যে কণ্ঠ ছিল প্যালেস্টাইনের কণ্ঠস্বর: মাহমুদ দারবিশ
সেদিন, যেদিন আমার কথা ছিল
ক্ষুব্ধ
আমি শেকলের বন্ধু ছিলাম
সেদিন, যেদিন আমার কথা ছিল
বিদ্রোহ
আমি ভূমিকম্পের বন্ধু ছিলাম।
মাহমুদ দারবিশের কবিতা এমনই—ভালোবাসা ও বিদ্রোহ, প্রতিরোধ ও আলিঙ্গন হাত ধরাধরি করে এগোয়। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন প্রধান ইয়াসির আরাফাত এবং প্যালেস্টাইনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশ জীবদ্দশায় দুজনেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান ছিলেন, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে মাহমুদ দারবিশ হয়তো তার চেয়ে খানিকটা এগিয়েই ছিলেন। ২০০০ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েলি শিক্ষামন্ত্রী ইয়োসি সারিদ প্রস্তাব করেছিলেন সেখানকার হাইস্কুল কারিকুলামে মাহমুদ দারবিশের কবিতা অন্তর্ভুক্ত হোক। সে সময় জনরব উঠেছিল মাহমুদ দারবিশের কবিতার পঙ্ক্তি প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও তার রাজনৈতিক দলের অবস্থান দুর্বল করে দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত যে যুক্তিতে প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেন, তা হচ্ছে—স্কুলে মাহমুদ দারবিশ পড়াবার জন্য সময়টা এখনো পরিপক্ব হয়ে ওঠেনি।
এটাও তো সত্য—একদিকে আরবের দু-একটি স্কুলে মাহমুদ দারবিশ যেমন পাঠ্য, অন্যদিকে ধর্মদ্রোহের অভিযোগে আরবের বইমেলাতে তিনি নিষিদ্ধ।
মাহমুদ দারবিশের জন্ম ১৩ মার্চ ১৯৪৯; প্যালেস্টাইনের পশ্চিম গ্যালিলির আল বিরওয়াতে, বাবা সালিম দারবিশ ভূস্বামী; মা হুরাইরা ছিলেন নিরক্ষর। তার অক্ষরে হাতেখড়ি পিতামহের কাছে। ১৯৪৮-এ ব্রিটিশ সরকার যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে, তখনকার আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি সৈন্যবাহিনী তাদের ঘরবাড়িসহ পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। ভস্মীভূত করার কারণ—ঘরবাড়ির মালিকরা যেন ফিরে এসে কোথাও ঠাঁই না পান। আরও অনেক পরিবারের সাথে দারবিশরাও লেবাননে পালিয়ে যান—প্রথমে জেদিদি ও পরে দামুর অঞ্চলে। এক বছর পর তারা একার নামক অঞ্চলে চলে আসেন, জায়গাটা ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
জাদিদি থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে কাফর ইয়াসিফে তার প্রথম স্কুলে গমন, তারপর দীর্ঘ সময় হাইফাতে। বয়স যখন ১৯, মাহমুদ দারবিশ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আসাফির বিলা আজনিহা' (ডানা ছাড়া পাখি) নামের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ইসরায়েলি কমিউনিস্ট পার্টির সাময়িকী আল জাদিদ-এ তার কবিতা প্রকাশ অব্যাহত থাকে, তিনি একসময় এই সাময়িকীর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭০-এ পড়াশোনা করতে চলে যান সোভিয়েত ইউনিয়নে। লমোনসভ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক বছর পড়ে মিসর ফিরে আসেন, তারপর লেবানন। ১৯৭৩ সালে যখন ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনে যোগ দেন, তাকে ইসরায়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তার জ্যেষ্ঠ সহকর্মী এবং লেখক এমিল শুকরি হাবিবির (১৯২২-১৯৯৬) মৃত্যু হলে ইসরায়েল তাকে ৪ দিনের জন্য হাইফাতে এসে অবস্থান করার অনুমতি দেয়। সে বছরই তাকে রামাল্লাতে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়।
মাহমুদ দারবিশ ব্রিটিশ সিরিয়ান ঐতিহাসিক ও লেখক রানা কাব্বানিকে বিয়ে করেন, বিয়ে টেকেনি; মিসরীয় অনুবাদক হায়াত হিনিকে বিয়ে করেন, এটিরও তালাকে সমাপ্তি ঘটে।
মাহমুদ দারবিশের কবিতায় রিতা নামের এক নারীর উল্লেখ আছে। তিনি ফরাসি সাংবাদিক লরে অ্যাডলারের কাছে স্বীকার করেছেন, এই নারী প্রকৃতপক্ষে তামের বেন আমি (১৯৫৫-১৯৯৫), তিনি তাকে ভালোবাসতেন। ইহুদি তামের রামাল্লায় জন্মগ্রহণ করেন, একজন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে সার্ভাইক্যাল ক্যানসারে তার মৃত্যু হয়।
মাহমুদ দারবিশ হৃদরোগে আক্রান্ত হন, একাধিক অপারেশনের দরকার হয়। ৯ আগস্ট ২০০৮ যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের একটি হাসপাতালে আরও একটি অপারেশনের পর তার মৃত্যু হয়। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন তাকে যেন কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া না হয়।
নিজ জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া শরণার্থীদের যাতনা এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবর্তনের আকাক্সক্ষা নিয়ে তার কাব্যচর্চার শুরু। তার 'আইডেন্টিটি কার্ড' প্রকাশিত হলে তিনি আলোচিত এবং সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।
পরিচয়-পত্র
লিখুন
আমি এক আরব
আমার পরিচয়পত্রের নম্বর পঞ্চাশ হাজার
আমার আট সন্তান
এক গ্রীষ্মের পর নবম সন্তান আসবে
আপনি কি ক্ষুব্ধ হবেন?
লিখুন
আমি এক আরব
সহশ্রমিকদের সাথে পাথরভাঙার কাজ করি
আমার আট সন্তান
আমি পাথর থেকে
তাদের রুটি, কাপড় ও বইপত্র কিনে দেই
আমি আপনার দরজায় খয়রাত চাইতে যাই না
আপনার দপ্তরের হাঁটাপথে আমি নিজেকে
ছোট করতে পারি না
আপনি কি ক্ষুব্ধ হবেন?
লিখুন
আমি এক আরব
আমার একটা নাম আছে পদবি নেই
যেখানে যে দেশে লোকজন ক্ষুব্ধ
আমি ধৈর্যশীল
আমার মূল
সময়ের জন্মের আগেই প্রোথিত
যুগের সূচনার আগে
পাইন ও জলপাই বৃক্ষের আগে
এবং ঘাসের জন্মের আগে,
আমার বাবা চাষাভূষার বংশধর
সুবিধাভোগী কোনো শ্রেণি থেকে আসেনি
আমার পিতামহ—চাষাই ছিলেন
ভালো জাতের ভালো জন্মের কেউ নন
আমাকে পড়তে শেখার আগেই
সূর্যের অহংকার শেখান
আমার বাড়িটা পাহারাওয়ালার কুটিরের মতো
ডালপালা আর বেত দিয়ে তৈরি
আমার মর্যাদায় আপনি কি সন্তুষ্ট?
আমার পদবিহীন একটা নাম আছে।
লিখুন
আমি এক আরব
আপনারা আমার পূর্বপুরুষের ফলবাগান
চুরি করে নিয়ে গেছেন
আমার সন্তানদের নিয়ে যে জমিন
আমি চাষ করি
কিছু পাথর ছাড়া আমাদের জন্য
আপনারা আর কিছু রেখে যাননি
রাষ্ট্রও তা নিয়ে যাবে
যেমন বলা হয়েছে?
অতএব!
কাগজের শীর্ষে লিখুন
আমি মানুষকে ঘৃণা করি না
ক্ষুধার্ত হলেও
আমি কারও জমিনে অনধিকার প্রবেশ করি না।
সাবধান
সাবধান
আমার ক্ষুধা ও ক্রোধ থেকে সাবধান
দখলদারের মাংস হবে আমার খাবার।
তিনি আরবিতে লিখতেন; ইংরেজি ফরাসি ও হিব্রুতে কথা বলতেন। হিব্রুও তার প্রিয় ভাষা। তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনে আরব মুসলমান ও ইহুদি উভয় সংস্কৃতির উপাদান রয়েছে।
১৯৮৮ সালে তিনি প্যালেস্টাইনি জনগণের জন্য 'ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স' রচনা করেন; ১৯৯৬-এর খানিকটা আপসমূলক অসলো চুক্তি সম্পাদিত হবার পর তিনি পিএলও নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।
মাহমুদ দারবিশ ১৯৯৬-এর মেতে তার প্রথম বাড়ি প্যালেস্টাইনে এলেন মায়ের কফিতে চুমুক দিতে মায়ের স্পর্শ নিতে, মায়ের বানানো রুটি খেতে; এটা ছিল তার জন্য একটা স্বপ্নসফর। এর আগে তিনি কেমন ছিলেন, এখন কেমন?
সে সময় নুরি আল জারাহকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন:
আমি ভাবছি, আমি যে আমি ছিলাম, এখনো কি তাই আছি নাকি কিছু একটা বদলে গেছে। অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে। আমি কে? হঠাৎ এক ঝলকের সফর আমাকে ৫০ বছর আগে নিয়ে গেছে—সেখানে একটি শিশু খেলছে, বাগানের পিছনে ছুটছে, ফুল তুলছে, তার জীবনের প্রথম প্রশ্নগুলো করছে। আমি এখনো সেই অভিভূত ঘোরের মধ্যে আছি, বহু বছর আগে যে শিশু আমি ছিলাম, তাকে পেয়েছি। অনুসন্ধানের সূত্রগুলো জট লাগানো। প্রত্যেকেই একজন মাহমুদ বা অন্য একজনকে খুঁজছে, কিন্তু আমাকে যা ক্লান্ত করে তুলছে, তা হচ্ছে সকলেই একজন প্রতীকী মাহমুদের অনুসন্ধান করছে, যেখানে আমি আমার ব্যক্তিসত্তাকে এমন প্রতীকী অনুসন্ধানের জন্য এগিয়ে দিতে চাচ্ছি না।
যখন তিনি বাড়িতে এলেন, দরজায় পা রাখলেন তখনকার স্মৃতিটা কেমন?
আমার দুপায়ে ভর দিয়ে প্রবেশ করেছি কি না, আমি সে সম্পর্কে সচেতন নই, তবে আমার হৃদয় দুষ্ট চড়ুই পাখির মতো লাফাচ্ছিল—তখন একমাত্র শব্দ ছিল অশ্রুর। আমি আমার প্রথম গ্রাম আল-বিরওয়া দেখতে যেতে পারিনি, সেখানে পুরোনো ইদারার প্রান্তে বসা হয়নি, আমার সেই পুরোনো স্কুলেও যেতে পারিনি। যেসব রাস্তাঘাট, অলিগলি আমার রচনায় চিত্রকল্প হিসেবে উঠে এসেছে, সেগুলোও দেখার সুযোগ হয়নি।
ইবতিমা মারানা মেনুহিম প্যালেস্টাইনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি বানাতে গিয়ে তার প্রেমিকা তামের বেন-আমিকে জার্মানির বার্লিন শহরে খুঁজে পেয়েছেন। ৪০ বছর আগে দারবিশের সাথে তার প্রেমের কাহিনিটা তিনিই বলেছেন। তার লেখা চিঠিপত্র দেখিয়েছেন। 'রিতা অ্যান্ড দ্য রাইফেল' কবিতার রিতাই তামের বেন-আমি। ১৯৬৭ তে ইসরায়েল তাদের অঞ্চল তাদের প্রণয়ের সর রদেভু অধিকার করে নেবার পর প্রেম আর পরিণতির দিকে এগোয়নি। দুজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
রিতা ও রাইফেল
রিতা ও আমার চোখের মধ্যিখানে
একটি রাইফেল আছে
আর যারা রিতাকে জানে
তারা তার মধুবর্ণ চোখের বেহেশতি প্রভায়
হাঁটু গেড়ে বসে এবং খেলায় মজে
আর আমি রিতাকে চুম্বন করেছি
যখন সে তরুণী ছিল
আমার মনে পড়ে—কেমন করে সে এগিয়ে আসত
আর কেমন করে আমার হাতের বন্ধন আর সুন্দরতম
বিনুনি ঢেকে দিত; রিতাকে আমার মনে পড়ে
যেমন করে চড়ুই স্মরণ করে তার স্রোতোধারাকে
আর রিতা
আমাদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ চড়ুই এবং দৃশ্যপট
এবং কতনা আমাদের চারণক্ষেত্রে
হয়ে ওঠে রাইফেলের গুলির নিশানা
আমার মুখে 'রিতা' নাম ছিল উৎসবের ভোজ
রিতার শরীর আমার রক্তে বিয়ের উত্তেজনা
দুবছর আমি রিতার মধ্যে হারিয়ে যাই
দুবছর সে আমার বাহুতে ঘুমিয়েছে
আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি সবচেয়ে সুন্দর কাপ মুখে নিয়ে
আমাদের ঠোঁটের মদিরায় আমরা ভস্মীভূত হয়ে
আবার আমাদের জন্ম হয়েছে
আহ রিতা!
এই রাইফেলের আগে কে তোমার উপর থেকে আমার চোখ
সরাতে পারত—ব্যতিক্রম একটু ঘুম কিংবা মধুবর্ণ মেঘ?
কোনো একবার
ওহ্ গোধূলির নীরবতা
ভোরে আমার চাঁদ দূরে কোথাও অভিবাসী হয়ে গেছে
সেই মধুবর্ণ চোখের দিকে
নগর ভাসিয়ে নিয়েছে শিল্পী সকল
আর রিতা
রিতা ও আমার চোখের মধ্যিখানে
একটি রাইফেল।
মাহমুদ দারবিশ কি দুই রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাস করেন? তিনি দুই রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাস করেননি। দুই জাতি প্যালেস্টাইনি ও ইসরায়েলি উভয়ের জন্যই তার চাওয়া এক রাষ্ট্র সমাধান।
মাহমুদ দারবিশের আরও দুটি কবিতা অনূদিত হলো:
প্যালেস্টাইন
জীবনকে বাঁচার মতো বাঁচতে যা কিছু দরকার
এ জমিন সবকিছু আমাদের দেয়:
এপ্রিলের সলাজ এগিয়ে আসা
ভোরের রুটির সুঘ্রাণ
পুরুষকে ক্ষুব্ধ নারীর বকাঝকা
এস্কিলাসের কবিতা
ভালোবাসার কম্পমান সূচনা
পাথরে জমা শ্যাওলা
বাঁশির সূত্র ধরে মায়েদের নৃত্য
আর স্মৃতিতে আক্রমণকারীর আতঙ্ক
জীবনকে বাঁচার মতো বাঁচতে যা কিছু দরকার
এ জমিন সবকিছু আমাদের দেয়:
সেপ্টেম্বরের মর্মরধ্বনি শেষ হয়ে আসে
নাশপাতি নিয়ে চল্লিশ বছর পেছনে ফেলে আসা নারী
কারাগারে এক ঘণ্টার সূর্যালোক
মেঘের প্রতিবিম্বে কীটপতঙ্গের ঝাঁক
তাদের ঠাট্টা করা মানুষের বিলয়ে মানুষের হাততালি
আর সংগীতে স্বৈরাচারীর আতঙ্ক
জীবনকে বাঁচার মতো বাঁচতে যা কিছু দরকার
এ জমিন সবকিছু আমাদের দেয়
নারী ধরিত্রী, সকল অভ্যুদয় ও বিলুপ্তির জননী
সে নারীর নাম ছিল প্যালেস্টাইন
এখনো তাকে প্যালেস্টাইন ডাকা হয়
আমার নারী, কারণ তুমি আমারই নারী
জীবনটা প্রাপ্য আমার।
তারা আমাকে মৃত দেখলে খুশি হতো
তারা আমাকে মৃত দখলে খুশি হতো, সে জন্যই বলে
সে আমাদের একজন, সে আমাদেরই,
রাতের দেয়ালে কুড়ি বছর ধরে আমি তাদের
পা ফেলার শব্দ শুনেছি
তারা কোনো দরজা খোলেনি, তবু তারা এখানে
আমি তাদের তিনজনকে দেখতে পাই
একজন কবি, একজন খুনি, একজন গ্রন্থপাঠক
আমি জিজ্ঞেস করি, একটু মদিরা পান করবে কি?
হ্যাঁ, তাদের জবাব;
জিজ্ঞেস করি, কখন আমাকে গুলি করার পরিকল্পনা করছ?
তাদের জবাব, ও কিছু নয়, স্বাভাবিকভাবে নাও
তারা তাদের গ্লাস লাইন ধরে দাঁড় করায় এবং
জনতার জন্য সুর ভাজে
আমি জিজ্ঞেস করি, কখন আমার হত্যাযজ্ঞ শুরু করবে?
তারা বলল, কাজ হয়ে গেছে,
তোমার আমার আগে জুতো কেন পাঠালে?
বলল, যেন তা পৃথিবীর মুখমণ্ডলে হাঁটতে পারে
পৃথিবী তো জঘন্য অন্ধকার, তোমার কবিতা এত সাদা কেন?
জবাব দিই, কারণ আমার হৃদয় তিরিশটি সাগরে পূর্ণ
জিজ্ঞেস করে, ফরাসি মদিরা কেন পছন্দ?
জবাব দিই, আমাকে ভালোবাসতে হবে সবচেয়ে সুন্দর নারী।
তারা প্রশ্ন করে কেমন মৃত্যু তুমি চাও?
নীল জানালা থেকে ঢেলে দেওয়া তারার মতো—
তোমাদের কি আরও কিছু মদিরা চাই!
তারা বলে, হ্যাঁ, আমরা আরও পান করব।
দয়া করে তোমরা সময় নাও।
আমি চাই তোমরা আমাকে আস্তে আস্তে হত্যা করো
যেন আমার হৃদয়ের স্ত্রীর কাছে শেষ কবিতা লিখে যেতে পারি।
তারা হেসে ওঠে,
আমার হৃদয়ের স্ত্রীকে উৎসর্গ করা শব্দ থেকে
তারা আমাকে তুলে নিয়ে যায়।