বিশ্বকে ‘গণহত্যা’র কথা জানিয়েছেন এই তিনজন, তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশতম বার্ষিকী চলছে। সেইসাথে মনে পড়ছে একটি গণহত্যার স্মৃতি। সে স্মৃতি এত লোমহর্ষক যে, একে বিস্মৃত হতে দেয়া উচিত নয়।
প্রথমেই একটা কথা বলে নেয়া যাক—জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রতারণার অংশ ছিলেন না, স্বয়ং তিনিই ছিলেন প্রতারণা। ১৯৭০-এর নির্বাচনে ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) মাত্র ৮৫টি আসনে জিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল ১৬৭টি আসনে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান জনগণের এ রায় উল্টে দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অচলাবস্থা। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ ঢাকায় হাজির হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (গোটা পাকিস্তানের নব-নির্বাচিত বৈধ প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে 'আলাপ' চালানোর নাটক করেন ভুট্টো। কাজটি তিনি করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাদের বুঝ দেয়ার জন্য যে, '২৬ মার্চের দিনটা আর দশটা শুক্রবারের মতোই সাধারণ একটা দিন হবে।'
যদিও টানা এক মাস ধরে সিভিল পোশাক পরা ক্রু-কাট দেয়া হাজার হাজার যুবকের সিভিল ফ্লাইটে ঢাকায় আসার খবরটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ছিল। প্রায় সবাই-ই জানত, এই এরা আসলে সৈন্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুরোটা সময় শেখ মুজিবের প্রতি (লোকদেখানো) সংযম ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে এসেছে। সামরিক আইন বলবত থাকা সত্ত্বেও মার্চের ৩ তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেনানিবাসে সরে এসেছিল। সেখান থেকে ফের বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষগুলোর জন্য মূলত ফ্রি এজেন্টরাই দায়ী ছিল। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও ধর্মঘট, রাস্তা অবরোধসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছিলেন।
কাজেই পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরও শেখ মুজিব তার জনগণকে যখন 'সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে' বলেন, তখনও সেটা স্রেফ অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাকই ছিল। এদিকে ইয়াহিয়া ঢাকা ছাড়ার পরও 'আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার' জন্য 'থেকে যান' ভুট্টো। এটি ছিল এক চতুর প্রতারণা।
২৫ মার্চ সকাল ১১টায়ই সবুজ সংকেত দেয়া হয়ে যায়: ২৬ তারিখ রাত ঠিক ১টায় শুরু হবে অপারেশন সার্চলাইট, গ্রেপ্তার করা হবে শেখ মুজিবুর রহমানকে। ভুট্টোর উপস্থিতি কেবল 'আলোচনা চলবে,' 'আজকের রাতটা শান্তিপূর্ণই হবে,'—এসব বিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরিতে সাহায্য করেছে।
২৫ মার্চ রাত। সেইন্ট টমাসের বিখ্যাত ঘড়ির কাঁটা সবে ১০টার ঘর ছুঁয়েছে। শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ। সৈন্যদের অনেকের গায়েই শাল জড়ানো, নিজেদের উর্দি লুকানোর জন্য। ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁতেই টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রেডিও ও টিভি স্টেশন, টেলিপ্রিন্টার ও টেলিগ্রাফ অফিস গিজগিজ করতে লাগল পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যে। পঙ্গপালের মতো চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল। পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশ পাওয়ার পরও দেশ ছাড়েননি যেসব বিদেশি সাংবাদিক, তাদেরকে আটকে ফেলা হলো হোটেলে। এসবই করা হলো সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেবার জন্য। নীরবে ঘিরে ফেলা হলো শেখ মুজিবের বাসভবন। পুরো কর্মযজ্ঞটি সারতে সময় লাগল মাত্র এক ঘণ্টা। তখন পর্যন্ত মানুষ খুন করা হচ্ছিল একটা উদ্দেশ্য নিয়ে, যোগাযোগব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য।
কিন্তু মাঝরাতের ৩০ মিনিট আগে পাল্টে গেল দৃশ্যপট। চূড়ান্ত সময় উপস্থিত হলো। তখনই দৃশ্যমান হলো অপারেশন সার্চলাইটের নিষ্ঠুর প্রকৃত উদ্দেশ্য: হত্যার মাধ্যমে শক্তিপ্রদর্শন। প্রতিটা হত্যা ছিল বাঙালিদের জন্য একেকটি বার্তা। সেই বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানিরা।
মৃত্যুর মিছিল
শেখ মুজিব একদিক থেকে ভাগ্যবান ছিলেন—এসব হত্যাকাণ্ড তাকে নিজ চোখে দেখতে হয়নি। কারণ ২৬ মার্চ ভোর দেড়টার দিকে নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। প্রথমে তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে উড়িয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নিয়ে রাখা হয় এক নির্জন কারাগারে। অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয় তার দেশের মানুষ। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং স্থানীয় পুলিশের বাঙালি সৈন্য ও কনস্টেবলরাও হত্যার হাত থেকে রেহাই পাননি।
পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশনের নামকরণ ছিল যথার্থ। সার্চলাইট ব্যবহার করা হয় যেকোনো কিছু 'খোঁজা'র বা 'আলোকিত করা'র জন্য। অপারেশনটি এই দুটি লক্ষ্যই পূর্ণ করেছিল। রাজনীতিবিদ, ছাত্রনেতা, বাংলা শিক্ষক বা সংস্কৃতিকর্মী বলে যাকে সন্দেহ হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করেছে পাক বাহিনী। হত্যা করার সময় তারা কোনো লুকোছাপায় যায়নি—বরং যারা তাদের সামনে নতজানু হয়নি তাদেরকে এসব বীভৎস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমের শাসকগোষ্ঠীর অবাধ্য হওয়ার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে। বড় ভয়ানক আর নিষ্ঠুর ছিল সেই শক্তি প্রদর্শন।
১৯৭১-এর বীভৎসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাশুকুর রহমান বলেন, 'রাত ১০টার খানিক পরেই শুরু হয় হত্যাকাণ্ড। প্রথম ৪৮ ঘণ্টার হত্যাযজ্ঞেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ঢাকা। ...কিন্তু সে তো ছিল কেবল গণহত্যার শুরু।'
বাংলাদেশে গণহত্যার তীব্রতা হলোকাস্টকেও ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৮০,০০০ নিরপরাধ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল নাৎসিরা। কিন্তু পাক সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ৯ মাসে সে রেকর্ড ভেঙে দেয়। একাত্তরে তারা প্রতি মাসে গড়ে নাৎসিদের চেয়ে ৫ গুণ বেশি—অর্থাৎ প্রায় ৪ লাখেরও বেশি বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ধর্ষণ করে অগণিত মা-বোনকে। সাথে অন্যান্য অরাজকতা তো আছেই। অস্বাভাবিক হারে গণহত্যা করেছে পাকিস্তানিরা—৯ মাসে তারা প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে ২ লাখেরও বেশি নারীকে।
অথচ সিংহভাগ পশ্চিমা দেশই এই অকথ্য অত্যাচার নিয়ে ছিল উদাসীন।
ভারত যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে না দিত—নাৎসিদের মতো পাকিস্তানও যদি ছয় বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারত—তবে প্রায় আড়াই কোটি বাঙালি খুন হতো তাদের হাতে। আর কত নারী যে ধর্ষিতা হতো, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
ইউরোপীয় ইহুদিরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, নুরেমবার্গ ট্রায়ালের মাধ্যমে তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয়নি—কিন্তু সে বিচারের মাধ্যমে অনেক নাৎসিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অন্তত করা হয়।
কিন্তু নিদারুণ লজ্জার ব্যাপার হলো, প্রায় ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি অফিসারদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির বিনিময়ে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল ভারত।
মিডিয়ার ভূমিকা
'বাংলার কসাই' নামে কুখ্যাত গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান, কিংবা তার উত্তরসূরি জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি থেকে শুরু করে লুটতরাজে অংশ নেয়া প্রতিটা সৈন্য বিচারের কাঠগড়া থেকে বেঁচে যায়।
প্রশ্ন হলো—এতগুলো অপরাধী আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও, তাদের অপরাধ বিশ্ববিবেককে কীভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল? এ প্রশ্নের দেয়া যায় ওয়াল্টার লিপম্যানের বিখ্যাত উক্তিটির মাধ্যমে, 'সংবাদ এবং সত্যতা এক জিনিস নয়।' সত্যি বলতে কী, ভারতের খবর প্রচার করার সময় পশ্চিমা মিডিয়াগুলো প্রায়ই এমন সব লেখক ও সাংবাদিকদের বেছে নেয়, যারা তাদের পাঠকদের মনপছন্দের খবর জোগান দেন। পাঠক যা শুনতে চায়, ঠিক তা-ই শোনান তারা। পাঠকের ইচ্ছাই খবর হয়ে যায়। সেই খবরই পরে ইতিহাসে পরিণত হয়। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর বিশ্বাস, বিজয়ী পক্ষ কখনো সঠিক ইতিহাস লিখতে পারে না। অবশ্য বিজয়ী যদি পশ্চিমা কোনো পক্ষ হয়, তাহলে ভিন্ন ব্যাপার।
১৯৭১ সালের যুদ্ধেও পশ্চিমারা সম্পূর্ণ সঠিক খবর প্রচার করত না, যদি কয়েকজন সাহসী মানুষ এগিয়ে না আসতেন। এই মানুষগুলোর কল্যাণে পশ্চিমা মিডিয়ায় গণহত্যার আসল খবর প্রকাশিত হয় এবং ওখানে পরিবেশিত 'খবরের' রং বদলে দেয়।
এই নায়করা কারা?
তাদের মধ্যে সবার আগে নিতে হয় আর্চার কেন্ট ব্লাডের নাম। ১৯৭১-এ তিনি ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট প্রধান। যুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটনে অনেকগুলো তারবার্তা পাঠান। ২৭ মার্চ পাঠানো প্রথম বার্তায় ব্লাড লিখেছিলেন, 'Here in Dacca we are mute and horrified witnesses to a reign of terror by the Pak Military….'.
১৯৭১-এর ৬ এপ্রিল তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি. রোজার্সকে আরেকটি তারবার্তা পাঠান (পরবর্তীতে যা 'দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম' নামে বিখ্যাত হয়ে যায়)। ওতে তিনি মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচনা করে লেখেন:
'আমাদের সরকার গণতন্ত্রের ওপর চালানো নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সরকার নৃশংসতার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সরকার তার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য জোরালো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে—উল্টো পশ্চিম পাকিস্তান-শাসিত সরকারকে শান্ত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ও সঙ্গত যেকোনো নেতিবাচক আন্তর্জাতিক জনসংযোগের চাপ হ্রাস করতে সমর্থন দিচ্ছে। আমাদের সরকার এমন কিছুর প্রমাণ রেখেছে, যা অনেকের বিবেচনায় নৈতিক দেউলিয়াপনা হিসেবে বিবেচিত হবে। অথচ গণতন্ত্র রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচিত হওয়া দলটির নেতাকে গ্রেফতারের নিন্দা এবং দমনমূলক ব্যবস্থা ও রক্তপাত বন্ধের আহবান জানিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বার্তা প্রদান করেছে। ... আমাদের সরকার স্পষ্ট গণহত্যাকে অভ্যন্তরীণ ইস্যুর মুখোশ পরিয়ে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ আমেরিকানরা এ নীতিতে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করেছে। পেশাদার সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমরা এই বর্তমান নীতির সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করছি এবং আশা করছি যে, আমাদের সত্যিকার ও দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থ এখানে রক্ষিত হবে। ফলে মুক্ত বিশ্বের নৈতিক পথপ্রদর্শক হিসাবে আমাদের জাতির অবস্থান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে...'
এ বার্তা পেয়ে জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তবে ব্লাড টেলিগ্রাম সংবাদমাধ্যমে চলে যায়—এবং যুক্তরাষ্ট্রে 'সত্য'টাই হঠাৎ 'খবর' হয়ে ওঠে।
এই সন্ধিক্ষণটি ব্রিটিশ মিডিয়ায়ও এসেছিল। প্রথমে সাইমন ড্রিংয়ের পাঠানো খবর খুব ছোট করে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চের ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রথম পাতায় ছাপা হয়। গণহত্যা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান ড্রিং। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাক বাহিনীর নৃশংসতার প্রমাণ সংগ্রহ করেন। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়ায় তার প্রতিবেদনের সুরই পাল্টে দেয়া হয়। ফলে ব্যর্থ হয় প্রতিবেদনটি লেখার মূল উদ্দেশ্য। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পুনঃপ্রচার করে বিবিসি। কিন্তু এই ঘোষণাকে ব্যবহার করা হয় পাক বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারকে সমর্থন (বা জায়েজ) করার কাজে।
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে ১৯৭১ সালের জুন মাসের ১৩ তারিখে, সানডে টাইমসে পাকিস্তানি সাংবাদিক নেভিল অ্যান্টনি মাসকারেনহাসের 'জেনোসাইড' নামক প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর। আসলে পাকিস্তান সরকার তাদের অনুকূলে লেখার জন্য পাক বাহিনীর সঙ্গে তাকে ঘুরে বেড়াতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু পাক বাহিনীর কার্যকলাপ দেখার পর ড্রিং এত বিচলিত হয়ে পড়েন যে, তিনি যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। সেখানে গিয়েই প্রকাশ করেন 'জেনোসাইড'। বিবিসির মতে, তার প্রতিবেদনই সর্বপ্রথম পাকিস্তানিদের বীভৎসতার মাত্রা জনসমক্ষে নিয়ে আসে। সেইসাথে এই মানবিক সংকটের সুরাহা করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা ভাবতে প্ররোচিত করে ভারতকে।
বাংলাদেশের পঞ্চাশতম জন্মদিন এগিয়ে আসছে। এগিয়ে আসছে বীভৎস এক গণহত্যার পঞ্চাশতম বার্ষিকী। সেই গণহত্যার ভয়ানক স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় মানুষকে।
পাক গণহত্যার পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে, ২০২১ সালে প্রয়াত আর্চার ব্লাড, প্রয়াত অ্যান্টনি মাসকারেনহাস, এবং সাইমন ড্রিংকে তাদের সততা ও সাহসের জন্য সম্মাননা দেয়াই হতে পারে একাত্তরে প্রাণ হারানো বাঙালিদের শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায়।
এই মানুষগুলোর জন্য রইল শ্রদ্ধামিশ্রিত ধন্যবাদ—তাদের জন্যই সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছিল খবর।
- ভাষান্তর:মারুফ হোসেন
কমোডর হরি কৃষ্ঞান, পরিচালক ইন্ডিয়ান নেভি'স সেন্টার ফর এথিকস