Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
The Business Standard বাংলা
tbs
THURSDAY, MAY 26, 2022
THURSDAY, MAY 26, 2022
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
খেজুর কি সবচেয়ে প্রাচীন ফল?

ইজেল

সালেহ ফুয়াদ
16 April, 2022, 09:10 pm
Last modified: 17 April, 2022, 10:28 am

Related News

  • ফলের গায়ে লাগিয়ে রাখা কোন স্টিকারের কী অর্থ?  
  • তারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান
  • বুড়িগঙ্গা—ভালোবাসা আর লজ্জার নদী
  • দ্য লাস্ট সাপার এবং এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান চিত্রকরের গল্প
  • ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম

খেজুর কি সবচেয়ে প্রাচীন ফল?

দুনিয়ার বহু অঞ্চল আর খাদ্যসংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠা এই ফলটি এখন ‘সুপারফুড’ হিসেবে আদৃত। একটি সূত্র বলছে, বুনো খেজুরগাছের বিবর্তনের ইতিহাস ৫০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো। প্রাচীন পারস্য উপসাগর, যা বর্তমান ইরান-ইরাক অঞ্চল, সেখানেই প্রথম বুনো খেজুর আবিষ্কারের কথা বলছেন গবেষকেরা।
সালেহ ফুয়াদ
16 April, 2022, 09:10 pm
Last modified: 17 April, 2022, 10:28 am

প্রকৃতি যে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সর্বদা আমাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে রাখতে চায়, এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো খেজুর। দুনিয়ার বহু অঞ্চল আর খাদ্যসংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠা এই ফলটি এখন 'সুপারফুড' হিসেবে আদৃত। একটি সূত্র বলছে, বুনো খেজুরগাছের বিবর্তনের ইতিহাস ৫০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো। প্রাচীন পারস্য উপসাগর, যা বর্তমান ইরান-ইরাক অঞ্চল, সেখানেই প্রথম বুনো খেজুর আবিষ্কারের কথা বলছেন গবেষকেরা। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ষাট হাজার বছর আগে আফ্রিকানরা ভারত অঞ্চলের দিকে যাত্রা করলে তারাও পথে এই খেজুর খেয়েছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে পশ্চিম এশিয়া, মিসর, উত্তর আফ্রিকা ও ভারত অঞ্চলের বাসিন্দারা খেজুরের স্বাদ ও চাষবাসের অভিজ্ঞতা নিয়েছিলেন বলা হয়ে থাকে। স্বাদের কারণে এটি দ্রুত মানুষের প্রিয় ফল হয়ে ওঠে। যখন চিনি ছিল না, তখন খেজুর থেকে তারা চিনির মতো মিষ্টি স্বাদ গ্রহণ করত। খেজুর পটাশিয়ামের বড় উৎস। মানুষ তাজা খেজুরের পাশাপাশি দ্রুত এটিকে কিশমিশের মতো শুকিয়ে খাওয়া শিখে ফেলে। স্বাদবৃদ্ধি ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য হালকা মধুর প্রলেপ দিয়ে রাখা শুরু করে। মিসরে 'ডেট ওয়াইন' নামে বিশেষ মদ তৈরি হয় এ থেকে। বিয়ারকে আরও কড়া মিঠা করে তুলতে খেজুরের ব্যবহার হয়ে থাকে। আফ্রিকায় ওয়াইন তৈরিতে খেজুরের রস ব্যবহার করা হয়। আফ্রিকার মানুষদের দাস হিসেবে কেনাবেচার মুদ্রা হিসেবেও এই খেজুর ব্যবহার হয়েছে একসময়।

একটি খেজুরগাছ আনুমানিক দেড় থেকে দুই শ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। পাকিস্তান পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম খেজুর রপ্তানিকারক দেশ। দেশটির ৬০ ভাগ খেজুর উৎপাদিত হয় শুধুই বেলুচিস্তানে। পাকিস্তানেই অন্তত ৯৫টির বেশি ধরনের খেজুর উৎপাদন হয়। খুরমা-খেজুর বণ্টন ছাড়া ভারত-পাকিস্তান এমনকি বাংলাদেশের অনেক এলাকায় মুসলিম বিয়েকে অসম্পূর্ণ মনে করা হয়। পাকিস্তানে বিয়েতে খেজুরের যে ধরনটি বণ্টন করা হয়, সেটিকে বলা হয় চুহারা। তাজা খেজুরের খোসা ফেলে এটি বানাতে হয়। চুহারা বানানো পরিশ্রমসাধ্য কাজ। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট চুহারাটি হয় ঘন হলুদ রঙের। আকারেও সাধারণ খেজুরের চেয়ে বড় হয় এটি। আকারে বড় খেজুরগুলো প্রথমে গাছ থেকে ডালসমেত নামানো হয়। এরপর ডাল থেকে ছাড়িয়ে ধুয়ে নিয়ে বড় বড় কড়াইয়ে ফেলে জাল দেওয়া হয়। কড়াই থেকে তুলে হাতে বানানো বিশেষ একধরনের চাটাইয়ে মেলে এক সপ্তাহ শুকানো হয়। এরপর প্যাকেট করে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের মেশিনের সাহায্য নেওয়া হয় না। স্থানীয়রা এই চুহারা দিয়ে মজাদার হালওয়া তৈরি করেন। সারা বছরই এই হালওয়া তৈরি হলেও শীতকালে সিন্ধের প্রতিটি ঘরে ঘরে থাকাটা আবশ্যক। দেশি ঘি, বাদাম, আখরোট, পেস্তা, কাজু বাদামসহ নানা ফলমূলের মিশ্রণ থাকে এই হালওয়াতে। 

নবাব আজিজ জং বাহাদুরের লেখা 'ফালাহাতুন নাখল' (খেজুরের চাষবাষ) গ্রন্থটি উর্দুতে লেখা। এ থেকে জানা যায়, মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের সিন্ধুজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারত উপমহাদেশে খেজুরের ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। উপমহাদেশের কোনো কোনো অঞ্চল এখনো খেজুর চাষের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল। বেলুচিস্তানে একটি প্রবাদ আছে—'মচ ইয়া বচ' অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য থাকতে হবে খেজুরবাগান নয়তো পুত্র সন্তান। পুত্র সন্তান থাকলে আয়রোজগার করে খাওয়াবে, অথবা শুধু খেজুরবাগান থাকলেও চলবে। এটি সন্তানের মতোই বাগানমালিকের আয়রোজগারের নিশ্চয়তা দেবে। 

আরবি ভাষায় কৃষি বিষয়ে সবচেয়ে তথ্যবহুল প্রথম গ্রন্থটি লেখা হয়েছে দশম শতকে। 'আল-ফিলাহা আল-নাবতিয়্যাহ' নামের গ্রন্থটির লেখক ইবনে ওয়াহশিইয়ার দাবি, এটি কুড়ি হাজার বছর আগের মেসোপটোমিয়া সভ্যতার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাজোখার অনুবাদ। আধুনিক গবেষকদের কারও কারও মতে, এ গ্রন্থ খ্রিষ্টীয় ৫ম বা ৬ষ্ঠ শতকের সিরিয়াক মূল ভাষার অনুবাদ। নবাব আজিজ জং বাহাদুর তাঁর 'আল-ফালাহাতুন নাখল' গ্রন্থে এই প্রাচীন গ্রন্থটির সূত্র দিয়ে খেজুরের প্রসিদ্ধ বাহাত্তুরটি প্রকারের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেছেন। এ বাহাত্তুর ধরনের খেজুর মূলত আরব অঞ্চলের। এর বাইরে 'আল-ফালাহাতুন নাখল' গ্রন্থে পারস্য অঞ্চলের আরও ৫৭টি ধরনের বিস্তারিত নাম-পরিচয় তুলে ধরেছেন। একটি সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ধরনের খেজুরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

খেজুরের আছে হরেক রকম নাম। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের খেজুরের সঙ্গে তৈরি হয়েছে মিথ বা গল্প। রোমান লেখক গাইউস প্লিনিয়াস সেকেন্ডাস ছিলেন একজন প্রকৃতিবিদ ও প্রাকৃতিক দার্শনিক। সম্্রাট ভেস্পাসিয়ানের এই বন্ধু প্লিনি দ্য এল্ডার (মৃত্যু ৭৯ খ্রি.) নামে বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ৩৭ খণ্ডের প্রাকৃতিক ইতিহাসের বিশ্বকোষ লিখে বিখ্যাত। বলা হয়ে থাকে, তিনিই দুনিয়ায় প্রথম বিশ্বকোষ লিখে গেছেন। তাঁর বিশ্বকোষে খেজুরের প্রকার নিয়ে বিস্ময়কর ও মজার সব তথ্য পাওয়া যায়। প্লিনি দ্য এল্ডার লিখেছেন, তিনি ৪৯ ধরনের খেজুরের গাছের সন্ধান পেয়েছেন। গাছের নামগুলো জটিল এবং আরবি। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে খেজুর যেভাবে আরব অঞ্চলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, তেমনটা আর কোনো অঞ্চলের সঙ্গে নেই। আরবরা নিজেদের মতো করে গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে খেজুরের নাম দিয়েছে। 

প্লিনি দ্য এল্ডার কিছু খেজুরের নামধাম বিস্তারিত লিখে গেছেন। ব্যাবিলোনিয়ার কাছে দুর্গম বাগানের রাজকীয় একধরনের খেজুরের নাম মার্গারাইত, খেজুরটি সাদা ও গোলাকার, প্লিনি দ্য এল্ডারের ভাষায়—'দেখতে একেবারে মুক্তার মতো।' 'সায়াগ্রাস' অনেকটা শক্ত, আকারে বড় এবং দেখতে মোটেও মোলায়েম নয়; স্বাদেও অন্য সব ধরনের থেকে একেবারে আলাদা। এই খেজুরটিতে একধরনের বুনো গন্ধ রয়েছে। ওয়াইন তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন খেজুর 'কারিওতা' বা 'স্টুপিড হেড' (গাধা?)। 'বাতিতাই' এতটাই রসাল যে গাছেই ফেটে যায়। কারও কারও মতে, এ নামটি সিরিয়াক বা হিব্রু 'প্যাটাচ' শব্দ থেকে এসেছে। 'প্যাটাচ' মানে 'খোলা'। 
প্লিনি লিখেছেন, শুষ্ক প্রকৃতির কিছু খেজুর বিশেষত ইথিওপিয়াতেই হয়ে থাকে। এখানে কিছু শুষ্ক ও পলকার মতো খেজুর হয়, যেগুলো গুঁড়ো করে ময়দাতে মেখে রুটি বানিয়ে খাওয়া যায়। থিবসে হয় এমন কিছু খেজুর রয়েছে, যেগুলো বয়ামে সংরক্ষণ করে রাখলে টাটকা থাকে। প্রাকৃতিকভাবে পাকেনি এমন খেজুর বয়ামে ভরে রাখলে খাবার আগে শুধু গরম করে নিলেই হয়।

গ্রিক রোমানরা যে খেজুর পছন্দ করতো তার, বেশির ভাগই সাধারণ ট্রাজেমাটা। এগুলো মিসর ও ফোনেসিয়া থেকে বালানি কিসিমের আমদানি করা খেজুর। এই খেজুরগুলো মোটেও সস্তা ছিল না। কেবল বিত্তশালী পরিবারেই এসব খেজুরের প্রবেশাধিকার ছিল। গ্রিক সামরিক নেতা, ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক জেনোফন (৪৩০-৩৫৪ খ্রিষ্টপূর্ব) চতুর্থ শতাব্দীতে তাঁর পারস্য অভিযানে যেসব খেজুরের দেখা পেয়েছেন, সেগুলোর একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'গ্রিসে আমরা যে ধরনের খেজুর দেখে অভ্যস্ত, তেমন খেজুর গৃহকর্মীদের জন্য এক পাশে রাখা হয়েছিল। অন্য দিকে মনিবদের জন্য বাছাই করা হয় কিছু উৎকৃষ্ট খেজুর। আকারে ও সৌন্দর্যে সেগুলো এককথায় বিস্ময়কর। তৈলস্ফটিকের সোনালি টুকরার মতো দেখতে! এ ধরনের কিছু কিছু খেজুর স্থানীয়রা শুকিয়ে মিষ্টান্ন হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখে। ওয়াইনের সঙ্গে চলার মতো যথেষ্ট মিষ্টি সেগুলো। কিন্তু মাথাব্যথা তৈরি করতেও ওস্তাদ!'

খেজুরগাছ চাষের সুদীর্ঘ ইতিহাসের কারণে এর কয়েক হাজার জাত সৃষ্টি হয়েছে। এই কয়েক হাজার জাত সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো, খেজুর গাছ দুই ধরনের হয়—পুরুষ গাছ ও নারী গাছ। গেরস্থ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট বিজ বপন করলে অপ্রত্যাশিত জাতের বিবর্তন ঠেকানো যায়। তবু অজানা পিতৃত্বের চারা থেকে প্রায়ই নতুন জাতের জন্ম হয়। এই ধরনের 'পিতৃপরিচয়হীন' জাতকে আরবিতে 'দেকেল' বা 'মাজহুল' (অজ্ঞাত) বলা হয়। প্রায়ই এই ধরনের চারা অপ্রত্যাশিত পুরুষ বা নিম্নজাতের নারীবৃক্ষের জন্ম দেয়। তাই কোনো অঞ্চলের গুণগত ভালো খেজুর উৎপাদনের মাপকাঠি জাতের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রায় তিন শতাধিক জাতের খেজুর মেলে। কিন্তু ভালো জাতের খেজুর মাত্র কয়েকটি। বীজ থেকে উৎপাদনের ফলে এটি হয়। 

আরবি ভাষায় কৃষি বিষয়ে সবচেয়ে তথ্যবহুল প্রথম গ্রন্থটি লেখা হয়েছে দশম শতকে। ‘আল-ফিলাহা আল-নাবতিয়্যাহ’ নামের গ্রন্থটির লেখক ইবনে ওয়াহশিইয়ার দাবি, এটি কুড়ি হাজার বছর আগের মেসোপটোমিয়া সভ্যতার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাজোখার অনুবাদ।

ইরাকে ভালো মানের খেজুরের জাতের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি। হাজার বছরের অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার মাধ্যমে খেজুরের উন্নত জাত রক্ষা করে চাষাবাদের কারণেই এটি হয়েছে। কোনো নতুন 'দেকেল' অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনাচক্রে উৎকৃষ্ট জাতের জন্ম দিলে কৃষকেরা ভবিষ্যতে জাত পরিবর্তনের আশঙ্কা দূর করার জন্য সেই উৎকৃষ্ট গাছের বীজকে এড়িয়ে শাখা থেকে নতুন গাছ জন্মানোর চেষ্টা করেন। এই নতুন জাতটিকে একটি নাম দেন চাষি। নামটি হয় প্রথম রোপণকারীর নামে, নয়তো যেখানে এটিকে পাওয়া গেছে, সে জায়গার নামে নামকরণ করা হয়। তা না হলেও খেজুর কোনো বৈশিষ্ট্য ধরে সে অনুযায়ী একটি নাম রাখা হয়। 

'দেকেল' হিসেবে জন্ম নেওয়া উত্তর আফ্রিকার একটি উজ্জ্বল সোনালি রঙের উন্নত জাতের খেজুর হলো 'ডেগলেট অব নুর' বা 'আলোর খেজুর'। এ নামের কারণ—এটি দেখতে প্রায় স্বচ্ছ। সূর্যের দিকে ধরলে আপনি ভেতরের বিচিটি পর্যন্ত দেখতে পাবেন। এর আদি অঞ্চল হলো, সাহারার আলজেরিয়া ও তিউনেসিয়ার মরুদ্যান। সপ্তদশ শতাব্দীতে এটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় এবং খুব দ্রুত চমৎকার জাত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জনশ্রুতি রয়েছে, মরুদ্যান এলাকায় বাস করা লাল্লা নুরা নামের একজন কামেল রমণীর নামে এটির নামকরণ করা হয়েছিল। লাল্লা নুরা এতটাই দরিদ্র ছিলেন যে একটি তসবিহ কেনার পয়সাও তাঁর ছিল না। অগত্যা ৯৯টি খেজুরের বিচি দিয়ে তিনি তসবিহ তৈরি করেন। এই ধার্মিক রমণী একসময় মারা গেলে সেখানেই স্থানীয়রা তাঁকে দাফন করেন। তসবিহ দানার ৯৯টি খেজুরের শেকড় গজায় এবং একপর্যায়ে এই অসাধারণ জাতের ফল দেয়। সেই থেকে এর নাম হয় 'ডেগলেট অব নুরা' বা 'নুরার খেজুর'। 

অন্য বয়ান মতে, এই জাতের মূল বীজগুলো ছিল ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর উঠানের গাছের। নবীজির শহর 'মদিনা মুনাওওয়ারা' (আলোর শহর) থেকেই ডেগলেট অব নুর নামকরণ। 

জন্মবীজের পিতৃপরিচয় অজানা এমন সুমিষ্ট, রসাল ও আকারে বড় আরেকটি বিখ্যাত 'দেকেল' হলো 'মাজহুল'। এটিকে মাজহুল (অজ্ঞাত) বলা হয় কারণ, এর বংশবীজটি অজানা। মরক্কো ও দক্ষিণ আলজেরিয়ার তাফিলাতিত অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মাঝে এটি বেশি প্রসিদ্ধ ছিল। ঠিক কবে এই জাতের আবিষ্কার তা এখনো অজানা। ঊনবিংশ শতাব্দীতেও তাফিলাতিত অঞ্চলে ভ্রমণ করা কোনো কোনো বিদেশি এই খেজুরের উল্লেখ করেননি। হয়তো অন্য কোনো নাম আছে এটির। 

যেখানে 'মাজহুল' আবিষ্কার হয়, সেই তাফিলাতিত মরুদ্যান মরক্কোর অভ্যন্তরে অবস্থিত। গ্রীষ্পের বাড়ন্ত তাপ, প্রচুর পানির সরবরাহ ও দক্ষ চাষিদের কারণে এই অঞ্চলের খেজুর বহু শতাব্দী ধরে বিখ্যাত। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও 'মেজহুল' একটি বিরল প্রজাতির খেজুর ছিল। শুধু রপ্তানির জন্য এর চাষাবাদ হতো। স্থানীয়দের জন্য এর স্বাদ গ্রহণের সব সুযোগ বন্ধ ছিল। তাদের ভাগ্যে জুটত বাজে কিসিমের খেজুর। শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে তুলনা করার মতো আরও কয়েক ধরনের খেজুর সেখানে রয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলোর খ্যাতি শুধু ওই সব অঞ্চল ও তার আশেপাশেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে মাজহুল ও ডেগলেট নুরের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। 
মধ্যপ্রাচ্যে ছয় শ ধরনের উন্নত জাতের খেজুর জন্মায়। স্বতন্ত্র জাতের খেজুর উৎপাদনে প্রতিটি অঞ্চলেরই দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এসব খেজুরের নামে স্থান, ব্যক্তি, স্বাদ অথবা আকার-আকৃতির প্রতিফলন থাকে। কিছু জাতের নাম আবার খুবই অদ্ভুত। যেমন একটির নাম 'বাইদ আল বিলবিল', মানে নাইটিঙ্গেলের ডিম। আসাবি আল আরুস বা বধুর আঙুল। মলব্বাস আল আজুজ বা বৃদ্ধার চকলেট। খাসাভি আল বাগাল বা খচ্চরের অণ্ডকোষ। 

উন্নত জাতের খেজুরের সিংহভাগই রয়েছে ইরাকে। জাহদি বা জাহিদি হলো বাগদাদের প্রধান বাণিজ্যিক খেজুর। এটি অপেক্ষাকৃত সস্তা, সংরক্ষণযোগ্য ও পাকা অবস্থায়ও টাটকা থাকে। উচ্চ চিনির উপাদানের কারণে এটি ইরাকে বিখ্যাত মাদকীয় পানীয় আরাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। খিস্তাভি বাগদাদের আরেকটি সুস্বাদু ডেজার্ট খেজুর। হিলাভি খেজুরটির নামকরণ করা হয়েছে দক্ষিণ বাগদাদের হিলা শহরের নামানুসারে। বাগদাদের বাইরে এটি হালাভি বা হালওয়া (মিঠাই) নামে বেশি পরিচিত। এটি তাড়াতাড়ি পাকে, বেশি করে ফলন হয়, সংরক্ষণে ভালোও থাকে। খাদরাভি হলো একটি চমৎকার মিষ্টি ও সবুজাভ খেজুর। ইস্তামরান হলো ব্যাপকভাবে আদৃত আরেকটি খেজুর। এটিকে সায়িরও বলা হয়। বার্হিকে বসরার সেরা খেজুর বলা হয়। এর নামটি 'বারিহ' বা গরম বাতাস থেকে এসেছে, যা গ্রীষ্মকালে উপসাগর থেকে প্রবাহিত হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় শুষ্ক খেজুর হলো আশরাসি যা আখরোটের সাথে খাওয়া হয়, অথবা তিলের পেস্টের সঙ্গে থেঁতলে মাদগুগা নামক একটি বিশেষ মিষ্টান্নের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। 
মিসরের মূল্যবান খেজুরের নাম হলো হায়ানি। হায়ান গ্রামের নামে এ নাম। একে বিরকাভি বা বিরকাত আল-হাজও বলা হয়। বিরকাত আল-হাজ মানে হাজিদের পুকুর, কায়রোর কাছে একটি মরুদ্যানের পর যেখানে প্রাক্-আধুনিক যুগে প্রতিবছর হজযাত্রীদের কাফেলা প্রথমবার যাত্রাবিরতি দিত। এটি একটি বহুমুখী খেজুর। ফসল তোলার পরপর হিমায়িত করতে পারলে এটি সারা বছরই বিক্রি করা যায়। ইরাকি আশরাসির মতো আরেকটি মিসরীয় শুকনো খেজুর হলো সায়িদি, এটি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাইদে উৎপন্ন হয়। শুকনো হলেও এটি আশরাসির মতো শক্ত নয়। 

রমজানে মুসলমানেরা ইফতারে যখন খেজুরকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখে, তখন মিসরীয় ফল ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করার জন্য একটি মজার রেটিং সিস্টেম অনুসরণ করে। তারা প্রতিটি খেজুরকে একেকজন সেলিব্রেটির নামে সাময়িক নাম দেয়। এই তালিকায় রাজনীতিবিদ, ফুটবল খেলোয়ার এমনকি অভিনেতা-অভিনেত্রীর নামও থাকে। বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালে 'ওবামা' খেজুরটি সবচেয়ে দামি খেজুর ছিল। 

তিউনিশিয়ার বিখ্যাত খেজুরের একটি হলো মানাখির (নাকের মতো)। নরম, গাঢ়, আকারে বড় এই খেজুরটি স্বাদের দিক দিয়ে অনেকটা ডেগলেট নুরের মতো। এটি একটি বিরল প্রজাতির খেজুর। আলজেরিয়ার অভিজাত খেজুরটির নাম হলো 'থুরি'। এটি প্রাকৃতিকভাবে শুকনো খেজুর বা 'রুটি খেজুর' নামেও পরিচিত। এটি মিষ্টি তবে শক্ত ও ভঙ্গুর। দক্ষিণ ইরানে একটি দারুণ মিষ্টি খেজুর ফলে। গায়ের রংটা কালো হওয়ার কারণে এর নাম 'মাজাফাতি'। 

আজওয়া হলো আরেকটি কালো ও মিষ্টি খেজুর। এটি পশ্চিম আরবের মদিনা শহরের খেজুর। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় খেজুর। ওমানের দারুণ একটি নরম খেজুর হলো বু নারিঞ্জা, অর্থাৎ কমলা রঙের খেজুর, যা অনেকটা সৌদি আরবের প্রধান খেজুর খালাসার মতো। খালাসার একটি দারুণ মিশ্র স্বাদ রয়েছে। খেজুরটি মুখে পুড়ার পর এটি ধীরে ধীরে তার জাদু দেখাতে শুরু করবে। মধু, মিষ্টি আলু, আখ, ক্যারামেলের স্বাদে মুখটা ভরে আসবে। দ্রুত এর সঙ্গে যুক্ত হবে সূক্ষ্ম করে কাটা বাদাম ও বাদামের চকলেটের স্বাদ। 

Related Topics

টপ নিউজ

খেজুর / খেজুরের ইতিহাস / ফল / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন
  • রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান 
  • ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম
  • দেশবন্ধু সুইটমিট: ৬৪ বছর ধরে ঢাকাবাসীর সকাল-বিকালের নাস্তার প্রিয় জায়গা
  • ইউরোর বিপরীতে রুবলের দাম পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি
  • এবার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

Related News

  • ফলের গায়ে লাগিয়ে রাখা কোন স্টিকারের কী অর্থ?  
  • তারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান
  • বুড়িগঙ্গা—ভালোবাসা আর লজ্জার নদী
  • দ্য লাস্ট সাপার এবং এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান চিত্রকরের গল্প
  • ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম

Most Read

1
অর্থনীতি

আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন

2
আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান 

3
ইজেল

ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম

4
ফিচার

দেশবন্ধু সুইটমিট: ৬৪ বছর ধরে ঢাকাবাসীর সকাল-বিকালের নাস্তার প্রিয় জায়গা

5
আন্তর্জাতিক

ইউরোর বিপরীতে রুবলের দাম পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি

6
বাংলাদেশ

এবার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab