ভারতবর্ষের যাযাবর কামার
ভাষাতত্ত্ব, নৃবিদ্যা, জাতিতত্ত্ব ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে যাযাবর বা জিপসিদের ইন্দো-আর্য উৎস সুনিশ্চিতভাবে বের করা হয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন যাযাবর গোষ্ঠীর মধ্যে যে যোগসূত্র রয়েছে, তা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
এদের মধ্যে রাজস্থানে বসবাসকারী গাড়ুলিয়া লোহার নামে এক যাযাবর সম্প্রদায় ভারতীয় ও ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে—কারণ ইউরোপের অন্যান্য যাযাবর গোষ্ঠীর সাথে এই সম্প্রদায়টির অনেক ব্যাপারে মিল রয়েছে। ভাষা, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো, পোশাক এবং লোকসাহিত্য ও কিছু লোককাহিনিতে এই মিলগুলো দেখা যায়।
লোহার' শব্দের অর্থ 'কামার'। আর এই সম্প্রদায় যে স্বতন্ত্র ধরনের গরুর গাড়ি ব্যবহার করে, তার নাম 'গাড়ুলিয়া'। কাজেই 'গাড়ুলিয়া লোহার' শব্দ দুটোর অর্থ করা যায় 'যাযাবর কামার'। রাজস্থান অঞ্চলে বসবাসকারী মারু ও মালভিয়া বর্ণের হিন্দু কামারদের থেকে এরা একেবারেই আলাদা।
গাড়ুলিয়া লোহারদের আদিভূমি রাজস্থান। নিজেদেরকে তারা বিখ্যাত রাজপুত জাতিভুক্ত বলে দাবি করে। লোকমুখে প্রচলিত অনেক কাহিনিই তাদের এ দাবির পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। বর্তমান গাড়ুলিয়া লোহারদের পূর্বপুরুষরা ছিল রাজপুত রাজপুত্রদের সেবক। রাজপুত্রদের সেনাবাহিনীর জন্য তারা অস্ত্র তৈরি করত। এই সেবার পুরস্কার হিসেবে ১৫৬৭-১৫৬৮ পর্যন্ত বিশেষ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত তারা। এরপর সম্রাট আকবরের আক্রমণে চিতোরগড় কেল্লার পতন হলে রাজপুত শাসনের অবসান ঘটে।
তাদের বানানো অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে রাজপুতরা হারায় ভীষণ অপমানিত বোধ করে লোহাররা। তাই তারা প্রতিজ্ঞা করে, এ অপমানের উপযুক্ত জবাব যতদিন না দিতে পারবে, ততদিন তারা আর অস্ত্র বানানোর কাজ করবে না। এরপর থেকে তারা হাঁড়িকুঁড়ি ও কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি বানাতে শুরু করে। ওই অঞ্চলের অন্যান্য সম্প্রদায়ের কামারদের সাথে বিরোধ এড়াতে তারা পথে পথে ঘুরে বিভিন্ন নগরে ও গ্রামে গিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়িতে খানিক রদবদল এনে বিশাল দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার উপযোগী নতুন ধরনের গাড়ি বানিয়ে নেয় তারা। ষোড়শ শতাব্দীতে সৃষ্ট এই গরুর গাড়ি আজও উত্তর ভারতের রাস্তায় দেখা যায়। তৈজসপত্র, সরঞ্জামাদি ও খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত গাড়ির ভেতরের অংশের মূল আকার ও বিন্যাসে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আজকাল অবশ্য এসব গাড়ি যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হয়, অন্যান্য যাযাবর দলগুলোর মতো বাসস্থান হিসেবে আর ব্যবহার করা হয় না।
গাড়ুলিয়া বানানো হয় কিকার (অ্যাকাশিয়া অ্যারাবিকা) কাঠ দিয়ে। অন্যান্য গরুর গাড়ি থেকে এ গাড়ি অনেক বেশি মজবুত ও শক্তিশালী। এর দুটো অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো 'থালিয়া' ও 'ফিচলা'। থালিয়া হলো গাড়ির সামনের প্রশস্ত ত্রিভুজাকার অংশ। মাঝখানের ও পেছনের উন্মুক্ত অংশ ফিচলা। ফিচলার সাথে সাইড প্যানেলগুলো সংযুক্ত থাকে। এ গাড়িগুলো খুব অল্প সংখ্যক কারিগর তৈরি করে। এই কারিগরদের বাস এ অঞ্চলের উত্তর ও পশ্চিমের গাঙ্গুরায়, এবং দক্ষিণ ও পুবে বার্মার-এ।
সাইড প্যানেল বা পানখালা, বুকের বাইরের অংশ এবং চাকাগুলোকেই কেবল স্বতন্ত্রভাবে সাজানো যায়। এসব অংশের কাঠের সাথে ব্রোঞ্জের প্লেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। সাইড প্যানেলগুলোকে যেসব প্লেট দিয়ে মোড়া হয়, ওগুলো চার ভাগে বিভক্ত। প্রতি অংশে ষোলোটি কুঠুরি রয়েছে। এই কুঠুরিগুলোর কোনোটা দেখতে বর্গাকার তো কোনোটা লজেন্সের মতো, কোনোটা আবার ফুলের মতো। যে লম্বা দণ্ডটির সাথে গরু জোতা হয়, ওটা বিনুনি করা মোষের চামড়ায় মোড়ানো থাকে।
গাড়ুলিয়াই এ সম্প্রদায়ের পারিবারিক জীবনের প্রকৃত কেন্দ্র। পরিবারের সমস্ত জিনিসপত্র রাখা হয় এ গাড়িতে। লোহার যুবকরা গলায় কালো সুতোয় বাঁধা মাদুলি পরে। সুখ, সমৃদ্ধি ও উর্বরতার দেবতা রামদেওলের সম্মানে এই মাদুলি পরে তারা। বাম কানের ওপরের অংশে মারকি নামের কানের দুলও পরে তারা। বিবাহিত মহিলারা গজদন্ত ও রুপার ব্রেসলেট পরে। কানে পরে ভারি রুপার দুল। অভাব-অনটনের সময় এসব দুল বন্ধক রেখে টাকাপয়সা ধার করে তারা।
ঐতিহ্যগতভাবে গাড়ুলিয়া লোহাররা তাদের হাপরে আগুন দেবার জন্য ছাগলের চামড়ার জাঁতা ব্যবহার করে। তবে বর্তমানে কেউ কেউ আরও সূক্ষ্ম যন্ত্র ব্যবহার করছে। যেমন অনেকেই এখন সাথে সাইকেলের চাকার সাথে কপিকলে জুড়ে দিয়ে সাইকেলের প্যাডেলকে হ্যান্ডেল হিসেবে ব্যবহার করে। অবশ্য গাড়ুলিয়ার নকশাটি ষোড়শ শতাব্দীর পর আর বদলায়নি। কারুকার্যখচিত আয়তাকার সাইড প্যানেলগুলো তাদের পরিবারের প্রতীক। গাড়ির সামনের ত্রিভুজাকার অংশে তালাওয়ালা যে ছোট্ট দরজা থাকে, ওতে টাকাপয়সা, গহনা, সোনা, মিষ্টি, ঘনীভূত মাখন, সুই-সুতো, আয়না, সুরমা এবং অন্যান্য প্রসাধনী রাখা হয়। এক কথায়, থালিয়া হলো পারিবারিক ধনাগার। গাড়ির খোলা অংশের মাঝখানে চাল, মসুর ও আটার বস্তা রাখা হয়। একপাশে রাখা হয় ঘরোয়া তৈজসপত্র, অন্যপাশে কামারের সরঞ্জামাদি। পোশাক-আশাক থাকে থালিয়া ও বস্তার মধ্যে।
কোথাও শিবির ফেলার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির নিচে ও চারপাশ ঘিরে সংসার পেতে ফেলে লোহাররা। খর রোদ আর বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মাদুরের চাঁদোয়া ব্যবহার করে।
চিতোরগড়ের পতনের পর যে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছিল, তার প্রভাবেই নতুন পেশা বেছে নেয় লোহাররা। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে একটা ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে হয় তাদের। রাজস্থানের মতো অঞ্চলে একেক মৌসুমে প্রকৃতির অবস্থা একেক রকম থাকে। সে অনুযায়ী নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছিল লোহারদের। যেমন, বর্ষায় তাদের যাযাবর জীবনে যতিচিহ্ন নেমে আসে। কাজেই এই মৌসুমের জন্য তারা স্থায়ী বসতি শিবির স্থাপন করে।
আজও লোহাররা ফি বছর মধ্য মে থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত থিয়া নামে পরিচিত এসব বসতিতে থাকে। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তাদের বিশ্রাম, বিয়ে এবং দলের শাসক পরিষদ নির্বাচন করার সময়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় পশুর হাটে ঘোরাঘুরি করে গাড়ি টানার প্রাণী কেনে। বাকি আট মাস কাটে একটা নির্দিষ্ট ছক ধরে নগরে-গ্রাম ঘুরে। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এই ছক ধরে ঘোরাঘুরি করে আসছে তারা। প্রতিটি দল রাজস্থানের একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রতিটা আনাচে-কানাচে ঘোরে। প্রতিটা দলই নিজ অঞ্চলের কৃষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখে। উভয় পক্ষই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই সম্পর্ক অটুট রেখে চলেছে।
গাড়ুলিয়া লোহারদের জীবন মূলত নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জনবহুল জায়গায় তারা বেশি দিন থাকে না। তাদের বেশিরভাগ সময় কাটে ভ্রমণে। কোনো কৃষক বা কৃষক গোষ্ঠীর সাথে তারা স্রেফ কাজের সম্পর্ক বজায় রাখে। এ থেকেই বোঝা যায় এরা কীভাবে ৩০০ বছর ধরে নিজেদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি অবিকৃত রেখে চলেছে। তাদের পোশাকের ধরন, গহনা, এমনকি পুরুষদের চুল রাখার ধরনেও তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি এই তিন শতাব্দীতে। সেই শতাব্দীপ্রাচীন পারিবারিক রীতিনীতি ধরে রেখেছে তারা। জন্ম, বিয়ে ও শেষকৃত্যের আচার পালনেও আসেনি কোনো পরিবর্তন।
লোহাররা তাদের নেহাইকে দৈব শক্তিসম্পন্ন বলে মনে করে। এটি তাদের পরিবারের সবচেয়ে দামি সম্পদ। তারা কখনও কাউকে নেহাই ধার দেয় না—ধাতু তৈরির কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারও করে না। পরিবারের কর্তা হাতুড়ি নিয়ে নেহাইয়ের পাশে বসে কাজ করে। সাধারণত তার স্ত্রীই সামনে দাঁড়িয়ে বড় হাতুড়ি, অর্থাৎ 'ঘন্' চালায়। তার জায়গায় তাদের মেয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু পুত্রবধূদের হাপরে কাজ করার অনুমতি নেই।
ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে রাজস্থানের গাড়ুলিয়া লোহাররা স্বতন্ত্র জায়গা দখল করে আছে। এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর অপরিহার্য উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল তাদের। অন্যান্য কামারদের সাথে পেশাগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি তারা। প্রতিটা দলেরই বাঁধা খদ্দের ছিল। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই চলে আসছিল। তারপর বর্তমান শতাব্দীতে শিল্পকারখানাগুলোর বদৌলতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে ভারতের অর্থনীতিতে। ফলে বদলে যায় পরিস্থিতি।
অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব এমনই শক্তিশালী ছিল যে, বহু লোহার দল তাদের নিজস্ব এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে খদ্দের খুঁজতে আরম্ভ করে তারা। পুরনো সঙ্গী-সাথিদের ছেড়ে অন্য এলাকায় অন্যান্য কামারদের সাথে প্রতিযোগিতা করে খদ্দের খোঁজার অভিজ্ঞতা যেকোনো যাযাবর কামারের জন্যই তিক্ত অভিজ্ঞতা। এছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে এসে নিজ সম্প্রদায়ের রীতিনীতি বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো আছেই।
সিন্দের পশ্চিমের মরু অঞ্চলগুলো কৃষিকাজের উপযোগী নয়। আবাদযোগ্য জমি কেবল পূর্বাঞ্চলেই আছে। সেখানে রয়েছে সমৃদ্ধি আর উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি। অনেক দলই এই অঞ্চলে চলে যায়, বাকিরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকে আগের অঞ্চলেই। আধুনিক শিল্পপণ্য স্রোতের মতো বাজারে ঢুকে পড়ায় ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা।
বিগত দুই বা তিন দশক ধরে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা চেষ্টা করেছে কোনো একটা অঞ্চলে এই যাযাবর কামারদের স্থায়ী বসতি স্থাপন করে দিতে। গাড়ুলিয়া লোহারদের নিয়ে বিস্তর কাজ করেছেন ভারতীয় সমাজবিজ্ঞানী, অধ্যাপক সাতিয়া পাল রুহেলা। এ অঞ্চলে 'বসতি' স্থাপন করে গাড়ুলিয়াদের 'পুনর্বাসিত' করার জন্য সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেসব নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই কেন ব্যর্থ হয়েছে, সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধ্যাপক রুহেলা। তাঁর মতে, সম্প্রদায়টির অন্তরের গভীরে গেঁথে যাওয়া মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো উপেক্ষা করেই তাদেরকে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। তবে তাদের এই পুনর্বাসন-পরিকল্পনা যে সম্প্রদায়টির অভ্যন্তরীণ সংহতি নষ্ট করে দিতে পারে, সেই ব্যাপারটাই উপেক্ষা করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। লোহারদেরকে রাতারাতি কৃষকে পরিণত করার জন্য কোনো রকমের বাছবিচার না করেই তাদের মধ্যে জমি বণ্টন করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
অন্যান্য গাড়ুলিয়া লোহার দল ধীরে ধীরে নিজেদেরকে অন্যান্য সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে নতুন পরিবেশে মিশে গেছে। নতুন নতুন কলাকৌশল শিখে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করতে শিখেছে। ফলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে।
এই সাংস্কৃতিক অভিযোজনের ছাপ পড়েছে লোহারদের জীবনযাত্রায়। নতুন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে বদলে গেছে তাদের জীবনধারা। এসব পরিবর্তনের কয়েকটি খুব লক্ষণীয়। নতুন পরিবেশে এসে বদলে গেছে পোশাকের ধরন, বিশেষ করে মহিলাদের পোশাকে পরিবর্তন এসেছে বেশি। পুরুষরাও ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে নতুন পরিবেশের সাথে। তারা এখন আগের মতো চুল রাখে না।
বেঁচে থাকার যুদ্ধে যারা এখনও নিজেদের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে রেখেছ, তারাও সব ঐতিহ্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। যানবাহনের সজ্জায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে তাদের, নিজস্ব পঞ্জিকা অনুসারে উৎসবের আয়োজনও করতে পারছে না ঠিকমতো। কেবল যে গাড়ুলিয়া লোহাররাই এমন কঠিন সময় পার করছে তা নয়—অন্যান্য সম্প্রদায়ও রীতিমতো যুঝছে নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে। প্রতিটা সম্প্রদায়ই ভয়াবহ দোটানায় পড়ে গেছে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সম্প্রদায়ের সদস্যদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে, নাকি শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ছুঁড়ে ফেলে পরিবর্তিত সংস্কৃতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করবে।
তবে এই দুটো উপায়ের কোনোটার মধ্যেই, খুব সম্ভব, এ সমস্যার সমাধান নেই। এই চরম উপায় দুটোর মাঝখানে সম্ভাবনায় পূর্ণ আরেকটা উপায় রয়েছে। লোহারদের সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার জন্য সেই তৃতীয় উপায় অবলম্বন করা উচিত। এতে কেবল গাড়ুলিয়া লোহাররাই উপকৃত হবে না। কেননা সমাজের একটা গোষ্ঠী যখন উন্নতি করে, তার সুফল ভোগ করে গোটা সমাজ।
- সূত্র: ইউনেস্কো কুরিয়ার