১৯১৮ সালের মাস্ক বিরোধীরা
১৯১৮-১৯১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি। সে সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল মাস্ক।
১৯১৮-১৯১৯ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সময় লোকে মাস্ককে ডাকত 'মাজল', 'জীবাণু-বর্ম', 'ময়লার ফাঁদ'—এসব নামে। লোকের ধারণা ছিল মাস্ক পরলে তাদেরকে দেখায় শুঁড়ওয়ালা শুকরের মতো। কেউ কেউ আবার চুরুট খাওয়ার সুবিধার্থে মাস্কে ফুটো করে নিয়েছিল। অনেকে টিটকারি মারার জন্য কুকুরের নাকে মাস্ক পরিয়ে দিয়েছিল। ডাকাতরা ব্যাংক-ডাকাতি করার জন্য মাস্ক ব্যবহার করত।
এক শতাব্দী আগে, ১৯১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে গজ ও জালিকাপড়ই হয়ে উঠেছিল ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রধান অস্ত্র। তবে তখনও মাস্ক ঘিরে রাজনৈতিক বিভাজন ছড়িয়ে পড়েছিল এখনকার মতোই।স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো রোগের বিস্তার রোধের জন্য মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছিল তখনও। এবং এখনকার মতো তখনও কিছু লোক প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল এই আহ্বানের বিপরীতে।
১৯১৮-১৯১৯ সালের মহামারিতে বার, স্যালুন, রেস্তোরাঁ, থিয়েটার এবং স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার পর মাস্ক পরিণত হয় বলির পাঁঠায়। মাস্ক পরার বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় বিক্ষোভ, পিটিশন করা হয় আদালতে। প্রতিবাদে খালি মুখে লোক জমায়েত করে মাস্ক-বিরোধীরা। এর মাঝে প্রাণঘাতী মহামারিতে মারা পড়তে থাকে হাজার হাজার আমেরিকান।
১৯১৮: সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল
১৯১৮-র মার্চে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় ক্যানসাসের একটি সেনাঘাঁটিতে। ১০০ জন সৈনিক সংক্রমিত হয়েছিলেন সেখানে। এক হপ্তার মাঝে ফ্লুর আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচগুণ বেড়ে যায়। এরপর রোগটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি।কয়েকটি শহরে কোয়ারেন্টিন এবং মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা চালু হয়।
১৯১৮-র শরতের মধ্যে সাতটি শহরে—স্যান ফ্রান্সিসকো, সিয়াটল, ওকল্যান্ড, স্যাক্রামেন্টো, ডেনভার, ইন্ডিয়ানাপলিস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনায়—মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করা হয়।
'কোয়ারেন্টিন' বইয়ের লেখক এবং মহামারি বিষয়ক ইতিহাসবিদ ডা. হাওয়ার্ড মর্কেল লিখেছেন, যদিও তখন মাস্কের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত প্রতিবাদ হতো না, তবে ছাড়া-ছাড়া বিক্ষোভ হয়েছিল ঠিকই। অগ্নিসংযোগসহ ছোটখাটো বিক্ষোভের ঘটনা ঘটত প্রায়ই। 'অ্যান্টি-মাস্ক লিগ'-এর মতো মাস্কবিরোধী সংগঠনও ছিল কিছু। তবে সেসবের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি সংক্রান্ত আর্কাইভে পাওয়া তথ্যানুসারে, সুরক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল স্যান ফ্রান্সিসকো। অক্টোবরের শেষ দিকে রাজ্যজুড়ে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।স্যান ফ্রান্সিসকোতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭,০০০। স্যান ফ্রান্সিসকো অচিরেই 'মাস্ক-পরা শহর' নামে পরিচিতি পেয়ে যায়।
২২ অক্টোবর মেয়র জেমস রল্ফ 'মাস্ক অধ্যাদেশ'-এ স্বাক্ষর করেন। এই অধ্যাদেশের ফলে সান ফ্রান্সিসকোতে চার স্তরবিশিষ্ট মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
পটির মতো দেখতে মাস্ক
মহামারিতে কেবল অক্টোবরেই ১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ মারা যায় আমেরিকায়। তারপরও দেখতে ভালো লাগে না, পরতে আরাম না, ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী—এমন নানান ওজর-আপত্তি তুলতে থাকে মাস্কবিরোধীরা।
১৯১৮ সালের ২২ অক্টোবর 'দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস'-এ আলমা হুইটেকার সমাজ ও সেলেব্রিটিদের ওপর মাস্কের প্রভাব নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। তাতে বলেন, লোকজন মাস্ক পরে না; কারণ জিনিসটা নাকি এতই কুৎসিত যে, মাস্ক পরিহিত কাউকেই চেনার জো থাকে না। বড় রেস্তোরাঁগুলোতে তখন দেখার মতো দৃশ্যের অবতারণা হতো। রেস্তোরাঁয় খেতে আসা মানুষ এবং ওয়েটার উভয়ের মুখেই থাকত মাস্ক। প্রতিবার মাস্ক খুলত আর মুখে এক লোকমা খাবার দিত লোকে।
মিস হুইটেকার মাস্ক পরতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে 'জোর করে ধরে' রেড ক্রসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার জন্য মাস্ক বানিয়ে সেটি তাকে পরতে বাধ্য করা হয়।
'দ্য স্যান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল'-এর সূত্রানুসারে, সবচেয়ে সরল ধরনের মাস্ক ছিল ভাঁজযুক্ত গজ কাপড়ের তৈরি। তাতে ইলাস্টিক বা টেপ লাগানো থাকত। জিনিসটাকে দেখতে লাগত বর্গাকার পটির মতো।
সৃজনশীলতার ছোঁয়াও দেখা যেত অনেক ক্ষেত্রে। কিছু মাস্ককে দেখাত 'ভয়ংকর মেশিনের মতো'।
মাস্ক আদালত
মাস্ক অধ্যাদেশ অমান্যকারীদের ৫ থেকে ১০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা অথবা ১০ দিন পর্যন্ত জেল দেয়া হতো।
'দ্য স্যান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল' থেকে জানা যায়, নভেম্বরের ৯ তারিখে ১ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়। শহরের জেলখানায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না। মাস্ক অধ্যাদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিচারের শুনানির জন্য গভীর রাত পর্যন্ত চলত আদালত। মাস্ক পরেনি কেন—এই প্রশ্নের জবাবে সবাই নানা হাস্যকর অজুহাত দিত। আইন লঙ্ঘনকারীদের ৮ ঘণ্টা থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কারাবাস দেয়া হতো। যারা ৫ ডলার জরিমানা দিতে পারত না তাদের ৪৮ ঘণ্টার জেল দেয়া হতো।
সান ফ্রান্সিসকোতে 'মাস্কবিরোধীর' ওপর গুলি
২৮ অক্টোবর, ১৯১৮।পাওয়েল ও মার্কেট স্ট্রিটের একটি ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে লোক জড়ো করছিল জেমস উইজার নামের এক কামার।লোকজনকে অনুরোধ করছিল মুখের মাস্ক খুলে ফেলতে। উইজার বারবার বলছিল, মাস্ক পরা নাকি ধাপ্পাবাজি।
হেনরি ডি. মিলার নামে একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাকে মাস্ক কিনতে ওষুধের দোকানে নিয়ে যান।
দোকানের দরজার কাছে পৌঁছে উইজার তার হাতের রুপার ডলার ভর্তি থলে দিয়ে মিলারকে আঘাত করে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। 'আক্রান্ত হয়ে' ৬২ বছর বয়সি মিলার রিভলভার বের করে পরপর চারবার গুলি করেন। গুলির আওয়াজ শুনে পথচারীরা হুড়োহুড়ি করে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটেন।
মিলারের চালানো গুলিতে উইজারসহ আরও দুই পথচারী আহত হন। উইজারের বিরুদ্ধে শান্তিভঙ্গ, কর্তব্যরত অফিসারকে বাধা দেওয়া এবং তার ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। মিলারের বিরুদ্ধে আনা হয় মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে হামলার অভিযোগ।
লস অ্যাঞ্জেলেসে 'টু মাস্ক অর নট টু মাস্ক'
১৯১৮ সালের 'দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে' প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম এটি। নগরের বাসিন্দাদের জীবাণু বা ফ্লু প্রতিরোধক মাস্ক পরতে বাধ্য করা হবে কি না, এ নিয়ে কর্মকর্তারা বৈঠকে বসার পর এই শিরোনামের প্রতিবেদন ছাপা হয়।
এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জনসাধারণকে মতামত জাননোর আহ্বান জানানো হয়। একদল বলে থিয়েটার, গির্জা এবং স্কুলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা উচিত। বিরোধীরা বলে, মাস্ক খুব নোংরা—এটি ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি করে।
কিন্তু অনেকেই সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরত না। অনেকেই মুখের মাস্ক বহুক্ষণ গলায় ঝুলিয়ে রাখার পর সেটি আবার মুখে পরত।
ইলিনয়ে মাস্ক পরা না-পরার অধিকার
নারীদের ভোটাধিকার নিয়ে আন্দোলনরত কর্মীরা এ সময় মাস্ক পরিধানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ১৯১৮-র অক্টোবরে তারা মাত্র ১০০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ইলিনয় সাফ্রেজ অ্যাসোসিয়েশন-এর বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনকক্ষের দরজা বন্ধ রাখা হয়। প্রতিনিধিদের বসার জন্য চার ফুট দূরত্ব রেখে চেয়ার দেয়া হয়।
কিন্তু সেই সম্মেলনে উপস্থিত মহিলারা মাস্কের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেন। যদিও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। ওয়েন্টওয়র্থ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ইতিহাসের অধ্যাপক অ্যালিসন কে. ল্যাঞ্জ ধারণা করেছেন, মহিলারা সম্ভবত তাদের চেহারা ঢাকতে দিতে চাননি। ড. ল্যাঞ্জের ধারণা, নারী ভোটাধিকারকর্মীরা চাইতেন তাদের নেত্রীদের চেহারা যেন জনসাধারণের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে।
চার সপ্তাহের মাস্ক-বন্দিত্বের পর মুক্তি
স্যান ফ্রান্সিসকোর মাস্ক অধ্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয় চার সপ্তাহ পর, ১৯১৮-র ২১ নভেম্বর দুপুরে। গোটা শহর মাস্ক-বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে। গির্জায় ঘণ্টা বাজিয়ে এই আনন্দ উদযাপন করা হয়।লোকজন মুখের মাস্ক রাস্তায় ফেলে আক্রোশভরে পায়ের নিচে মাড়াতে থাকে। ফুটপাতে পরিত্যক্ত মাস্ক পড়ে থাকে স্তূপাকারে।
সংক্রমণের বিস্তার থেমে গেছে। কিন্তু সবার আনন্দকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ উঁকি দিচ্ছিল দিগন্তে।
ডিসেম্বরে স্যান ফ্রান্সিসকো বোর্ড অফ সুপারভাইজরস আবার মাস্ক পরার আইন পাশ করার প্রস্তাব দেয়। বছরের শেষ দিকে স্যান ফ্রান্সিসকোর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসের বাইরে থেকে একটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা ইতিহাসবিদ ব্রায়ান ডোলান জানান, লোকজন ক্রমেই আগ্রাসী ও সহিংস হয়ে উঠছিল। ব্রায়ান ডোলান বলেন, মানুষ আইনের কারণে সহিংস হয়নি, হয়েছিল আর্থিক কারণে।
১৯১৮-র শেষে ইনফ্লুয়েঞ্জায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ জন মারা যান। এদের বেশিরভাগই মারা গেছেন শেষ চার মাসে।
১৯১৯: নতুন বছর
১৯১৯-এর জানুয়ারিতে, প্যাসাডেনার সিটি কমিশন একটি মাস্ক অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশটি প্রয়োগ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। চুরুটসেবী এবং গাড়ির যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে তারা। এটি প্যাসাডেনার ইতিহাসের সবচেয়ে অজনপ্রিয় আইন।
কেউ কেউ গাড়ির ভেন্ট এবং কুকুরের নাকে-মুখে গজ কাপড়ের মাস্ক পরিয়ে এই আইনকে ব্যঙ্গ করেন। চুরুট বিক্রেতারা অভিযোগ করেন, ধূমপানের সুবিধার্থে মাস্কে ফুটো রাখার ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও তাদের ক্রেতা কমে গেছে। নাপিতদের ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। লোকজন বাড়িতে বেশি সময় কাটাতে শুরু করায় ব্যবসায় মন্দা লেগেছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
চুরুট বিক্রেতারা মাস্ক অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে পিটিশন করে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে থাকা মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এমনকি ক্ষমতাবানরাও গ্রেপ্তার এড়াতে পারেননি। এক রোববারে মেরিল্যান্ড হোটেল থেকে সিকিউরিটি ন্যাশনাল ব্যাংক অফ প্যাসাডেনার সভাপতি আর্নেস্ট মে-সহ আরও পাঁচজন 'বিশিষ্ট' অতিথিকে গ্রেপ্তার করা হয় আইনভঙ্গের দায়ে। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না।
মাস্কবিরোধী সংঘ
দ্বিতীয় বছরেও চলতে থাকে রোগের সংক্রমণ। সেইসাথে বাড়তে থাকে সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা।
মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯১৮-র ডিসেম্বরে স্যান ফ্রান্সিসকো বোর্ড অফ সুপারভাইজরস আবার মাস্ক অধ্যাদেশ জারি করে। পরের বছরের জানুয়ারিতে ১,৮০০ ফ্লু কেস পাওয়া যায়, মারা যায় ১০১ জন।
এই মাস্ক অধ্যাদেশের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় 'অ্যান্টি-মাস্ক লিগ'। সংগঠনটির প্রধান ছিলেন এক নারী—ই. জে. হ্যারিংটন, পেশায় উকিল। তিনি ছিলেন স্যান ফ্রান্সিসকোর মেয়রের প্রতিদ্বন্দ্বী। আটজন পুরুষও যোগ দেন নেতৃত্বে। মাস্ক পরিণত হয় রাজনৈতিক প্রতীকে।
১৯১৯-এর ২৫ জানুয়ারি সংগঠনটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সে সভায় মাস্ক অধ্যাদেশ বাতিল এবং মেয়র ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করা হয়। তাদের অভিযোগ: মাস্ক যে সংক্রমণ রোধ করতে পারে, এ দাবির সপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এছাড়াও, তাদের মতে, জনগণকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা সংবিধানের পরিপন্থী।
জানুয়ারির ২৭ তারিখে মাস্কবিরোধী সংগঠনটি বোর্ড অফ সুপারভাইজরসের এক সভায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু মেয়র নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। 'মুক্তি এবং স্বাধীনতা' চেয়ে শোরগোল করতে থাকে মাস্কবিরোধীরা।
অবশেষে সংক্রমণের হার কমে আসায় ১ ফেব্রুয়ারি মাস্ক অধ্যাদেশ বাতিল করেন মেয়র রল্ফ।
কিন্তু সে বছরের শেষ দিকে শুরু হয় ফ্লুর তৃতীয় ঢেউ। এই মহামারিতে আমেরিকা জুড়ে সর্বমোট ৬ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মারা যায়।মহামারির সবচেয়ে বড় আঘাতটা পড়ে স্যান ফ্রান্সিসকোর ওপর। এই শহরের প্রতি ১ হাজার বাসিন্দার ৩০ জন মারা যান ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।
২০২০-এর মহামারিতেও বহু মানুষ ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে মাস্কের বিরোধিতা করেছে। এই জায়গায় এক শতাব্দীর আগের পৃথিবীর সাথে বর্তমানের পৃথিবীর কোনো পার্থক্য নেই।