বাংলার বিজ্ঞাপন
কলমের কালির পক্ষে এক কলম লিখতে রবীন্দ্রনাথও বাধ্য হয়েছেন। একটি বিশেষ কালি যে কলঙ্কের চেয়েও কালো একথা লিখে জানিয়েছেন এবং তা কালির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে। দু'এক দোয়াত ফ্রি কালি পাওয়া ছাড়া বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে অন্য কোনো হাদিয়া যে তিনি পাননি এটা নিশ্চিত। পেলে প্রশান্ত কুমার পালের মতো খুঁতখুঁতে জীবনীকার তা এড়িয়ে যেতেন না। তবে রবীন্দ্রনাথ যে বহু পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে ধরি মাছ না ছুই পানি জাতীয় সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বলেছেন, বাঙ্গালি কেরানি হতে পছন্দ করেছে, ব্যবসা তুলে দিয়েছে মাড়োয়াড়ির হাতে।
দু'চারজন যারা এসেছেন, ব্যবসায়ে পণ্যের বিপনন যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা মানতে চাননি।
শ্রীক্ষেত্রমোহন পুরকায়স্থ প্রায় শতবর্ষ আগে লিখেছেন: 'বিজ্ঞাপনে খরচ বৃদ্ধি পায় এই যুক্তি সেই ব্যবসায়ীরাই দিয়া থাকেন যাঁহারা বিজ্ঞাপনের আর্থিক মর্ম্ম সম্বন্ধে কোন প্রকার অভিজ্ঞতা লাভ করেন নাই। তারপর, এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন যাঁহারা বিজ্ঞাপন যে কি তাহা ভাল করিয়া বুঝেন না। এই সব ব্যবসায়ীদের অনেক বিজ্ঞাপনের বহু অর্থব্যয় করিয়া নিরাশ হইয়াছেন এবং অবশেষে বিজ্ঞাপনের বিজ্ঞান সম্বন্ধেই হতশ্রদ্ধ হইয়াছেন। ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন-প্রদান কেবল কতকগুলি বিনুনি কথার ফাঁকা আওয়াজ করাই নয়। ক্রেতার ঝাঁকে যেমন তেমন করিয়া দুটো কুচ-কাওয়াজ করিলে খরিদ্দার শিকার করা যায় না। প্রকৃত বিজ্ঞাপন একটি পূর্ব্বকল্পিত অভিযান- এর পথঘাট গোড়া থেকেই বাঁধিয়া নিতে হয়। কোন্ সুড়ঙ্গের পথে প্রবেশ করিয়া কোনখানে নিষ্ক্রান্ত হইলে ক্রেতার সম্মুখীন হইতে পারা যাইবে তাহা ভাবিয়া চিন্তিয়া আগেই ঠিক করা দরকার। চিন্তা না করিয়া যখন তখন যেমন তেমনভাবে বিজ্ঞাপন দিলে কাজ তো হয়ই না বরং তাহাতে প্রচুর অর্থনষ্ট হইবার সম্ভাবনা থাকে।
এখন অনেক বিজ্ঞাপনী সংস্থা আছে। বিজ্ঞাপন লিখিয়ে আছেন। এক সময় এসব ছিল না। বিজ্ঞাপনদাতা নিজেই কাজটা করতেন অথবা কর্মচারী ও বন্ধুস্বজনদের দিয়ে তৈরি করে নিয়ে পত্রিকা অফিসে হাজির হতেন। পত্রিকা অফিসের কর্মীরাও মনের মাধুরী মিশিয়ে বিজ্ঞাপনদাতার হয়ে বিজ্ঞাপন লিখে দিয়েছেন। কবি-সাহিত্যিকরাও যোগ দিয়েছেন পণ্যের প্রচারে ও প্রসারে।
এই রচনাটিও বিজ্ঞাপন নিয়ে, তবে এতে সাধারণ পণ্যের সাথে অসাধারণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য পণ্যের বিজ্ঞাপনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মুসলমান আরবের শেখদের শতাধিক সন্তান থাকার ঘটনা পানসে খবর। লালন করার মতো সামর্থ্য তাদের আছে। রুশ নাগরিক ফিওদর ভ্যাসিলিয়েভের দুই স্ত্রীর গর্ভে ১৭২৫ থেকে ১৭৬৫ সালের মধ্যে ৬৯ সন্তান গিনেস রেকর্ড বইতে উঠেছে, লালনের সামর্থ্য তারও ছিল, কিন্তু বাংলায় আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে কখনো কখনো বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে সন্তান বিক্রয় এবং এমনকি আত্মবিক্রয়ও করতে হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ ঢাকা প্রকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত সব্যাখ্যাত বিজ্ঞাপনটি বিক্রয়ের জন্য নয়। পোষ্য প্রদানের জন্য :
পোষ্যপুত্র
আমি কুলীন ব্রাক্ষণ। আমার পাঁচ পক্ষে সাতাইশটী পুত্র ও আটটি কন্যা। আমার যেরূপ অবস্থা, তাহাতে এই পুত্রগণকে লিখাপড়া শিখাইয়া বড় মানুষ করিতে পারি, এমন সম্ভাবনা নাই। অথচ পুত্রদানের ফলও আমার জানা আছে। এজন্য ইচ্ছা করি যে, যেসকল বড়লোক পৌষ্যপুত্র গ্রহণের অভিলাষী তাহাদিগকে ষোলটী পুত্র দান করিয়া বাকী এগারটী পিতৃঋণ পরিশোধ্য জন্য রাখি। এ বিষয়ে অন্য কোন জ্ঞাতব্য বিষয় থাকিলে সাক্ষ্যৎকারে জানাইব। যথেষ্ট সম্পত্তির পরিচয় পাইলে কূলীন, কাপ, শ্রোত্রীয় অভেদে পুত্রদানে ব্রতী আছি।
শ্রী কৃষ্ণকমল লাহিড়ী
২৫ ভাদ্র ১২৯৫, ৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮
মুনতাসীর মামুনের বহুখণ্ড 'উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ-সাময়িকপত্র' এবং আর্ট অব মার্কেটিং কমিউনিকেশন জাতীয় কিছু বই পড়তে পড়তে শতবর্ষের পুরনো বাংলার বাজারের প্রতি আগ্রহ জন্মে। আগ্রহভরে সেকালের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের কিছু নমুনা দেখেছি। কবিকল্পিত সোনার বাংলা সন্তান-সন্ততি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নজিরও তাতে দেখেছি।
ইবনে বতুতার সফরনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলায় এক দিনারে একজন সুন্দরী ক্রীতদাসী পাওয়া যেত। আকবর আলি খান পরার্থপরতার অর্থনীতিতে দেখিয়েছেন তখন দিল্লির সুলতান ইবনে বতুতাকে বছরে সতের হাজার দিনার ভাতা দিতেন।
উচ্চ বেতনভুক্ত ইবনে বতুতার জন্য এর চেয়ে সস্তা আর কি হতে পারে? যদি ব্যাপারটা উল্টোদিক থেকে দেখা যায়- দারিদ্র্যের ভয়াবহতা কত তীব্র ছিল যে একজন নারীর বিক্রয়মূল্য ছিল মাত্র এক দিনার! আর ভালো ঘোড়া কিনতে লাগতো দশ-বারো দিনার। এ কালে বাজার গবেষণা কৌশল, বিপণন কৌশল (পণ্য, বাজারে ভাগ বসানো, মূল্য, প্রচারণা, বিতরণ, সেবা ইত্যাদি), ভোক্তার আস্থা, ছকবহির্ভূত বিপণন ইত্যাদির বিশ্লেষণ করে বিপননকারী বাজারে নামে। এক ধরনের কর্পোরেট হাউস সেকালেও ছিল, তবে এমন নামায়ন হয়নি এই যা। এ কালের বড় বুলি ব্র্যান্ডিং। মুদ্রণ মাধ্যমই ছিল মেধাবী বিজ্ঞপ্তিদাতার মেধা বিকাশ ও পণ্য প্রসারের একমাত্র মাধ্যম। এই নিবন্ধটি মূলত বাছাইকৃত পুরনো দিনের কিছু পণ্য বিজ্ঞাপনের সঙ্কলন।
বিজ্ঞাপনগুলো শতবর্ষ আগের বিভিন্ন পত্রিকা থেকে নেওয়া। ১৯২৬ সালের 'বিজ্ঞাপন সমন্ধে' নামক এক নিবন্ধে বলা হয়েছে- 'জিনিস বিক্রয়ের ভাষা অন্যরূপ। সুন্দর সুশ্রী লোক যদি কোন দোকানে বসাইয়া রাখা যায়, হয়তো তাহাতে দু দশজন লোক কর্মস্থলে প্রবেশ করিতে পারে বটে, কিন্তু সেই সৌন্দর্যবান ব্যক্তির যদি খরিদ্দার ধরিয়া রাখিবার মত বাক্যসৌষ্ঠব না থাকে, তাহা হইলে জিনিস বিক্রয় করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।' আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে এই নিবন্ধে- 'বিজ্ঞাপনও নীরব সেল্সম্যান, সুদক্ষ সেল্সম্যান বা বিক্রেতার ন্যায় বিজ্ঞাপনেরও দক্ষতা থাকা চাই- নচেৎ দূরের খরিদ্দার টানিয়া আনা সে বিজ্ঞাপনের কর্ম্ম নয়। সুতরাং বিজ্ঞাপনের বাকচাতুরী অপেক্ষা জীবন শক্তিই অধিক প্রয়োজনীয় উপকরণ।'
শমিত দাশ আনন্দবাজার পত্রিকায় (২৮ জুন ২০২০) লিখেছেন, 'কবি যখন বিজ্ঞাপনে': রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিজ্ঞাপন দুনিয়ার সঙ্গে কী ভাবে বা কতটা যুক্ত ছিলেন, তার তথ্য আছে নানা জায়গায়। ১৮৮৯ থেকে শুরু করে ১৯৪১, পাঁচ দশক বিস্তৃত সময়ে তিনি প্রায় নব্বইটি বিজ্ঞাপনে নিজের মন্তব্য, উক্তি, উদ্ধৃতি, এমনকি ছবিও ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। বিদেশি ও দেশীয় এয়ারলাইন্স, ভারতীয় রেল থেকে শুরু করে গোদরেজ সাবান, বোর্নভিটা, কুন্তলীন কেশ তেল, রেডিয়ম ক্রিম, বাটা-র জুতো, ডোয়ারকিন হারমোনিয়াম, সমবায় বিমা, ছাপাখানা, কটন মিল, ফটো-স্টুডিয়ো, রেকর্ড, বই, মিষ্টির দোকান, ঘি, দই, কাজল-কালি, পেন্টওয়ার্ক, এমনকি মস্তিষ্কবিকৃতি রোগের মহৌষধ পর্যন্ত হরেক পণ্য ও পরিষেবার বিজ্ঞাপনে খুঁজে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথকে। অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা, অমৃতবাজার, দ্য স্টেটসম্যান, প্রবাসী, তত্ত্ববোধিনী, ক্যালকাটা গেজেট-এ, আর বিদেশে দ্য গার্ডিয়ান, দ্য গ্লোব-এর মতো পত্রিকাতেও।
নকল হইতে সাবধান
কলকাতার কেমিস্ট বাথগেট অ্যান্ড কোং-এর বাজার মাত করা সুবাস তেল ক্যাস্টর অয়েল। 'গন্ধে অতুলনীয়' ক্যাস্টর অয়েল 'আপনার পিতামহ ও পিতামহী এই কেশতেলই ব্যবহার করিতেন'। বিজ্ঞাপনের মেয়েটি হাতে আঁকা। তার সুন্দর খোঁপা প্রদর্শনই শিল্পীর লক্ষ্য। খোঁপা দেখানো মানে পৃষ্ঠদেশটাও দেখা- একপাশে এক বোতল ক্যাস্টর অয়েল, অন্যপাশে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা 'নকল হইতে সাবধান'।
কামাইবার প্রকৃষ্ট সাবান
কি কামাইবার?
বেঙ্গল কেমিক্যাল, কলিকাতা, বোম্বাইয়ে প্রস্তুত রাকা সাবান (Raka soap) লম্বাটে, সিলিন্ডার সদৃশ সাবান।
বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- রাকা কামাইবার প্রকৃষ্ট সাবান পুরুষের সৌন্দর্য সাধনায় শ্রেষ্ঠ সহায়। রাকা সহজে কর্কশ চামড়া ও কড়া দাড়িকে ক্ষৌরকার্যের অনুকূল করে। ফেনাবাহুল্যে ও গন্ধেগৌরবে শ্রেষ্ঠ।
সুরেলা কন্ঠ ও সুমিষ্ট নিঃশ্বাস
সুরেলা কন্ঠ ও সুমিষ্ট নিঃশ্বাস
কি শরীর পালনে
কি রূপ- চর্চায়
লিস্টল কুল্লি অপরিহার্য।
লিস্টল এন্টিসেপটিক্স- কলিকাতার লিস্টল এক বোতল তরল তাদের জন্য যারা রূপসী হলেও উপেক্ষিতা- 'আপনার কন্ঠস্বর যদি কর্কশ হয় এবং আপনার প্রশ্বাস যদি দুর্গন্ধময় হয় তবে রূপসী হইয়াও আপনি উপেক্ষিতা হইতে পারেন।'
লিস্টল স্বরযন্ত্র ও তালুমূলের প্রদাহ দূর করিয়া কন্ঠস্বর সুমধুর করে, ইহা দন্ত ও সছিদ্র মাড়ির ক্লেদাশ্রিত জীবাণুসমূহ ধ্বংস করিয়া বহু উৎকট ব্যাধির আক্রমণ হইতে দেহকে রক্ষা করে এবং প্রশ্বাসও সুরভিত করে।
নবজীবনের শ্রেষ্ঠ টনিক
এশিয়া ড্রাগ কোং লি-এর নিও-ভিনা গ্রিক আদর্শ অনুসরণে তৈরি। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- প্রাচীন গ্রীসের সুমহান জ্ঞানসাধনার পাশাপাশি শরীরচর্চ্চার উচ্চ আদর্শ আজও জগৎকে অনুপ্রাণিত করিতেছে। আপনার মেধা ও সব দেহতন্ত্রের পরিপুষ্টির জন্য নিও-ভিনা সুপরীক্ষিত উপাদানে প্রস্তুত, একটি উন্নততর টনিক। যে কোন প্রকার স্নায়বিক অবসাদ ও শারীরিক দুর্বলতা হইতে পুনরুজ্জীবিত করিতে ইহা অদ্বিতীয়। অদ্য হইতে ইহা সেবন করুন।
নিও-ভিনা নবজীবনদায়ক শ্রেষ্ঠ টনিক
ভাবনাচিন্তায় অস্থির
পাঞ্জাবি গায়ে সুদর্শন লোকটি চিন্তাক্লিষ্ট, চিন্তার শেষ নেই। ছেলেমেয়ের শিক্ষা কাপড়জামা, কয়লা-কাঠ, খাদ্য, যুদ্ধ ঘিরে চিন্তা।
ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপানসন বোর্ডে বিজ্ঞাপন:
যুদ্ধের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা চাষবাস- যে যা-ই করুন না কেন দুর্ভোগ সকলকেই সমান ভুগতে হচ্ছে।
যুদ্ধের আগে যা ছিল তার তুলনায় খাদ্য কাপড়জামার দাম অসম্ভব তো বেড়েছেই, বেশি দাম দিয়েও এখন জিনিসপত্র পাওয়ার জো নেই ট্রাম, বাস ও ট্রেনের ভিড়ে যাতায়াত এক মহা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, দুর্ঘটনা হামেশাই ঘটছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাজের কামাই নেই, প্রত্যেককেই আজ বেশি কাজ করতে হচ্ছে।
এ জন্যই সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর একটু আরাম করবার সময়ে এক কাপ ভালো চায়ের কথা প্রথমেই মনে আসে। চা ক্লান্তি দূর করে এবং মনের প্রফুল্লতা ফিরিয়ে আনে। সে সঙ্গে ভাবনাচিন্তার গুরুভাবও যেন মন থেকে অনেকটা নেমে যায়। যে কোন জায়গায়, যে কোন সময়ে চা-ই সবচেয়ে উপভোগ্য পানীয়। অশান্তি উদ্বেগের গ্লানি ভারতীয় চা-ই দূর করে।
লিপটনের জাকুজা চা
বিজ্ঞাপনের ভাষা: ভারতীয় চায়ের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট গুঁড়ো চা।
বর্ণে, স্বাদে ও গন্ধে মনোগ্রাহী অথচ দামে সস্তা বলেই লিপটনের জাকুজা চা বাজারের সেরা খরিদ।
অর্থশক্তির স্থুলতা
শ্রীঅরবিন্দের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তফশিলভূক্ত ব্যাঙ্ক- ব্যাঙ্ক অব কমার্স লিমিটেড ১২ ক্লাইভ স্ট্রিট, কলিকাতা এবং এর শাখাসমূহ বিজ্ঞাপন দিয়েছে-
'অর্থ এক বিশ্বজনীন শক্তির স্থুল চিহ্ন। এ শক্তি যখন পৃথিবীর উপরে প্রকাশ পায় তখন তা ক্রিয়া হয় প্রাণের ও জড়ের স্তরে; বাহ্য জীবনে পরিপূর্ণতার জন্য এ শক্তিটি অপরিহার্য্য।'
শ্রীঅরবিন্দ
কাপড়ের বাজারে আগুন লেগেছে!
সিক্স হানড্রেড ওয়ান সোপ কোম্পানি (হেড অফিস: শিলিগুড়ি দার্জিলিং), কলকাতায় দুটো অফিস, একটি শিবনারায়ণ দাস লেনে, অন্যাটি শিকদার বাগান স্ট্রিট-এ। সাবানের নাম: ৬০১ সুধীর বার।
জলও আপনার, হাতের কাছেই ধোপার বাড়ি আছে। কিন্তু দুর্ম্মূল্যের বাজারে ধোপার বাড়ি কাপড় কাচিয়ে অনর্থক তাড়াতাড়ি সেটা নষ্ট না করে বাড়িতে ৬০১ সুধীর বার সাবান দিয়ে কাপড় কাচুন আর পরিমাণমতো নীল মিশিয়ে নিন-ব্যাস।
আয় ও আয়ু
হিন্দুস্থান কো-অপারেটিভ ইন্সিউরেন্স সোসাইটি লিমিটেড-এর ১৯৪৪ সালে নতুন বীমা ১০ কোটি টাকার ওপরে। হিন্দুস্থান কো-অপারেটিভের বিজ্ঞাপন :
অখণ্ড আয়ু লইয়া কেহ জন্মায় নাই; আয়ের ক্ষমতাও মানুষের চিরদিন থাকে না-আয়ের পরিমাণও চিরস্থায়ী নয়। কাজেই আয় ও আয়ু থাকিতেই ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা প্রত্যেকেরই কর্তব্য। জীবন বীমা দ্বারা এই সঞ্চয় করা যেমন সুবিধাজনক, তেমনি লাভজনক বটে। এই কর্ত্তব্য সম্পাদনে সহায়তা করিবার জন্য হিন্দুস্থানের কর্ম্মিগণ সর্ব্বদাই আপনার অপেক্ষায় আছেন। হেড অফিসে পত্র লিখিলে বা দেখা করিলে আপনার উপযোগী বীমাপত্র নির্বাচনের পরামর্শ পাইবেন।
বইয়ের বিজ্ঞাপন
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের উপভোগ্য উপন্যাস জননী জন্মভূমি।
লঙ্কাজয়ের পর লক্ষণ যখন রামচন্দ্রকে বললেন, স্বর্ণপুরীতেই রাজধানী স্থাপন করা হোক তখন রাম বলেছিলেন, জননী আর জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও পূজ্যতর। কিন্তু জীবনে এমন কি কিছু নেই যা মার মতো সনাতন ও জন্মভূমির মতো স্থির, সমস্ত বন্ধন ও আশ্রয়ের চেয়েও বলবান? একটি সহজ কাহিনীকে অনুভবের গুণে গভীর ও বর্ণাঢ্য করে আঁকা হয়েছে।
চমৎকার ছাপা আর মলাট। দাম দুই টাকা।
নূতন পুস্তক নূতন পুস্তক
অক্টোবর ১৯০৬ বামাবোধিনী পত্রিকার ৫১৭ তম সংখ্যায় প্রকাশিত একটি বইয়ের বিজ্ঞাপন :
মজার গল্প : শ্রী যোগীন্দ্রনাথ সরকার সঙ্কলিত, মূল্য তিন আনা।
'মজার গল্পের' অত্যাশ্চর্য্য গল্প গুলি বালক বালিকাদের চিত্তকে এরূপভাবে আকৃষ্ট করিবে যে তাহারা একবার এই পুস্তক পড়িতে আরম্ভ করিলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুতেই তৃপ্ত হইবে না।
'মজার গল্প' পড়িতে বসিলে তাহাদের আহার নিন্দ্রার কথা থাকিবে না।
'মজার গল্প' তাহাদিগকে উন্মত্তের ন্যায় নৃত্য করাইবে।
গৃহের বালক বালিকাগণের হস্তে এক একখানি 'মজার গল্প' দিন, দেখিবেন তাহাদের পূজার আনন্দ সহস্র গুণ বৃদ্ধি পাইবে।
এই সুন্দর পুস্তকখানি অনেকগুলি চিত্রে সুসজ্জিত। কাগজ, ছাপা বাঁধাই সমস্ত উৎকৃষ্ট।
বন্দে মাতরম (১ম ও ২য় ভাগ একত্রে)
শ্রীযোগীন্দ্রনাথ সরকার সঙ্কলিত, মূল্য ছয় আনা।
'কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কাল হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বঙ্গদেশে যতগুলো উৎকৃষ্ট জাতীয় কবিতা ও সঙ্গীত রচিত হইয়াছে তাহার সকলগুলিই এই পুস্তকে দেখিতে পাইবেন। এই সকল কবিতা ও সঙ্গীত পড়িতে পড়িতে ক্ষীণ দেহে তড়িৎ শক্তির সঞ্চার হইবে, হৃদয় নব বলে বলীয়ান হইবে; জননী জন্মভূমির দুর্দ্দশা দূর করিবার জন্য প্রাণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা জাগিয়া উঠিবে। এই পুস্তকের আয়তন সেরূপ বৃহৎ এবং অঙ্গসৌষ্ঠব সেরূপ চিত্তা কর্ষক, তাহাতে ইহার মূল্য ১ এক টাকা ধার্য করিলেও বেশী হইত না, কিন্তু সকলে অক্লেশে কিনিতে পারিবেন বলিয়া আমরা কেবল মাত্র ছয় আনা মূল্যে ইহা বিক্রয় করিতেছি।'
সিটি বুক সোসাইটী
৬৪ নং কলেজ স্ট্রীট, কলিকাতা।
ভীমনাগের সন্দেশ
ভীমনাগ
প্রসিদ্ধ সন্দেশ বিক্রেতা
৬নং ওয়েলিংটন স্ট্রীট, কলিকাতা।
বিবাহে, বৃহৎ ভোজ কাজে, তত্ত্বে ভীমনাগের সন্দেশ না দিলে অঙ্গহীন হয়, ইহা শহরে মফঃস্বলে কে না জানে? নূতন কথা নয়। অর্ডার পাইবামাত্র যত বড় অর্ডারই হোক, তৎক্ষণাৎ সরবরাহ করা যায়। ফোন নং বড় বাজার ১৪৫৬
(কলকাতায় চার ডিজিট ফোন নম্বর! এই বিজ্ঞাপনটি ১৯২৬ সালের, ১৯৬০-এর দশকে ঢাকার নম্বরগুলো ছিল চার ডিজিটের)।
মুক্তের মত দাঁত
অমিয় টুথ পাউডার।
মুহূর্ত্ত মাত্রেই ময়লা বিদূরিত করিয়া দন্ত-পংক্তি মুক্তার ন্যায় করিয়া দেয়। ইহা দ্বারা দন্তশূল, দাঁত দিয়া রক্ত পড়া, মুখের দুর্গন্ধ নিবারিত হইয়া সারাদিন মুখের অনির্ব্বচনীয় সৌরভে পার্শ্বস্থ লোকে মুগ্ধ হইয়া যায়। ১ কৌটায় ১ মাস চলিবে। মূল্য ছয় আনা মাত্র।
এ, এ, চৌধুরী
১ নং কারিম চার্চ্চ লেন, আর্মহার্স্ট স্ট্রীট, পোঃ কলিকাতা।
অর্দ্ধ আনার ডাকটিকিট পাঠাইলে নমুনা দেওয়া হয়।
সানুনয় নিবেদন
এসপি চ্যার্টার্জি সম্পাদিত গার্হস্থ্য মাসিকপত্র 'কাজের লোক' পত্রিকার ২০ তম বর্ষের ৮ম সংখ্যায় (আগস্ট ১৯২৬) পত্রিকার কার্য্যাধ্যক্ষের নিবেদন :
'কাজের লোকের, গ্রাহকগণের অনেকেই এখনও বার্ষিক মূল্য পাঠাইয়া দিয়া কৃতার্থ করিতে বিস্মৃত হইয়াছেন।
স্মরণ করাইয়া দিতেছি, দয়া করিয়া এই সংখ্যা প্রাপ্তি মাত্র দেড় টাকা পাঠাইয়া দিয়া আমাদিগকে সাহায্য করিবেন। আপনারা দয়া করিয়া এইটুকু প্রণিধান করিবেন যে, গ্রাহকগণের অনুগ্রহ ও সাহায্য না পাইলে কাগজ রক্ষা হয় না। আর সামান্য আড়াই টাকা বার্ষিক সাহায্য মাত্র ইহাতে কোন কষ্ট হইবার সম্ভাবনা খুবই কম, কেননা আমাদের বহুবিষয়ে বহু অতাবশ্যকীয় ব্যয়ও আছে। দেশের মধ্যে জ্ঞান প্রচারের সাহায্য একটা কম বড় কাজ না-কেবল বিস্মৃতির জন্য টাকা পাঠাইতে বিলম্ব হয়, সেই জন্য স্মরণ করাইয়া দিতেছি। মানি অর্ডার করিয়াই টাকা পাঠাইয়া দিবেন। ভিপিতে অনর্থক ব্যয় কেন?'
কার্য্যাধ্যক্ষ
২নং রাজেন্দ্র দত্তের লেন, বহুবাজার, কলিকাতা।
কেশ পরিচর্যায় জবাকুসুম
কেশ পরিচর্যায় জবাকুসুম তেল বাংলার কিশোরী তরুণী যুবতী সবার অন্তরে ঠাই করে নিয়েছিল। বালিগঞ্জের ক্যালকাটা কেমিক্যাল বাজারে ছেড়েছিল ছয় ধরনের কেশ প্রশাধনী তেল:
লাইজু: শুভ্র সুগন্ধি লাইম জুস গ্লিসারিন কেশের পারিপাট্য সাধন করে।
ভৃঙ্গল: সুরুভি সংযুক্ত মহাভৃঙ্গরাজ কেশ তৈল চুল ঘন কালো করে ও মস্তিক শীতল রাখে।
তিল: চামেলিগন্ধ বিশুদ্ধ তিল তৈল শীতল ও প্রীতিকর।
কোকোনল: গন্ধরাজের সুগন্ধযুক্ত বিশুদ্ধ নারিকেল তৈল কেশ বর্ধন করে।
সিলট্রিস: কেশমার্জ্জন ও মাথা ঘষার জন্য সুগন্ধি 'শ্যাম্পু' বা সাবানের নির্য্যাসে।
ক্যাস্টরল: স্নিগ্ধ সুরভিত বিশুদ্ধ ক্যাস্টর অয়েল টাক পড়া রোধ করে।
ঔষধ খরিদ করিতে সাবধান
এটি একটি দীর্ঘ বিজ্ঞাপন। সর্ব্বজ্বরগজসিংহ, সর্ব্বদ্রুতহুতাশন, কুদাবানলের মত ঔষধ জাল করে বিক্রি করছে কোম্পানির এজেন্ট ও দোকানদার। কি তাজ্জবের কথা। ঔষধ খরিদ করিতে সাবধান।
ঢাকা বাবুরবাজার ঔষধালয়ের কর্ণধার শ্রী লালমোহন সাহা শঙ্খনিধি পূর্ণপাতা বিজ্ঞাপনে জানাচ্ছেন-
সম্প্রতি আমার ঔষধ সকলের নামের কিছুটা পরিবর্ত্তন করিয়া ও শঙ্খমার্কা যাহাতে লোকের ভ্রম জন্মিতে না পারে, তদ্রুপ শঙ্খাকৃতি করিয়া কেহবা মৎস্য কেহবা শামুক কেহবা গরুড় কেহবা নারিকেল, কেহবা কড়িমার্কা দিয়া নকল ঔষধ বিক্রী করিতেছে। এমনকি মোকদ্দমার শিখণ্ডীবৎ অগ্রে রাখিয়া ঔষধ প্রচার করিতেছে। ... ... তাই বলি সাবধান। আমার নাম ও রেজেস্টরি করা শঙ্খমার্কা দেখিয়া লইবেন, নতুবা ধনে প্রাণে মরিবেন, অথচ মূল্যও ফেরত পাইবেন না।
ক্যালকাটা কেমিক্যাল
বালিগঞ্জ কলিকাতা
***
লাইজুর একটি একক বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে লাইজু কেশ প্রসাধন চুলের স্বাভাবিক বর্ণ রক্ষা করে, কেশের পারিপাট্য সাধন করে, কুন্তল কবরী ও বেণীর শ্রীবৃদ্ধি করে।
লাইজু সাধারণ প্রসাধান মুখে মাখলে মুখমন্ডল কোমল ও মসৃণ রাখে, হাতে পায়ে মাখলে হাত পা ফাটে না, কর্কশ কেশ পাশ কমনীয় করে তোলে।
সূতা-কাটতে দক্ষ-স্ত্রীলোক
যাহাদের চরকায় সূতা-কাটতে দক্ষ-স্ত্রীলোক দরকার, তাহারা নিম্নবর্ণের দুই ঠিকানায় খোঁজ করিবেন
(১) ভারত স্ত্রী মহামন্ডল
৪৬ নং ঝাউতলা রোড- বালীগঞ্জ কলিকাতা
(২) মুক্তি মিলন উইভিং এন্ড নিডেল ওয়ার্ক
চরকায় সূতাকাটার দক্ষ স্ত্রীলোক এখানে পাওয়া যাইবে, যাহারা বালিকাদিগকে চরকায় সূতাকাটা শিখাইতে পারেন। তাহাদের জন্য এখান হইতে রেলের ভাড়া আর ওখানে ভোজাল বস্ত্র তথা ৪/৫ টাকা মাসিক বেতন দিতে হইবে। দরকার হইলে নিম্নলিখিত ঠিকানায় পত্রব্যবহার করুন:
শ্রীরামাজ্ঞা দ্বিবেদী
বৈদ্যনাথ মন্দির কাশী
নিম টুথপেস্ট অথবা নিমের গুঁড়ো মাজন
ঠাকুর্দা অবাক। তাকে হয় কয়লার গুঁড়ো কিংবা নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজাতে হয়। কিন্তু আজকালকার ছেলে মেয়েরা এসব বলে কি!
সীসক বর্জিত টিনের টিউবে থেকে তারা ব্রাশে তুলে নেয় নিম টুথপেস্ট অথবা নিমের গুঁড়ো মাজন মার্গোফ্রেস ঢেলে নেয় কাঁচের শিশি কিংবা টিনের কৌটা থেকে।
ক্যালকাটা কেমিক্যালের নিম টুথপেস্ট ও মার্গোফ্রেস সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:
নিম দাঁতনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ওর মধ্যে নিম দাঁতনের সমস্ত গুণই আছেই, তাছাড়া আছে বর্ত্তমান বিজ্ঞানসম্মত ও দাঁতের পক্ষে হিতকর কয়েকটি মূল্যবান উপাদান যা দাঁতের এলামেল অক্ষুন্ন রাখে দাঁতের গোড়া শক্ত করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। দাঁত গুলি মুক্তোর মত উজ্জ্বল করে তোলে।
বাংলায় চায়ের প্রচলন ছিল একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ সেকালের একটি বিস্তৃত চা বিজ্ঞাপন
স্ত্রী জানে স্বামী কি চায়।
স্বামীকে রাস্তায় মোড়ে দেখতে পেয়েই স্ত্রী উনুনে কেটলি চাপালেন। স্বামী যখন বাইরের দরজায় ঢুকলেন, তখন কেটলির জল ফুটে উঠেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই চমৎকার এক চা প্রস্তুত।
স্বামীর সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি সামাণ্য এইটুকু মনোযোগের ফলে দাম্পত্য জীবন কতই না মধুর হয়ে ওঠে। সারাদিনের ক্লান্তির পর চায়ের পেয়ালাটি যথাসময়ে পাবার দরুন স্বামীর মেজাজ আর বিগড়ে থাকে না- কথায় কথায় আর চটাচটি নেই। সে এখন পরিতৃপ্ত, নিজের সংসারে সুখী।
আজকেই স্বামী কাজ থেকে ঘরে ফিরলে এই মধুর চায়ের পেয়ালা তাঁর হাতে তুলে দিন আপনার উপর কি খুশী যে হবেন বলা যায় না।
এটিও ইন্ডিয়ান টি-র বিজ্ঞাপন, প্রবাসী ফাল্গুন ১৩৪৩ সংখ্যায় প্রকাশিত।
ইংরেজি পত্রিকা ঢাকা নিউজ এ বিজ্ঞাপন
বিক্রয়ের জন্য
প্রকাশের তারিখ: ১০ অক্টোবর ১৮৫৭
অবিশ্বাস্য কমমূল্য ৮০০০ রুপি
চার্চের উল্টোদিকে মিস্টার এবং মিসেস জি মিল্নের একতলা বাড়ি, সাথে বাগান এবং অফিসরুম। ঢাকা ব্যাঙ্কের সেক্রেটারির নিকট আবেদন করুন।
(অনুমান করা যায়, এটি ঢাকা ব্যাঙ্কের নিকট বন্ধককৃত বাড়ি)
প্রকাশের তারিখ: ১১ জুলাই ১৮৫৭
অবিশ্বাস্য কম মূল্য ১০,০০০ রুপিতে দোতলা পাকা বাড়ি, রংপুর শহরে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন জেলার প্রয়াত কালেক্টর মাননীয় এ টি ডিক কানিংহাম, সুদৃশ্য, বিশাল কম্পাউন্ড পাকা অফিস রুম, কখনো ভাড়াটেহীন অবস্থায় থাকেনি, মাসিক ভাড়া আসে ১০০ রুপি। বিস্তারিত জানার জন্য বর্তমান মালিক ময়মনসিংহের ডব্লিউ টি ট্রটারকে লিখুন।
প্রকাশের তারিখ: ১০ অক্টোবর ১৮৫৭
বিক্রয়ের জন্য
একটি ঘোড়া টানা গাড়ি ৭০০ রুপি
একটি ফিটন গাড়ি ৬০০ রুপি
একটি দেশি খোজাকরা ঘোড়া ১০০ রুপি
ঘোড়া দ্বৈত জিন ৪০ রুপি
একটি আরবি ঘোড়া ৫০০ রুপি
আরমানিটোলার মৌলবি মোহাম্মদ ইসরায়েলের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রকাশের তারিখ : ১০ জুলাই ১৮৫৬
বরিশালের একজন ভদ্রলোকের সেকেন্ড হ্যান্ড পালকি গাড়ি, একজন ইউরোপিয়ান এটি তৈরি করেছেন, এক্সেল প্যাটেন্ট করা, এক বা দুই ঘোড়ার জন্য রূপান্তরযোগ্য। মূল ব্যয় ৬০০ রুপি, ৪০০ রুপিতে বিক্রয় করা হবে। পত্রিকার মুদ্রকের সাথে যোগাযোগ করুন।
১১ জুলাই ১৮৫৬ অপর একটি বিজ্ঞাপনে একটি সবল এবং ভদ্রলোকদের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার মতো একটি ঘোড়া বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। মূল্য ১০০ টাকা। আগ্রহী ক্রেতাকে ট্রায়াল দেবার সুযোগ দেওয়া হবে।
১২ ডিসেম্বর ১৮৫৭ একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা নিউজ এর বাৎসরিক চাঁদা ৬ রুপি ৮ আনা, ষান্মাসিক ৩ রুপি ৪ আনা, ত্রৈমাসিক ১ রুপি ১২ আনা এবং প্রতি কপি ২ আনা, আর বিজ্ঞাপন প্রতিলাইন দুই আনা।
সে সব পার্টি/গ্রাহক তাদের চাকর পাঠিয়ে প্রকাশের দিন ভোরে সংগ্রহ করতে চান তাদের চাকরদের নাম নিবন্ধন করতে নাম পাঠাতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যারা নিবন্ধন করাবেন তাদের যথারীতি পত্রিকার ডেলিভারি পিয়ন পৌঁছা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নিবন্ধনকৃত নন এমন কারো কাছে পত্রিকা দেওয়া হবে না। যারা চাকরের মাধ্যমে পত্রিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধিত তাদের বাড়িতে ডেলিভারি পিয়ন যাবে না।
শ্রীক্ষেত্রমোহন পুরকায়স্থ প্রায় শতবর্ষ আগে সতর্ক বাণী দিয়েছেন: কোন কোন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন দেখিতে পাই কোম্পানীর নাম অপেক্ষা কর্ম্মচারীর নাম কিংবা দ্রব্যের নাম অপেক্ষা স্বত্বাধিকারীর নাম বৃহত্তর অক্ষরে ছাপা হইয়াছে। বলা বাহুল্য এই সব স্থলে বিজ্ঞাপন জ্ঞানের অভাবই সূচিত হয়।
সে আমলে স্বত্বাধিকারী প্রায়ই পণ্য অপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।
লেখালেখির জন্য পদক
সব শেষ বিজ্ঞাপনটি লেখকদের জন্য লেখালেখির জন্য পদক:
কবিতা গল্প উপন্যাস নাটকে পুরস্কার দুর্লভ হলেও যারা লেখালেখির সাথে জড়িত প্রায় সকলেই পুরস্কার বঞ্চিত হয়েছেন এমন নয়।
১৯০৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তি: পদক পুস্কার
'ভারতবর্ষে বিশেষত: বঙ্গদেশে লৌহ ও কয়লার ব্যবসায়ে ক্রমোন্নতি' এই সমন্ধে যে তিনজনের বাঙ্গালা প্রবন্ধ সর্ব্বোৎকৃষ্ট হইবে, চৈতন্য লাইব্রেরীর কর্তৃপক্ষগণ তাহাদিগকে তিনখানি রৌপ্যপদক পুরস্কার দিবেন। প্রবন্ধগুলি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের (১৯০৪) মধ্যে চৈতন্য লাইব্রেরীর সম্পাদক বীডন স্ট্রীট, কলিকাতা এই ঠিকানায় পাঠাইতে হইবে ভূতত্ত্ব ও খনিজ বিদ্যায় একজন বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রবন্ধগুলি পরীক্ষিত হইবে। সাধারণের প্রতিযোগিতা প্রার্থনীয়।
(ঢাকা নিউজের অনূদিত বিজ্ঞাপনগুলো, পৌষ্যপুত্র ও ঔষধ খরিদ করিতে সাবধান মুনতাসীর মামুনের উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ-সাময়িকপত্র থেকে নেওয়া হয়েছে আর সব বিজ্ঞাপন নিবন্ধকার পুরোনো দিনের পত্রিকা থেকে নিবন্ধকার নিজে বের করেছেন।)