করে ৬ সেট ডেমু ট্রেন কিনতে একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সভায় প্রস্তাবটি পাশ হলে প্রতি সেট ডেমু কিনতে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
২০১৫ সালে চীন থেকে কেনা প্রতিটি ডেমু কেনায় ৩০ কোটি টাকার কম ব্যয় হয়েছিল। এ হিসেবে প্রতি সেট ডেমু কেনায় প্রায় আড়াই গুন বেশি অর্থ ব্যয় হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অতীতে কেনা ডেমু ট্রেনের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের আওতায় কেনা ডেমুর ডিজাইনে এ সব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।
প্রকল্প পাশের পর উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে কেনাকাটার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারের দর বিশ্লেষণ করে ডেমু কেনা হলে বাড়তি অর্থ ব্যয়ের আশঙ্কা থাকবে না।”
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, “বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে ডিজাইন পরিবর্তন করে ডেমু ট্রেন পরিচালনা করতে চায় রেলওয়ে। তবে দুই সেট ডেমুর মাধ্যমে যাত্রী চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা না থাকায় প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কের কর্মচারী এবং আশেপাশের জনগনের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক ও জানজটমুক্ত রেলসেবা চালু করতে প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে রেলপথ মন্ত্রনালয়।
এর মাধ্যমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ কমে আসবে বলেও প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় তারা দাবি করেছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতিসহ ৬ সেট ব্রডগেজ ডিইএমইউ সংগ্রহের পাশাপাশি রেলের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইসিটি খাত উন্নয়নে সুষ্টু বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ঢাকা থেকে ৫৭ কিলোমিটার দুরে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কের নির্মাণ কাজ চলছে। এই পার্কের কোম্পানিগুলোতে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। দূরবর্তী স্থানে বসবাসরত কর্মীদের উন্নত যাতায়ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ঢাকা টাঙ্গাইল মহা-সড়কে যানবাহনের চাপ থাকায় ঢাকা থেকে কর্মীদের কালিয়াকৈর আসা কষ্টসাধ্য হবে।
এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দুই সেট ব্রডগেজ ডিইএমইউ কিনতে ১৬১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পের প্রস্তাব গত বছরের শেষ দিকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় ভবিষ্যতে চাহিদার কথা বিবেচনা করে ৪৫১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ৬ সেট ডিইএমইউ কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১১ সালে নেয়া প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে রেলের জন্য ২০ সেট ডেমু কেনার প্রকল্প শেষ হয় ২০১৫ সালের জুনে। ৬৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে নেয়া প্রকল্পে শেষ পর্যন্ত বয় হয় ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এ সব ট্রেন চলাচল শুরুর পর এক সমীক্ষার প্রতিবেদনে আইএমইডি জানায়, পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না করায় ডেমু ট্রেনে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা অনেক বেশি থাকায় যাত্রীদের উঠানামায় বিভিন্ন সমস্যা হয়। তা ছাড়া স্বল্প পাল্লায় এ সব ট্রেন বারবার চলাচল করায় নিয়মিত পরিষ্কার করতে না পারায় ডেমু ট্রেনে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় বলেও জানিয়েছিল আইএমইডি।