লেখকের জন্য নসিহতনামা
এই নসিহতনামার একটিও আমার নসিহত নয়। বিখ্যাত সব লেখকের। বিখ্যাত লেখকরা নবীন লেখকদের ভয় পান। নবীন লেখকরা এবং এমনকি সমকালীন লেখকরাও কখনও তদের থান ইটের সমান এক একটি গ্রন্থ সাজিয়ে দিয়ে পড়তে বাধ্য করেন, মন্তব্য আশা করেন, কী করলে আরো ভালো লেখা যাবে তাও বলতে বাধ্য করেন। বিখ্যাত ও জ্যেষ্ঠ লেখকরা সাধারণত বলে থাকেন, পড় আরো বেশি করে পড়।
তখন মনে এ প্রশ্ন জাগতেই পারে: এতই যদি পড়ব তো লিখব কখন?
লেখক হওয়া নিয়ে রুশ গল্পটা আবার শোনা যাক।
ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্সে ভর্তির ইন্টারভিউ চলছে। লেখক যশপ্রার্থী কয়েকজন ইন্টারভিউতে এসেছেন এবং এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতিশীল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন এমন প্রার্থীও এসেছেন।
একজন লেখক যশপ্রার্থীকে বোর্ডের একজন সদস্য জিজ্ঞেস করলেন, তলন্তয় পড়েছেন?
না পড়িনি।
দস্তয়েভস্কি?
না।
পুশকিন?
না।
তারপর একটার পর একটা নাম বলে গেলেন একই জবাব এলো, না এবং না।
ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান রেগেমেগে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আপনি কোন দুঃখে এখানে এসেছেন?
তার জবাব, আমি লেখক হতে এসেছি, পাঠক হতে নয়।
মারিও বার্গাস ইয়োসাকে জিজ্ঞেস করা হলো, সমকালীন কার লেখা পড়েছিল?
তিনি বললেন, উনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ লেখকদের লেখাগুলোই এখনো পড়ে শেষ করতে পারিনি।
প্রচার বিমুখ লেখকের কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায়। প্রচার বিমুখ মানুষেরা আবার লেখক হন নাকি? প্রচার বিমুখ হলে তো লেখা ছাপতেই দিতেন না। লিখে বালিশের কভারের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতেন।
প্রচার বিমুখ লেখক শুনলে আমি লাজুক যৌনকর্মীর একটি উপমা কল্পনা করতে থাকি। ব্যাপারটা আসলে কৌশল। প্রচার কৌশলে যারা পিছিয়ে আছেন তারা চান তাদের প্রচার বিমুখ বলা হোক।
কৌশল জানা দুই কুশলী লেখকের গল্প
কৃষন চন্দরের দুই চোর
সিঁধ কেটে (কিংবা দরজা কেটে, আমার ঠিক মনে নেই) মধ্য রাতে ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক দেখেই চোর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ঘরে একজন মাত্র মানুষ, মাঝবয়সী, মনের সুখে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। চারদিক খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে যখন চোর নিশ্চিত হলো এই একজনকে সামাল দিতে পারলে আর কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই দ্রুত তার ঝোলা থেকে দড়ি বের করে ঘুমন্ত মানুষটির হাত ও পা বেধে ফেলল। বিড়বিড় করে বলল, শালা যাবে কোথায়?
তাকে চকি থেকে নামিয়ে ঘরের খুঁটির সাথে বেধে বসিয়ে রাখল। সন্ত্রস্ত গৃহকর্তা কাচুমাচু হয়ে বলল, যা নেবার নিয়ে যাও। মারধোর করো না।
চোর ধমকে উঠল, একদম চুপ।
তারপর চোর একা একা মুচকি হেসে, আলো জেলে দড়িবাধা গৃহকর্তার পাশে বসে পড়ল। তারপর তার ঝোলা থেকে বড় একটা বাধাই করা খাতা বের করে বলল, চুপচাপ শুনে যাও, কোনো কথা বললে খবর হয়ে যাবে।
চোর দীর্ঘদিন আগে সমাপ্ত তার নিজের লেখা মহাকাব্যের শুরু থেকে পড়ে শোনাতে লাগল। এর আগে অনেককেই পড়ে শোনাতে চেষ্টা করেছে, রাজি করাতে পারেনি। তার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বাধ্য না হলে কেউ শুনবে না। এই গৃহস্থই তার কাব্যের প্রথম শ্রোতা।
যখন ভোর হয় হয় গৃহস্থ বলল, ভাই আমি তো মনোযোগ দিয়েই শুনছি, কিন্তু যদি দড়ির বাধনগুলো খুলে দিতে একটু আরাম করে শুনতে পারতাম, তোমার কাব্যের রসটা বেশ উপভোগ করতে পারতাম।
কোনো লেখকই তার পাঠকের প্রতি নির্দয় হতে পারেন না, সুতরাং চোর গৃহস্থের বাধন খুলে দিয়ে আবার পড়তে শুরু করল।
শ্রোতা কাম গৃহস্থ ওৎ পেতেই ছিলেন। মহাকাব্যের একটি আবেগময় স্থানে পৌঁছতেই গৃহস্থ একই দড়ি দিয়ে চোরকে বেধে খুঁটির সাথে আটকালো। একইভাবে বসালো এবং বিড় বিড় করে বলল, শালা যাবে কোথায়?
চোর ভুলটা বুঝতে পারল। পাঠক/শ্রোতার মিষ্টি কথায় ভিজতে নাই। এখন বাকী জীবনটা কাটবে জেলে!
গৃহস্থ এবার বালিশের নিচ থেকে বাধাই করা বড় খাতা বের করে তার সামনে বসে পড়ে বলল, আমিও একটা উপন্যাস লিখেছি।
বহু বছর আগে সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে পড়া গল্পটির ভেতরের কাহিনীর সারাংশটুকু ঠিকই সততার সাথে লিখেছি, বাকীটাতে যোগবিয়োগ হবারই কথা।
কলিকাতা থেকে মফস্বল শহরের লেখক সম্মেলনে আসা কথা সাহিত্যিককে (সম্ভবত বনফুল) নিজের পাণ্ডুলিপি দেখাতে উসখুস করছিলেন একজন স্থানীয় ঔপন্যাসিক। কিন্তু লেখককে ঘিরে তার ভক্তদের ভিড় এবং রাতের গাড়িতে তাকে ফিরতে হবে সেই তাড়ার কারণে স্থানীয় ঔপন্যাসিক সুবিধে করতে পারছিলেন না। কথাসাহিত্যিকের কিছু কাজ অসমাপ্তই রয়ে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়। লেখক যখন ঘুমের আয়োজন করছেন তখনই ট্রেনের লম্বা সিটের তলা থেকে মাথা বের করলেন একজন।
হতচকিত লেখক চেঁচিয়ে উঠলেন, কে, কে তুমি কে?
জবাব দিল, স্যার আমি স্থানীয় ঔপন্যাসিক, পান্ডুলিপিটা নিয়ে এসেছি।
এই গল্পটিও পড়েছি, ঘটনাটি ভালোই মনে আছে। তারপরই, আসলে তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত বড় লেখকই সামনে পড়ুন না কেনো পারতপক্ষে নিজের লেখা নিয়ে তার কাছে মুখ খুলব না।
একজন লেখক মৃত্যুর পর ওপারে যাবার সিংহ দরজায় সামনে হাজির হলেন। লেখক বলেই হয়ত দ্বাররক্ষক তাকে দুটো সুযোগই দিল--চাইলে দোযখেও যেতে পারে কিংবা বেহেশতে।
লেখক বললেন, আগে তাহলে দুটো দেখে নিই। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবো। তিনি প্রথমে স্বর্গের লেখক কর্নারের দিকে গেলেন, দূর থেকে দেখলেন জায়গাটা ভয়ঙ্কর, চারদিকে গণগণে আগুন। লেখকরা যার যার ডেস্কে লিখে চলেছে। কিছুক্ষণ পরপর কাটাযুক্ত চাবুক দিয়ে তাদের পিঠে ভয়ঙ্কর আঘাত করা হচ্ছে। তিনি আঁতকে উঠলেন। স্বর্গে তো এমন হবার কথা নয়। তা ছাড়া এখানে লেখকের সংখ্যাও কম, তার পরিচিত কোনো লেখককেও দেখছেন না।
তিনি এবার নরকের লেখক কর্নারের দিকে এগোতেই তার পরিচিত সব লেখকদের দেখতে শুরু করলেন। এটি স্বর্গের লেখক কর্নারের চেয়ে হাজার গুণ বড়। কিন্তু একই রকম গণগণে আগুন চারদিকে এবং কিছুক্ষণ পরপর তাদেরও কাটাযুক্ত চাবুক দিয়ে পিঠে আঘাত করা হচ্ছে।
তিনি হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলেন এবং দ্বাররক্ষীকে বললেন, দুটোর তো একই অবস্থা।
দ্বাররক্ষী বললেন, তা হতে পারে না। আপনার পরিচিত লেখকরা কোথায়? কোন রাইটার্স কর্নারে?
লেখক বললেন, নরকের।
দ্বাররক্ষী বললেন, ঠিক বলেছেন, একমাত্র নরকেই ছাপাখানা আছে।
লেখক বুঝে গেলেন, ১৪৫৫ সালের আগে যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা আছেন স্বর্গের রাইটার্স কর্নারে আর গুটেনবার্গের ছাপাযন্ত্র চালু হবার সফল ও ব্যর্থ নির্বিশেষে সকলেই নরক বেছে নিয়েছেন, একদিন বই ছাপা হবে এই প্রত্যাশায়।
এই গল্পটির নীতিশিক্ষা হচ্ছে: যেখানে ছাপাখানা আছে সেখানেই লেখকের স্বর্গ।
ছাপা বইয়ের জায়গাটা ই-বইয়ের দখলে চলে যাচ্ছে, ফলে লেখকের স্বর্গ ও নরকের গল্পটির কোনো নতুন সংস্করণ নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে।
লেটস টক বিজনেস।
স্টিফেন কিং
স্টিফেন কিং-এর বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি। সুতরাং তিনি লেখকদের নসিহত করার অধিকার রাখেন। হেনরি মিলারের যেখানে ১১ কমান্ডমেন্টস, স্টিফেন কিং দিচ্ছেন ২২ কমান্ডমেন্টস। তার নসিহত আমি মান্য করি বা নাই করি এটা যে উত্তম নসিহত সে সুপারিশ তো করতেই পারি।
১. টেলিভিশন দেখা বন্ধ করুন।
তার বদলে যতটা সম্ভব পড়ুন। টেলিভিশন সৃষ্টিশীলতার জন্য বিষবৎ পরিত্যাজ্য স্টিফেন কিং এমনকি খাওয়ার সময়ও বই পড়েন। বেশি পড়তে হবে বেশি লিখতে হবে, দুটোই বেশি বেশি।
২. অনেক বেশি ব্যর্থতা ও সমালোচনার প্রস্তুতি নিন।
স্টিফেন কিং-এর কাছে ফিকশন লেখা বাথটাবে বসে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেবার মতো একটি ব্যাপার। কেউ বা যে কেউ এসে আপনার লেখাটির ভয়ঙ্কর তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারে। করুক না সমস্যা নেই। এমনকি সত্যিই ব্যর্থ হলেও কিছু এসে যায়। ব্যর্থতার বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠতম সাড়া হচ্ছে আশাবাদ।
৩. অন্যকে সন্তুষ্ট করতে সময় নষ্ট করবেন না।
যে কোনো মানুষ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অপচিত সময় নিয়ে আফসোস করে, সময়টা কতো ভালেভাবে ব্যবহার করা উচিত ছিল সে কথা বলে। অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করতে সময়টা বেশি নষ্ট হয়। এমনকি সফল লেখকও সকল পাঠককে সন্তুষ্ট করতে পারেন না। কাজেই এটা ভেবে সময় নষ্ট করার দরকার নেই।
৪. প্রথমত নিজের জন্য লিখতে থাকুন।
এতে আপনার নিজস্ব আনন্দ ও সুখ। যদি কাজটা আনন্দের সাথে করতে পারেন এ কাজে সারাজীবনই আনন্দ পাবেন। ব্যাপারটা ভাষা নিয়ে নয় বিষয় নিয়ে, আপনার প্রিয় ও স্বাচ্ছন্দের বিষয়টি বেছে নিন।
৫. লিখতে যা সবচেয়ে কঠিন সেটা বাগে আনুন।
স্টিফেন কিং মনে করেন, গল্পটা পাওয়ার মতো একটা ব্যাপার--মাটির তলায় ফসিল পাওয়ার মতো। গল্প হচ্ছে মূল্যবান প্রত্নসম্পদ। খনন করে যত গভীরে যাবেন পাবার সম্ভাবনা তত বেশি হবে। গল্প এমনই অনাবিষ্কৃত বিষয়। লেখক হবেন প্রত্নতত্ত্ত্ববিদের মতো। যতো বড় এলাকাজুড়ে যত গভীরে খনন করবেন ততো বেশি গল্প উঠে আসবে।
৬. লেখার সময় পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হোন
লেখার সময় নিজেকে পৃথিবী এবং পার্থিব বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিন। টেলিফোন অশ্যই থাকবে না। জানালা বন্ধ থাকাই উত্তম, লেখার টেবিলটা রুমের এক কোনে, দরজা অবশ্যই বন্ধ। লেখা এবং লেখকের মধ্যে গোপনীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে, খসড়াটি তো একটি নগ্ন দেহ, বড় জোর মোজা আর অন্তর্বাস পরানো।
৭. বেশি ভাল করার দরকার নেই
বড় বড় শব্দ আর সাজানো-গোছানো ভাষা ঢুকিয়ে বাহাদুরি করার দরকার নেই-- ব্যাপারটা গৃহপালিত প্রাণীকে সান্ধ্য পোশাকে সাজানোর মতো ব্যাপার--তা গৃহস্থ ও প্রাণী উভয়ের জন্যই বিব্রতকর। অকারণে প্রতীকী শব্দ ব্যবহার করার দরকার নেই। সিম্বলিজমের অপপ্রয়োগ কৃত্রিমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
৮. বিশেষণের বিশেষণ ও লম্বা প্যারাগ্রাফ এড়িয়ে চলুন।
আত্মজীবনীতে স্টিফেন কিং লিখেছেন: অ্যাডভার্ব কখনো আপনার বন্ধু নয়। নরকে যাবার রাস্তাটি অ্যাডভার্ব দিয়ে পরিপূর্ণ। প্যারাগ্রাফের আকার বেশি লম্বা হলে এমনিতে মনে হবে আপনি বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হননি বলে টেনে বড় করেছেন।
৯. অতিশুদ্ধ ব্যকরণের জালে আটকাবেন না।
শুদ্ধতা অবশ্যই কাম্য। কিন্তু অতিশুদ্ধের পেছনে ছুটলে 'ভাষাকে সর্বক্ষণ টাই আর ফিতে বাধা জুতো পরিয়ে রাখতে হবে।' আপনার গল্প লেখার উদ্দেশ্য সুন্দরভাবে গল্পটা বলা, ভাষার প্যাঁচ দেখানো নয়। পাঠক যে একটা গল্প পড়ছেন, পড়ার সময় এটাও যেন তার মনে না নয়। লেখককে সেদিকটাও দেখতে হবে।
১০. বর্ণনার নৈপুণ্য অর্জন করুন।
বর্ণনার শুরুটা লেখকের কল্পনায় কিন্তু লেখকের কল্পনায় তার সমাপ্তি ঘটতে হবে। আপনি কতটুকু লিখলেন তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কতটুকু সে লেখায় বলতে পারলেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পর্যবেক্ষণে এবং লিখনে স্বচ্ছতা জরুরি; সাধারণ শব্দ এবং তরতাজা চিত্রকল্প ব্যবহার করুন, তাতে আপনার পাঠকের ক্লান্তি আসবে না। পাঠক যাতে 'বোরিং'-একঘেয়েমিপূর্ণ মনে করে বইটা রেখে না দেয়। ভাষার শক্তি নিয়ে খেলতে গিয়ে বিষয়ের অগ্রাধিকার যাতে হারিয়ে না যায় লক্ষ রাখবেন।
১১. প্রেক্ষাপট বর্ণনায় বাড়াবাড়ি করবেন না।
আপনার পাণ্ডিত্য নিয়ে বক্তৃতা দেওয়া এবং তা দিয়ে গল্প সমৃদ্ধ করার কায়দাটা মোটেও এক নয়। আপনার পাণ্ডিত্যের সে অংশটুকুই গল্পে ঢেলে দিন যা পাঠককে সাবললিভাবে এগোতে সাহায্য করবে। কাহিনী স্পষ্ট করে তুলতে আপনাকে যদি গবেষণা করে লিখতে হয় অবশ্যই তা করবেন, কিন্তু আপনার জ্ঞানের ততটুকুই ব্যবহার করবেন যা কাহিনীর উপর আপনার জ্ঞানের ঘন ছায়া ফেলতে না পারে। মনে রাখবেন আপনার পাঠকের আগ্রহ আপনার বিদ্যার দৌড় দেখা নয়, তারা ব্যস্ত আপনার চরিত্রগুলোকে নিয়ে, আপনার গল্পটাকে নিয়ে।
১২. মানুষ সাধারণত যা করে পাঠককে তাই বলুন।
একজন সিরিয়াল কিলারও তো কখনো কখনো একজন বৃদ্ধাকে হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেন। মানুষ আসলে যা করে তা বলতে না চাওয়া-এ নিয়ে গোয়ার্তুমির মনোভাব লেখাটিকে খারাপ বানিয়ে দেয়। এটা ভুল বাক্যবিন্যাস কিংবা ভাষার অপব্যবহারের চেয়েও বেশি খারাপ। ভুল পর্যবেক্ষণ পাঠক ধরে ফেলতে ভুল করে না।
১৩. ঝুঁকি নিন, সব সময়ই নিরাপদ খেলার প্রয়োজন নেই।
স্টিফেন কিং বললেন, আমি জানি লেখা বাজে হবার পেছনে রয়েছে ভয়।' যে কথাটা বলতে চান 'অ্যাকটিভ ভয়েস' ব্যবহার করে বলুন, প্যাসিভ ভয়েস মানেই হচ্ছে-- অনিশ্চয়তার ভয়। যে বিষয় নিয়ে লিখতে যাচ্ছেন তা স্বাভাবিক হোক কি অস্বাভাবিক--সাহস নিয়ে লিখে ফেলুন।
১৪. ভালো লেখক হতে ড্রাগ সেবনের দরকার হয় না।
একালের পপ ইন্টেলেকচ্যুয়াল মিথ হচ্ছে সৃষ্টিশীল উদ্যোগ ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সাথে মাথা আওলা করে দেওয়া ড্রাগের সম্পর্ক রয়েছে। সংবেদন সূক্ষ করতে ভোতা হৃদয়ের ড্রাগ চাই--এটা অত্যন্ত বাজে কথা। যারা ড্রাগ অ্যাবিউজ করেন--সোজা কথা তারা অ্যাবিউজার।
১৫. অন্যের স্বর নকলের চেষ্টা করবেন না।
স্টিফেন কিং বলেন, আপনি আপনার বইটিকে ক্রুজ মিসাইলের মতো লক্ষ্যভেদী কিছু করতে পারবেন না। আপনি যখন অন্যকে নকল করে নিজের লেখা দাঁড় করাতে চান তা হয়ে উঠে 'ফ্যাকাশে অনুকরণ' কারণ আপনি সেই লেখকের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সত্যকে প্রতিস্থাপিত করতে পারবেন না। কাজেই উপরি উপরি তার শব্দ বাক্য শৈলীর চর্চা করে লাভ নেই।
১৬. বুঝতে চেষ্টা করুন লেখালেখি এক ধরনের টেলিপ্যাথি।
স্টিফেন কিং মনে করেন সকল শিল্প কমবেশি টেলিপ্যাথির উপর নির্ভর করে। লেখালেখিতে এই নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। লেখক হিসেবে আপনা কাজ কেবল কাগজের উপর শব্দ লেখা নয়। আপনার মাথার ধারনাকে কাগজে এমনভাবে বসিয়ে দেওয়া যা আপনার ধারণাকে পাঠকের মাথায় সম্প্রচার করতে সক্ষম হবে। সম্প্রচারের মাধ্যম হচ্ছে শব্দ। কুট ভনেগার্ট বলেছেন, একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তি যখন আপনার বইটি পড়বেন, তখন তার যেন এই অনুভূতি না হয় যে সময়টাই নষ্ট হলো।
১৭. লেখাটাকে সিরিয়াসলি নিন।
আপনি বিচলিতভাবে, উত্তেজিত হয়ে, প্রত্যাশা নিয়ে, হতাশ হয়ে গম্ভীরভাবে, হালকা চালে যে ভাবে ইচ্ছে শুরু করতে পারেন। কিন্তু লেখাটা যদি সিরিয়াসলি না নেন তা হলে বরং খাতাটা বন্ধ করুন। আপনি অন্য কিছু করুন। আরো অনেক পেশা আছে, সেখানে আপনি ভালো করতে পারবেন। সিরিয়াস না হলে লেখালেখিতে আপনার আসারই দরকার নেই। সুসান সনটাগ বলেছেন, গল্পটিকে অবশ্যই আমার স্নায়ুতে আঘাত করতে হবে--প্রথম পঙ্ক্তিটি আমার মস্তিষ্ক শোনার পরই আমার হৃৎপিন্ডের ধুকপুক শোনা যেতে হবে।
১৮. প্রতিদিন লিখুন।
স্টিফেন কিং, বলেন, আমি যখন একবার প্রকল্পটি শরু করি, আমি আর থামি না, থামাটা অত্যাবশকীয় ও বাধ্যতামূলক না হলে কখনো না--আমি যদি প্রতিদিন না লিখে চরিত্রগুলো আমার মনে মলিন হয়ে যেতে থাকে, আমি গল্পের কাহিনী ও গতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকি। আপনি যদি অবিরাম না লিখেন তা হলে আপনার কল্পনার ভেতরে যে উত্তেজনা তা মিলিয়ে যেতে থাকবে।
১৯. তিন মাসে উপন্যাসের প্রথম খসড়া শেষ করুন।
স্টিফেন কিং প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা লিখতে পছন্দ করেন তিন মাসে প্রায় ১,৮০,০০০ শব্দ। উপন্যাস যত বড়ই হোক কোনোভাবে তিন মাসের বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না। বেশি সময় নিলে কাহিনীটা অচেনা মনে হতে থাকবে।
২০. কাজটা শেষ হলে ৬ সপ্তাহের আরোগ্য সময় নিন।
এই সময়ে উপন্যাসটা ভালো করে ঝালাই করুন, ঠিক জায়গায় আনুন।
২১. নির্মমভাবে কাটাছেড়া করুন।
যদি পাতার পর পাতা বাদ দিতে হয়, তাই দিন। যদি আপনার প্রিয় চরিত্রটিকে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়, তখনই তাকে হত্যা করুন।
২২. লেখালেখির সময় বিবাহিত জীবনযাপন করুন।
স্টফেন কিং ও তাবিথা জেইন কিং, ৫০ বছরের বিবাহিত জীবন
স্টিফেন কিং স্থিতিশীল সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি ১৯৭১ সালে যাকে বিয়ে করেছেন এখনো সেই নারীই আছেন। এ বছর ২ জানুয়ারি বিয়ের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করেছেন।
হেনরি মিলারের একাদশ কমান্ডমেন্টস
অন্য সব পেশাজীবীর মতো লেখকরাও তাদের লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন। আপনার হাতে সৃষ্টিশীল কাজ উঠে আসছে না এ অবস্থায় কি করবেন? ট্রপিক অব ক্যান্সার ও ট্রপিক অব ক্যাপ্রিকর্ন খ্যাত ঔপন্যাসিক হেনরি মিলার ১৯৩২ সালে নিজের দৈনন্দিন কাজের জন্য একটি ব্যবস্থাপত্র প্রণয়ন করলেন। এতেই সংযোজন করেছেন নিজের জন্য এগারটি সহি ফরমান, হেনরি মিলারের এগার কমান্ডমেন্টস:
১. শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই বিষয়ে কাজ করতে থাকো।
২. নতুন কোনো বই শুরু করো না।
৩. বিচলিত হবে না। শান্তভাবে আনন্দের সাথে, হাতে যা আছে তাই পরোয়া না করে লিখে যাবে।
৪. 'মুড' অনুযায়ী নয় কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করবে। যখন রুটিনে থামার কথা তখনই থামবে।
৫. যখন সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারবে না, অন্য কাজ করবে।
৬. নতুন সার না দিয়ে প্রতিদিন একটু একটু সিমেন্ট লাগাবে।
৭. মানুষের সান্নিধ্যে থেকো, মানুষের সাথে দেখা করো, বাইরে ঘুরতে যেয়ো, পান করতে ইচ্ছে করলে তাও করো।
৮. বাড়তি বোঝা টানার ঘোড়া হয়ো না, আনন্দের সাথে কাজ করো।
৯. যদি মনে করো বাতিল করে দেওয়া দরকার কাজটা বাতিল করে দিয়ো। পরদিন আবার এটা দিয়েই শুরু করো না।
১০. কোন বইগুলো লিখবে ভুলে যাও। যেটা এখন লিখছ এটা নিয়েই ভাবো।
১১. সবসময় লেখাটাই সবার আগের কাজ। পেইন্টিং, গান, বন্ধু সিনেমা সব তার পরে।
দ্রষ্টব্য: হেনরি মিলারের (১৮৯১-১৯৮০) দ্বিতীয় উপন্যাস ব্ল্যাক স্প্রিং। প্রথমটি ট্রপিক অব ক্যাপ্রিকর্ন।
ওরহান পামুক
তিন বছর স্থাপত্যবিদ্যা পড়াশোনা করে ওরহান পামুক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি স্থপতি হবেন না এমনকি শৈশবের পরিকল্পনা অনুযায়ী চিত্রশিল্পীও নয়। তিনি লেখক হবেন।
সুতরাং তিনি পড়তে শুরু করলেন।
ততদিনে তার লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ১৬০০০। যেসব লেখক তার ভাষায় 'আসল লোক', যারা তার মানসগঠনে দিকদর্শন দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, টমাস মান, উইলিয়াম ফকনার, ভার্জিনিয়া উলফ এবং তিনি যোগ করছেন 'সম্ভবত' হেমিংওয়ে।
তারপর তার জীবনে এসেছেন হোর্হে লুইস বোর্হেস, ইতালো ক্যালভিনো, ভ্লাদিমির নবোকভ, মার্শেল প্রুস্ত। তার সমকালীন লেখকদের মধ্যে রয়েছেন তার বন্ধু পল অস্টার, ডন ডেলিল্লো, নিকলসন বেকার, ফিলিপ রথ, জন আপডাইক এবং ভি এস নাইপল।
'মাই নেম ইজ রেড' প্রকাশের পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন কোন লেখক ও শিল্পী আপনাকে প্রভাবিত করেছে?
তার জবাব: আমার বয়স এখন (সাক্ষাৎকার দেবার সময়) ৪৮ বছর। এই বয়সে প্রভাব কথাটা আমাকে নার্ভাস করে দেয়। আমি বরং বলব আমি লেখকদের কাছে শিখেছি, তাদের কাছ থেকে আহরণ করেছি। আমি টমাস মানের কাছ থেকে শিখেছি ঐতিহাসিক উপন্যাস ভালোলাগার গোপন সূত্রটি হচ্ছে কাহিনির সঙ্গে ইতিহাসের দক্ষ ও অনুপুঙ্খ বিবরণের মিশেল।
ইতালো ক্যালভিনো আমাকে শিখিয়েছেন উদ্ভাবনও ইতিহাসের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ওমবার্তো একোর কাছ থেকে আমি শিখেছি হত্যা রহস্যও মর্যাদার সঙ্গে ব্যবহার করা যায়। আমি সবচেয়ে বেশি শিখেছি মার্গারিট ইয়োর্সেনারের কাছ থেকে। ঐতিহাসিক উপন্যাসের স্বর ও ভাষা নিয়ে তিনি মেধাদীপ্ত একটি প্রবন্ধ লিখেছেন।
মাই নেম ইজ রেড লিখতে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে ইসলামিক মিনিয়েচার--ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেই সব শিল্প। আমি সেই অসংখ্য মিনিয়েচার দেখে হাজার হাজার বর্ণনা খুঁজে নিয়েছি আর সেগুলো ঠাঁই পেয়েছে আমার উপন্যাসে। ভালোবাসা ও যুদ্ধের এসব ছবির কাহিনিগুলো রয়েছে ইসলামিক সাহিত্যে--এক সময় মানুষের অন্তরে যে কাহিনি গেঁথে থাকত তারই শ্রেষ্ঠ দৃশ্যগুলোর বর্ণনা আঁকা হয়েছে এই মিনিয়েচার ছবিতে।
পাশ্চাত্যকরণের কারণে এর খুব কমই আমরা মনে রেখেছি। এই পাশ্চাত্যকরণ ছিল অনেকটা অন্ধ অনুগমন। মাই নেম ইজ রেড-এ সেসব বিস্মৃত গল্প এবং বইপ্রেমীদের জন্য আঁকা বিস্ময়কর ছবির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
ওরহান পামুককে আরেক জগতের পথ দেখান দস্তয়েভস্কি। 'আমি অনুভব করতাম যেন দস্তয়েভস্কি আমার কানে কানে জীবন ও মানবতার রহস্যময় বিষয়ে কথা বলছেন; যে কথা অন্য কেউ জানে না, কেবল আমাকেই বলছেন।'
জীবন কেমন সে ধারণা ওরহান পামুক পেয়েছেন তলস্তয়ের কাছে। ইলিয়া রেপিনের আঁকা তলস্তয়ের একটি ছবি কেটে বাঁধিয়ে তিনি দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলেন। তিনি যখন লিখতেন ওপর থেকে তলস্তয় তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
আমি একজন সুশৃঙ্খল লেখক
আমি মনে করি ঔপন্যাসিকদের সুসৃঙ্খল হতে হবে এবং কত ঘণ্টা কাজ করবেন তা তিনি নিজের ওপর নিজেই চাপাবেন। আমি প্রচুর কাজ করি কিন্তু এটা কখনো অনুভব করি না যে আমি কাজ করছি। আমি সব সময়ই অনুভব করি আমার ভেতরে একটি শিশু আছে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। শিশুর মতো খেলতে থাকি।
আমি যখন বলি অনেক কাজ করি, এর কোনো ঋণাত্মক দিক নেই। আমি বরং জোর দিয়ে বলি যখন আমি লিখি আমি উপভোগ করি। আমার বয়স যখন তিরিশের শেষভাগে, আমার মেয়ের জন্মের আগে পর্যন্ত আমি ভোর চারটা পর্যন্ত কাজ করতাম। অনেকটা ফিওদর দস্তয়েভস্কির মতো দুপুরে ঘুম থেকে উঠতাম।
আমার মেয়ের বয়স যখন পাঁচ বছর আমি তাকে খুব সকালে স্কুলে নিয়ে যেতাম। আমার ঘড়ির কাঁটা বদলে গেল। আমি পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে দুঘণ্টা কাজ করে মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে স্কুলে নিয়ে যেতাম। তারপর কাজ আর কাজ--আমার একটি অফিস আছে, সেখানে যাই। পরিবার ও জনতার মাঝখানে আমি একটি পৃথক জায়গা চাই। তারপর লিখতে লিখতে সময় পেরিয়ে যায়, আমি খুবই সুশৃঙ্খল।
তা ছাড়া তিনি সাদা কাগজ--ব্ল্যাঙ্ক পেজ দেখে কখনো আতঙ্কিত নন। আমেরিকানরা যাকে বলেন রাইটার্স ব্লক সে রকম কিছু তার কখনো হয় না। 'সম্ভবত আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখি বলে কখনো একটাতে বাধাপ্রাপ্ত মনে হলে অন্য অধ্যায়ে চলে যাই। কারণ আমি আশাবাদী। আজ কী লিখব তা তো গতরাতেই ঠিক করা, তখন সাদা কাগজ আমাকে কোনো উদ্বেগে না ফেলে বরং স্বাধীনতা দেয়--সৃষ্টিশীলতার স্বাধীনতা এবং বেঁচে থাকার স্বাধীনতা।
তলস্তয়
সময় ও জীবনের অপচয় করবেন না
তলস্তয় জুয়া ছেড়ে দিয়েছেন, বদলে গেছেন অনেকখানি, তাঁকে বড় কিছু অর্জন করতেই হবে। বদলে না গেলে বড় হওয়া যায় না, তলস্তয় সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়েছেন। সেনাজীবন সম্পর্কে তার ধারণা বড্ড খারাপ। ৬ জানুয়ারি ১৮৫৩ তিনি লিখছেন।
আহম্মক সব লোকজন। সবাই--বিশেষ করে আমার ভাই কেবল মদে চুর হয়ে আছে, এটা আমার জন্য সুখবর নয়। যুদ্ধ বড় অন্যায় এবং অমঙ্গলজনক--যারা যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা বিবেককে রুদ্ধ করে। আমি কি ঠিকপথে আছি? ঈশ্বর আমাকে জ্ঞান দিন, আমি ভ্রান্ত হলে ক্ষমা করুন।
ডায়েরিতে লিখলেন :
১৮-২০ জানুয়ারি (১৮৫৩): আমার জীবন এতোটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছে যে আমি নিজেকে চিনতে পারছি না। এভাবে বেঁচে থাকতে আমি বড্ড লজ্জা বোধ করছি।
২৪ জানুয়ারি-১০ ফেব্রুয়ারি: আমার অনেক ঋণ। আমার হাতে যা আছে তার চেয়ে বেশি হেরেছি। বাল্টা-তে আমার বন্দুক হারিয়েছি। আগামীকালের পর থেকে আমি খেলা ছেড়ে দেব, আর অভিযান শেষ হওয়া মাত্রই ছেড়ে দেব (সেনাবাহিনীর) চাকরি।
১৬ এপ্রিল: ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুন। এই প্রথমবারের মতো ভয়াবহ বেদনা ও বিষণ্নতার অনুভূতি আমাকে পেয়ে বসেছে। আমার অনুতাপ হচ্ছে কোনো আনন্দ ও সুবিধা আদায় না করেই আমার যৌবন অপচয় করে ফেলেছি।
তলস্তয়ের বয়স তখন ২৫ হয়নি; তিনি সরে আসতে চাইছেন তার অপচিত যৌবন থেকে।
তলস্তয়ের মতো লিখতে চাইলে তাই-ই করুন।