সোয়াজিল্যান্ডের কাডোল-পাডোলে
আফ্রিকার ছোট্ট দেশ সোয়াজিল্যান্ডের রাজধানী মবেবেনেতে আছে উষ্ণ জলের প্রস্রবন। তার ভাঁপ ছড়ানো পানিকে ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে কাডোল-পাডোল নামে একটি সুইমিং পুল। মবেবেনেতে শহরে আসা অব্দি এ পুস্করিনীর সুনাম শুনছি। তো হাঁটতে হাঁটতে ছড়ানদীর পাড় ধরে রওয়ানা হই, দেখি গরিবগোর্বারা পানিতে ধোয়া-পাকলা করছে। এ দৃশ্যপট ছাড়িয়ে অতঃপর কাডোল-পাডোলের সুইমিং পুলে এসে দেখি, এদোডোবায় বেমক্কা মহিষের মতো গরমজলে ভাসছেন জাসোয়া কার্বাগোর। তিনি ব্যাকপ্যাকার লজে আমার পাশের কামরায় বাস করছেন। আমাকে দেখে জাসোয়া ভুরু নাচান। বিহানবেলা পান করে টং হওয়ার স্বভাব তার আছে। তখন ছঙবঙ করে বিয়ারের পানাপুকুরে ডুবসাঁতার কাটেন কিছুক্ষণ। তিনি 'আবে মারিয়া' গাইতে গাইতে সুইমিং পুল থেকে উঠে পড়ে তোয়ালে জড়িয়ে এসে ছাতার নিচে পাতা ইজিচেয়ারে ঝাঁকিয়ে বসেন। তারপর ব্যাকপ্যাক থেকে ঢাউস টাম্বলার বের করে ঢালেন ক্যাপ্তেন ম্যরগান ব্র্যান্ডের কিউবান রাম। তাতে চুমুক দিয়ে সিগার বের করে ধীরেসুস্থে ধরান।
জাসোয়া হালফিল চাকুরির উমেদারি করছেন জোরেশোরে। কয়েকদিন আগে একটি এইড এজেন্সি স্কাইপ মারফত তাকে ইন্টারভিউ করেছে। গতকাল ফলাফল জানানোর কথা। তিনি অ্যাপ্লাই করেছিলেন সোমালিয়ায় খাদ্যত্রাণ কর্মসূচীর সাপ্লাই এন্ড ডিসট্রিবিউশন জাতীয় পদে। আমি জানতে চাই- কী সমাচার ? তিনি রামের টাম্বলারে বিঘত আকারের চুমুক দিলে কিছু তরল দাড়ি বেয়ে চুঁইয়ে পড়ে। তাকে তেমন একটা বিমর্ষ দেখায় না। বরং বিলা করে তিনি বলেন,'সোমালিয়ার যা হালত, আমাকে জব অফার করলে তাদের ফায়দা কিছু হবে না। মোটরবোটে করে খাদ্যত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে নানা জায়গায়। এ কাজের জন্য এইড এজেন্সির উচিত সোমালী কোন জলদস্যুকে হায়ার করা।'
আমাদের আলোচনা ঠিক যেন আগায় না। জাসোয়া ব্যাকপ্যাকের তলা থেকে বের করেন একটি কালাই ওঠা এনামেলের মগ। কোন ফকির-ফখরাকে শবেবরাতে খয়রাত হিসাবে দিচ্ছেন শরবত, এ রকম তুচ্ছ তাচ্ছিলের সাথে তিনি আমাকে দেন মগে করে খানিকটা রাম। তার অবজ্ঞায় আমি অসন্তুষ্ট হই না, চাকুরি আমিও পাকড়াতে পারিনি। তার মতো বিধি আমারও বাম। তো স্রেফ সহানুভূতিবশত আমি রাম হাতে নিয়ে মগে চুঁচুক করে চুমুক দেই। বেশ আরাম লাগে ছাতার তলায় বসে রোদজলা উষ্ণজলের ভাঁপের দিকে তাকিয়ে থাকতে। দেখি, খানিক দূরের চালাঘরে দুটি ড্যান্সার নারী পায়ে ঝুমুর বেঁধে নৃত্যগীতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনেকটা পথ হেঁটে কাডোল-পাডোলে এসেছি। ক্লান্তিতে একটু ঝিমুনির মতো ইজিচেয়াতে নেতিয়ে পড়েছিলাম। পা ফেলার রিদমিক তালে ছড়াচ্ছে যেন সুরের ইন্দ্রজাল। ধড়মড় করে জেগে ওঠে দেখি, আমাদের ছাতাকে ঘিরে পায়ের ঝংকৃত স্টেপে নাচছে চারটি মেয়ে। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আক্কেল দাঁত অব্দি বের করে হাসছেন ভাস্কর কিকিকাকা জনাথন। জনাথনের সঙ্গে কাডোল-পাডোলে ঢুকার মুখে একটু কথাবার্তা হয়েছে। তিনি মূর্তি গড়ছিলেন। মেয়েগুলো বসেছিলো বাষ্প ওঠা ছড়া--নদীর পাড়ে। তিনি তাদের দিকে ইশারা করে কিঞ্চিত রগড় করেছিলেন। তাদের আই-ক্যান্ডি সম্বোধন করে তিনি আমাকে প্ররোচিত করতে চেয়েছিলেন। আমি তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে ঢুকে পড়েছিলাম গেট দিয়ে। এবার তিনি তাদের নিয়ে চলে এসেছেন কাডোল-পাডোলের অন্দর মহলে। মেয়েগুলো ছড়া-নদীতে গোসল সেরে এসেছে। তারা ভিজে কাপড়ে বনবন করে ঘুরে ঘুরে গাইছে, 'আকেহো আকেহো চা/সামবা হামবা লুথো লুথো..।' জলের ঝোরা থেকে উঠে সরাসরি এরা এখানে চলে এসেছে। তা তোয়ালে দিয়ে ঘঁষে গা শুকিয়ে আসলেই পারতো। তাতে কিন্তু তাদের রূপলাবন্যে খামতি কিছু হতো না। নৃত্যের রিদম ফাস্ট হয়। চোখ আধবোজা করে তারা গেয়ে যায়,' সাজিকা জিকা লুথো লুথো/সাফুনা ফুনা লুথো লুথো..।' মেয়েগুলোর কোমরের কাজ অসাধারণ, তা অবলোকন করতে পারলে খোদ শিবঠাকুর কল্কেতে কষে দম দিয়ে ¯্রফে ভুলে যেতেন ঊর্বশী রম্ভাদের আচানক রূপ। বিষয় কি? আমি খুব তাজ্জব হচ্ছি দেখে কিকিকাকা তাদের থামিয়ে দিয়ে সুর করে নারীদের গাওয়া গানের তর্জমা পেশ করেন,' ওয়াকিং হিয়ার.. হিয়ার এন্ড দেয়ার/ উই আর টারনিং.. টারনিং হিয়ার এন্ড দেয়ার/ উই আর সার্চিং.. সার্চিং হিয়ার এন্ড দেয়ার..।' আমিও তো হাঁটছি তাদের মতো এদিক-ওদিকে, সফরের সড়কে হাইক করতে করতে বাঁক নিচ্ছি, ঘুরতে ঘুরতে তালাশ করছি কিছু একটা। আমার মুগ্ধতায় উৎসাহিত হয়ে কিকিকাকা কাছে এসে হাতের মুদ্রায় বিশেষ একটি ভঙ্গি করেন। এ প্রতীক থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারি, কিকিকাকা জনাথন লিপ্ত আছেন সনাতন ব্যবসায় পিম্প হিসাবে। তার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জাসোয়ার দিকে তাকাই, তিনি জানতে চানÑআই ক্যান্ডিদের দিকে আমি তাকিয়েছি কি না? অপরাধ অস্বীকার করি না। হাতের ইশারায় বাতাসে ডলারের প্রতীক এঁকে তিনি আমাকে উতরানোর ফিঁকির বাতলিয়ে দেন। আমি আলগোছে কিছু সোয়াজি কারেন্সি জনাথনের মুঠোয় পাচার করে দেই। মেয়েরাও সমবেতভাবে চাতালে পা ঠুকে নৃত্যে ক্ষ্যন্ত দেয়।
কী কারণে জানি জাসোয়ার মেজাজ খাট্টা হয়ে ওঠে। তিনি খামোকা কাকে রাজ্যের খিস্তি করে বাইক হাঁকিয়ে বেরিয়ে যান কাডোল-পাডোল থেকে। আমি উষ্ণ জলে নেমে পা চোবাই। পানির তলায় টাইলসের ফ্লোরে সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে তৈরী করেছে নকশা। মৃদু আলোড়নে তা ভেঙ্গে ভেঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে তিব্বতীদের প্রার্থনার প্রতীক মেডিটেশনের ম্যান্ডেলা। টেকোমাথা এক প্রৌঢ় জাপানি কোমর জলে দাঁড়িয়ে তার ম্যানুয়েল ক্যামেরায় ছবি তুলছেন। জলে নড়াচড়া হতেই ভেঙ্গে যাচ্ছে আলোর দৃশ্যপট। আর তিনি কপাল কুঁচকে বেজায় কনসেনট্রেশনে মাছি মারার মতো সটাসট নিচ্ছেন শ্ন্যাপশট।
গা মুছে চলে আসি সুইমিংপুলের উল্টাদিকে। ওখানে তাঁবুর মতো দেখতে কয়েকটি ছাউনি। তাতে হট স্পা এর সাথে অঙ্গ সংবাহনের বন্দোবস্থ আছে। মেঘের মেদুর স্থর চুঁইয়ে সূর্যের বেগুনি রশ্মিতে রোদজ্বলা দুপুরের গায়ে লাগছে লালচে সোনালি আভা। সামনে দীর্ঘ দিন পড়ে আছে। এখনই ব্যাকপ্যাকার্স লজে ফিরে যেতে চাই না। তাই হট স্পা এর তাঁবুগুলোতে কি ঘটছে তা দেখতে পা বাড়াই। আঙিনায় জল ঝরিয়ে ভেজা বিকিনিতে হেঁটে যায় ইয়োসিকো। সেও একই ব্যাকপ্যাকার লজে বাস করছে। জাপানি-আমেরিকান এ তরুণী ভ্রমণ করতে করতে নানা দেশ থেকে কলেকশন করে কয়েন, খুব খুঁজে পেতে সংগ্রহ করে পুরানো, অচল এন্টিক গোছের মুদ্রা। এবং মওকা পেলে বেশী দামে তা পর্যটকদের কাছে বিক্রিও করে। তার সাথে ব্যাকপ্যাকার লজের আড্ডায় ঈষৎ অন্তরঙ্গতাও হয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে ইয়োসিকো হেসে হাত নাড়ে। আমি ওয়েভব্যাক করি, সাথে সাথে অনুভব করি যে, তার দেহের দেখনদারীতে আমার মধ্যে হচ্ছে মৃদু প্রতিক্রিয়া। বিষয়টিকে শাসনে রেখে আমি ছায়ায় রাখা একটি ইজিচেয়ারে এসে বসি। একটু দূরের টেবিলে ইয়োসিকোও বসেছে কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলে আমি তা না দেখার ভান করি। তখনই সে ব্যাকপ্যাক থেকে বের করে একটি সিরামিকের বিড়াল। এ কৃত্রিম মেকুরটির সাথে ব্যাকপ্যাকার লজে আমার পরিচয় হয়েছে। জাপানি ভাষায় এর নাম হচ্ছে মানেকি-নিকো। গলায় লাল রঙের রিবন বাঁধা এ কিউট ক্যাট তার বা'হাতে ধরে আছে ঝকঝকে একটি সোনালি কয়েন। এ ধরনের সোনালি রঙচেঙে মেকুর জাপানি রেস্তোরাঁতেও দেখা যায়, ক্রেতাদের ডানহাত নেড়ে হাতছানিতে ওয়েলকাম করছে। ইয়োসিকোর বিলাইটি আমার দিকে তাকিয়ে বারবার হাতছানি দিলে তাকে অবজ্ঞা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। তো উঠে ইয়োসিকোর টেবিলে গিয়ে একটি চেয়ার টেনে বসলে সে পাউটি ঠোঁটে বলে,'সো ইউ আর বিয়িং অনফ্রেন্ডলি টুডে?' আমি কোন জবাব দেই না। বেয়ারা ট্রেতে করে নিয়ে আসে পাইনেপোল জুস। ইয়োসিকো বেয়ারাকে কি যেন ইশারা করে। গ্লাসের কানায় আটকানো আনারসের টুকরা তুলে নিয়ে তাতে কাঠি দিয়ে গাঁথা কাগজের ছোট্ট ছাতাটি খুলে নেয় সে। সুইচ আর্মি নাইফ দিয়ে আনারসের টুকরা কেটে দুভাগ করে তুলে দেয় একখন্ড আমার হাতে। বেয়ারা আরেকটি গ্লাস নিয়ে আসলে সে সাবধানে জুসের অর্ধেক ঢেলে তা আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
পাইনেপোল জুস পান করতে করতে আমি তার দিকে চোখ তুলে তাকাই। বিকিনি টপে ঢাকা বক্ষযুগলের বিভাজনে পাপড়িতে লেগে থাকা শিশিরের মতো জমে আছে বিন্দু বিন্দু জল। চুল থেকেও ঝরছে নির্দ্দিষ্ট বিরতিতে একটি দুটি ফোঁটা। সে ইচ্ছাকৃতভাবে কাগজের মিনিয়েচার ছাতার ডিজাইন খুঁটিয়ে দেখছে। আমি অধৈর্য হয়ে বলি,'ভাবলাম, তোমার কয়েন কেনাবেচার কোন খরিদদার হয়তো আশেপাশে আছে, নিরিবিলিতে মুদ্রার ট্র্যানজ্যাকশন তুমি প্রেফার করবে, তাই একটু দূরে আলাদাভাবে বসেছিলাম।' খুব বিমর্ষভাবে সে জবাব দেয়,'নো, আই অ্যাম নট হেভিং এনি গুডলাক উইথ সেলিং কয়েনস। গত দু সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে পারিনি একটিও মুদ্রা। আই রিয়েলি হ্যাভ টু সেল সামথিং টুডে, না হলে ব্যাকপ্যাকার্স লজের ব্যয় বহন করা কঠিন হবে।' রেসপন্সে আমি বলি,'লেট মি বাই ইউ অ্যা প্রপার ড্রিংক। তারপর না হয় কয়েন নিয়ে কথা বলা যাবে?' ইয়োসিকোর ঠোঁট থেকে পাউটিভাব উপে যায়। সে সপ্রতিভ হয়ে বলে,'উইল ইউ বি ইন্টারেস্টেড টু বাই পারহেপ্স ওয়ান কয়েন?' 'আই উইল শিওর থিংক আবাউট..,' বলে আমি শনের চৌচালা কুটিরে উঁচু পায়ার টুল পেতে করা আউটডোর বারে ড্রিংকস্ কিনতে যাই। বারটেন্ডার সোয়াজি ফ্রিজ ককটেল বলে একটি ড্রিংকস্ সাজেস্ট করে কানাডিয়ান ক্লাব হুইস্কির সাথে মেশায় পিচ ব্র্যান্ডি। তাতে কেপিরিটিফ বলে ওয়াইন বেইসড্ অ্যালকোহল মেশালে পানীয়টির সৌরভে মিশ্রিত হয় নতুন একটি মাত্রা।
ইয়োসিকো ককটেল এনজয় করতে করতে ব্যাকপ্যাক থেকে বের করে দুটি কয়েন এলবাম। সেলোফোনে আটকানো মুদ্রাগুলোর নিচে লেখা ধাতুতে কাস্ট করার সন ও বিগত যুগের ঐতিহাসিক অথবা সাংস্কৃতিক কিছু তথ্য। আমি এলবামে বেশ কিছু পঞ্চাশ-ষাট বছরের পুরানো আমেরিকার সিলভার ডলার দেখি। সে তাতে হাত রেখে বলে,'এগুলো সংগ্রহ করা তেমন কঠিন কিছু না। আমেরিকাতে আমার মতো কয়েন কালেকটারদের বলা হয় চেরি পিকার। আমরা মুদ্রা সংগ্রহের ধান্দায় ঘুরে বেড়াই নানা জায়গায় । চলার পথে কখনো থামি এন্টিক শপে। এসব দোকানে অনেক সময় জাংক সিলভার হিসাবে এক লটে পাইকারি দরে বিক্রি করে দেয় শত শত কয়েন। গাছ থেকে দেখে দেখে পাকা চেরি ফলটি পাড়ার মতো আমরা লট হিসাবে কেনা কয়েনগুলো সর্ট করি। এ ধরনের সর্টিং এর ভেতর দিয়ে কখনো পেয়ে যাই জুয়েল গোছের এক-আধটি তোফা কয়েন।' সে এলবামের পাতা উল্টিয়ে বলে,'দাড়াও, তোমাকে চমৎকার একটি কয়েন দেখাচ্ছি।' সে একটি আধময়লা মুদ্রার উপর আংগুল রেখে মিষ্টি করে বলে,'অ্যা সুইট ডার্লিং ওয়ান।' আমিও খুঁটিয়ে দেখি, এ মুদ্রাটি ১৯২২ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসির ট্রেজারীতে কাস্ট করা হয়। এ রৌপ্যমুদ্রা পিস ডলার হিসাবে খ্যাত। ইয়োসিকো জানায় যে, অনেকগুলো জাংক কয়েন সর্ট আউট করার সময় সে আচমকা এ মুদ্রার তালাশ পায়।
আমি এবার জানতে চাই,'কিছু কিছু মানুষ কেন এত হন্যে হয়ে মুদ্রা কালেকশনে মেতে আছে?' সে জবাব দেয়,'আমার কাছে কয়েকটি সাইন্টিফিক স্টাডির কাটিং আছে, তুমি চাইলে পড়ে দেখতে পারো, মুদ্রা সংগ্রহের নেশায় মেতে থাকলে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রেস ম্যানেজ করা যায় অনেক ভালোভাবে।' এবার আমি একটি অভজারবেশন তার সাথে শেয়ার করি। খেয়াল করেছি যে, পর্যটকরা-- বিশেষ করে শস্তায় ট্র্যাবেল করনেওয়ালা ব্যাকপ্যাকাররা তাদের সল্প বাজেটের এক বড় অংশ ব্যয় করে কিনছেন রঙচটা পুরানো দিনের অচল মুদ্রা। বিষয় কি? ইয়োশিকো জবাব দেয়,'পর্যটকদের মাঝে হালফিল একটি ধারনা দানা বাঁধছে যে-- কালেক্টারস্ আইটেম জাতীয় পুরানো পয়সার তালিসমান সুলভ গুনাগুন আছে। অনেকেই পথ চলাচলের সময় তাদের ওয়ালেটে একটি কয়েন সঙ্গোপনে সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। তারা মনে করেন যে, এতে তাদের যাত্রীবাহী কিশতীর পালে লাগবে সৌভাগ্যের সুবাতাস।' ধারনাটি স্পষ্টত এক ধরনের সংস্কার, তাই জানতে কৌতহল হয়,কোথা থেকে কীভাবে এ প্র্যাকটিশের সূচনা হলো? ইয়োশিকো একটি চমকপ্রদ তথ্য দেয়,'আগেকার যুগে জাহাজের মাস্তুলের নিচে রাখা হতো একটি প্রাচীন মুদ্রা, যাতে নৌযান সহিসালামতে অতিক্রম করতে পারে দরিয়া।'
কথাবার্তা জমে উঠছে দেখে আমি এবার একটু ডিপ প্রসঙ্গ তুলি। জানতে চাই,'ইয়োসিকো, হোয়াই আর ইউ সো ক্রেইজি আবাউট কয়েন? যেখানে যাচ্ছো পুরো সময়টা কাটাচ্ছ পুরানো দিনের স্থানীয় কয়েনস্ কালেকশন করে, আবার বিক্রি করছো তা ভ্রমণরত ব্যাকপ্যাকার্সদের কাছে। প্রাচীন মুদ্রাতে তোমার আগ্রহের সূত্রপাত হলো কীভাবে?' সে জবাব দেয়,' দিস ইজ অ্যা বিট পার্সোন্যাল। জন্মের পর আটারো বছর বয়স অব্দি আমি জাপানে কাটাই। আমেরিকাতে অভিবাসি হওয়ার অনেক বছর আগের কথা বলছি। মা মারা যাওয়ার পরে আমি অর্ফান হিসাবে বেড়ে উঠি তার স্টেপ ফাদারের বাড়িতে। ভদ্রলোককে আমি দাদু হিসাবে স্বীকার করি না। তার দ্বিতীয় স্ত্রীও কিন্তু রক্তের দিক থেকে আমার গ্রান্ডমাদার না। কেজিতে পড়ার সময় লক্ষ্য করি, আমার প্লেগ্রুপের কিছু কিছু বাচ্চা তাদের স্কুল ব্যাগে করে ক্যারি করছে সিল্কের ছোট্ট পুটলিতে একটি পুরানো দিনের কয়েন। গুড লাকের তালিসমান হিসাবে তাদের পেরেন্টসরা স্বর্ণ বা রৌপ্যমুদ্রাগুলো তাদের যোগাড় করে দিয়েছে। আমার দু পেরেন্টস-ই তখন বিগত। কীভাবে তাদের মৃত্যু হলো আমি এখন সে আলোচনায় যেতে চাই না। তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে, তখন আমার গুড লাকের খুব প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু পৃথিবীতে আপন বলে কেউ ছিলো না যে-- একটি মুদ্রা সংগ্রহ করে দিয়ে আমাকে সাহায্য করবে।'
ইয়োসিকোর শিশুকাল নিয়ে আমি একটু ভাবি। খানিক চিন্তাভাবনা করে অতঃপর প্রশ্ন করি,' প্রথম কয়েন কালেকশনের চেষ্টা তুমি কখন করেছিলে?' গালের ওপর থেকে পেজবয় কাটের চুল সরিয়ে সে খুব খিন্নভাবে বলে,'মা এর স্টেপফাদারের ছিলো কয়েন কালেকশনের নেশা। এলবামগুলো বুড়ো তালা দিয়ে রাখতেন, তাই আমি দেখার সুযোগ পেতাম না। বসার ঘরে তিনি কিছু কয়েন ডিসপ্লে করেছিলেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিলো জাপানের ঐতিহাসিক মিজো আমলের ১৮৪২ সালে কাস্ট করা একটি স্বর্ণমুদ্রা। কয়েনটি বৃদ্ধ একটি স্ট্যান্ডে ডিসপ্লে করেছিলেন। ওটি ছুঁতে মানা ছিলো। আমি চোখ ফেরাতে পারতাম না। মনে হতো, মুদ্রাটি একবার হাতে নিতে পারলে ফিরে আসবে সৌভাগ্য। তো একদিন নিষেধ না মেনে তা ছুঁতে গেলে অসাবধানে ক্রিস্টালের স্ট্যান্ড ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে যায়। ধরা পড়লে খাবার বন্ধ করে দিয়ে বৃদ্ধ আমাকে একটি কামরায় বন্দী করে রাখেন। স্প্যন্কও করেন তিনি আমাকে মারাত্মকভাবে। বেতের আঘাতগুলো ঘা হয়ে যায় পরে।'
আলোচনায় ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এসে যাচ্ছে দেখে আমি বিব্রতবোধ করি। কিন্তু একটু পজ নিয়ে ইয়োসিকো আবার কনটিনিউ করে,'অনেক বছর হয়ে গেছে, এ ব্যাপার নিয়ে আমার মনে রাগও আর নেই। বাট ইট ওয়াজ অ্যা ফেক্ট ইন মাই লাইফ। এ নিয়ে আমি খোলাখুলি আলাপ করতে পারি। ঘা এর দাগগুলো এখনো আমার শরীরে আছে। আর ফানি ব্যাপার হচ্ছে, অভিবাসি হওয়ার পর আমার ফার্স্ট আমেরিকান বয়ফ্রেন্ড ব্যাকসাইডের দাগ দেখে ভেবেছিলো এগুলো উল্কি করে আঁকা জাপানি কোন হরফ বা শব্দ।' কথাবার্তার মোড় ঘুরানোর জন্য আমি এবার জানতে চাই,'কয়েন তুমি কালেকশন করতে শুরু করলে কখন থেকে?' মনে মনে কিছু যেন হিসাব নিকাশ করে ইয়োসিকো জবাব দেয়,' তেরো-চৌদ্ধ বছর বয়স থেকে আমি সংগ্রহ করতে শুরু করেছি একটি-দুটি মুদ্রা। ষোলো বছর বয়সে আমি রান-এ-ওয়ে গার্ল হিসাবে মায়ের স্টেপ ফাদারের বাড়ি ছাড়ি। আর আমার কয়েন কালেকশনের বড় ল্যান্ডমার্ক হচ্ছে সতেরো বছর বয়সে আমি যখন মিজো যুগের ১৮৭১ সালে কাস্ট করা একটি রূপার মুদ্রা কালেক্ট করি।' আমি এবার একটু এক্সাইটেড হয়ে বলি,'কীভাবে তুমি এতো পুরানো একটি কয়েন ম্যানেজ করলে? এ ধরনের মুদ্রার দাম নিশ্চয়ই অনেক, মাস্ট হ্যাভ কস্ট ইউ অ্যা ফরচুন?' ফিক করে হেসে ইয়োসিকো বলে,'তখন আমার বয়স ছিলো সেভেনটিন, আই ওয়াজ নট রিয়েলি অ্যা ভার্জিন। এন্ড ইট কস্ট অলমোস্ট নাথিং।' 'হাউ ওয়াজ ইট পসিবোল ইয়োসিকো?' বলে আমি বিষ্ময় প্রকাশ করলে সে জবাব দেয়,'আই ট্রেড মাই মাইসেল্ফ, আমার শরীরের বিনিময়ে আমি সংগ্রহ করি মিজো যুগের মুদ্রাটি। এবং এটা আমার জন্য বয়ে নিয়ে আসে গুডলাক। কিছুদিনের মাঝে আমেরিকাতে অভিবাসি হওয়ার ব্যাপারটি পাকাপোক্ত হয়।'
আমি এবার স্রেফ কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করি,' তুমি কি নিজেকে বার্টার হিসাবে ব্যবহার করে মাঝে মাঝে বিরল কয়েন কলেক্ট করো ইয়োসিকো?' অসময়ে ফোটা পপিফুলের পাপড়ির মতো রাঙ্গা হয়ে ওঠে সে বলে,'নট অলওয়েজ। তবে আফ্রিকার দক্ষিনাঞ্চলে আমি একটি বিশেষ কয়েন খুঁজছি। মুদ্রাটি কাস্ট হয় ১৯০০ সালে। বর্তমানের দক্ষিণ আফ্রিকা সে আমলে 'জুইদ আফ্রিকানসে রিপুবলিক' নামে পরিচিত ছিলো। সোনার এ মুদ্রাটিকে ক্রুগার কয়েন বলা হয়। সোয়াজিল্যান্ডে ভ্রমণ শেষ হলে পর আমি জোহানেসবার্গে যাচ্ছি। এন্ড ইফ আই ফাইন্ড দিস কয়েন, এটা সংগ্রহ করার জন্য কারো সাথে শুতে আমি দ্বিধা করবো না, আই ডোন্ট রিয়েলি কেয়ার। ক্রুগার কয়েনটি আমার সংগ্রহ করা চাই। আই অ্যাম ডেসপারেট।' এ বিবৃতিতে আমার কৌতূহল আরো বাড়ে। তাই জানতে চাই,'যদি তালাশ না পাও ক্রুগার কয়েনের, দেন হোয়াট, তাহলে কী করবে ইয়োসিকো?' সে জবাব দেয়,'আই হ্যাভ মাই প্ল্যান অল সর্টেড আউট। জোহানেসবার্গে সফলতা না আসলে বাসে চেপে চলে যাবো জাম্বিয়ার রাজধানী লুয়ান্ডায়। ওখান থেকে পাঁচ রাত চার দিন ট্রেনে চড়ে যাবো তানজানিয়ার দারুস সালামে। এক সময় ওই অঞ্চলে ছিলো কিলওয়া বলে একটি সুলতানাত। সে আমলের কিছু কিছু মুদ্রা দারুস সালামের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আই উড লাইক টু কালেক্ট অ্যা কিলওয়া কয়েন। কেন জানি আমার মাঝে একটি ধারণা জন্মাচ্ছে যে, কিলওয়া সুলতানদের আমলের একটি মুদ্রা যোগাড় করতে পারলে ফিরবে আমার ভাগ্য।'
ট্রেনে চড়ে দারুস সালামে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে আকর্ষণ করে। শস্তায় রেলগাড়ীতে চড়ে তানজানিয়ায় যেতে পারলে খারাপ হয় না। ওদিকে যাওয়ার আমার একটু প্রয়োজনও আছে। ভাড়া কত পড়তে পারে, কী সমাচার? ইত্যাদি জানতে চাইলে ইয়োসিকো ভ্রূকটি করে বলে,'অনেকক্ষণ ধরে আমার বায়োগ্রাফী শুনলে। এবার জানতে চাচ্ছো ফিউচার প্ল্যান। ইউ আর ইনডিড অ্যা কিউরিয়াস বাগার। তানজানিয়াতে যাওয়ার আলোচনা পরে করলে হয় না?' 'তাহলে আমি না হয় উঠি', বলে কথাবার্তার ইতি টানতে যাই, সে হাত ধরে টেনে আমাকে বসিয়ে দিয়ে বলে,'তোমার তাড়াহুড়া না থাকলে আমি আরো কয়েকটি মুদ্রা দেখাতে চাই।' আমি কোন জবাব দেই না। সে বাঁকা হয়ে ব্যাকপ্যাক থেকে বের করে আনে ঝিপ-লক করা একটি কয়েন ফোল্ডার। তা মেলে ধরে, বিকিনির আর্দ্র স্ট্র্যাপ এডজাস্ট করতে করতে আমার দিকে নীরবে একটু তাকায়। শূণ্যতায় স্থির হয়ে ভেসে থাকা ফড়িঙের মতো আমি এখানে স্টাক্ হয়ে পড়ি। লোপ পায় উঠে যাওয়ার ইচ্ছা। ঝিপ-লক খুলে সে কিছু জাপানি মুদ্রা দেখাতে দেখাতে বলে,'তোমার জন্য একটি মুদ্রা সিলেক্ট করতে আমি হেল্প করবো। আর এটা হবে তোমার ভ্রমণের তালিসমান। যাত্রাপথে এ কয়েন বয়ে সৌভাগ্যের সুবাতাস।'
পঞ্চাশ দশকে এ মুদ্রাটি কাস্ট করা হয় জাপানে। বছরটি আমার জন্ম সাল, তাই আমি এ কয়েন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠি। গেল সতেরো বছর ধরে জাপ সরকার এ মুদ্রা আর বাজারে ছাড়ছেন না। আমি শনির জাতক তাই ১৭ সংখ্যাটিও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কয়েনটি খুব একটা বিরল নয়। একটু খোঁজখবর করলে তা যোগাড় করা যায়। পাঁচ ইয়েনের এ মুদ্রাটিতে আছে সারে-জলে বাড়া ধানের গুচ্ছের চিত্র। তাতে প্রিন্ট করা দুটি জাপানি হরফ-- যা উচ্চারিত হয় 'গো-য়েন' বলে; তার অনুবাদ করা যেতে পারে 'ক্যাজুয়েল কানেকশন' বা 'সম্পর্ক স্থাপন' হিসাবে। মুদ্রাটির নিচে নিট ভাবে টাইপ করা তথ্য পড়ে আমি তাকে প্রশ্ন করি,'ইয়োশিকো, এখানে ঠিক কার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে?' জবাব তার ঠোঁটে তৈরীই ছিলো এমন ভঙ্গিতে সে জানায়,'সচরাচর পাঁচ ইয়েনের গো-য়েন মুদ্রা উৎসর্গ করা হয় সিন্টো মন্দিরের উপাসনার বেদিতে। জাপদের আদি বিশ্বাস হচ্ছে এতে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় দেবতার সাথে।' তা না হয় হলো, কিন্তু আফ্রিকায় ভ্রমণের পথঘাট বালা মুসিবত তো সিন্টো দেবতার এখতিয়াভুক্ত না, ঠিক বুঝতে পারি না, এতে আমার মতো পর্যটক কিভাবে উপকৃত হবে? আমার বিবৃতিতে বিরক্ত হয়ে ইয়োসিকো একটি নতুন ওয়ালেট বের করে তাতে মুদ্রাটি রেখে বলে,'এখন থেকে তুমি টাকা পয়সা এ ওয়ালেটে রাখবে..আমি তোমাকে এর বিনিময়ে মাত্র একশ ডলার চার্জ করছি। জাস্ট ট্রাস্ট ইন ইট এন্ড সি হোয়াট হেপেনস্?'
ইয়োসিকো সুইচ টিপে মানেকি-নিকোকে সচল করে। বিলাইটি বা'হাতে ওয়ালেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে আমি তা গ্রহণ করে মার্জারটির হাতে তুলে দেই একশ ডলারের একটি কড়কড়ে নোট।
টেকোমাথা এক জাপানি পর্যটক মিনিট কয়েক হলো এদিকে ঘুরপাক খেয়ে পামকুঞ্জের ছায়ার ছবি তুলছেন। এ ভদ্রলোককে আমি একটু আগে সুইমিংপুলে প্রতিফলিত আলোর ছবি তুলতে দেখেছি। তিনি ইয়োসিকোর দিকে তাকিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বাও করেন। সে ফিক করে হেসে বলে,' মনে হয় লেনদেন বিকিবাট্টার একটা প্রসপেক্ট তৈরী হচ্ছে।' তার মুদ্রা বিক্রয়ের স্বাক্ষী হওয়ার আমার কোন আগ্রহ নেই। তো আমি উঠে পড়ি। পামকুঞ্জের আবডালে যেতে যেতে দেখি, টেকো জাপানি এসে দাঁড়িয়েছেন ইয়োসিকোর টেবিলের সামনে। সেও কাঁধে স্কার্ফ ফেলে উঠে পড়ে। তারা পরষ্পরকে বাও করছেন। দাঁড়িয়ে তাদের তাওবাও দেখার আমি কোন প্রয়োজন বোধ করি না।
নীরবে এসে দাঁড়াই তামবতি গাছের ছায়ায়। ডালের গোড়া থেকে বেরিয়ে এসেছে শুভ্র এক গুচ্ছ অর্কিড। সুঁচালো ঠোঁটের একটি পাখি এসে তাতে খোঁচাখুঁচি করলে তা থেকে বেরিয়ে আসে তাজা মধুর সৌরভ। আমি সুরভিত হতে হতে নতুন ওয়ালেট বের করে পাঁচ ইয়েনের জাপানি মুদ্রাটি দেখি। এটি ক্রয় করাতে সিন্টো দেবতার সাথে না হলেও স্পষ্টত ইয়োসিকোর সাথে আমার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। এর কোন প্রয়োজন ছিলো কি? আমি নিশ্চিত যে, গো-য়েন মুদ্রাটি ধারনের ফলে আমার ভাগ্যে কোন হেরফের হবে না। মড়ি দেখতে পাওয়া শকুনের মতো উড়ে আসবে দুর্ভাগ্য। আমার চরিত্রের একটি দুর্বলতা হচ্ছে যা আমি বিশ্বাস করি তা সততার সাথে বলতে পারি না।
নিজের উপর বিরক্ত হয়ে আমি সরে আসি অর্কিডের ছায়াময় পরিসর থেকে। আশ্চর্য হই মেবেবেনে শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরের সিবেবে রককে এখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে দেখে। গ্রানাইট পাথরের এ সুদর্শন পাহাড়কে বাল্ড রকও বলা হয়ে থাকে। পৃথিবী দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মনোলিথ এর উপর উড়ে আসে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। মনের ভেতর সম্ভবত অতুল প্রাসাদের একটি গানের কলি গুন গুন করে ওঠে, 'মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন দেশে?' কেন জানি মনে হয় এ মনোলিথ পাহাড়েরও প্রাণ আছে। দূরের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থেকে সিবেবে রকটি দেখছে তার উপরে উড্ডীন সোনালি ডানার কয়েকটি চিল। তখনই মেঘভাসা আকাশের মতো ঝেপে আসে নিঃসঙ্গতা। মনে হয়, আশ্চর্য একটি পাহাড়--যা ছুঁয়ে ওড়ছে মেঘ, আর চিলের বর্ণালী ডানা, এ সমান্য বিষয়টি বলার মতো কেউ কোথাও থাকলে কী যে ভালো হতো।