মুখোমুখি জগদিন্দ্র মণ্ডল: ‘জীবনানন্দের মৃত্যুর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম’
'প্রভাতকুমারের বাসা থেকে বেরিয়ে তুমি কামাল গাজী মোড়ে আসবে। সেখান থেকে সোনারপুরের অটোতে উঠে ফিউচার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আগে শনিমন্দিরের সামনে নেমে যাবে। তার পাশ দিয়ে যে সরু রাস্তাটি চলে গেছে, সেটি ধরে এগোতে থাকলে হাতের বাঁয়ে রবীন্দ্রনাথের একটা মূর্তি। তার একটু পরেই মোড়। সেই মোড়ের বাঁয়ে সোনারগাঁ সোসাইটির গেট দিয়ে ঢুকে যাবে। কিছুদূর এগোলে একটা ট্রান্সমিটার। তার আগেই ডান দিকের রাস্তায় ঢুকে পড়বে। এই রাস্তায় ঢোকার পরে হাতের বাঁয়ে একটা সুন্দর দোতলা সাদা বাড়ি। সেটি ছাড়িয়ে আরেকটু সামনে এগোতে থাকবে। দেখবে রাস্তাটা বাঁ দিকে মোড় নিয়েছে। আমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকব।'
মোবাইল ফোনে যখন জগদিন্দ্র মণ্ডল এভাবে নিজের বাসার ঠিকানা দিচ্ছিলেন, তখন পুরো দৃশ্যটিই চোখে ভাসছিলো এবং এই পথনকশা ধরেই গন্তব্যে পৌঁছে দেখা গেলো, ৮৭ বছরের একজন সুদর্শন তরুণ দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথম সাক্ষাতেই ভালো লাগা এবং মুগ্ধ হবার মতো ব্যক্তিত্ব। বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এর কারণ সম্ভবত দুটি; ১. আমি তাঁর জন্মস্থান বাংলাদেশ থেকে এসেছি এবং ২. বাংলাদেশ ও ভারতের নানা জায়গায় জীবনানন্দ দাশকে খুঁজছি।
২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির বিকেল। কলকাতা শহরের নরেন্দ্রপুর এলাকার এই নিরিবিল, সবুজেঘেরা আর পাখির কিচিরমিচিরের ভেতর সুনসান গ্রামীণ পরিবেশে জগদিন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতে হাজির হই।ডুপ্লেক্স মতো বাড়ি। ঢুকতেই হাতের ডানে ছোট্ট সিঁড়ি। উপরে গিয়ে বসতে বললেন। তিনি খানিক পরে এলেন। পুরো ঘর বইয়ে ঠাসা। একটা ছোট্ট টেবিল। তার পাশে সোফা। বিছানার ওপর ছড়ানো-ছিটানো বইপত্র। বোঝা যাচ্ছে, এই বয়সেও প্রচুর পড়াশোনা করেন। দোতলার একটি অংশ বাড়তি। অনেকটা উঠোনের মতো। জোছনা রাতে কবিতা বা গানের আসর বসানো যায়। আমরা যখন কথা শুরু করি, তখন পাখিদের কিচিরমিচিরের মাত্রা এতই বেড়ে যায় যে, আমাদের গলার স্বর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ উঁচুতে নিতে হয়।
জগদিন্দ্র মণ্ডল আক্ষরিক অর্থে একজন কিংবদন্তি। সাতচল্লিশে দেশভাগের কারণে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে কলকাতায় চলে যাওয়ার পর বন্ধুরা মিলে বের করেছিলেন 'ময়ূখ' নামে যে সাহিত্যপত্রিকা, পরবর্তীতে সেই পত্রিকাটি নতুন করে আবিষ্কার করে জীবনানন্দকে। শুধু তাই নয়, এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত তরুণেরাই ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ২২ অক্টোবর রাতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাসপাতালে জীবনানন্দের সেবাশুশ্রূষা করেছেন। সেই তরুণদেরও একজন জগদিন্দ্র মণ্ডল। ওই গোষ্ঠীর আর কেউই বেঁচে নেই। জগদিন্দ্র মণ্ডলের আরেকটি বড় পরিচয় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। এ বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু বইও রয়েছে।
জীবনান্দকে স্পর্শ করেছেন, সেবাশুশ্রূষা করেছেন, এমন একজন মানুষকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা, তার মুখোমুখি বসে কথা বলা একটি বিরল অভিজ্ঞতা; যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
এই বাড়িতে থাকেন জগদিন্দ্র মণ্ডল, তার স্ত্রী এবং তাদের একমাত্র ছেলে। অবসর কাটে পড়ালেখা করে। তবে ছোট লেখা পড়তে ম্যাগনিফাইং গ্লাসের সহায়তা লাগে। সন্ধ্যার পরে গানের রেয়াজ করেন। রবীন্দ্রসংগীতের ভক্ত। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অ্যালবামও বেরিয়েছে।
-জীবনানন্দের সঙ্গে আপনার স্মৃতি কতটুকু মনে আছে?
-সবই মনে আছে। তখন তো আমরা কলেজে পড়ি।
-যখন বাসায় যেতেন, কী ধরনের কথাবার্তা হতো?
-তখন উনি খুব গৃহীত নন। বুঝতে পেরেছ? উনি তখন আমাদের প্রশ্ন করতেন 'আমার কবিতা তোমাদের ভালো লাগে?' বললাম, খুব ভালো লাগে। তিনি বললেন, 'ও আচ্ছা।' উনি আসলে বিশ্বাস করতে পারতেন না যে মানুষ ওনার কবিতা পড়ছে। ইনফ্যাক্ট তখন তো তার বিরুদ্ধে সমালোচনাও প্রবল। ছন্দ ভুল লিখছেন, কী লিখছেন তার মানে নেই—এরকম কথাবার্তাও চলছিলো। কেউ তো পারলে তার পিঠের চামড়া তুলে ফেলে। সেই সময়ে আমরা যখন গেলাম, তিনি খুব বিস্মিত হলেন যে আমরা তার কাছে কবিতা চাইতে গিয়েছি। আমরা তখন প্রতিষ্ঠিত আরও অনেক কবির কাছেই গিয়েছি। কিন্তু খুব একটা পাত্তা পেতাম না। তারা গ্রাহ্যই করতেন না। বলতেন,'পরে এসো।' বা বলতেন 'দেখি কী পত্রিকা করছ?' দেখলেন একটু। এরকম অ্যাটিচুড। কিন্তু ওনার (জীবনানন্দ) কাছে যাওয়ার পরে ময়ূখের একটা সংখ্যা দেখলেন। বললেন, 'বাহ বেশ যত্ন করে কাজটা করছ তো!' তখন উনি ওনার সবচেয়ে ভালো লেখাটা আমাদের দিতেন। আমরা তার প্রবন্ধ নিয়েও ছাপতে আরম্ভ করলাম।
-আপনাদের সঙ্গে যখন জীবনানন্দের পরিচয়, ১৯৫৩ সাল, তখন তো ওনার জীবনে খুব সংকট যাচ্ছে...
-হ্যাঁ, যে বাড়িতে ছিলেন, সে বাড়িতে থাকতে পারবেন না। আমাদের বললেন, একটা বাড়ি খুঁজে দেবে তোমরা? এই যে সারল্য...দেখো উনি আমাদের কাছে ব্যক্তিজীবনের কথাও বলছেন। শুধু তাই নয়, আমাদের কাজ নিয়েও উনি উচ্ছ্বসিত। এ কারণে যে কয়েকজন অল্প বয়সী ছেলে মিলে একটা কাজ করছি, সেটা ওর খুব ভালো লাগলো।
-আপনি আপনার 'কবিতা নিয়ে ভাবনা ও কয়েকজন কবি' গ্রন্থে লিখেছেন, জীবনানন্দের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা জন্মাবার প্রধান কারণ ছিল তার কবিতা নয়, বরং তার ভেতরের মানুষের সরলতা, নিরহঙ্কার এবং তরুণদের কাছে টেনে নেয়ার শক্তি।
-হ্যাঁ, ওর ভেতরে যে ধরনের সরলতা ছিল, সেরকমটি তৎকালীন অন্য কোনো কবির ভেতরে আমরা দেখিনি।
-আপনারা যারা 'ময়ূখ' বের করতেন, তারা মূলত সাতচল্লিশে দেশ ভাগের ফলে 'উদ্বাস্তু' হয়ে কলকাতায় যাওয়া বাঙালি। আপনাদের প্রতি জীবনানন্দের এবং জীবনানন্দের প্রতি আপনাদের টানের পেছনে জন্মভূমি বা বাংলাদেশ কি একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল?
-তা তো কিছুটা ছিলই।
-তরুণ বয়সে জীবনানন্দের কবিতা আপনাদের কেন ভালো লাগলো?
-তার মধ্যে ইতিহাসচেতনা ছিল খুব প্রবল। সেটা তার অনুভবের মধ্যে ছিল। তার সময়কালে এরকম আর কারো মধ্যে আমরা দেখিনি। রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি অবদান তার। তাকে (জীবনানন্দ) বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য ভাবা যায় না।
-১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যখন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে জীবনানন্দের মৃত্যু হয়, আপনি তখন কোথায়?
-আমরা সবাই তখন হাসপাতালে।
-মৃত্যু সংবাদটি যখন শুনলেন, বা আপনাদের চোখের সামনেই তো তার মৃত্যু হলো, তখন অনুভূতি কী হয়েছিল?
-আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
-কেঁদেছিলেন?
-না। কারণ আমরা জানতাম তাকে বাঁচানো যাবে না। অ্যাক্সিডেন্টে যেভাবে হাড়গোড় ভেঙে গেলো, তারপর নিউমোনিয়া হলো, ডায়াবেটিক ছিল—ফলে বাঁচার সম্ভাবনা খুব একটা ছিল না। এ কারণে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
-মরদেহ তো হাসপাতাল থেকে রাতেই রাসবিহারি এভিনিউয়ে ছোট ভাই অশোকানন্দের বাসায় নিয়ে গেলেন। তারপর সারারাত কী করলেন?
-আমার বাসা তখন অশোকানন্দের বাসার উল্টো দিকেই। ১৩৩/সি রাসবিহারী এভিনিউয়ে। আর অশোকানন্দের বাসা ১৭২/৩। আমি রাতে বাসায় চলে গেলাম। পরদিন ভোরে আবার সেখানে গেলাম। তখন তো আরও অনেকে জীবনানন্দের মরদেহ দেখতে এলেন। অনেক বিখ্যাত মানুষও এলেন।
-আপনি শোকযাত্রায় ছিলেন?
-হ্যাঁ। আমরা সবাই পায়ে হেঁটে কেওড়াতলা শ্মশানে গেলাম।
-কারা ছিলেন সেই শোকযাত্রায়? কত লোক হয়েছিল?
-আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, কবি-লেখক, আমরা তার শিস্যরা। সব মিলিয়ে কত লোক হবে…
-শ খানেক?
-না তার বেশি।
-শ দুয়েক?
-অতো হবে না।
-জীবনানন্দের শেষকৃত্য যারা দেখেছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন অজিত কুমার ঘোষ। তিনি লিখেছেন, 'জীবনানন্দের নশ্বর দেহ ভস্মীভূত হয়ে গেল ধীরে ধীরে। ব্যথাতুরা প্রকৃতি এতক্ষণ গুমরে ছিল। এবার অঝোরে কেঁদে উঠলো। একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো।' ওইদিন কি আসলেই বৃষ্টি হয়েছিল?
-বৃষ্টি? আমার তো ঠিক মনে পড়ছে না।
-কেওড়াতলায় জীবনানন্দের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। যদিও সেখানে অনেক বিখ্যাত ও বিশিষ্টজনের সমাধি ফলক আছে। ভাস্কর্যও আছে।
-আসলে কী জানো তো…কেওড়াতলায় যে জীবনানন্দের একটা সমাধিফলক করতে হবে, এটা ওই সময়ে বা পরে কারো মাথায় আসেনি। বাংলা একাডেমিতে তার নামে একটি সভাঘর করা হয়েছে। এভাবে নানা জায়গায় ওকে স্মরণ করা হচ্ছে। তবে আমার ধারণা জীবনানন্দকে না পুড়িয়ে যদি সমাধিস্থ করা হতো, তাহলে হয়তো একটা ফলক হয়ে যেতো।
-বলা হয়, জীবনানন্দকে প্রথমে আবিষ্কার করেন বুদ্ধদেব বসু। তারপর আপনারা।
-জীবনান্দকে প্রথম আবিষ্কার করেছেন আসলে 'পূর্বাশা'র সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য। বুদ্ধদেব নন। সঞ্জয় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে শেখাতে লাগলেন জীবনানন্দ কী জিনিস। বলতেন, দেখো একদিন জীবনের কবিতা কী হয়...।
-সঞ্জয়ের সঙ্গে তো আপনাদেরও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল।
-হ্যাঁ। ওর কবিতা পড়ে ভালো লাগতো। তার চেয়ে ভালো লাগতো কবি মানুষটাকে।
-জীবনানন্দের সঙ্গে আপনার পরিচয় ৬৭ বছর আগে। সেই সময়ে জীবনানন্দকে দেখে যে অনুভূতি হয়েছিল, যেভাবে তার প্রতি আপনারা তীব্রভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, এখন এই বয়সেও তাকে সেভাবে অনুভব করেন বা মিস করেন?(এই প্রশ্নের জবাবে জগদিন্দ্র মণ্ডল চুপ থেকেছেন।)
প্রসঙ্গত, 'ময়ূখ' পত্রিকার ইতিহাস তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এর প্রথম প্রকাশের সাথে যুক্ত ছিলেন সুবোধ গুপ্ত, সুনীল গুপ্ত, তারাপদ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। তখন খুবই ছোট আকারে এটি বের হতো। দাম ছিল দশ পয়সা। এই পর্বে 'ময়ূখ'দুই বছরের মতো প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় পর্বে যুক্ত হন জগদিন্দ্র মণ্ডল, স্নেহাকর ভট্টাচার্য, সমর চক্রবর্তী, ভূমেন্দ্র গুহ। এই পর্বে'ময়ূখ' প্রকাশিত হয় প্রায় ছয় বছর। আর তৃতীয় পর্বে প্রকাশিত হয় নব্বই দশকে। তবে চার বছর পরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
জগদিন্দ্র জানাচ্ছেন, তিনি যখন ময়মনসিংহে (বাংলাদেশ) নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন তিনি ও তার সহপাঠী স্নেহাকর ভট্টাচার্য মিলে স্কুলে দেয়ালপত্রিকা বের করতেন। সাতচল্লিশের দেশভাগের পরে তারা কলকাতায় চলে আসেন। একটু থিতু হয়ে কলেজে অধ্যয়নকালে একদিন স্নেহাকর রাসবিহারী এভিনিউয়ে জগদিন্দ্রর বাড়িতে আসেন, সেটা ১৯৫৩ সাল। অর্থাৎ জীবনানন্দের মৃত্যুর আগের বছর। তাদের বন্ধু সমর চক্রবর্তী তখন দক্ষিণ কলকাতার ভবানিপুর এলাকায় জগুবাবুর বাজারের পেছনে চক্রবেড়িয়া স্কুলের চিলেকোঠায় থাকেন।
তারা বন্ধুরা একত্র হলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন এখান থেকে একটা কবিতা পত্রিকা প্রকাশ করবেন। ময়ূখের প্রথম পর্বে যুক্ত তরুণ সুবোধ ও সুনীল গুপ্তর মাধ্যমে ভূমেন্দ্র গুহর সাথে পরিচয় হয় জগদিন্দ্রদের। তারা তখন কলেজে স্নাতক স্তরে এবং ভূমেন্দ্র গুহ মেডিকেলে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তখন স্নেহাকর ময়ূখের মধ্যমণি। ময়ূখের দ্বিতীয় পর্বে যুক্ত তরুণদের 'দেশভাগের পর কলকাতায় উদ্বাস্তু হয়ে আসা' বলে উল্লেখ করেছেন জগদিন্দ্র মণ্ডল। তার স্বগতোক্তি: 'ময়ূখের সেই নবযুবকদের কি তখন স্বজন্মভূমি ফিরে পাবার, প্রকৃত স্বাধীনতার, মুক্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার দুর্জয় অভিলাষই কবিতামুখী করেছিল?'
জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে 'ময়ূখ' একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়, যেটি পরবর্তীকালে জীবনানন্দকে বোঝা এবং তার ইতিহাস লেখার একটি বড় উপকরণে পরিণত হয়। যদিও এই বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশের ইতিহাস বড় করুণ। বিশেষ করে এর জন্য অর্থ সংগ্রহ। জগদিন্দ্র জানান, সমর তাঁর মায়ের সোনার বালা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ভূমেন ও জগদিন্দ্র বিক্রি করে দিয়েছিলেন পাঠ্যবই। তাছাড়া বাড়ি থেকে পড়াশোনার খরচের জন্য পাঠানো টাকা সরিয়ে রেখে, বাড়িতে অন্য কথা বলে কিছুটা অসাধু উপায় অবলম্বন করে অর্থ সংগ্রহ করেন এই তরুণেরা। ভূমেন বইয়ের প্রুফ দেখে যে টাকা পেয়েছিলেন, তার সবটাই খরচ করেছিলেন ময়ূখের জন্য। স্নেহাকর তার মাইনের অনেকটা এবং প্রতাপ ছাত্র পড়িয়ে যা পেয়েছেন, তারও সবটা দিয়েছিলেন এই বিশেষ সংখ্যার জন্য। এই হলো জীবনানন্দের প্রতি তাঁর ভক্তদের ভালোবাসা।...