Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
The Business Standard বাংলা
tbs
TUESDAY, MAY 24, 2022
TUESDAY, MAY 24, 2022
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
বুড়িগঙ্গা!

ইজেল

এম এ মোমেন
14 May, 2022, 10:10 pm
Last modified: 14 May, 2022, 11:03 pm

Related News

  • তারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান
  • বুড়িগঙ্গা—ভালোবাসা আর লজ্জার নদী
  • দ্য লাস্ট সাপার এবং এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান চিত্রকরের গল্প
  • ঢাকার দুই মেয়রের দুই বছর: কাগজে-কলমে ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন কম
  • ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম

বুড়িগঙ্গা!

কবি শামসুর রাহমানের ‘স্মৃতির শহর’-এ পুরোনো দিনের জ্যান্ত বুড়িগঙ্গা উঠে এসেছে: বুড়িগঙ্গার ওপর গ্রিনকোট মানে বজরা। খোলা হাওয়ায় পালতোলা নৌকো চলেছে হাঁসের মতো পানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে...মাঝেমধ্যে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে পাড়ে। বুড়িগঙ্গার পানি জানে কত কাহিনি। সুখে মলমলানো দুঃখে ছলছলানো। কত শাহি বজরা কত রণতরি ভিড়েছে বুড়িগঙ্গার তীরে। কত বিচিত্র সুখের মেলা সেখানে, এই বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে আলীবর্দি খাঁর কন্যা ঘষেটি বেগমকে নিয়ে যাওয়া হলো জিঞ্জিরা প্রাসাদে। নির্বাসনে দুঃখের দিন কাটাতে শুরু করলেন ঘষেটি বেগম। বুড়িগঙ্গার পানিতে চোখের পানি ঝরিয়ে ঘষেটি বেগমের ছোট বোন আমিনা বেগমও একদিন এলেন জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দিনী হয়ে।
এম এ মোমেন
14 May, 2022, 10:10 pm
Last modified: 14 May, 2022, 11:03 pm
বুড়িগঙ্গায় গরু নিয়ে নৌকা | ছবি: মুস্তাফিজুর রহমান নাসিম

ঢাকার সাথে মেজর জেমস রেনেলের (১৭৪২-১৮৩০) একটি রোমান্টিক সম্পর্কের সূত্র রয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই কর্মকর্তাকে রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৭ সালে বাংলা ও বিহারের সার্ভেয়ার জেনারেল নিযুক্ত করেছিলেন। ঠিক আগের বছর, তিনি তখন ক্যাপ্টেন, ভুটান সীমান্তের কাছে জরিপ পরিচালনা করার সময় বিপ্লবী সন্ন্যাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তার স্কন্ধাস্থিতে মারাত্মক জখম হয়। সন্ন্যাসীদের দৃষ্টিসীমার বাইরে দিয়ে দ্রুত তাকে নৌপথে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লেগে যায় পুরো ছয়দিন। ঢাকার ডাক্তার ফ্রান্সিস রাসেল তার চিকিৎসা করেন, চিকিৎসা অনেকটা সেরে উঠলে তার ডান হাত আর কখনো পুরোপুরি কাজ করেনি। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে কোম্পানি তার বার্ষিক বেতন ধার্য করে এক হাজার পাউন্ড। সার্ভেয়ার জেনারেল সদর দপ্তর ঢাকায়, এখানে অবস্থানকালে বাংলার গভর্নর জন কার্টিয়ারের সাথে তার গভীর বন্ধুত্ব হয়। গভর্নরের ঢাকার বাসভবনেই ১৭৭২ সালে তার দেখা হয় জেইন থ্যাকারের সঙ্গে এবং তাকে বিয়ে করে। জেইন ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারের গ্রেট আন্ট।

মেজর রেনেল ঢাকায় অবস্থান করবেন আর বুড়িগঙ্গার মতো বড় নদী তার চোখে পড়বে না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রেনেল যে মানচিত্র এঁকেছেন, তাতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ-ঘেঁষা একটি অপ্রশস্ত নদী রয়েছে, নাম বুড়িগঙ্গা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু রেনেলের মানচিত্র হাতে নিয়ে ১৮২৪ সালে বিনাপ হেবার যখন নদীটাকে মেলালেন, তা মিলল না, অনেক পরিবর্তিত, বেশ বড় নদী, এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও কোলকাতার হুগলি নদীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

আমার স্মৃতির যে বুড়িগঙ্গা নদী, তার শুরুটা ১৯৬৩-৬৪ সালে। শৈশব অবস্থায় সাগর সম্পর্কে ধারণাহীন আমার কাছে বুড়িগঙ্গাই সাগরের মতো মনে হয়েছে। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার মিলনস্থলে অতিকায় স্টিমার দেখে বিস্মিত হয়েছি। বহু বছর পর কর্মজীবনে এসে অবৈধ দখল থেকে বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে নেতৃত্ব দিয়েছি। সে সময় দখলদারদের অন্তত তিনজন ছিলেন সংসদ সদস্য। বাকিরাও রাজনৈতিক এলিট কিংবা তাদের অনুগ্রহপুষ্ট লোকজন।

বিশপ হেবারের ন্যারেটিভ

১৮২৪ সালে ঢাকা সফর শেষে বিশপ হেবার যে বর্ণনা দেন তা হেবারস ন্যাবেটিভ নামে খ্যাত, আহমদ হাসান দানী সেখান থেকে যে উদ্ধৃতি তুলে ধরেন, 'কালের সাক্ষী ঢাকা'তে আবু জাফরকৃত তার অনুবাদ এখানে কিছুটা উল্লেখ করছি: 

'ঢাকা যে নদীর তীরে অবস্থিত, তা রেনেল মানচিত্র তৈরি করার পর অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। আগে এ নদী ছিল অপ্রশস্ত, কিন্তু এখন এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও কোলকাতার হুগলি নদীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ঢাকা এখন শুধুমাত্র প্রাচীন জাকজমকের ধ্বংসাবশেষ। এর ব্যবসা-বাণিজ্য আগের তুলনায় ষাট ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পোস্তায় লালবাগ দুর্গ থেকে ৩০০ গজ দক্ষিণ-পূর্বে শাসনকর্তা আজিম উশসানে তার নিজের জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। টেইলরের বর্ণনা, গত কুড়ি বছরে পোস্তার ওই বাসভবনের বিরাট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ওই অট্টালিকার সামান্য অংশের অস্তিত্ব এখন বিদ্যমান আছে। (আবু জাফর অনূদিত কালের সাক্ষী ঢাকা)। 

বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে প্লাবনমুক্ত এলাকায় ঢাকা শহর অবস্থিত। বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি সাভারের কাছে ধলেশ্বরী নদী থেকে নির্গত জলধারা হিসেবে নদীটি নারায়ণগঞ্জের খানিকটা উত্তর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে শীতলক্ষ্যাতে পতিত হয়েছে। ঐতিহাসিক আবদুল করিম লিখেছেন, 'ভৌগলিক অবস্থান এবং মৃত্তিকার গঠন বিবেচনা করলে ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা জেলাকে দুইভাগে অর্থাৎ উত্তরাংশ ও দক্ষিণাংশে বিভক্ত করেছে। দক্ষিণাংশে নিম্নাঞ্চল, যা প্রায় ছয় মাস জলমগ্ন থাকে এবং উত্তরাংশ উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত লক্ষ্যা নদীর দ্বারা প্রায় দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।

টেইলরের স্কেচ

১৮৪০ সালে প্রকাশিত জেমস টেইলরের স্কেচ অব দ্য টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ঢাকা গ্রন্থে বুড়িগঙ্গা ও ঢাকার একাত্মতার একটি চিত্র এঁকেছেন: বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর মিলনস্থল থেকে প্রায় আট মাইল উত্তরে বুড়িগঙ্গার উত্তর তীরে ঢাকার অবস্থান। 'নদীটি সেখানে গভীর ও উপযোগী বড় বড় নৌকা চলাচলের। বর্ষাকালে নদী ভরে যায় এবং বড় বড় মিনার ও অট্টালিকা শোভিত ঢাকা নগরীকে মনে হয় ভেনিসের মতো। ঢাকার পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নভূমি মুসলমান গোরস্থান, পরিত্যক্ত উদ্যান, মন্দির, মসজিদ ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে সমাকীর্ণ জঙ্গলাবৃত এক ভূ-ভাগ। যে অংশটি নিয়ে ঢাকা শহর গঠিত, তা কেবল সীমাবদ্ধ নদীতীরেই এবং তীরবরাবর শহরটি দৈর্ঘ্যে চার এবং প্রস্থে সোয়া এক মাইল। (সিভিলিয়ানদের চোখে ঢাকা: মুনতাসীর মামুন)

টেইলরের আ স্কেচ অভ দ্য টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ঢাকায় দেখানো মানচিত্র | ছবি: সংগৃহীত

 

ডেভিডসনের নৌকা

ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিজেসি ডেভিডসনের নৌকা বুড়িগঙ্গায় প্রবেশ করল ১৩ জানুয়ারি ১৮৪০। ১৮৪৩-এ বিলেত থেকে প্রকাশিত হয় তার ভ্রমণবৃত্তান্ত 'ডায়েরি অব ট্রাভেলস অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ইন আপার ইন্ডিয়া'। মুনতাসীর মামুন লিখেছেন: 'দূর থেকে আবছাভাবে ডেভিডসনের চোখে পড়ল ঢাকা। চারদিকে ঘন কুয়াশা। এর মধ্যে যে জিনিসটি নজরে এল, তা হলো শহরের বিপরীতে। নদীর পশ্চিম দিকে 'উঁচু ও স্থায়ী এক দোতলা বাড়ি। ঢাকার নবাব আগে শিকার কুঠি হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতেন। শহরটি বুড়িগঙ্গার পূর্বতীরে, লম্বায় হবে প্রায় দুই মাইল। তিন-চার মাইল দূর থেকে বা টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেও ভারী সুন্দর দেখায় শহরটিকে। থামওয়ালা, সাদা জ¦লজ¦ল করছে। এগুলোর জাকালো ভাব দেখে বিস্মিত হবেন যেকোনো পর্যটক। পরে অবশ্য কাছে থেকে একসময় দেখে হবেন হতাশ। শহরের সীমারেখায় নৌকা ঢোকার পর ডেভিডসনের নজরে এল অনেকগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত অট্টালিকা, যেগুলোর কিছু কিছু অংশ পড়ে গেছে নদীতে। নদীকে বেঁধে রাখার সব ধরনের প্রচেষ্টাই ব্যর্থ।'

ডেভিডসন এবং টাভেরনিয়ার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা নৌকা নির্মাণশিল্পের কথা উল্লেখ করেছেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব বিভাগের সহকারী লিন্ডসে কলকাতা থেকে একইপদে ঢাকায় নিযুক্ত হলেন। ১৭৭৬-এর শরতে কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ১২ দিনের মাথায় বুড়িগঙ্গা হয়ে ঢাকায় পৌঁছালেন।

তাহরিখ-ই ঢাকা

১৭৭০-এর মনন্তরের সময় 'তাহরিখ-ই-ঢাকা' নামক ফারসি গ্রন্থের প্রণেতা মুনশি রহমান আলী তায়েশ লিখেছেন, 'ঐ বছর ঢাকার আশেপাশে সর্বপ্রথম লাল পানি উঠে এবং সারাদেশ পানিতে ঢুবে যায়। কথিত আছে যে, শহরে এতো পানি উঠে যে, প্রতিটি বাড়িতে ও সড়কে নৌকা চলতো।'

মুনতাসির মামুন বুড়িগঙ্গা নিয়ে লিন্ডসের বর্ণনা তুলে ধরেছেন: 'গঙ্গা নদীর একটি শাখা চমৎকার এক নদীর তীরে বড় একটি ক্ষয়ে যাওয়া শহর ঢাকা। দেশীয় ঘরগুলো তুচ্ছ, টুটাফাটা কুটির, পুলের ধ্বংসাবশেষ, ক্ষয়ে যাওয়া পোর্টিকো আর থাম দেখা যায়Ñ এর  অনেকগুলি স্থাপত্যের ভালো নিদর্শন, এতে সবকিছু প্রমাণ করে যে শহরটি ছিল একসময় উল্লেখযোগ্য।'

১৮৯৫-এর বুড়িগঙ্গা

'ঢাকা পাচাশ বারস পাহেলে' হাকীম হাবিবুর রহমানের ১৯৪৫ সালে লেখা উর্দু গ্রন্থ, তার পঞ্চাশ বছর আগের অর্থাৎ ১৮৯৫ সালের ঢাকার বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। মোহাম্মদ রেজাউল করিমের অনুবাদে গ্রন্থভুক্ত বুড়িগঙ্গাসংশ্লিষ্ট কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে:

বর্তমান ঢাকার সীমানা এমন যে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী, উত্তরে রমনার পর ময়মনসিংহের চৌরাস্তা, পশ্চিমে বুড়িগঙ্গার প্রাচীন ধারা এবং নূরপুর মহল্লা ইত্যাদি এবং পূর্বে আলমগঞ্জ, ফরিদাবাদ, গেন্ডারিয়া অতিক্রম করে সম্মুখদিকে অর্থাৎ পূর্বদিকে সম্প্রসারিত আগে শহরের মধ্যে একটি নালা বা খাল প্রবাহিত ছিল অর্থাৎ ধোলাই খাল, যা পূর্বে ধোলাই নদী বলা হতো। এটিই ঢাকার পূর্ব প্রান্তসীমা ছিল। এই খালের এক অংশ শহরের মধ্যে এখনকার ইংলিশ রোড পর্যন্ত প্রবাহিত ছিল। এ পর্যন্ত এই খাল যথেষ্ট প্রশস্ত ছিল এবং প্রকৃতই নদীর মতো দেখায়। বুড়িগঙ্গা এবং উক্ত খালের মধ্যবর্তী অঞ্চল পুরোনো শহর বা পাঠানদের রাস্তা। 

হাসান দানীর বুড়িগঙ্গা

১৯৫৬ সালে প্রকাশিত অধ্যাপক আহমদ হাসান দানীর ঢাকা : 'আ রেকর্ড অব চেজিং ফরচুনস'-এ লেখক বলছেন, মুসলমান ঐতিহাসিকেরা বুড়িগঙ্গা নদীকে দুলাই নদী বলেছেন। পঞ্চাশের দশকে নৌপথে ভ্রমণের উত্তম স্থান এই বুড়িগঙ্গা নদী। চাঁদনীঘাট ছিল বুড়িগঙ্গার তীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান: অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাটের মধ্যে ছিল দেবীদাসঘাট, সোয়ারীঘাট, বাদামতলী ঘাট, ওয়াইজঘাট ও জগন্নাথঘাট। এসব ঘাটে প্রতিদিন বাজার বসত। সরাসরি বাদামতলী ঘাট পর্যন্ত স্টিমার যেতে পারত। এখানে স্টিমার থেকে মাল খালাস ও স্টিমারে মাল বোঝাই করার জন্য আধুনিক একটা বাঁধ তৈরি করা হয়। এর নাম বাকল্যান্ড বাঁধ। আহসান মঞ্জিল ও নর্থব্রুক হলের সামনে জগন্নাথঘাট থেকে ওই বাঁধ বিস্তৃত ছিল বাদামতলী ঘাট পর্যন্ত। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গার গতিপথ সাত মসজিদের কাছে পরিবর্তিত হয়ে এর প্রায় এক মাইল পশ্চিম দিক থেকে তা প্রবাহিত হচ্ছে। সাত মসজিদ এলাকা পরিণত হয়েছে জলাভূমিতে এবং শুষ্ক মৌসুমে তা একেবারে শুকিয়ে যায় (আবু জাফর অনুদিত আহমদ হাসান দানীর গ্রন্থ)।

নৌকার বুড়িগঙ্গা

বুড়িগঙ্গার নৌকার বর্ণনা উঠে এসেছে নাজির হোসেনের 'কিংবদন্তির ঢাকা গ্রন্থে': 'বিভিন্ন আকৃতির নৌকাগুলো বহু বর্ণে ও সম্ভারে সাজানো হতো। নৌকার গায়ে বিভিন্ন বর্ণের কারুকার্য অঙ্কিত সাজানো থাকত বহু রকমের চিত্র ও মূর্তি। নৌকার সংখ্যাও ছিল অনেক, রাতদিন এসব নৌকা চলাচল করত। বুড়িগঙ্গার বুকে। নদীপথে যাতায়াতের জন্য এককালে গহেনা নৌকাই ছিল প্রধান বাহন। এই গহেনা নৌকা সদরঘাট, লালকুটি, বাবুবাজার, চাঁদনীঘাট, সোয়ারীঘাট, দয়াগঞ্জ, ফরাশগঞ্জ হতে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন স্থান ও জেলায় নিয়মিত গমনাগমন করত। আজও নৌকার আধিক্য দেখা যায় বুড়িগঙ্গায়। কিন্তু সেদিনের মতো দৃশ্যের অবতারণা আর  হয় না। এই যান্ত্রিক যুগে লঞ্চ-স্টিমারে নৌকাগুলোকে কেমন কোণঠাসা করে দিয়েছে। শহরের পাশ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা শান্তশিষ্ট। তার কাজল কালো পানি বর্ষায় স্ফীত হয়ে ওঠে। কাজল পানি পিঙ্গল বর্ণ ধারণ করে।

বুড়িগঙ্গার এক রূপ, রবনা | ছবি: সংগৃহীত

অন্ধকার রাতের বুড়িগঙ্গা: ওপরে নক্ষত্রখচিত জ্যোতির্ময় আকাশ, নিচে শুধু অন্ধকার আর নীরব-নিঃস্তব্ধ পৃথিবী। নদীর তখনো বিরাম নেই। দু-একটা ডিঙি নৌকা চলে তখনো মিটিমিটে আলো জ¦লে। লঞ্চ আর স্টিমারের আলোয় কোনো সময় হয়তো নদীর বুকে ক্ষণিকের জন্য একটা বিচ্ছুরণ খেলে যায়। কিন্তু এমন আলোর ঝলকানিতে ফুটে ওঠে রাত্রির রহস্য।

বুড়িগঙ্গা বয়ে চলেছে একটানা

কবি শামসুর রাহমানের 'স্মৃতির শহর'-এ পুরোনো দিনের জ্যান্ত বুড়িগঙ্গা উঠে এসেছে: বুড়িগঙ্গার ওপর গ্রিনকোট মানে বজরা। খোলা হাওয়ায় পালতোলা নৌকো চলেছে হাঁসের মতো পানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে...মাঝেমধ্যে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে পাড়ে। বুড়িগঙ্গার পানি জানে কত কাহিনি। সুখে মলমলানো দুঃখে ছলছলানো। কত শাহি বজরা কত রণতরি ভিড়েছে বুড়িগঙ্গার তীরে। কত বিচিত্র সুখের মেলা সেখানে, এই বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে আলীবর্দি খাঁর কন্যা ঘষেটি বেগমকে নিয়ে যাওয়া হলো জিঞ্জিরা প্রাসাদে। নির্বাসনে দুঃখের দিন কাটাতে শুরু করলেন ঘষেটি বেগম। বুড়িগঙ্গার পানিতে চোখের পানি ঝরিয়ে ঘষেটি বেগমের ছোট বোন আমিনা বেগমও একদিন এলেন জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দিনী হয়ে। সঙ্গে ছিলেন তার পুত্রবধূ। অল্প বয়সেই বিধবা...নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপনজনদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত নেই। তাদের দুঃখ দেখে বুড়িগঙ্গার পানিও বুঝি একটু বেশি ছলছলিয়ে ওঠে।

১৭৬০ সালে মীর জাফরের নিষ্ঠুর পুত্র মিরনের নির্দেশে আমিনা বেগম ও বিধবা পুত্রবধু মিরাজের স্ত্রীকে নৌকায় ওঠানো হলো। নৌকা ডোবানোর জন্য আগে থেকে নৌকা ফুটো করে খিল লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। শামসুর রাহমান লিখেছেন নৌকা চলল বুড়িগঙ্গার পানি কালো। আর কালো আমিনা বেগমের বিধবা পুত্রবধূর করুণ দুটি চোখ। একসময় নৌকা বেসামাল হয়ে ওঠে।

যেখানে বুড়িগঙ্গা ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে খিল খুলে গেল, সলিল সমাধি হলো হতভাগ্য শাশুড়ি ও পুত্রবধূর।

নামছে নতুন মোটর লঞ্চ

১৩৩৭ বঙ্গাব্দে পঞ্চায়েত পত্রিকার একটি সংবাদ: ঢাকায় নতুন মোটর লঞ্চ, সংবাদের সার কথা হচ্ছে, ওয়ান রুপি লিমিটেড কোম্পানির 'ভারতবর্ষ' নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ বুড়িগঙ্গা হতে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে শুরু করেছে। ৫ নভেম্বর ১৯৩০ বুধবার বেলা ৪টায় এই লঞ্চ ঢাকা শহরের সম্ভ্রান্ত লোকদের নিয়ে নদীবক্ষে বিচরণ করেছে। কোম্পানির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

একই সময়ের পল্লীমঙ্গল, নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ: ধলেশ্বরী সার্ভিসের স্টীমার ঢাকা হইতে ছাড়িয়া বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী দিয়া মানিকগঞ্জ অভিমুখে যাইয়া থাকে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ বন্ধ হইয়া যাওয়াতে এই স্টিমার নারায়ণগঞ্জের সংলগ্ন কুমরিয়া ভাঙ্গা খাল বা শীতলক্ষ্যা খালের মধ্য দিয়া ধলেশ্বরীতে পড়িয়া থাকে। (আর্থিক উন্নতি, ৫ বর্ষ ১৩৩৭)

কবিতায় বুড়িগঙ্গা

ঊনবিংশ শতকের কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের বুড়িগঙ্গা দর্শন:

মমালয়ং সন্নিহিত

বুড়িগঙ্গা প্রবাহিত

বান্দাঘাট শোভিত যথাতে

সেখানে বসিলে গিয়া

জুড়ায় সন্তপ্ত হিয়া

সলিল শিকরসিক্ত রাতে।

জেমস রেনেলের ঢাকার মানচিত্র, ১৭৭৮ | ছবি: সংগৃহীত

শামসুর রাহমানের 'শহরে সংলাপ'

চলো যাই গোধূলিতে হাঁটতে হাঁটতে পুনরায়

বুড়িগঙ্গা নদীটির রূপ দেখে আমি একবার। সঙ্গোপনে

আমরা দুজন ঘাটে-ভেড়া বজরার ছাদে বসে পাশাপাশি

দেখবো সূর্যাস্ত, খাবো চিনেবাদাম অথবা

ঝালমুড়ি, অন্ধকার গাঢ় হলে মুখচুম্বন করবো

তোমায় আবেগভাবে, তারপর নেমে এসে বাকল্যান্ডে চোখ

রেখে হেঁটে যাবো পরস্পর হাত ধরে কিছুদূর। দেখ নেবো

পুরনো এ শহর কীভাবে বদলে যাচ্ছে নতুন যুগের আলিঙ্গনে...

বুড়িগঙ্গার ঢেউ ঢাকাইয়া জনজীবনে নিত্যকার উপমায় পরিণত হয়েছিল। ঢাকাই রঙ্গ রসিকতা গ্রন্থে শামসুজ্জামান খান লিখেছেন, পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে যখন রিকশায় দুর্দশাগ্রস্ত নাজিমুদ্দিন রোড দিয়ে যাচ্ছেন, রিকশাওয়ালা বললেন, যার নামে রাস্তা, হালায় করাচির বাদসা হইয়া বইছে, মগার অর রাস্তা দিয়া যখন যাই, তহন মনে হয় যে বুড়িগঙ্গায় ঢেউ খেলবার লাগছে।

রাস্তাটার অবস্থা এতটাই ঢেউ খেলানো।

অপর একটি ঢাকাইয়া বচন: টেকা কি বুড়িগঙ্গার ঢেউয়ের লগে ভাইসা আহে?

Related Topics

টপ নিউজ

বুড়িগঙ্গা / ঢাকা / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইউরোর বিপরীতে রুবলের দাম পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি
  • আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন
  • রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান 
  • এবার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
  • দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে নাভানার ১০ বছরের মহাপরিকল্পনা   
  • ‘মাঙ্কিগেট কেলেঙ্কারি' মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল, মৃত্যুর আগে ব্রেট লিকে জানিয়েছিলেন সাইমন্ডস    

Related News

  • তারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান
  • বুড়িগঙ্গা—ভালোবাসা আর লজ্জার নদী
  • দ্য লাস্ট সাপার এবং এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান চিত্রকরের গল্প
  • ঢাকার দুই মেয়রের দুই বছর: কাগজে-কলমে ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন কম
  • ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইউরোর বিপরীতে রুবলের দাম পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি

2
অর্থনীতি

আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন

3
আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান 

4
বাংলাদেশ

এবার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

5
অর্থনীতি

দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে নাভানার ১০ বছরের মহাপরিকল্পনা   

6
খেলা

‘মাঙ্কিগেট কেলেঙ্কারি' মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল, মৃত্যুর আগে ব্রেট লিকে জানিয়েছিলেন সাইমন্ডস    

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab