রোদের ঘ্রাণ আর বাতাসের রঙ
শবে বরাতের পর দিন থেকে আমরা প্রতিদিন আঙুলে গুনতাম আর কত দিন পরে রমজান মাস শুরু হবে। আমাদের ভাষায় রোজা শুরু হবে। তখনলোকে নামাজ, রোজা, রমজান, সেহেরী, তারাবী, জিলিপী এসব বলত, এখনকার মতো সালাহ্, সাওম, রামাদ্বান, সুহুর, তারাওইহ্, জিলেবি বলত না। বস্তুত এই শব্দগুলোর কিছু কিছু আমরা তখন শুনতেও পাইনি। আমাদের ছোটবেলায় রোজা হতো গ্রীষ্মকালে। দিন বড়, গরম, বৃষ্টি হয় কি হয় না, রাতের আগে বাতাস নেই এমন। এজন্য কোন কোন পরিবারে ছোটদেরকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হত না। কিন্তু ছোটরা রোজা রাখার জন্য জেদ করত, কারণ রোজা রাখে বড়রা, আর রোজা না রাখলে নিজে যে বড় হয়েছি সেটা দাবি করা যাবে না।
রোজার প্রথম দিন থেকে ঈদের প্রায় দেড়-দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকত। স্কুল থেকে ত্রিশ পৃষ্ঠা করে বাংলা আর ইংলিশ হাতের লেখা, অংক বই থেকে পাঁচটা অনুশীলনী করতে দেয়া থাকতো। আমরা প্রথম দিন সাতেকের মধ্যে সেসব সেরে বাকি পুরো সময়টা লেখাপড়া থেকে যত দূর সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করতাম। এই সময়ে অবশ্য কোরআন শরীফ পড়তে শেখার বা খতম করার একটা ব্যাপার চলত। শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে ক্বায়দা বাগদাদী, আমপারা (কোরআন শরীফের ত্রিশতম অধ্যায়), আলিফ-লাম (কোরআন শরীফের প্রথম অধ্যায়) অধ্যয়নের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরীফ পড়তে নেবার যোগ্যতা অর্জন করত। ক্বায়দা, আমপারা বা আলিফ-লাম হতো চকবাজারের মোহাম্মদী লাইব্রেরী বা হামিদিয়া লাইব্রেরীর লাল প্রচ্ছদে নিউজপ্রিন্টে ছাপা। কেউ কেউ সবুজ প্রচ্ছদের, হাফ সাইজের লক্ষ্মৌ ছাপা কায়দাও পড়ত। সেটা আবার অন্য রকমের ফন্টের, হরক্বত মানে যের-যবর-পেশ ছাড়া তাই পড়া কঠিন। কেউ কেউ নামাজ পড়তে শিখত, দৈনন্দিন নানা দোয়া-দরূদ শিখত, ছোট ছোট সুরা যথা, সুরা ফ্বীল থেকে সুরা নাস্ পর্যন্ত মুখস্থ করত। সকাল নয়টা-দশটার দিকে মসজিদের বারান্দাতে সারি ধরে বসা তালিবে-ইলমদের গলায় উচ্চকণ্ঠে শোনা যেত –
আলিফ যবর আ, নু' যবর না আনা, ক্বাফ-মিম পেশ কুম, আনাক্বুম
আলিফ-ইয়া যের ই, নু' যবর না ইনা, ক্বাফ-মিম পেশ কুম, ইনাক্বুম
আলিফ-ওয়া পেশ উ, নু' যবর না উনা, ক্বাফ-মিম পেশ কুম, উনাক্বুম
ক্বায়দা-আমপারা-আলিফ লামের এক একটা ধাপ পেরোনো মানে এক একটা গ্রাজুয়েশন করার মতো। নতুন গ্রাজুয়েটরা এই উপলক্ষে সহপাঠীদের খই-মুড়কি-বাতাসা বা হলুদরঙা জিলিপী খেতে দিত। রোজার দিন বলে সবাই সেসব খবরের কাগজে মুড়ে নিয়ে যেত। একদম ছোট, যারা রোজা রাখতো না, তারা অবশ্য অত কিছু বিবেচনা না করে দেয়া মাত্র খাওয়া শুরু করত। সেটা দেখে একটু বড়রা "অ্যাই, রাখ্, রাখ্, এখন খাবি না" বলে চেঁচিয়ে উঠত। যারা সাতাশ রমজানের মধ্যে পুরো কোরআন শরীফ পড়ে শেষ করা বা খতম করতে পারত তারা বাসায় বা মসজিদে মিলাদ দিত।
যেহেতু পড়াশোনার চাপ কম ছিল তাই খেলাধুলার চাপ বেশি ছিল। আবার রোজা রেখে বেশি ছোটাছুটি করা যাবে না – তাতে পিপাসা পেতে পারে বা খিদে লাগতে পারে। সুতরাং লুডু, সাপ-মই, মানচিত্রে ভ্রমণ, মনোপলি (আমরা বলতাম 'কোটিপতি'), নাম-দেশ-ফল-ফুল, চোর-ডাকাত, টিলো-এসপ্রেস, ষোলগুটি, দাবা, কাটাগোল্লা এই জাতীয় ঘরেবসা খেলা হতো। কয়েকটা বিপদজনক খেলাও ছিল তার একটা ছিল ইনডোর গেম – রস-কষ-সিঙ্গারা-বুলবুলি-মস্তক। রস-কষ খেলায় আর দশটা খেলার মতো 'সাক্ষী সাক্ষী ভাই হাত মিলান্তি চাই' বলে হাত টস্ করে করে একজন 'চোর' বানানো হতো। চোর বেচারার হাতের পাতায় বাকিরা পালাক্রমে নির্মমভাবে চড় কষাতো। আবার হাত তুলে নিলে শাস্তি হিসাবে হাতে দুই আঙুল দিয়ে জোরে আঘাত করা হতো। আমাদের শৈশব কৈশোরের সবকিছু ফুলের মতো নয়। সেখানে অনেক কাঁটা, অনেক নির্মমতা, অনেক জঘন্য ব্যাপারস্যাপারও ছিল। গ্রীষ্মকাল বলে পাড়ায় যেসব পুকুর ছিল, যেগুলোর দুয়েকটা ছাড়া বাকিগুলো আসলে ডোবা, সেগুলোতে বহুক্ষণ ধরে দাপাদাপি চলত। রোজা রেখে কেউ ডুব দিয়ে পানি খেয়ে নিল কিনা সে ব্যাপারে জোর ঝগড়াও চলত।
রোজার দিনে একটা বড় সময় যেত ইফতারের প্রস্তুতিতে। সেটা মূলত বড়দের কাজ হলেও ছোটদের সেখানে অংশগ্রহণ ছিল। আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা ছোলাবুট বাছা, পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানো এমনসব কাজ। বড়দের কাজগুলো খুব সহজ ছিল না। শিলপাটায় ডাল, মশলা, মাংস এগুলো বাটতে অনেক সময় লাগত। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, আদা, আলু, বেগুন, শাক, সালাদ কাটা বা কুঁচি করতেও সময় লাগত। সবচে' কষ্টকর ছিল রোজা রেখে গরমের দিনে গনগনে আগুনের চুলার পাশে দাঁড়িয়ে গরম তেলে ভেজে ইফতার বানানো। খুব যৌক্তিক কারণে এই সময়ে মায়েদের মেজাজ গরম থাকত, তাই ছোটরা নিরাপদ দূরত্বে থাকত। দূরে থাকলেও রান্নার যে সুবাস পাওয়া যেতো সেটা রোজার নিজস্ব ঘ্রাণ। তবে সেটা আরও তীব্র হতো যখন টেবিলে ইফতার সাজানো হতো। শরবত-পুদিনা-তেলেভাজার সাথে রেডিওর হামদ-নাত মিলে রোজার ব্রান্ড ঘ্রাণ।
ইফতারে পেঁয়াজু বা ডালের বড়া, আলুর চপ, বেগুনী, ছোলাবুট ভুনা, লেবু-তোকমার শরবত অথবা লেবু-ইসবগুলের ভুষির শরবত, মুড়ি, সালাদ, খেজুর, মৌসুমী ফল ছিল আবশ্যিক পদ। অনেক বাসাতে রুহ্ আফজার শরবত ছাড়া ইফতার ভাবাই যেত না। কেউ কেউ চিঁড়ে ভেজানো, দুধ-সাগু, সাদা খিচুড়ি, সবজি খিচুড়ি, পান্তাভাত, গরমভাত বা তেহারীর মতো খাবারের কোনটা বানাতেন। অতিথি আপ্যায়নের ব্যাপার থাকলে পরোটা, মাংস ভুনা, কাবাব অথবা মোরগ-পোলাও, দুধ সেমাই এসব করা হতো। হালিম, জিলিপি, দইবড়া দোকান থেকে কিনে আনা হতো, সেসব দোকান খুব একটা ছিল না। বস্তুত এখনকার বিশাল ও বিস্তৃত ইফতার বাজারের প্রায় কিছুই ছিল না। পাড়ার চায়ের দোকানগুলো, যেগুলো সারা দিন চটের পর্দা ঢাকা দিয়ে চা-নাস্তা বিক্রি করেছে তারা আসরের সময় হতেই সেই পর্দা তুলে নিয়ে পেঁয়াজু (আসলে পেঁয়াজের বদলে সরু করে কাটা আলু দেয়া ডালের বড়া), আলুর চপ, বেগুনী, ছোলাবুট ভুনা বিক্রি করতো। পাড়ার মোড়ে মোড়ে কয়েকজন ধানের ভুষি আর চটের ব্যাগ দিয়ে ঢাকা বরফের বড় চাঁই নিয়ে বসে হাঁক দিতেন, "অ্যাই পাহাইড়া বরফ"! তখন বেশিরভাগ বাসায় রেফ্রিজারেটর ছিল না। তাই শরবত ঠাণ্ডা করতে আইসক্রীম ফ্যাক্টরি থেকে কিনে আনা এই 'পাহাইড়া বরফ'ব্যবহার করা হতো। বরফ বিক্রেতা হাতুড়ি-বাটালি দিয়ে বরফ ভেঙে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে কলাপাতা বা কচুপাতায় মুড়ে বিক্রি করতেন - তখনও পলিথিনের সর্বগ্রাসী দৌরাত্ম্য শুরু হয়নি।
শবে বরাতের খাবার বিলি করার মতো মতো রোজার সময়ও এক বাসা থেকে আরেক বাসায় ইফতার দেয়ার রীতি ছিল। এক দিনে সব প্রতিবেশীর বাসায় ইফতার দেয়া সম্ভব না বলে একেক দিন একেক বাসায় ইফতার দেয়া হত। কেউ কেউ প্রতিদিন মসজিদে ইফতার পাঠাতেন। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব, খাদিম ছাড়াও যাদের ইফতার করার সঙ্গতি থাকত না তারা মসজিদে ইফতার করতেন। সেখানে বারান্দায় কাগজ বিছিয়ে সবাই একসাথে ইফতার করতেন। শুক্রবার বা ছুটির দিনগুলোতে মসজিদে ইফতার পার্টি থাকত। সেখানে পাড়ার সবার উন্মুক্ত দাওয়াত থাকত।
ইফতারের আগে পরিবারের সবাই পরিষ্কার কাপড় পরে, ওজু করে খাবারের চারপাশে বসতেন। পুরুষদের কেউ কেউ মাথায় টুপি দিতেন, মেয়েদের কেউ কেউ মাথায় ঘোমটা বা ওড়না দিতেন। কেউ কেউ মনে মনে দোয়া-দরূদ পড়তেন। ইফতারের সময় হলে প্রথমে একটা বোমা ফাটতো, তারপর সাইরেন বাজতো এবং তারপর মসজিদের মাইকে মাগরেবের আজান শোনা যেত। এই বোমা কারা ফাটাতেন আর সাইরেন কারা বাজাতেন সেটা কখনো জানতে পারিনি। সব বাসাতেই রেডিও অথবা টেলিভিশন ছেড়ে রাখা হতো। সেখানে কোরআন তিলাওয়াৎ শেষ হয়ে বাংলায় ছোট ছোট কোরআনের বানী, যেমন 'নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় কর' অথবা হাদিস, যেমন 'বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র' ইত্যাদি শোনানো শুরু হলে বোঝা যেত মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত। মাগরেবের আজান, আজানের দোয়া, হাদিসের বানী শেষ হতে না হতে যখন ওসমান খানের কণ্ঠে 'দে পানাহ্ দে ইয়া ইলাহী দে পানাহ্' অথবা ফাতেমা-তুজ-জোহরা'র কণ্ঠে 'শোন শোন ইয়া ইলাহী আমার মোনাজাত' বেজে উঠতো তখন মনে হত ইফতারের আয়োজন তার সব রঙ নিয়ে পূর্ণতা পেল।
ইফতারের পরে চা পানের পর্বটাতে সবাই গা এলিয়ে দিতেন। এই সময় কেউ টেলিভিশন দেখতে বসতেন, কেউ তারাবীর নামাজ পড়তে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতেন। খতম তারাবী পড়া একটু কঠিন কাজ হলেও ছোটরা এই ব্যাপারে মহা উৎসাহী থাকত। কারণ, খতম তারাবী পড়তে যাওয়া মানে রাতে লম্বা সময়ের জন্য বাড়ির বাইরে যাবার সুযোগ। মসজিদের বারান্দায় কচিকাঁচাদের ভীড় দেখে তাদের উৎসাহটা কেন সেটা বোঝা যেত। বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'Ramadan in the World' নামে একটা অনুষ্ঠান দেখানো হতো যেখানে একেক দিন পৃথিবীর একেক দেশে কীভাবে রোজা পালন করা হয় সেটা দেখানো হতো। সবাই আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করতেন সেখানে কবে বাংলাদেশ দেখানো হবে। রাতের খাওয়া কেউ তারাবীর আগে আর কেউ তারাবীর পরে সারতেন। আবার কেউ কেউ ভারি ইফতার করতেন বলে রাতে কিছু খেতেন না।
কোন কোন বাসায় মাঝরাতে উঠে সেহেরীতে খাবার জন্য ভাত-ডাল-তরকারী রান্না করা হতো। বাকি বাসায় সন্ধ্যা রাতের রান্নাই গরম করে খাওয়া হতো। কেউ কেউ সেহেরীতে শুধু দুধ, কলা, আম, খই খেতেন। সেহেরীর বড় আকর্ষণ ছিল কাসিদা পার্টি। পাড়ার একদল যুবক উচ্চস্বরে জনপ্রিয় গানের সুরে রোজা নিয়ে বাঁধা গান গাইতে গাইতে গোটা পাড়া টহল দিতেন —
রমজান এলো আবার ফিরে
রোজা রাখো ঘরে ঘরে
অথবা
ওওওওও মাহে রমজান
তোমায় জানাই সালাম
কাসিদা পার্টি কোন কোন বাসার সামনে গিয়ে সেই বাসার গৃহকর্তার নামে হাঁক দিতেন —
শাহীন ভাই ওঠেন, সেহেরী খান
অথবা
প্রফেসর সা'ব ওঠেন, সেহেরী খান
গান ফুরিয়ে গেলে আবার হাঁক দিতেন —
ওঠেন আল্লার পেয়ারা বান্দারা
সেহেরী খান, রোজা রাখেন
রাত তিনটা বেজে গেছে
মসজিদের মাইকে ইমাম সাহেব বা মুয়াজ্জিন সাহেব ঘোষণা দিতেন —
রোজাদার ভাই ও মা-বোনেরা আমার, যারা এখনো সেহেরীর খানা খান নাই তারা তাড়াতাড়ি সেহেরীর খানা খেয়ে নেন। এখন রাত তিনটা বাজে। আজকে সেহেরীর শেষ সময় রাত তিনটা আটচল্লিশ মিনিটে।
সেহেরীর সময় তিনবার সাইরেন বাজতো। প্রথম বার শেষ সময়ের এক ঘন্টা আগে, দ্বিতীয়বার তার পনের মিনিট আগে, তৃতীয়বার সময় শেষ হওয়া মাত্র। শেষ সাইরেনের সাথে সাথে মসজিদে ফজরের আজান দিত। তার আগে সবাই দ্রুত গ্লাস ভরে পানি পান করতেন। সেহেরীর সময় রেডিওতে মিনিট ত্রিশেকের অনুষ্ঠান হতো যার শেষ পর্যায়ে ক্বারী মোহাম্মদ উবায়দুল্লাহ্ মোনাজাত পরিচালনা করতেন। ফজরের নামাজ শেষ হতেই সবাই ঘর অন্ধকার করে ঘুমাতে যেতেন। যাদেরকে অফিসে যেতে হতো তারা ছাড়া বাকি সবাই সকালে বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেন।
সাতাশ রমজান বা শবে কদরের রাতে শবে বরাতের মতো মজা না হলেও সারা রাত জেগে বাইরে ঘোরা বা ভিন্ন ভিন্ন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া হতো। সাতাশ রমজান মানে হচ্ছে ঈদ এসেই গেল! এই সময়ে যারা সারা মাস কাসিদা গেয়েছেন তারা বখশিশ চাইতে আসতেন। শবে কদরের রাতে তারাবীর কোরআন খতম শেষ হতো বলে ঐ রাতে চাঁদা তুলে বাইরে থেকে আনা হাফেজ সাহেবদের পাওনা মিটিয়ে দেয়া হতো। সেই সাথে ইমাম সাহেব ও মসজিদের অন্যান্যদেরকে ঈদ বোনাস দেয়া হতো। বড়রা এই দিন তারাবী পড়তে যাবার সময় চাঁদার টাকা সাথে নিয়ে বের হতেন। এই রাত ছাড়া জুমাতুল বিদা বা রমজানের শেষ জুমাতেও চাঁদা তোলা হতো। এই সময় পূণ্যার্থীরা হাত খুলে দান করতেন।
২০০৭ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক পাড়ায় কাসিদা পার্টি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে সেগুলোর বেশিরভাগে আর নতুন করে কাসিদা পার্টি তৈরি হয়নি। একক বাড়িগুলো ভেঙে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরি হবার হিড়িক পড়লে কাসিদা পার্টির গুরুত্ব আরও কমে যায়। একে তো তারা কমপ্লেক্সগুলোতে কাসিদা গাইতে ঢুকতে পারেন না, তার ওপর সেখান থেকে বখশিশও তোলা যায় না। ইফতার বাজারের বৈপ্লবিক সম্প্রসারণে ঘরে বানানো ইফতারের পিছু হটা, প্রতিবেশীর ধারণাটা পালটে যাওয়াতে ইফতার বিলানোর সংস্কৃতিতে প্রাণহীন ভিন্ন রাজনীতি ঢুকে যাওয়া, অ্যাপার্টমেন্ট কালচারের প্রসারে কাসিদা পার্টির হারিয়ে যাওয়া আমাদের জীবন থেকে রমজানের মাসব্যাপী উৎসবের সরল রূপটি পালটে গেছে। তবু কখনো হঠাৎ রেডিওতে বা অন্য কোথাও যখন বেজে ওঠে —
আস্ সুবহু বাদা' মিন তালা'আতিহি
ওয়াল্ লাইলু দাজা মিন ওয়াফারাতিহি
আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহ্
তখন মনে হয়ে রমজান বুঝি আবার তার আগের ঘ্রাণ আর রঙ নিয়ে ফিরে এসেছে।